বাড়তে থাকা তেলের দাম কমানোর আর্জি মুখ্যমন্ত্রীর

চলতে থাকা করোনা সংক্রমণের আবহে তেলের দাম আকাশ ছোঁয়া, যা বেড়েই চলছে দিনপ্রতিদিন। নাজেহাল হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গ তোলায় ফের দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্মুখ সংঘাতে জড়ালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশে আবারও লাগামছাড়া হারে বাড়তে শুরু করেছে করোনার সংক্রমণ।  সেই প্রসঙ্গেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই বৈঠকেই তিনি উত্থাপন করেন জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গ। এদিন পেট্রোল-ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বলেন রাজ্য যদি তার শুল্কের পরিমান কমায় তাহলে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমবে। এক্ষেত্রে তিনি বিশেষভাবে বাংলা, কেরল এবং মহারাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করে বলেন, যে এই তিন রাজ্য প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ উপেক্ষা করে জ্বালানির শুল্কের পরিমান কমায়নি।

এরপরেই বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের জবাবে মুখ খুলতে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীকে। এদিন নবান্নের সভাঘর থেকেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন প্রতিবছর শুধুমাত্র জ্বালানি তেল অর্থাৎ পেট্রোল ডিজেল থেকেই ১৭.৩ লক্ষ কোটি টাকা লাভ হয় কেন্দ্রের। অথচ তারপরেও প্রধানমন্ত্রী জ্বালানি তেলের দাম কমাতে রাজ্য সরকারকে অনুরোধ করেন যাতে তারা তাদের শুল্কের পরিমান কমান।

এই প্রসঙ্গে এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জ্বালানি নিয়ে বৈঠকে আমি আগেই বলেছিলাম কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে শুল্কের পরিমান ৫০-৫০ হওয়া উচিত। কিন্তু আমার সেই কথা পাত্তাই দেওয়া হয়নি। বর্তমানে জ্বালানি তেলের ৭৫ শতাংশ মুনাফা কেন্দ্র সরকারই নিয়ে চলে যায়। অথচ দাম কমাতে রাজ্য সরকারকে অনুরোধ করা হয় তারা যেন তাদের শুল্কের পরিমান কমান। এখনও পর্যন্ত আমি কেন্দ্র সরকারের কাছ থেকে প্রায় ৯৭ হাজার কোটি টাকা পাই। তাই প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য প্রসঙ্গে আমি বলতে চাই রাজ্যের প্রাপ্য টাকার অর্ধেক যদি কেন্দ্র সরকার আমার হাতে তুলে দেয় তাহলে আমি কালকের মধ্যেই দুই হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রের কাছে পৌঁছে দেবো।’

সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘ প্রধানমন্ত্রীর মুখে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির উন্নয়নের কথা বারবার শোনা যায়। অথচ তিনি একবারও বলেন না বিজেপি শাসিত রাজ্য যেমন গুজরাট উত্তরপ্রদেশকে কেন্দ্র সরকার কত টাকা দিয়ে সাহায্য করেছে, আর সেই জায়গায় বাংলা, মহারাষ্ট্রের মত রাজ্যগুলি কত টাকা সাহায্য পেয়েছে। বারবার খালি রাজ্যের ঋণের কথাই বলা হয়। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই এই ভাবে প্রতিবার অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানো বন্ধ করুন। কাউকে দোষ দেওয়ার আগে অন্তত নিজের দিকটা একবার দেখে নেওয়া খুব দরকার।’

এর পাশাপাশি এদিন মুখ্যমন্ত্রী করোনার বৈঠকে কেন জ্বালানির প্রসঙ্গ তোলা হল সেই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘করোনার বৈঠকে জ্বালানি নিয়ে কেন আলোচনা করা হবে যখন এটা সকলেরই জানা যে এই ধরনের বৈঠকে অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা কথা বলার সুযোগ পান না। বারবার কেন্দ্রের তরফ থেকে রাজ্য সরকারের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। এটা এক প্রকার গণতন্ত্রকে কোণঠাসা করা।’ সেই সঙ্গেই তিনি কেন্দ্রের সঙ্গে বাংলার সম্পর্ক প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রতিবারই কেন্দ্রের তরফ থেকে আমাদের সঙ্গে সৎমায়ের মত ব্যবহার করা হয়।’

একইভাবে সরকারি কর্মচারীদের বেতন এবং পেনশন প্রসঙ্গেও এদিন বার্তা দিতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অন্য কোনও রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের পেনশন দেওয়া হয় না। কিন্তু আমরা আমাদের প্রতিটি সরকারি কর্মচারীদের পেনশন দিই। মাসের প্রথম দিনেই বেতন পান সরকারি কর্মচারী এবং শিক্ষকরা। এছাড়া স্বাস্থ্য সাথী, সবুজ সাথীর মত একাধিক প্রকল্পের টাকা কোনওরকম সাহায্য ছাড়াই বহন করছে রাজ্য। কিন্তু সেই ব্যাপারে কখনও কোনও মন্তব্য করতে দেখা যায় না প্রধানমন্ত্রী কিংবা কেন্দ্র সরকারকে।’ পরিশেষে তিনি এও জানিয়ে দেন, প্রধানমন্ত্রীর করা অনুরোধ তিনি কোনওভাবেই মানতে পারবেন না। তাঁর কথায়, ‘কেন্দ্র সরকার সমস্ত কিছু নিয়ে চলে যাবে আর রাজ্য সরকারকে মুনাফা কমাতে হবে সেটা সম্ভব নয়।’