সাহিত্য

পথ

পথ

‘সব মরণ নয় সমান…’ এই পুরনো গানটাই কিছুদিন হল বারংবার শোনে সায়ন।  কেন শোনে তা ঠিক জানে না। দিনবদলের যে স্বপ্ন তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়, তা খুঁজে চলে বিভিন্ন গল্প-কবিতা-গানে। কিন্তু  হোস্টেলে এসব  গান চালালেই বন্ধুরা টিটকারি করে। সেসব কথা যে খুব গায়ে মাখে তা নয়।  এমনিতেই সে স্বল্পভাষী। অকারণ তর্ক-বিতর্ক এড়িয়েই চলে। অথচ স্কুল থেকেই বিভিন্ন ডিবেট কম্পিটিশনে তার প্রাইজ বাধা। সে   ভাবে, এই অনিশ্চিত জীবনেও সবাই কত নিশ্চিন্তেই না আছে! কারও কোনও হেলদোল নেই!  মাঝে মাঝেই অস্থির হয়ে ওঠে। কাউকেই কিছু বলতে পারে না। নিজের মধ্যে গুমড়ে মরে। তবু গুন গুন করে গেয়ে ওঠে, ‘অন্ধজনে দেহ আলো…’ হোস্টেলের হইহট্টগোলের মধ্যে সে যেন একটি নিঃসঙ্গ…
Read More
নাগরের জলে

নাগরের জলে

নাগরের টলটলে জলেভেসে যায় স্বপ্নীল মেঘেরাভেসে যায় পুরাতন ইতিহাস কথাআদিগন্ত খোলামেলা বাতাসের প্রেমালাপমনু মাঝির ভাটিয়ালির সুরের মূর্ছনায়ঢেউ ওঠে নদীর তরঙ্গায়িত বুকেমানুষের দুঃখ-সুখের জীবনগাথা বুকে নিয়েনাগর বয়ে চলেছে আপন খেয়ালে দিনের পর দিনমাসের পর মাস,বছরের পর বছরবিরতিহীন সেই চলায়ক্রমশ মিশে যেতে থাকি আমিমিশে যেতে থাকে আমার যাবতীয় নাগর জানে মনের সব গোপন কথাফেলে আসা শৈশব স্মৃতি,লুকোনো আবেগের ঢেউ,দুঃখ সুখের আলাপন,সময়ের অভিঘাত সবনাগর চেনে সব গোপন ব্যথাদেরসে ছুঁয়ে দিলেই মন শীতল হয়ে যায়তাঁর কোনো চাওয়া নেই,অভিমান নেই,ক্লান্তি নেইনিরুদ্বেগ সে চলায় আমার মনের দুকূল ছাপিয়ে সে বয়ে যায়ভালবাসার পরশ বুলিয়ে সে বয়ে যায়আর নাগরের স্নিগ্ধ জলে মন ডুবিয়েসারা বিকেল একা পাড়ে বসে আমিগেয়ে…
Read More
মা আসছেন

মা আসছেন

"আশ্বিনের শারদ প্রাতে…." এক জলদগম্ভীর স্বরে হয়তো ব্যারিটোন গলায় নয়, কিন্তু বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের গলায় সেই আওয়াজ কানে আসা মাত্রই বাঙালির স্বপনে মননে যে উৎসবের জন্যে সারাবছর অপেক্ষা, তা শুরু হয়ে যায়। রাস্তার ধারে ধারে কাশের বনের ভিতর দিয়ে যে আকাশের দিকে তাকিয়ে যে শরতের পেঁজা তুলোর মতো মেঘের খেলা দেখতে দেখতে কখন যে অপু দুর্গার মতো আমাদের বয়েস ও বেড়ে গেলো তা টের ও পাই না। তাই দুর্গা পূজা বাঙালির চেতনায় এবং সংস্কৃতিতে এক অপরিসীম উৎকর্ষের সূচনা করে। কারণ মা আসছেন। বাঙালির এই প্রাণের পূজা এই বঙ্গদেশে কবে শুরু হয়েছিল তা নিয়ে নানা মতবিরোধ থাকলেও, মোটামুটি ভাবে বলা যায়…
Read More
লকডাউন থেকে বাংলাভাষার পরিত্রাণ চাই

লকডাউন থেকে বাংলাভাষার পরিত্রাণ চাই

স্কুল কলেজ তো এক বছরের ওপর থেকে বন্ধই পড়ে আছে। অফিস-আদালতেও এখন "কার্যত লকডাউন" জারি। এমতাবস্থায় কি ঘরে বসে বসে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন? হাঁপিয়ে উঠেছেন মোবাইল আর সোশ্যাল মিডিয়ায়? নিত্যনতুন রান্নাবান্না, ফেসবুক, ইউটিউবেও আর মন বসছে না? তাহলে আর মন বসানোর চেষ্টাও করবেন না। অনেক তো হলো অন্তর্জাল জড়িত ক্রিয়াকর্ম। এবার না হয় একটু অন্য দিকে মনোনিবেশ করা যাক।এই বন্দিদশায় আরো বেশি করে বাঙালি হয়ে ওঠার চেষ্টা করুন তো। মানে, কিছু বাংলা বই, বাংলা সিনেমার সান্নিধ্যে আসুন। না না, নিজেদের জন্য নয়। প্রধানত বাড়ির খুদেটির জন্যই এই পন্থা অবলম্বন করুন আর খুদেটিকে বাংলা নামক সাগরে সাঁতার শেখাতে হলে আপনাকে তো…
Read More
আলো ছুঁয়ে দেখি

আলো ছুঁয়ে দেখি

জোনাকি দেখিনি…আলোর অভাব বোধও ছিলনা কোনো মাতৃপুরুষ ছিল পাশে, অন্ধকারে একটা জোনাকিজানালার পাশে উড়ে এলে আমি ভেজা চোখেআলো ছুঁয়ে দেখি… ..................মৃন্ময় মাজী
Read More
ক্রস হিলস (ক্রুশ দাড়া)

ক্রস হিলস (ক্রুশ দাড়া)

নিষেধ করেছিলেন অনেকেই, শোনেন নি ফাদার দেসগোদিনস, ফ্রেঞ্চ ফাদার অগাস্টিন দেসগোদিনস ( ফরাসী ভাষায় যদিও "দেগোদে"। তা যাই-হোক, আমি তো অবশ্যই তার নামের বাংলাকরণই করবো, কারণ তিনি এসেছিলেন তো বঙ্গদেশেই, শেষ জীবনও কাটান বঙ্গদেশেই, তা সে যেখান থেকেই আসুন না কেনো) । অনেকের আপত্তি স্বত্বেও প্রায় জোর করেই রওনা দেন তিব্বত। সিল্ক রুট ধরেই যাত্রা, নাথুলা পার হয়ে তার মিশনারী দল নিয়ে পৌঁছে যান তিব্বত, উদ্দেশ্য খ্রিষ্টধর্মের প্রচার। বৌদ্ধ ধর্মের পীঠস্থান তিব্বতের লামারা যে বিষয়টাকে খুব হালকা ভাবে নেবে না, সেটার আঁচ পেয়ে যান পৌঁছানোর মুহূর্তেই। কিন্তু ফাদার দেসগোদিনস নিজ সিদ্ধান্তে অটল, ধর্ম প্রচারের গুরু দায়িত্ব যে তিনি স্বেচ্ছায় তুলে…
Read More
জলপাইগুড়ির রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর বৈশিষ্ট্য

জলপাইগুড়ির রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর বৈশিষ্ট্য

দশভুজা দুর্গার যে মূর্তি 'গন্ধর্বনারায়ণের বংশাবলী'তে কল্পনা করা হয়েছিল, ঐ মূর্তি ধাতুময় হয়ে কোচবিহারের মদনমোহন মন্দিরের সংলগ্ন ভগবতী মন্দিরে স্থাপিত রয়েছে।জলপাইগুড়ির বৈকুন্ঠপুর রাজ এস্টেটের রাজবাড়ির অন্দরমহলে আজও নিত্য পূজিতা হচ্ছেন একই মাতৃমূর্তি।মণ্ডপে যে দশভুজা দুর্গোৎসবের সময়ে আরাধিতা হন, কালের নিয়মে ও আধুনিক যুগের চাহিদায় তা পরিবর্তিত হয়েছে সত্য, ড:চারুচন্দ্র সান‍্যালের লেখায় তা আংশিক প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে।আমার 'রায়কত বংশের রাজর্ষি' বইটিতে ছবির অ্যালবামে আমি ২০০৩ সালে কোচবিহার ও বৈকুন্ঠপুরের প্রাচীনতম দুর্গামূর্তির ফটোকপিটি ছেপেছিলাম।এছাড়াও ২০০২সালে রাজবাড়ির কর্ণধার প্রণতকুমার বসু এবং‌ তদীয় স্ত্রী স্বপ্না বসুর (বর্তমানে প্রয়াতা)সঙ্গে আমি জোড়পাকুড়ি দক্ষিণ পূর্বে খয়েরখাল নামক স্থানে নবমী পুজোর দিন অনুরূপ স্বর্ণ দুর্গার…
Read More
নিধুবাবুর টপ্পা

নিধুবাবুর টপ্পা

মেঘের বিস্তার জানি।হাওয়া এসে উড়িয়ে নিয়ে যায়ইশারা।পুতুলের দোকানে দেখি রোদচশমাতর্জনীতে কপালের ঘামতান্ত্রিকের দিব্যি দিয়ে বলছিনিধুবাবুর টপ্পা ভালো লাগেআমার। .................সুবীর সরকার
Read More
ছেলেটি

ছেলেটি

বিপাশার কলেজে পড়তে পড়তে বিয়ে হয়ে যায়। ছেলে পয়সাওয়ালা বাড়ীর একমাত্র পুত্র, বড় ব্যবসা আছে, তাই বাবা মা আর দেরী করেনি। বিপাশা ঘোর সংসারী এখন - এক ছেলে আর এক মেয়ের মা। ছেলে মেয়ে বড় স্কুলে পড়ে। মেয়ে ক্লাস ফোরে পড়ে, ছেলে ক্লাস এইট এ। মেয়েকে গাড়ী করে স্কূল পৌঁছে দেওয়া আর নিয়ে আসার কাজ বিপাশাই করে। ড্রাইভার আছে। সেদিন মেয়েকে স্কূলে পৌঁছে দিয়ে বাড়িতে এসে যখন গাড়ী থেকে নামছে, মনে হল দূর থেকে কে যেন তাকে দেখছে। আশেপাশে নজর চালিয়ে সে ভাবে কাউকে সে দেখতে পেল না, অথচ সিক্সথ সেন্স বলছে কেউ দেখছিল। মাঝে মাঝেই এটা হতে লাগল এরপর…
Read More
উপসংহার

উপসংহার

কোনো কোনো উপন্যাস শেষ হলে মন খারাপ হয়ে যায়। আমরা যা চাই, শেষে তা পাই না বলেই এই মনকেমন। কোনো একটা চরিত্রের উপর একটা বিশেষ ভালো লাগা জন্মায়। মনে হয় সে যেন আমি নিজেই। তার কষ্টগুলোও আমার, সুখগুলোও। মনে মনে চাই শেষ পর্যন্ত যেন লেখক তাকে জিতিয়ে দেন। লেখক এখানে ভগবান। চাইলেই লেখক তাকে আর আমাকে জিতিয়ে দিতে পারেন। ভগবানের কাছেও চাই, ঠাকুর আমাকে জিতিয়ে দিও। ভেতর থেকে শূন্য হয় তারাই, যারা বাইরে থেকে নিজেদের একটা গন্ডী কেটে নেয়। সমান ভাবে চলতে থাকলে পথ ফুরোয় না। চোখের সামনে নিজেকে ফুরিয়ে যেতে দেখে সাবধান হই। কষ্টে আঁচড় লাগে শরীরে। উপন্যাসটা শেষ…
Read More
ডিলান

ডিলান

সাহিত্যে নোবেল জয় ব্যাপারটা যেন অপ্রত্যাশিত। কন্ট্রোভার্সি আর কন্ট্রোভার্সি। ডন ডেলিলো, হারুকি মুরাকামি কে ছেড়ে বব ডিলান? সঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার! নাহ্, এ নামটা শুধু অপ্রত্যাশিতই ছিল না, অনেকটা অনুচ্চারিতও ছিল।নোবেল কমিটি ডিলানের পক্ষে একটা যুক্তি দাঁড় করিয়েছিলেন, কারণ কমিটিও জানতো, এই পুরস্কারের পক্ষ এবং বিপক্ষ নিয়ে নানা রকমের তর্কবিতর্কের সৃষ্টি হবে। তাই পুরস্কার ঘোষণার পূর্বে নোবেল দেয়ার শুধু যোগ্যতার ব্যাখ্যাই না, কেন গীতিকার শিল্পী বব ডিলান—সে পক্ষেও যুক্তি দেখিয়েছেন। আর সেসব যুক্তি কিন্তু একেবারে ফেলনা নয়। মনে রাখা যেতে পারে—সাহিত্যের প্রথাগত সীমানা ও ঐতিহ্য ভেঙে নোবেল কমিটি একটা দুঃসাহসী কাজ করেছে, এবং করেছে বলেই কিন্তু এর ফলে সঙ্গীতও তো সাহিত্যের মর্যাদার…
Read More
ত্রিকোণ

ত্রিকোণ

"আমাকে হঠাৎ এইভাবে আসতে বলার কারণ!""-কিছুই না,মিঠাইকে ভুলে যান, বিনিময়ে যা চাইবেন তাই পাবেন "-"কী বলছেন এসব !"-" তুই হ্যাঁ তুই আসার পর থেকে আমার মিঠাই আমার থেকে দূরে সরে গেছে , আমার জন্মদিন ভুলে যায় আজকাল ও ,আগে যা করতো না কখনও"-"তাতে আমার দোষ কি!আর এইভাবে তুইতোকারি করছেন কেন!"-"তুই ,শালা তুই না থাকলে এত কিছু হতো না।আমার, আআমার মিঠাই আমাকে ছেড়ে এইভাবে থাকতো না।ইউ ব্লাডি বাস্টার্ড , কেড়ে নিয়েছিস আমার থেকে আমার মিঠাইকে। ডু ইউ নো হাও মাচ আই লাভ হার!শালা হারমি "-"হে আর্য ,মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ ,লিসেন বাডি , ডু ইউ নো সি লাভস মি!"-"সব জানি সব, কিন্তু…
Read More
সংস্কৃতির অঙ্গনে নিউ নরমাল যাপন

সংস্কৃতির অঙ্গনে নিউ নরমাল যাপন

রঙ্গমঞ্চের বর্তমানের প্রথম সারির কুশীলবদের মধ্যে অন্যতম এক নিভৃত আলাপচারিতায় বলেছিলেন যে, ঘন্টা দুয়েকের মঞ্চের লাইভ অ্যাকশন এবং ওই মুহূর্তে দর্শকঠাসা অডিটোরিয়ামের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ায় অবগাহন তাঁর সু-অভিনয়ের অন্যতম অনুঘটক। শুধু নাট্যমঞ্চ কেন, এ কথার প্রতিধ্বনি সংস্কৃতি চর্চার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রের ধারক-বাহকদের মধ্য থেকেই উঠে আসে। দর্শক-শ্রোতার প্রতিক্রিয়াই তো তাঁদের পারফরমেন্সের উন্নতির চাবিকাঠি। অন্ধকার অডিটোরিয়ামের প্রবল জ্যান্ত আবহাওয়াই তো পারে আলোকোজ্জ্বল, রঙিন মঞ্চে ফুল ফোটাতে। তাহলে ... তাহলে এখন কি? গত প্রায় বছর দেড়েক ধরে এই মানুষের মুখে আনন্দ, সুখ-দুঃখ, রাগ ফুটিয়ে তুলবার কান্ডারীরা কেমন আছেন? কেমন আছে তাঁদের সৃষ্টিশীল মানসিকতারা ? বিশ্বব্যাপী থমকে যাওয়ার মুহূর্তের মাঝে তারাও কি স্থবিরতা-আক্রান্ত হয়েছেন…
Read More
লক ডাউনের বিপরীতে

লক ডাউনের বিপরীতে

(১)সকালে সৃষ্টির কাছে হঠাৎ ফোন এলো। অপরিচিত নম্বর দেখে একটু ভ্রু কুঁচকে গেলো। তারপর ফোন টা ধরে," কে বলছেন?""আমি অগ্নিভ, চিনতে পারছ?""হ্যাঁ, সেই তো গতমাসে….তুমি হঠাৎ?""লক ডাউন হলো তো, অসুবিধা হচ্ছে কোনো?""হ্যাঁ, এমাসের বাড়ি ভাড়া দেওয়া এখনও বাকি, তুমি কেমন আছো, আমাদের আর অসুবিধা, জানোই তো সব, নতুন করে কি বলবো, যাকগে বলো ?""আগে বলো ছেলে কেমন আছে ?""ঠিকঠাক, কিন্তু তুমি এসব জিজ্ঞেস করছো?""ছেলের স্কুলের ফিস দিতেও তো সমস্যা হচ্ছে নাকি?""হ্যাঁ, বাট তুমি কি বলতে ফোন করেছ বলো তো ?, এখন কিন্তু কাজ বন্ধ।""জানি, তোমার অ্যাকাউন্ট নম্বর একটু পাঠাও তো, শোনো লক ডাউন যতদিন থাকবে চিন্তা করতে হবে না, আমি…
Read More