অবহেলিত

অবহেলিত

এই বকুলবাগানের প্রতিটা লোক প্রায় প্রতিটা লোকের খবর রাখে --- মানে এমনিতেই খবর চলে আসে , জায়গাটা এতই ছোটো ।কারো বাড়িতে বিয়ে অন্নপ্রাশন জন্মদিন যাই হোক না কেন বকুলবাগানের একে অপরের নিমন্ত্রিত সবাই জানে। আবার শোকে তাপেও একে অপরের সাথে আছে ।যেন একটি বর্ধিত পরিবার।আমার বাড়ি পাড়ার শেষ প্রান্তে ।আর ঠিক আগের বাড়িটাই মুখার্জিদের । এখন প্রায় ভগ্ন দশা। পঁয়ত্রিশ বছর আগে আমি এই বকুল বাগানে বাড়ি করি ঐ মুখার্জিদের জমি কিনে নিয়ে ।অবনী মুখার্জী বাড়ির কর্তা ছিলেন। দীর্ঘদেহি সুপুরুষ ---গিলে করা সাদা পাঞ্জাবী ও ধুতিই তাঁর পোষাক। তখন কিন্তু তাদের পড়ন্ত বেলা , কিন্তু বাহ্যিক প্রকাশ ছিল না। মাঝে…
Read More
ধানো মাহালি

ধানো মাহালি

মোবাইলটা লাগাতার বেড়ে যাচ্ছিল, অগত্যা ভেজা গায়েই টাওয়েল জড়িয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে ফোনটা ধরতেই হল। একরাশ বিরক্তি মাখা গলায় প্রশ্ন ছোড়ে সুশোভন, কে বলছেন ? পটাবাবু বলছেন কী? ডাষনামের সঙ্গে ‘বাবু’ যোগ করে নীলপাহাড়ির মানুষ, বড়জোর কার্মাহাটার দু'চারজন পরিচিত ছাড়া ‘সুশোভন' নামেই সবাই ডাকে। -কে আপনি? চিনলাম না তো!" স্বরে আর কাঠিন্য আনে সুশোভন। আমি থানা থেকে বড়বাবু বলছি। এস. সি. মহাপাত্র। আপনি নীলপাহাড়ি চা বাগানের বড়বাবু তো? থানা শুনে মুহুর্তে সুশোভনের স্বরের কাঠিন্য উবে যায়। ইয়েস স্যার… আমিই পটা মানে সুশোভন সাঁতরা। কী ব্যাপার স্যার? - আপনাদের বাগানের একজন লোক সেই সকাল থেকে থানায় বসে আছে। বলছে আপনাকে চেনে।…
Read More
শেষ  বিকেল

শেষ  বিকেল

সকাল থেকেই  ধুপধুপ শব্দটা শুরু হয়েছে।প্রথমে ধীরে একটানা।বেলা বাড়িতেই শব্দটা বাড়তে থাকে আরো জোর  জোরে।আজ আর বাজারে যেতে ইচ্ছা করছে না  সুমনা দেবীর।।সারাদিনের যে মেয়েটা থাকে সঙ্গে-ছন্দা-ওই যায় সঙ্গে । আজ ওকেই পাঠালেন একা।টুকটাক জিনিস।একার সংসারে আর কতটুকু বা লাগে। মেয়েরাও রাগারাগি করে রাস্তা পেরিয়ে দোকান বাজার গেলে।তবু,সকালের দিকে একবার না গেলে ভালো লাগে না।অনেক দিনের অভ্যাস তো। ওদের বাবা চলে গেছেন তা প্রায় বছর দশেক হলো। তারপর থেকে দোকান বাজার দুধ সবই সামলেছেন একা হাতে। অফিস,সংসার,ঘর বাড়ি ছেলেপুলে মানুষ সবই করেছেন.চিরকাল নিজেই।।কোনদিন একটা রান্নার  লোকও রাখেন নি।বড় মেয়ে নন্দিতার বিয়ে হয়েছে,তাও বছর পনেরো হয়ে গেল।ওর বাবা যেদিন চলে গেলেন…
Read More
বৃষ্টি হীন

বৃষ্টি হীন

ঘুম ভাঙ্গতে অভ্যাস মতোই বিছানা থেকে হাঁক মারলো শুভ্র - "বৃষ্টি! চা দিয়ে যাও।বলেই আবার চোখ বুজলো।কিছুক্ষণ হয়ে গেছে। এখনো চা এলো না দেখে, আবার ডাকতে গিয়েই থমকালো। বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।আর কোনো দিনই বৃষ্টি আসবে না। বুকের মধ্যে যতো মেঘই জমুক। কালই আদালতে কলমের এক খোঁচায় চুকে গেছে তাদের সাত বছরের সম্পর্ক। আচ্ছা কলমের কালির একটা দাগের কি এতোটাই শক্তি, যে রবারের মতো মুছে দিতে পারে জীবনের একটা অধ্যায়! ভাবতেই সকালটা যেনো এক বিষন্নতায় ভরে গেলো।বিছানার পাশে রাখা প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে ধরালো। ধোঁয়াটা পাক খেতে খেতে ওপরে উঠে যাচ্ছে। আর স্মৃতির দরজা খুলে যাচ্ছে।…
Read More
সৌদামিনী

সৌদামিনী

গল্পটি একশো বছরেরও আগের ঘটনা অবলম্বন করে লেখা। সৌদামিনী সবে সিঁথির সিঁদুর হারিয়ে বিধবা হয়েছে। কিবা বয়স তার কুড়ি বছর হবে। তার স্বামী মুরালিনাথ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে ভুগে ভুগে শেষে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল। কবিরাজ, বদ্যির ওষুধ বিফলে গেল। সৌদামিনীর কপাল তো সারা জীবনের জন্য পুড়ল। এই কাঁচা বয়সে বিধবা হওয়ার যে কি জ্বালা। একে তো আমিষ খাবারের তার পাঠ চুকল। একাদশীতে পুরো নির্জলা উপোষ থাকতে হয়। তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে আসে। তবুও এক ফোঁটা জল খাওয়ার তার হুকুম নেই। একবার সৌদামিনী  একাদশীর দিন তৃষ্ণার চোটে জল খেতে গিয়েছিল। তখন শাশুড়ী মা তেড়ে এসে তার হাতের জলের ঘটিটা নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে…
Read More
সব গল্পের নাম হয়না

সব গল্পের নাম হয়না

১. "আমার দেশ আমার গর্ব।" এমন একটা উক্তি সব জায়গায় সচরাচর দেখা যায়, আবার এটি শুধু উক্তিই নয় অনেকে এটা মনে প্রাণে মানেন। আমাদের দেশ ভারতবর্ষ, যেখানে সবাই ভাই ভাই, যেখানে অনেক মানুষ বিদেশ থেকে আসেন শুধুমাত্র এখানকার মানুষদের দেখতে। আমাদের দেশের অনেক মানুষ এই কথাটি খুব বেশি পরিমাণে মেনে থাকেন আবার অনেকে শুধুমাত্র স্বাধীনতা দিবস ও প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন লোক দেখানোর জন্য মেনে থাকেন। কথাটা তেতো হলেও সত্য, ওই যে তেতো সবসময় সত্য হয় তেমনই। ঠিক তেমনই বিদেশ থেকে শুধুমাত্র ভারতবর্ষের মানুষকে দেখতে আসেন অনেকে তার কারণ অনেকেই জানেন না কিন্তু। তার আসল কারণ হলো আমাদের দেশের মানুষের ব্যাবহার,…
Read More
ধন্যবাদ

ধন্যবাদ

-"ভাইজান ,রোজা রেখেছেন!"-"নাহ্ ,আমার তো রোজা নেই তবে একাদশী আজ, সারাদিন ফলমূল খেয়ে কাটাচ্ছি"-"ওহ্ ,আমি ভাবলাম আপনি মুসলমান।তাহলে ইফতারিটা একসঙ্গে করতাম আর কি!"-" সমস্যা কী! আপনি বসুন ইফতারি করতে আমি আছি এখানে "-"এ কেমন কথা, আপনি কিছু খেতে পারবেন না, অন্তত ফল খান একটা!"-"দিন! তাহলে আপেলটা দিন,দুটো দিন প্রবলেম না থাকলে"-"আহা ভাইজান , আপনি সবকয়টা খায়েন,আমি আনছি আরও। আজান দিয়ে আসছি,ওয়েট করুন " ফ্ল্যাটের ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তৌফিক যে কখন এসেছে বুঝতেই পারিনি। ছেলেটা বড্ড ভালো।যখন দেশে এতটা সমস্যা হচ্ছে তখন ওরমতো মানুষদের দেখি, কী পরিমাণ ছুটে চলেছে। মানুষের জন্য। সিগারেট ধরালাম।এই শহরে আসার পর থেকে অজস্র মানুষের সাথে পরিচয়…
Read More
দুষ্টুমির আদ্যশ্রাদ্ধ

দুষ্টুমির আদ্যশ্রাদ্ধ

স্কুল পাশ করা ছেলেগুলো কলেজে উঠেছে। সেই কোন কালে মধুবাবু মানে মধুসূদন বর্মন পাড়ায় ক্লাবটা প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছিলো, উনি তো এপাড়ার লোক নন। উচ্চশিক্ষিত লোক, কারখানার কাজের অবসরে সমাজ সেবা করে বেড়াতেন। সেই সুবাদেই এ পাড়ায় নবারুন ক্লাবের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । উনি মহৎ উদ্দেশ্যে করে ছিলেন। পাড়ার মানুষের আপদে বিপদে সবাই সবার পাশে থাকার একটা প্রবণতা থাকে, সে জন্য ক্লাব গড়ে ছিলেন। উনি তো ইহজগত  বেশ কয়েকবছর আগে ছেড়েছেন,তবে তার ক্লাব স্বমহিমায় আছে। তরুন প্রজন্মের  প্রচেষ্টায় নবারুন ক্লাব দাঁড়িয়ে আছে। মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসে। কিন্তু দুষ্টুমিতে কম যায়না। নবারুন ক্লাবে তপন, গৌতম, রাজীব, অরুন, গোকুল ছাড়াও অরো অনেক সদস্য আছে।…
Read More
খড়কুটো 

খড়কুটো 

আবার কেমন মাথাটা ভারী হয়ে গেছে স্নেহার ৷ কাল থেকে গা টাও হালকা গরম ৷ তাই নিয়েই সারাদিন কাজকর্ম সারছে ৷ ইন্দ্রনীল ফিরলে স্নেহা একবার বলার চেষ্টা করল তার শরীরটা খারাপ । কিন্তু ইন্দ্রনীল খুব রুক্ষ ভাবে বলে উঠল,  শরীর থাকলেই খারাপ হবে শুনে আমি কি করব !স্নেহা নিজের ঘরে চলে এল ….এই ধরনের কথা গুলো শুনতে সে অভ্যস্ত ৷ একসময় খারাপ লাগলেও এখন কেমন গা সওয়া হয়ে গেছে ৷ নিজের ভালো মন্দের আলোচনা ইন্দ্রনীল এর সঙ্গে আর করতেই ইচ্ছে হয়না ৷প্রয়োজন এর বাইরে দুজনের কেউই কথা বলে না ৷ঘর আলাদা হয়ে গেছে প্রায় দশ বারো বছর ৷  একসঙ্গে এক…
Read More
বিয়েবাড়ি 

বিয়েবাড়ি 

পড়ন্ত বিকেলে, সূর্য প্রায় নদীর বক্ষে ঢলে পড়েছে, আকাশ হলদে-লাল ছটায় ভরে গিয়েছে যেন কোনো এক পাড়াগাঁয়ের মেয়ের সবে মাত্র বিবাহ সম্পন্ন হয়ে  এই প্রথম কপাল থেকে নাকের ডগায় সিঁদুর গড়িয়ে পড়ল।  আর আকাশের সেই মেঘগুলো যেন কোনো এক  সদ্য স্নান সেরে আসা কিশোরীর ঘন কেশ।  সেদিন ছিলো শ্রাবণ মাসের কোনো এক মঙ্গলবার, গ্রামের এক খানিক উন্নত পাড়ায় ভালোই সম্পদবান কোনো এক বাড়ির সবচেয়ে প্রিয় পুত্রের বিয়ে, বেশ জাঁক জমকভাবে সমস্ত কাজ সম্পাদন করা হচ্ছিলো, রান্নার ঠাকুর ছিলো উড়িষ্যার থেকে ভাড়া করা, নানারকমের মিষ্টির, সরবতের সমাহার ছিলো সেইখানে।  কোনো আয়োজনে কোনোপ্রকার খামতি ছিলো না। অতো বড়ো বিয়েবাড়ি তার ওপর আবার…
Read More
অপ্রতিরোধ্য সত্যকাম

অপ্রতিরোধ্য সত্যকাম

রোহিণী বুঝতে পারছে তার দিন শেষ হয়ে আসছে । একটাই চিন্তা ছেলেটার সঙ্গে দেখা হবে তো ? ছেলেটা এখন দিল্লীতে । কিসের যেন মিটিং আছে । তখন সকলে বলেছিল রোহিণী ছেলেকে লেখাপড়া শেখাবার জন্যে যে নিজের শরীর পাত করছিস এই ছেলে পরে তোকে দেখবে ? একদিন দুপুরে রোহিণীর ঘুম ভেঙে পাশে ছেলেটাকে না দেখে ভাবে ছেলেটা এখন গেল কোথায় ? এই পরিবেশ ভাল না বলে যতটা সম্ভব ছেলেকে আগলে রাখার চেষ্টা করে । তাদের কাজ মানুষকে খুশী করা আর খুশী করতে না পারলেএকটা রাত নষ্ট হয়ে যায় । রোহিণীর এই কাজটা করতে আর ভালো লাগে না কিন্তু না করেও যে…
Read More
সেই মহালয়া আজও…

সেই মহালয়া আজও…

বুড়ির পাট থেকে ফিরতি পথ ধরতেই দুদ্দাড় ছুটে বেরিয়ে গেল মা সন্তোষী নামের বাসটি। ভাগ্যিস লাফিয়ে রাস্তার ধারে চলে গিয়েছিলাম! না হলে বোধহয় বিপদ একটা হতই। উঠেছি সেই ভোরবেলায়। উঠোনে থাকা শিউলি গাছের তলা তখন সাদা ফুলে ঢাকা। ঝেঁপে ফুল এসেছে এবার। শিউলির মো মো গন্ধে আর ভোরের হালকা ঠান্ডায় কেমন একটা নেশা লাগছিল। হাতে তখনও গত রাতের মাংসের সুবাস। বৈষ্ণব বাড়ি বলে মাংস রান্নার ব্যাপার কম আমাদের। যেদিন হত সেদিন বেশ সাজো সাজো রব পড়ে যেত। রান্নাঘর থেকে অনেকটা দূরে আমাদের শোওয়ার ঘরের বারান্দায় মা আর বড়কাকিমা মাংস রাঁধতেন। ঘরে বসে প্রেসার কুকারের সিটি গুণতাম। একসঙ্গে সবাই খেতে বসা…
Read More
সেই সাধের ছাদটা

সেই সাধের ছাদটা

তুহিনের সাথে আমার যখন বিয়ে ঠিক করেন আমার বাবা, তখনই আমার এ বিয়েতে আপত্তি ছিল | কারণ, তুহিন আর আমি স্বভাবে, চরিত্রে, মানসিকতায় সম্পূর্ণ বিপরীত | তুহিনের বেশ বড়ো প্রমোটিংয়ের ব্যবসা, এলাকায় যথেষ্ট প্রতিপত্তি, সাথে অনেক অর্থ | আমার বাবার একসময়ের বন্ধু ছিলেন তুহিনের বাবা | কিন্তু বেশ অনেকদিন হয়েছে তিনি গত হয়েছেন | কিন্তু তুহিনের পরিবারের সাথে আমার বাবার বেশ সুসম্পর্ক ছিল | সেই সুসম্পর্কের সূত্র ধরেই আমার বাবা তুহিনের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেন | আমি তখন সদ্য স্কুলে চাকরি পেয়েছি | চাকরির সাথে বিভিন্ন নৃত্যনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি | আমার জীবনের একটা বড়ো অংশ ছিল নাচ | আমার…
Read More
নীরব অনুভূতি

নীরব অনুভূতি

খাবার টেবিলে বসে বিজন স্ত্রী দীপালির উদ্দেশ্যে বলল_ আজ আশ্বিন মাসের ক'তারিখ? কেন বাংলা তারিখের হিসাব করছ কেন? ষোলো। বলল দীপালি। না এমনিই।ছেলের কথা মনে পড়েছে বুঝি? আরও আট দিন আছে, ন'দিনের মাথায় ছেলে আসবে। ছাব্বিশ তারিখে মহালয়া মহালয়ার দিন থেকে রূপমের কলেজ ছুটি। বিজন বাবুর একমাত্র ছেলে রূপম। বিহারের এক কলেজে অধ্যাপনা করে। ভ্যাকেশন না হ'লে সচারচর বাড়ি আসতে পারে না। এদিকে রোজ খাবার সময় বাপ-মার ছেলের কথা মনে পড়ে। মা কষ্ট পাবেন ভেবে বিজনবাবু মুখ ফুঁটে কিছু বলেন না। দীপালি প্রায় দিনই খেতে বসে বলে, ছেলেটা যে আজ কি দিয়ে খেলো! হোটেলের রান্না , এক দিনও বোধহয় বাছা…
Read More