এই মুহূর্তে গরুপাচার কাণ্ডে তোলপাড় পরিস্থিতি রাজ্যে জুড়ে। রাজ্যের এই গরুপাচার কাণ্ডে বারংবার নাম উঠে এসেছে বীরভূমের। এবার একাধিক প্রশ্নের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে যত দোষ কি শুধু বীরভূমের? সব কিছুর সূত্রপাত কি এখান থেকেই? গরু পাচার নিয়ে রাজ্য জুড়ে যেভাবে শোরগোল পড়ে গিয়েছে তাতে ঘুরেফিরে উঠে আসছে বীরভূমের কথা।
ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে যে শুধুমাত্র বীরভূমই যেন গরু পাচারের ‘এপিসেন্টার’ হয়ে উঠেছে। আদৌ কিন্তু তা নয়। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী প্রত্যেকটি জেলা দিয়েই এতদিন ধরে গরু পাচার হয়ে এসেছে। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের কড়া নজরদারিতে গরু পাচার সাময়িক বন্ধ হলেও পরবর্তীকালে তা ফের শুরু হয়েছে রমরমিয়ে।
উল্লেখ্য বীরভূমের ইলামবাজারে প্রতি শনিবার গরুর হাট বসে। সূত্রের খবর এই হাট থেকে গরু চলে যায় মুর্শিদাবাদে। এরপর সেখান থেকে বাংলাদেশের সীমান্ত পার হয়ে গরু চলে যায় ওপারে।
জানা গিয়েছে বিশেষ একটি চিরকুট ব্যবহার করে গরু কারবারিরা। কোন পথে গরু নিয়ে যাওয়া হবে, কার মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হবে, এই সমস্ত কিছু লেখা থাকে চিরকুটে। আবার অনেক সময় গরুর গায়ে স্ট্যাম্পের ছাপ মারা থাকে।
সেগুলি দেখে পাচারের গরুগুলিকে চিহ্নিত করে পাচারকারীরা। তবে বীরভূমকেই যে পাচারকারীরা শুধুমাত্র করিডর হিসেবে ব্যবহার করছে তা কিন্তু নয়। বেশ কয়েক বছর আগের কথা। উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ প্রশাসন গরু পাচার রুখতে কড়াকড়ি শুরু করেছিল।
তাতে পাচার সাময়িকভাবে বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই দুষ্কৃতীরা পাচারের কারবার ফের শুরু করে দেয়। সেই সময় পাচারকারীরা উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলা, চাকুলিয়া ও গোয়ালপোখর থানার বিভিন্ন অঞ্চল দিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশে গরু পাচার করে বলে অভিযোগ ওঠে। রীতিমতো হাঁটা পথে গরু পাচার করছিল তারা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে পুলিশের মদত ছাড়া কীভাবে হাঁটা পথে গরু পাচার করা হচ্ছিল?
সূত্রের খবর উত্তর দিনাজপুরে যারা গরু পাচারে যুক্ত তাদের অধিকাংশ চাকুলিয়া, গোয়ালপোখর, করণদিঘি, ডালখোলা, ইসলামপুর-সহ সংলগ্ন বিহার এলাকার বাসিন্দা। কিন্তু পুলিশের টানা নজরদারির অভাবে গরু পাচার বন্ধ করা যায়নি।
একই পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরে দেখা গিয়েছে উত্তর চব্বিশ পরগনার বনগাঁ সীমান্ত অঞ্চলে। অভিযোগ মাঝেমধ্যে শুধুমাত্র পাচারকারীদের ধরপাকড় করা ছাড়া ধারাবাহিকভাবে পুলিশের নজরদারি দেখা যায়নি সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলে।
তাই বছরের পর বছর ধরে উত্তর চব্বিশ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার প্রভৃতি সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে অবাধে গরু পাচার হয়ে আসছে বাংলাদেশে। জানা গিয়েছে এক একটি গরু কুড়ি হাজার টাকায় কিনে পাচারকারীরা কমপক্ষে ৪০-৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে সেগুলি বাংলাদেশে পাচার করে।
গরু পাচার কাণ্ডে অনুব্রত মণ্ডলের নাম জড়ানোয় যত আলোচনা হচ্ছে শুধুমাত্র বীরভূম জেলা নিয়েই। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। স্বাভাবিকভাবেই ওয়াকিবহাল মহলের প্রশ্ন, সার্বিকভাবে গরু পাচার বন্ধ করতে রাজ্য বা কেন্দ্র কোনও স্থায়ী উদ্যোগ কি নেবে না?
সীমান্তের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে পারলেই গরু পাচার বহু গুণে কমে যাবে বলে প্রশাসনিক আধিকারিকরা মনে করেন। আসলে অনুব্রত মণ্ডলের মতো ওজনদার নেতা গরু পাচার কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়ার কারণেই বিষয়টি নিয়ে এতটা শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
বাস্তব পরিস্থিতি বলছে জেলায় জেলায় দুষ্কৃতীরা এলাকার এক শ্রেণির নেতাদের পাশাপাশি প্রশাসনের একাংশের সঙ্গে যোগসাজশ করে গরু পাচার কাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? তাই গরু পাচার কাণ্ডে অনুব্রত মণ্ডলের নাম জড়ানোর পর গোটা বিষয়টি আজ যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা আগামী দিনে পুরোপুরি বন্ধ হয় কিনা সেদিকেই নজর থাকবে সবার।