গল্প

গল্প   ভেল্লিকদম

গল্প ভেল্লিকদম

ভেল্লিকদম প্রশান্ত কুমার রায় স্কুলটির নাম খারিজা বিদ্যাপীঠ। পেছনে বিরাট বাঁশবন, তারপরেই ধল্লা নদী শ্বাসকষ্ট নিয়ে কোনও রকমে জীবন বয়ে চলে; বয়ে নিয়ে যায় এপারের স্পর্শ ওপারে; কাঁটাতার মনে মনে খুব রাগ করে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে কাঁটাতার থেকে একশ মিটার দুরত্বে স্কুলটি কাঠা দশ জমির ওপর; চার চারখানা ক্লাসঘর; তারই একটি ঘর আকারে বড় থাকায় তিনভাগের একভাগ টিনের বেড়া দিয়ে অফিসঘর বানানো হয়েছে। একটি অঙ্গনওয়াড়ীর ঘর ও মিড-ডে মিলের জন্য চিড়িয়াখানার টিকিট ঘরের মত রান্নাঘর। এত কিছুর মধ্যে খেলার মাঠ শুরু হয়েই শেষ হয়ে যায়। এই স্কুলের শিক্ষক হরিৎ বর্মনের গাছ লাগানোর খুব শখ, কিন্তু উনি কখনোই উনি শখ বলতে…
Read More
পিতা

পিতা

ডাক্তারবাবু বললেন, "এমনি সব ঠিকই আছে,বেবির ওয়েটটা একটু কম আছে l এখনও হাতে তিনমাস আছে, সামান্য ওষুধ দিলেই ঠিক হয়ে যায় এটা l কিন্তু আমি চাইছি না দিতে l আচ্ছা, এখন তো আমের মরশুম, তাই না...?" পরের দৃশ্যকল্প - ঝুড়ি ভর্তি আম চলে এলো সুদূর ডায়মন্ড হারবার থেকে l বন্ধুর নিজের আমবাগানের l এই শহরে নির্ভেজাল ও চরিত্রবান আম পাওয়া দুষ্কর l স্বামী নিজে হাতে আম ছুলে নিয়ে তারপরে কেটে পরিপাটি করে বাটিতে সাজিয়ে নিয়ে আসছেন,আর গর্ভধারিণী গপাগপ সেগুলি খাচ্ছেন l প্রথম সন্তানটি সিস্টের জন্য নষ্ট হয়ে গেছিলো l এবারে তাই সাংঘাতিক সব সতর্ক আয়োজন l ডাক্তার পরিবর্তন, অতএব সেই…
Read More
একটি ব্রিজ আর কিছু কথা

একটি ব্রিজ আর কিছু কথা

বিভূতি বলল, - এটায় উঠতেই হবে! উঠব কীভাবে? থামলে তো! নাকের ডগা দিয়ে হুঁশ করে বেরিয়ে গেল বাসটা। চার নম্বরে রাস্তা অনেকটা বাঁক নিয়েছে। যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সেখান থেকে দেখা যাচ্ছে আলোর সারি। বুঝলাম ব্রিজের জ্যাম খুলেছে। কোচবিহারে আড্ডা দিয়ে সন্ধে নাগাদ হরিশ পাল চৌপথি থেকে বাস ধরেছিলাম। বাণী নিকেতন গার্লস স্কুলের সামনে এসে দীর্ঘ লাইন দেখে বুঝতে অসুবিধে হল না, কপালে দুঃখ আছে! জানা গেল, ঘুঘুমারি রেল ব্রিজে ট্রাক নষ্ট হয়েছে। মেরামতি চলছে। কখন রাস্তা খুলবে ঠিক নেই। এই এক ব্রিজ! সারা ভারতে এরকম আর একটিও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে। রেলের হলেও এই ব্রিজ দিয়ে বাস, ট্রাক, টেম্পো,…
Read More
জয়ের ঠিকানা

জয়ের ঠিকানা

" রেণু, এ্যই রেণু, এখনো ঘুমাচ্ছিস, ওঠ মা, সকাল হয়ে গেছে ।" মায়ের জোরালো কণ্ঠস্বরে গাঢ় ঘুম পাতলা হয়ে গিয়েছিল। ধড়মড় করে রাতের অবিন্যস্ত শয্যার উপর উঠে বসে আলস্য জড়ানো চোখ দুটিকে দু হাত দিয়ে কচলাতে কচলাতে মায়ের দিকে বিস্ফারিত চোখে চেয়েছিল  সেদিনের সেই চার পাঁচ বছরের ছোট্ট মেয়ে রেণু ওরফে আজকের সাহিত্যিক রেণুবালা দেবী । - " কি রে, কি হয়েছে তোর? এত ভয় পেয়েছিস কেন? স্বপ্ন দেখেছিস?" মা ব্যস্ত হয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেই থেকে জীবনের এতখানি পথ পেরিয়ে অপরাহ্নের আলোয় বসে শৈশবের রেণু, আজকের সত্তর উত্তীর্ণা রেণুবালা দেবী, লিখে চলেছেন তার জীবনের এক অলৌকিক অনুভুতির কথা। এক বিচিত্র…
Read More
অন্ধ ভালবাসা

অন্ধ ভালবাসা

কোঙ্কনগড়ের রাজা ভদ্রদেব ছিলেন সুপ্রশাসক। তার রাজ্যের প্রজারা খুব সুখে শান্তিতে বসবাস করতেন। লোকজনের মুখে রাজার বহুবিধ গুণকীর্তন চর্চিত হত। যা তৎসময়ে দেশ দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়েছিল। অনেক সময় অত্যাচারী রাজার হাত থেকে নিজেদেরকে বাঁচাতে, সেই রাজার অনেক প্রজা একটু শান্তিতে বাঁচবার আশায় ভদ্রদেবের শরণাপন্ন হতেন। ভদ্রদেব কখনো কাউকে খালি হাতে রাজ-দরবার থেকে ফেরাতেন না। ভদ্রদেবের দু’ই রানী ছিল। হৈমবতী আর রূপবতী।  রূপে গুণে তারা ছিল নিরূপমা। তবে দু’ই রাণীর মধ্যে কোনো মিল ছিল না। দু’জনে, দু’জনকে সর্বদা হিংসে করতেন। হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া, অঢেল মণি-মানিক্য, প্রচুর ধন-সম্পদ, লোক-লস্কর, সিপাহী-সান্ত্রী, সুখী প্রজা, ভদ্রদেবের সবকিছুই ছিল। তবুও তার মনে কোনো সুখ ছিল…
Read More
রসাস্বাদন

রসাস্বাদন

“ ------- এই যে, প্রকাশ পাড়ুকোনের নাতি, অনেক খেলে ফেলেছো, এবার চাবিটা দিয়ে যাও, আমাদেরও তাড়া আছে।” নেটের ওপাশ থেকে উড়ে আসা শাটলককটা আকাশেই থেকে গেল। এমন কর্কশ গলার আওয়াজ শুনলে চোখ স্থির রাখা যায় নাকি? রাগে গা-টা রি রি করে উঠল। সবেমাত্র ১০-৯ এর লিড নিয়েছিলাম আমরা, আবার ওদের পয়েন্ট! যাইহোক, পকেট হাতড়ে চাবির গোছাটা বের করে একদৌড়ে রেলিঙের ধারে এসে দিলুদার হাতে দিতেই, সে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো, “ তাড়াতাড়ি চলে আয়, আসর বসবে আজ।” তখন অবশ্য ম্যাচ জেতাটা অনেক বেশি জরুরি ছিল আমার কাছে, তাই আসর নামক শব্দটা কানে ঢুকলেও ঘিলু অবধি পৌঁছায় নি। এক দৌড়ে…
Read More
বিকর্ণ

বিকর্ণ

“ তোমার এতো বড় সাহস – আমার মেয়ের গায়ে হাত দাও? তোমাকে আমি জেলে ঢোকাব -এতো বড় আস্পর্ধা !!!!” “ বিশ্বাস করুন ,আপনার মেয়েকে আমি মারতে চাইনি – হঠাৎ করে রাগের মাথায় এক ঘা লাগিয়ে দিয়েছি।“ “জেলের ঘানি টানলে ঐ সব রাগ টাগ উধাও হয়ে যাবে – কত আশা করে আমার আদরের বড় মেয়ের সঙ্গে তোমার আমি বিয়ে দিয়েছিলাম….” “ বিশ্বাস করুন রাগ আমার এমনি আসেনি….. ঝগড়া হল আমার সঙ্গে, সেই রাগে মারতে লাগল আমার তিন বছরের বাচ্চা ছেলেটাকে- আপনার আদরের নাতিকে। মাথার ঠিক রাখা যায়?” “ বাচ্চার প্রতি দরদ শুধুই তোমার একার মনে হচ্ছে? ও কি বাচ্চার মা না?…
Read More
জামাই আদর 

জামাই আদর 

আচ্ছা, জষ্ঠি মাসের ঠা-ঠা রোদ্দুর আর প্যাচপেচে গরমে মানুষের সব রস যখন শুকিয়ে কিসমিস হওয়ার জোগাড় তখন আম, জাম, জামরুল, কাঁঠাল, লিচু, আনারস ইত্যাদি হরেকরকম ফল এত রসালো হয়ে ওঠে কেন বলুন দেখি? কেনই বা ঝাঁকে  ইলিশ সমুদ্রের লোনাজল ছেড়ে গঙ্গা, পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনার মিষ্টি জলের দিকেই ছুটে আসে? আর কেনই বা মাথার ঘাম ছানায় ফেলে বাংলার ময়রারা ক্ষেপে ওঠে কে কার চাইতে পাল্লা দিয়ে ভাল ক্ষীরদই, ছানাবড়া, রসগোল্লা, তালশাঁস, সন্দেশ, রাবড়ি এসব বানিয়ে তাক লাগিয়ে দেবে। কারণ একটাই।স-ব ঐ জামাই বাবাজীদের পাতে পড়বে বলে। বলবেন সে আবার কী! শুধু জামাই বাবাজী কেন? রসিকজন মাত্রেই তো ফি-বছর এই সমস্ত রসালো…
Read More
ফাঁদ

ফাঁদ

-গুড মর্নিং স্যার! -ও তুমি এসেছ তিতাস? শরীর কেমন আছে তোমার? -আগের থেকে বেটার। তবে উইকনেস পুরোপুরি কাটেনি এখনও। -উফ, এই কোভিড যা খেল দেখাচ্ছে! জানিনা আর কত প্রাণ কেড়ে নেবে এই মানুষ খেকো ভাইরাস? যাই হোক, খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করছ তো? -হ্যাঁ স্যার, করছি। আপনি তো জানেন স্যার আমার বাবা নেই। বাড়িতে শুধু মা আর ভাই। ওদের নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। তবে আমাদের বাড়িওয়ালা কাকু-কাকিমা এই কঠিন সময়ে ভীষণ সাহায্য করেছেন। হোম আইসলেশানে থাকার সময় বাজার-হাট সব ওঁরাই করে দিতেন। ভাগ্যিস আমি ছাড়া আর সবার টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভই ছিল। -ভাগ্য সত্যিই সহায় তোমাদের। নাহলে এই ছোঁয়াচে ভাইরাস, গোটা…
Read More
বেওয়ারিশ

বেওয়ারিশ

মানুষ লাশ হলে ভারী হয়। কে না জানে? কিন্তু তাই ব`লে এতটা! প্যাডেলে আরও একটু জোরে চাপ দেয় গনা। সময় মতো পৌঁছতে না পারলে নাহাবাবুর কথা শুনতে হবে। অবশ্য লখনা যখন তাকে খবর দিয়েছিল তখনই বোধহয় লাশটার দিন কুড়ি হয়ে গেছে। লখনার সঙ্গে নাহাবাবুর কী চুক্তি, সেটা প্রাণের বন্ধু হয়েও লখনা কোনদিন খোলসা করে নি। তবে গনাকে খারাপ পয়সা দেয় না সে। গনা বোঝে যে, লখনা নাহাবাবুর কাছ থেকে বেশ ভাল টাকা পায়। না হলে শুধু বইবার জন্য তাকে এতগুলো টাকা দিত না। অবশ্য এই কাজে ঝুঁকি বিরাট। কখন কোথায় কে ধরে বসবে তার ঠিক নেই। গনা তাই সাবধানে দেখেবুঝে…
Read More
প্রেম-টেম

প্রেম-টেম

এখনো এসব খাস? -হ্যা!  সবাই ছেড়ে চলে যায় কিন্তু এ কখনো যায় নাহ্! কি পাস এসব খেয়ে? ক্ষতি ছাড়া তো কিছুই হয় না। - ক্ষতি তো আগেও হয়েছে এটা নতুন করে আবার কি ক্ষতি করবে? কথাটা শেষ হতে না হতেই রিয়া নীলের থেকে সিগারেটটা নিয়ে ফেলে দিলো,  আর বললো কেউ কোথাও যায় নি সব একই জায়গায় আছে, সব তোরই আছে এখনো, শুধু সময় তোর পরীক্ষা নিয়ে চলছিলো এতদিন।। আজ প্রায় চারবছর পর নীল আর রিয়ার দেখা, তারা একে অপরকে ভালোবাসতো কিন্তু অনেক কারণে তারা সেই সম্পর্ক থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছিলো। বেস্ট জুটি হিসেবে তারা বন্ধুমহলে সর্বোচ্চ আসনে আসীন ছিলো।…
Read More
গুরুদায়িত্ব

গুরুদায়িত্ব

ছাদে নাতনিকে কোলে নিয়ে উদ্বিগ্নভাবে পায়চারী করছিলেন সুমনবাবু। --- চাকরি পেয়ে ছেলে এখন পাকাপাকি ভাবে কোলকাতাবাসী। পারিবারিক কলহের জেরে একমাত্র ছেলের সঙ্গে এখন আর কোনো বনিবনা নেই। তবুও তো সে নিজের ছেলে, তাই দুঃখ পেলেও মনে মনে সবকিছু মানিয়ে নিয়েছেন।  ইদানিং সুমনবাবুর মনটা খুব একটা ভালো নেই। --- “আচ্ছা দাদু তারাগুলো অত ছোট ছোট হয় কেন? আর আকাশে কি সুন্দর মিটিমিটি করে জ্বলে? কিভাবে গো!’’, আদুরে মিষ্টি গলায় বলল মামন। সুমনবাবু বললেন, ‘’ওরা তো অনেক দূরে থাকে তাই, তাছাড়া তোমার ঠাম্মি রোজ সন্ধ্যায় গিয়ে ওদের আলো জ্বালিয়ে দিয়ে আসেন।‘’ মামন সাগ্রহে বলল, ‘’কোনটা ঠাম্মি?” সাঁঝ-আকাশে পশ্চিমের উজ্জ্বল সন্ধ্যেতারাটাকে দেখিয়ে সুমনবাবু…
Read More
গঙ্গার মা

গঙ্গার মা

গঙ্গার মা, কাল একটু তাড়াতাড়ি আসবে তো, কত করে বলে দিলাম দাদাবাবুর আজ অফিসের মিটিং আছে, সন্তুর ইন্টারভিউ, মিন্টুর স্কুলে টেস্ট শুরু হবে।কথাটা বলছিলেন দে বাড়ির কত্রী  মনিকা দেবি।তোমাকে এতো করে বললাম তুমি শুনলেনা।অথচ কোনো কিছুর তো বাদ নেই, বৌদি কাল আসবো না আমার ননদ আসবে, পরশু  আমার পেট ব্যাথা করছিলো হাসপাতালে গিয়েছিলাম, তরশু গঙ্গার স্কুল থেকে ডেকে ছিলো, এবার কামাই করলেই মাইনে থেকে কেটে নেবো। গঙ্গার মা চুপ করে কাজে লেগে গেলো। মধ্যিখানে বাড়ির কর্তা রাজীব বাবু বলে উঠলেন ওর কথাটাও তো একটু শোনো,কি জন্য দেরি হলো----কথা টা শেষ হতে না দিয়ে মনিকা চেঁচিয়ে উঠলো, তুমি একদম চুপ করে…
Read More
ভালো মানুষ

ভালো মানুষ

গনেশবাবুর চার ছেলের মধ্যেই মেজছেলে সমরকে নিয়ে চিন্তা।নিজের খেয়ালে চলে ।পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই তাকে কথা শোনাবার।সমর বড়ই স্নেহ প্রবন।বাড়ির ছোটোবড়ো সকলের ভালোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যান। বিএ পাশের পর বিদ‍্যুত পর্ষদে চাকরি পেলো।কয়েকবছর পর কেউ বলে "সমরবাবু চাকরি ছেড়ে বিএড পাশ করলে স্কুলে চাকরি পাওয়া যাবে।ভালো মাইনে আছে।" সমর ভাবলো এটাই ঠিক।। চাকরি ছাড়লো।বাড়িতে কোনকিছু জানানো হয়নি।মা জিজ্ঞাসা করে" সমর অফিস যাচ্ছিসনা কেন?"  অনেক দিন পর আসল কথা বললো।বিএড পাশ করলেন কিন্তু চাকরি কোথায়?যাহোক কোনোরকমে কোলকাতার স্কুলে শিক্ষকতার কাজ পেলেন । প্রধান শিক্ষক তাকে ভালোবাসে।ছাত্রদের বকলে কখনো মারলে সমরবাবু পরে ওদের আদর করে বলতেন" তোদের বেশি লাগেনি তো"?.এমন নরম…
Read More