লোকালয়ে বন্যপ্রাণের আনাগোনায় চিন্তিত কোচবিহারের পরিবেশ মহল

পার্থ নিয়োগী ঃ সম্প্রতি কোচবিহার ১ নং ব্লকের সাহেবেরহাট এলাকায় চলে আসে বাইসন। আর বাইসনের গুঁতোয় মৃত্যু হয় স্থানীয় এক বাসিন্দার। আহত হন আরও বেশকয়জন বাসিন্দা। শেষে বনদপ্তরের লোক এসে ঘুম পাড়ানি গুলি করে বশে আনে বাইসনের দলকে। আর তা না হলে আরও বেশকিছু হতাহতের সংখ্যা বাড়ত। তবে শুধু সাহেবেরহাটেই নয়। কিছুদিন আগে নিশিগঞ্জেও এসেছিল বাইসনের দল। ঘোকসাডাঙ্গাতেও মাঝেমধ্যে হানা দেয় বাইসনের দল। কোচবিহার এক নং ব্লকের বড়রাংবস থেকে শুরু করে শহর সংলগ্ন গোপালপুরেরও চলে আসে বাইসনের দল। অল্পকয়েকদিন আগেই পুন্ডিবাড়ি সংলগ্ন খড়িবাড়িতে চলে এসেছিল বনের হাতির দল। আর গতবছর কোচবিহার শহরের কলাবাগান এলাকার এক গৃহস্থের বাড়িতে ঘাটি গেড়েছিল চিতা বাঘ। কোচবিহারের লোকালয়ে বন্যপ্রানীর আগমনের ঘটনা নতুন না হলেও এখনকার মত এত বন্যপ্রাণী আসতনা এখানে। এখানেই প্রশ্ন জেগেছে অনেকের মনে। এই নিয়ে চিন্তিত কোচবিহারের পরিবেশবিদরাও। বিশিষ্ট পরিবেশবিদ অরুপ গুহের কথায় ‘ বন কমে যাচ্ছে। বনের ভেতরে লোক চলে যাচ্ছে। জঙ্গল সাফারির জন্য অসুবিধে হচ্ছে বন্যপ্রানের। হাতির খাবার কারিপাতা মানুষ বন থেকে নিয়ে আসছে বানিজ্যিক কারনে। সেইসাথে বনের ভেতর জলেরও অভাব দেখা দিচ্ছে। সেইসাথে পর্যাপ্ত সংখ্যায় বনরক্ষীরও অভাব আছে। সেই কারনে হাতি চলে আসছে লোকালয়ে’। বাইসনের লোকালয়ে চলে আসার কারন হিসেবে অরুপ বাবু বলেন ‘ এই বাইসনগুলি হল ইন্ডিয়ান গাউর। এদের কলিজা ছোট হয়। এরা ছায়ায় থাকতে ভালবাসে। বনে গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ও খাদ্যের অভাবে তারাও লোকালয়ে চলে আসছে’। অরুপ বাবুর কথার একই সুর পরিবেশপ্রেমী সংগঠন জিকোর কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক তাপস বর্মনের কথাতেও। তিনি বলেন ‘ সবখানে একই ছবি বন ছেড়ে বন্যপ্রাণীরা খাবারের খোঁজে লোকালয়ে ধান, গম, ভুট্টোর প্রতি ঝোক বাড়াচ্ছে। সেইসাথে তার বক্তব্য উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার নামে বনভূমির উচ্ছেদ, গাছের চোরাচালান বন্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হোক’। বিশিষ্ট কবি তথা উত্তরের বনাঞ্চল কে হাতের তালুর মত চেনা ব্যাক্তি কবি সুবীর সরকার এর কথাতেও চিন্তার সুর। তিনি বলেন ‘ হাতির অন্যতম প্রিয় খাদ্য চালতা। কিন্তু সেই চালতা গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে বনাঞ্চলে। হাতির চলাচলের করিডোরে দ্রুত যানবাহন চলা ও রেললাইন থাকায় তাদের খুব অসুবিধে হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এত তাদের লোকালয়ে আগমন’। বাইসন প্রসঙ্গে সুবীর বাবুর কথা ‘ জঙ্গলে বাইসনের সংখ্যা আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সেই অনুপাতে তাদের খাদ্যের সংস্থান বাড়াতো দুরের কথা উল্টে কমেছে। ফলে তারাও চলে আসছে ঘনঘন লোকালয়ে’। তবে এটা সত্যি যে বনাঞ্চলে গাছের সংখ্যা কমার পাশাপাশি এভাবে যদি বন্যপ্রাণীদের খাদ্যের সংস্থানও কমে যায়। তবে কোচবিহারের লোকালয়ে বন্যপ্রাণীদের চলে আসাটা আগামীতে আরও বাড়বে। এতে যেমন মানুষের হতাহতের সম্ভাবনা বাড়বে সেইসাথে ফসল নষ্টের সম্ভাবনা বাড়বে। এরচেয়েও বড় কথা নষ্ট হবে এক বিশাল এলাকার
বাস্তুতন্ত্রের।