রাজ্য ও রাজ্যপালের দ্বন্ধের মাঝেই মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হলো মুখ্যমন্ত্রীর আচার্য পদ

রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের মাঝের দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। দাবি উঠেছে রাজ্যপালকে সমস্ত পদ থেকে সরানোর। এই দাবিতে অবশেষে স্থির হলো রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদে বসবেন মুখ্যমন্ত্রী। এই বিষয়ে আরও একধাপ এগোলো রাজ্য সরকার। মন্ত্রিসভায় এই বিষয়টি অনুমোদিত হয়েছে। এরপর বিল নিয়ে এসে বিধানসভায় পাশ করানোর অপেক্ষা। রাজ্যপাল এই মুহূর্তে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদে রয়েছেন। রাজ্যের সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাত তীব্রতর জায়গায় রয়েছে। সেখানে আচার্য পদে রাজ্যপালকে কিছুতেই আর দেখতে চাইছে না রাজ্য সরকার। শিক্ষামন্ত্রী অতিসম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করার বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই বিষয়টি এখন চূড়ান্ত কার্যকরী হওয়ার রাস্তায় চলছে।

কেবল বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নয় স্বাস্থ্,  কৃষি, প্রাণী, মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হিসেবেও অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এরপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদে বসবেন। রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরকে ওই পথ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শক পদে বসানো হচ্ছে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীকে। রাজ্য সরকার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছে। এই দাবি আরও একবার করতে শুরু করল বিরোধীরা। চলতি মাসেই বিধানসভা অধিবেশন শুরু হবে। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রীকে অধ্যক্ষ করার বিষয়ে বিল নিয়ে আসতে পারে রাজ্য সরকার, একথা মনে করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মন্ত্রিসভায় পরে বিধানসভাতে বিলটি পাশ হয়ে যাবে, একথা নিশ্চিত।

কিন্তু তার পরেই দেখা দিতে পারে সমস্যা। রাজ্যপালকে এই বিলটিতে সই করতে হবে। তাহলে সেটি আইন হবে। কিন্তু রাজ্যপাল এই বিলে সই করবেন কি? প্রশ্ন থাকছেই। কারণ, জগদীপ ধনকর নিজে এই বিলের বিপক্ষে। অনৈতিকভাবে আচার্য পদ থেকে তাকে সরানো হচ্ছে। এই বিষয়ে তিনি আগেই সরব হয়েছিলেন। কাজেই তিনি বিলে সই না করলে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না। তাহলে কি করা যেতে পারে? রাজ্য সরকার এই বিলের উপর অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারে। সেই অর্ডিন্যান্স সময়সীমা ছ’মাস কার্যকরী থাকে। দ্বিতীয়বারের জন্য রাজ্যপালের কাছে বিলটি পাঠানো হতে পারে। দ্বিতীয়বার রাজ্যপাল সেই বিলে সই করতে নারাজ হতে পারেন। সেইসময় বিলটি রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। তাতেও বিস্তর সময় লাগবে। তাই আচার্য পদে কে থাকবেন, তাই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘসময়ের টানাপোড়েন দেখা যাবে বলে অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।

শিক্ষা ব্যবস্থায় অরাজকতা চলছে। রাজ্য সরকার শিক্ষাকেন্দ্রগুলিকে ব্যবহার করছে। এই অভিযোগ রাজ্যপাল করেছিলেন। উপাচার্যদের অনৈতিকভাবে নিয়োগ করা হচ্ছে। স্বজনপোষণ নীতি চলছে শিক্ষাক্ষেত্রে। জগদীপ ধনকর একাধিকবার এই বিষয়গুলোতে সরব হয়েছিলেন। রাজ্যের সঙ্গে রাজ্যপালের সম্পর্ক সাপে-নেউলে। সেই সম্পর্কের অবনতি প্রায়শই লক্ষ করা যায়। বৈঠকের জন্য উপাচার্যদের রাজভবনে একাধিকবার ডেকেছিলেন রাজ্যপাল। কিন্তু কোনও উপাচার্য সেই বৈঠকে সাড়া দেননি। প্রতিবার রাজ্যপাল একা উপস্থিত থেকেচেন সেখানে। আরও বেশি করে রাজ্য সরকারের স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছিল। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সম্প্রতি ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন এবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য থাকুক মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যপালের আর প্রয়োজন নেই। তারপর থেকেই এই বিতর্ক আরও মাথাচাড়া দিয়েছে।