বন্দে ভারত এবং শতাব্দী এক্সপ্রেসের বাইরে উত্তর হবে শূন্য ,এনজেপির ভবিষ্যৎ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন

যেভাবে নিউ জলপাইগুড়ি জংশন থেকে একের পর এক ট্রেন অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তাতেও আরও জোরালো হয়ে উঠছে দক্ষিণবঙ্গে যাওয়ার পাহাড়িয়া এক্সপ্রেসকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কানাঘুষোয়। হাওড়া হয়ে দিঘা যাওয়ার সাপ্তাহিক ট্রেনটিকে আলিপুরদুয়ার জংশন না হলেও, সেবক স্টেশন থেকে চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। আর এই পরিকল্পনা বাস্তাবায়িত হলে নিউ জলপাইগুড়ি জংশন বা এনজেপি থেকে ছেড়ে কলকাতা যাওয়ার ট্রেন কয়টি থাকল? সপ্তাহে ছয়দিন চলা বন্দে ভারত এবং শতাব্দী এক্সপ্রেসের বাইরে উত্তর হবে শূন্য। আর এমন পরিস্থিতির জন্যই এনজেপির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এনজেপিকে যখন বিশ্বমানের স্টেশন হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে, তখন কেন কলকাতাগামী ট্রেনের ক্ষেত্রে কোটা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনটির?

দশ-বিশটা নয়, এনজেপি ছুঁয়ে চলে ১৩৮টি ট্রেন। এর মধ্যে এনজেপি থেকে ছাড়ে এবং এখানে ফিরে আসে ২১টি ট্রেন। এর মধ্যে রয়েছে উদয়পুর, নয়াদিল্লি, চেন্নাই, অমৃতসরের মতো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়ার ট্রেন। কিন্তু কলকাতার খাতা খুললে সাপ্তাহিক পাহাড়িয়া এক্সপ্রেস এবং দিনের আলোয় চলা চেয়ারকার বন্দে  ভারত ও শতাব্দী এক্সপ্রেস। অথচ একটা সময় দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের মধ্যে চলা একাধিক ট্রেনের উৎস (যেখান থেকে ছাড়ে) এবং গন্তব্য (যেখানে যাত্রা শেষ হয়) স্টেশন ছিল এনজেপি। দার্জিলিং মেল (প্রথমে চলত শিলিগুড়ি টাউন স্টেশন থেকে), কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস, পদাতিক এক্সপ্রেস সহ একাধিক ট্রেনের যাত্রা শুরু হত এবং ফিরে আসত এনজেপিতেই। কিন্তু পর্যায়ক্রমে ট্রেনগুলিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অন্যত্র।

ট্রেনগুলি তো এনজেপি হয়েই চলাচল করছে এবং যাত্রীদের ওঠানামার জন্য যথেষ্ট সময়ও থাকে তাহলে সমস্যাটা কোথায়, প্রশ্ন তোলেন অনেক রেলকর্তা। কিন্তু টিকিট সংরক্ষণের কোটা যে কমে যায়, সেই প্রসঙ্গটা অনুচ্চারিত থেকে যায় তাঁদের বক্তব্যে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, একের পর এক ট্রেন এনজেপির হাতছাড়া হলেও তা নিয়ে কোনও আন্দোলন সংগঠিত হয়নি এখানে। সংরক্ষিত টিকিটের কোটা বা সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রভাব কিন্তু পড়ছে পর্যটনেও। যে কারণে পর্যটন মরশুমে ট্রেনের টিকিটের হাহাকার দেখা যায়। অনেক মানুষেরই জানা নেই, এনজেপির পরিবর্তে অন্য স্টেশনের নাম লিখলে মিললেও মিলতে পারে ট্রেনের টিকিট। এজেন্সিগুলি কিন্তু এই সুযোগকেই কাজে লাগায়। এনজেপির নিজস্ব ট্রেন না থাকার জন্য যে পর্যটনে প্রভাব পড়ছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন ইস্টার্ন হিমালয়া ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স ‌অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস চক্রবর্তী। তিনি বলছেন, ‘একের পর এক ট্রেনকে এনজেপি থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে স্টেশনটির গুরুত্ব যে কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। কেন এমন করা হচ্ছে, কিছুতেই বোঝা যাচ্ছে না। এনজেপির জন্য নিজস্ব ট্রেন অত্যন্ত প্রয়োজন।’