অব্যক্ত

অব্যক্ত

__"শোনো বড় বৌমা তুমি মাছের কালিয়াটা তুলে রাখ। এমনিতে অনেক বয়স হয়েছে আমার। খাওয়া দাওয়ায় একটু সংযম দরকার। কাল তো সকাল সকাল সব লোকজন এসে পড়বে। তুমি দেখ কোন আয়োজনে যেন ত্রুটি না থাকে। এবার আমি যাই তোমার শ্বশুরমশাইকে পান দিয়ে আসি";এই বলে দুধ দিয়ে অল্প ভাত খেয়ে উঠে যান প্রবীণা গিরিজাদেবী। মাথা নেড়ে শাশুড়ি মার কথায় সম্মতি দেয় চৌধুরী বাড়ির বড় বউ রুমকি। বাড়ির সকলের খাওয়া হয়ে গেছে,শুধু ওর নিজের খাওয়াটাই বাকি। অবশ্য সায় দেওয়া ছাড়া বিশেষ কিছু করারও নেই রুমকির। মরমে আর অনুশোচনার চোরাবালিতে সবসময় ডুবে থাকে ও। অবশ্য তার একটা গভীর কারণ নিশ্চয়ই আছে সেটা হল ওর…
Read More
স্বার্থপর

স্বার্থপর

পাহাড়ের বুক চিরে বেশ জোড়েই চলছে গাড়িটা - সন্ধ্যে নামার আগেই কার্শিয়াং ফিরতে হবে - শৈবালের পাশে বসা অনুর মনে হয় শীত শীত আমেজ ' আউটিংয়ের ' মজাটাকে বাড়িয়ে তুলছে অনেকখানি - ' ড্রাইভিং সিটে ' শৈবালকে বরাবরই চোখ বুঁজে ভরসা করে এসেছে অনু - যদিও এটা শুধু পাহাড়ের চড়াই উতরাইয়ের ক্ষেত্রেই নয় - জীবনের প্রতিটি ওঠা পড়ায় শৈবালের সাহচর্য যে অনুকে কতটা আশ্বস্ত করেছে ও স্বস্তি দিয়েছে তা শুধুমাত্র অনুই জানে। সোনালী এই বিকেলে তাল কাটে একটি টায়ারের বিদ্রোহ ঘোষণার মধ্য দিয়ে - দোকানপাট শূণ্য নির্জন একটা অঞ্চলে গাড়িটা স্থবির হয়ে যাওয়ায় টায়ার পাল্টানোর কাজে অন্য কারো সাহায্য যে…
Read More
কসাই

কসাই

পাকা রাস্তাটা রেললাইনে ওঠার আগেই আর একটা কাঁচা রাস্তা এসে তাকে ভেদ করে সোজা উত্তর দিকে তোর্সা নদীতে গিয়ে ঠেকল। এক সময় এই কাঁচা রাস্তাটাই ছিল শহরে ঢোকার প্রধান সড়ক। পাকা রাস্তা থেকে নেমে তোর্সা নদীর দিকে যেতে হাতের ডান ধারে রমজানের মাংসের দোকান। দোকান মানে হাত চারেক একটা বাঁশ পোতা। আর ফুট চারেক গোলাই দেড় ফুট লম্বা একটি শাল কাঠের ডুম, একটি বালতি, ছোট-বড় দুটো দা, একটি চাকু, হাত চারেক একটি পলিথিনের টুকরো আর একটি ইট। বৃহস্পতিবার বাদে সোম থেকে রবি এই ছয় দিনের কোন দিনই বন্ধ থাকে না রমজানের দোকান। বিক্রিও বেশ ভালো। সকাল ছ'টা থেকে বেলা এগারোটা-বারোটার…
Read More
পার্থ ও তার পংক্ষিরাজ

পার্থ ও তার পংক্ষিরাজ

শহরের উত্তর প্রান্তের অপেক্ষাকৃত অলস ঝিমানো পাড়াগুলোয় কাঠফাঠা দুপুর বাঁ মেঘমেদুর বিকেলের তন্দ্রালসতা কাটিয়ে যদি দরজার কড়ানাড়ার সাথে মিহি মিষ্টি গলায় ডাক শোনেন – একটু মিটারটা দেখব। তবে দরজা খুলে যে ছোটখাটো মানুষটিকে আপনি দেখতে পাবেন সে স্ববিরোধিতায় ভর্তি। চার ফুট দশ কি পাঁচ ফুটের এই মানুষটি সবসময় চনমনে। চোখে বোতলের পেছনের মত মোটা গ্লাস। গালে মাথায় খোঁচা খোঁচা চুল। কৃশ চেহারা। কাঁধে শান্তিনিকেতনি ঝোলা। বয়স অনুমান করা কঠিন। তবে ৩৫ থেকে ৪৫ এর মধ্যে বলা যায়। সবচেয়ে স্ট্রাইকিং হল ওর মুখের হাসি। একটা স্মিত গোবেচেরা হাসি ওর মুখে ঝুলে থাকে সবসময়। অতি বিনয়ী এই লোকটি হল পার্থ। ইলেকট্রিক অফিসের…
Read More
পথ

পথ

‘সব মরণ নয় সমান…’ এই পুরনো গানটাই কিছুদিন হল বারংবার শোনে সায়ন।  কেন শোনে তা ঠিক জানে না। দিনবদলের যে স্বপ্ন তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়, তা খুঁজে চলে বিভিন্ন গল্প-কবিতা-গানে। কিন্তু  হোস্টেলে এসব  গান চালালেই বন্ধুরা টিটকারি করে। সেসব কথা যে খুব গায়ে মাখে তা নয়।  এমনিতেই সে স্বল্পভাষী। অকারণ তর্ক-বিতর্ক এড়িয়েই চলে। অথচ স্কুল থেকেই বিভিন্ন ডিবেট কম্পিটিশনে তার প্রাইজ বাধা। সে   ভাবে, এই অনিশ্চিত জীবনেও সবাই কত নিশ্চিন্তেই না আছে! কারও কোনও হেলদোল নেই!  মাঝে মাঝেই অস্থির হয়ে ওঠে। কাউকেই কিছু বলতে পারে না। নিজের মধ্যে গুমড়ে মরে। তবু গুন গুন করে গেয়ে ওঠে, ‘অন্ধজনে দেহ আলো…’ হোস্টেলের হইহট্টগোলের মধ্যে সে যেন একটি নিঃসঙ্গ…
Read More
ক্রস হিলস (ক্রুশ দাড়া)

ক্রস হিলস (ক্রুশ দাড়া)

নিষেধ করেছিলেন অনেকেই, শোনেন নি ফাদার দেসগোদিনস, ফ্রেঞ্চ ফাদার অগাস্টিন দেসগোদিনস ( ফরাসী ভাষায় যদিও "দেগোদে"। তা যাই-হোক, আমি তো অবশ্যই তার নামের বাংলাকরণই করবো, কারণ তিনি এসেছিলেন তো বঙ্গদেশেই, শেষ জীবনও কাটান বঙ্গদেশেই, তা সে যেখান থেকেই আসুন না কেনো) । অনেকের আপত্তি স্বত্বেও প্রায় জোর করেই রওনা দেন তিব্বত। সিল্ক রুট ধরেই যাত্রা, নাথুলা পার হয়ে তার মিশনারী দল নিয়ে পৌঁছে যান তিব্বত, উদ্দেশ্য খ্রিষ্টধর্মের প্রচার। বৌদ্ধ ধর্মের পীঠস্থান তিব্বতের লামারা যে বিষয়টাকে খুব হালকা ভাবে নেবে না, সেটার আঁচ পেয়ে যান পৌঁছানোর মুহূর্তেই। কিন্তু ফাদার দেসগোদিনস নিজ সিদ্ধান্তে অটল, ধর্ম প্রচারের গুরু দায়িত্ব যে তিনি স্বেচ্ছায় তুলে…
Read More
ছেলেটি

ছেলেটি

বিপাশার কলেজে পড়তে পড়তে বিয়ে হয়ে যায়। ছেলে পয়সাওয়ালা বাড়ীর একমাত্র পুত্র, বড় ব্যবসা আছে, তাই বাবা মা আর দেরী করেনি। বিপাশা ঘোর সংসারী এখন - এক ছেলে আর এক মেয়ের মা। ছেলে মেয়ে বড় স্কুলে পড়ে। মেয়ে ক্লাস ফোরে পড়ে, ছেলে ক্লাস এইট এ। মেয়েকে গাড়ী করে স্কূল পৌঁছে দেওয়া আর নিয়ে আসার কাজ বিপাশাই করে। ড্রাইভার আছে। সেদিন মেয়েকে স্কূলে পৌঁছে দিয়ে বাড়িতে এসে যখন গাড়ী থেকে নামছে, মনে হল দূর থেকে কে যেন তাকে দেখছে। আশেপাশে নজর চালিয়ে সে ভাবে কাউকে সে দেখতে পেল না, অথচ সিক্সথ সেন্স বলছে কেউ দেখছিল। মাঝে মাঝেই এটা হতে লাগল এরপর…
Read More
ত্রিকোণ

ত্রিকোণ

"আমাকে হঠাৎ এইভাবে আসতে বলার কারণ!""-কিছুই না,মিঠাইকে ভুলে যান, বিনিময়ে যা চাইবেন তাই পাবেন "-"কী বলছেন এসব !"-" তুই হ্যাঁ তুই আসার পর থেকে আমার মিঠাই আমার থেকে দূরে সরে গেছে , আমার জন্মদিন ভুলে যায় আজকাল ও ,আগে যা করতো না কখনও"-"তাতে আমার দোষ কি!আর এইভাবে তুইতোকারি করছেন কেন!"-"তুই ,শালা তুই না থাকলে এত কিছু হতো না।আমার, আআমার মিঠাই আমাকে ছেড়ে এইভাবে থাকতো না।ইউ ব্লাডি বাস্টার্ড , কেড়ে নিয়েছিস আমার থেকে আমার মিঠাইকে। ডু ইউ নো হাও মাচ আই লাভ হার!শালা হারমি "-"হে আর্য ,মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ ,লিসেন বাডি , ডু ইউ নো সি লাভস মি!"-"সব জানি সব, কিন্তু…
Read More
লক ডাউনের বিপরীতে

লক ডাউনের বিপরীতে

(১)সকালে সৃষ্টির কাছে হঠাৎ ফোন এলো। অপরিচিত নম্বর দেখে একটু ভ্রু কুঁচকে গেলো। তারপর ফোন টা ধরে," কে বলছেন?""আমি অগ্নিভ, চিনতে পারছ?""হ্যাঁ, সেই তো গতমাসে….তুমি হঠাৎ?""লক ডাউন হলো তো, অসুবিধা হচ্ছে কোনো?""হ্যাঁ, এমাসের বাড়ি ভাড়া দেওয়া এখনও বাকি, তুমি কেমন আছো, আমাদের আর অসুবিধা, জানোই তো সব, নতুন করে কি বলবো, যাকগে বলো ?""আগে বলো ছেলে কেমন আছে ?""ঠিকঠাক, কিন্তু তুমি এসব জিজ্ঞেস করছো?""ছেলের স্কুলের ফিস দিতেও তো সমস্যা হচ্ছে নাকি?""হ্যাঁ, বাট তুমি কি বলতে ফোন করেছ বলো তো ?, এখন কিন্তু কাজ বন্ধ।""জানি, তোমার অ্যাকাউন্ট নম্বর একটু পাঠাও তো, শোনো লক ডাউন যতদিন থাকবে চিন্তা করতে হবে না, আমি…
Read More
রাতের সফর

রাতের সফর

একবিপিন মান্না বলে দিয়েছিল নদী পেরিয়ে জয়রামপুরে যাওয়া কোনও সমস্যাই নয়। তমালের চিন্তার কোনও কারণ নেই। কী কী ব্যবস্থা আছে – বিপিন সব বলে দিয়েছিল। নৌকো, রিক্‌শা, বাস, অটো এবং হাঁটাপথ তো আছেই। এসব বাহনে কেমন করে জয়রামপুরে পৌঁছনো যেতে পারে – সব বুঝিয়ে দিয়েছিল। তবে কীর্তনডাঙা, যেখানে তাদের ব্যাঙ্কের নতুন ব্রাঞ্চ খোলা হয়েছে, সেখান থেকে জয়রামপুরে পৌঁছনোর সবচেয়ে সুবিধাজনক এবং শর্টকাট পথ হল নৌকোয় পাড়ি দেওয়া। সারা বছরই খেয়া চালু থাকে। তারপর সে জয়রামপুরে যাওয়ার বিভিন্ন পথের হদিশ বুঝিয়ে দিয়েছিল।শুনে প্রথমে মনে হয় জয়রামপুর বুঝি এক মস্ত শহর। তমাল অবশ্য আগেই শুনে এসেছিল জয়রামপুর আসলে দুটো নদীর মাঝে প্রায়…
Read More
খেলা

খেলা

বৃষ্টিটা নেমেছিল গতকাল সন্ধের পরপরই। প্রত্যয় সাইকেল নিয়ে সবে বেরিয়েছে বাড়ি থেকে। গন্তব্য গৌতম স্যারের কোচিং ক্লাস। ঢাউস পিঠব্যাগে আছে বইখাতা। গৌতম খাস্তগির শহরের নামকরা শিক্ষক। সায়েন্সের ছাত্র মাত্রেই কেমিস্ট্রির মিস্ট্রি সলভ করতে ছুটে যায় তাঁর কাছে। প্রত্যয়দের ব্যাচে আছে বিভিন্ন স্কুলের দশজন ছেলেমেয়ে। ক্লাস ইলেভেনের গন্ডি পেরিয়ে সক্কলে পৌঁছে গিয়েছে টুয়েলভে। আর তিন মাস পরেই হায়ার সেকেন্ডারির টেস্ট। তাই পড়াশুনা এখন চলছে তুফান মেলের গতিতে। ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি মাথায় করে প্রত্যয় ঢুকল স্যারের বাড়ির গেট খুলে। দোতলায় উঠে প্রথম যে ঘরটা সেখানেই পড়ান স্যার। সদর দরজা খোলাই ছিল। প্রত্যয় সাইকেল লক করে সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেল ওপরে। এখনও কেউ আসেনি।…
Read More
সিরুই খাসঙের প্রজাপতি

সিরুই খাসঙের প্রজাপতি

হসপিটালের বেডে শুয়ে রিনসিম। চারদিন কেটে গেছে। সর্বভারতীয় মিডিয়ার নানা লোকের ভিড় ক'মেছে বাইরে। বাইটও দিচ্ছে না আর রিনসিমের কলিগেরা। রেসিডেন্ট কমিশনার অফ স্টেট, মণিপুর, থেকে তার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে যদিও। খবর নেওয়া হচ্ছে পি এম ও থেকেও। ইতিমধ্যেই পুলিশ ধরেছে তিনজনকে। কিন্তু মূল অভিযুক্ত এখনও ফেরার। নার্স কেবিনে ঢুকে টিভিটা চালালে রিনসিমের কানে এলো এক পুলিশ অফিসার বলছেন যে ওরা বুঝতে পারে নি মেয়েটি ভারতীয়। ভেবেছিল মেয়েটি চীন বা জাপান থেকে এসেছে। আর বিদেশী চামড়ার মোহ এতোটাই যে তারা মেয়েটাকে একা পেয়ে….। মজা করতে গিয়ে ধরা পড়ে যাবে ভাবেনি সেটা। চলন্ত গাড়িতে অবশ্য মজাটা পুরোপুরি করা যায় না। তাও…
Read More
মামাবাড়ি ও কমলিকা

মামাবাড়ি ও কমলিকা

একটা আলাদাই মজা, এমন একটা জায়গা যেখানে যেতে পারলে সব ক্লান্তির অবসান ঘটতো,এমন একটা জায়গা যেখানে যাওয়ার জন্য মন ছটফট্ করতো। সারাটাবছর অপেক্ষায় থাকা কবে জামাইষষ্ঠী আসবে,কবে গ্রীষ্মের ছুটি আসবে বা কবে ফাইনাল পরীক্ষাটা শেষ হবে কবে যাবো সেখানে, হ্যাঁ এরকম অপেক্ষা করার নামই "মামাবাড়ি"।মামাবাড়িতে আমাদের এক আলাদাই স্থান। গোটা পাড়ার লোক আমাদেরকে আমাদের মায়ের পরিচয়ে চেনে,খুব গর্ব হয় তখন। এমনিতে তো সবজায়গায় বাবাদের পরিচয় প্রয়োজন হয় কিন্তু পৃথিবীতে হয়ত মামাবাড়িই একমাত্র জায়গা যেখানে মায়ের পরিচয়ে চেনে আমাদের সবাই।-কিন্তু একবার চিন্তা করুন তো যার মা নেই তাকে মামাবাড়িতে কি পরিচয়ে চিনবে? বছর এগারোর কমলিকা। জন্মের ঠিক কয়েকমাস পরই মা মারা…
Read More
যদি ভুলে যাওয়া যেতো

যদি ভুলে যাওয়া যেতো

কেন এরকম হয়, কেন ওকে দেখার সময় আসলেই বুকের ভেতর পুজোর ঢাক বাজতে থাকে খুব জোরে, মনে হয় যেন শেষ বিকেলের হলুদ আলোটাকে সঙ্গে নিয়ে ও বাড়ি ফিরে যাচ্ছে আর তখনই কেন এমন হাত পা অবশ হয়ে আসে আমার-রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে এসব কথাই ভাবছিল অনিমেষ। পাগলের মতো মেয়েটা টানছে ওকে এখন। যখন যেখানে যায় সবসময় মনের মধ্যে ওর কথা ঘোরে। সকাল সন্ধ্যেতে বাড়িতে যেই বই খুলে পড়তে বসে তাতেও মনে হয় যেন ওর মুখই দেখছে বইয়ের পাতায়। মাঝে মাঝে অস্থির লাগে খুব। মনে হয় এরকম সবসময় যন্ত্রণা পাবার থেকে একটা কিছু হয়ে গেলে খুব ভালো হয়। এরকম সুতোয় ঝুলতে থাকা…
Read More