কেটে গিয়েছে প্রায় এগারোটা বছর তার পরেও হয়নি কোনো সুরাহা৷ তাই এবার বালির তৃণমূল নেতা তপন দত্ত খুনের ঘটনায় ১১ বছর পর সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। বৃহস্পতিবার এই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চ৷ বিচারপতি জানান, তপন দত্ত খুনের ঘটনায় তদন্ত প্রক্রিয়ায় চালাবে সিবিআই৷ এমনকী এই মামলার বিচারপর্বও চলবে সিবিআই-এর বিশেষ আদালতে৷
২০১১ সালের ৬ মে৷ গুলি করে খুন করা হয় বালির তৃণমূল নেতা তপন দত্তকে। এই ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল নেতা কর্মী-সহ ১৩ জনের নাম জড়ায়। মামলা নিম্ন আদালত থেকে এই মামলা কলকাতা হাই কোর্ট এমনকি সুপ্রিম কোর্টেও যায়। কিন্তু গত ১১ বছরে সুবিচার পাননি নিহত তপন দত্তের স্ত্রী প্রতিমা দত্ত। এই ঘটনার এক দশক পরেও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা শাস্তি পায়নি।
রাজ্য সরকারের নির্দেশে তপন দত্ত খুনের মামলায় তদন্তভার গ্রহণ করেছিল সিআইডি৷ তদন্তের পর তারা জানায়, জলাজমি ভরাটের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন তপনবাবু৷ সে কারণেই তাঁকে খুন হতে হয়েছে। ২০১১ সালের ৩০ অগাস্ট মামলার চার্জশিট পেশ করে সিআইডি। ওই চার্জশিটে হাওড়ার একাধিক তৃণমূল নেতার উল্লেখ ছিল৷
২০১১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর আদালতের কাছে আরেকটি সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করে সিআইডি। সেখানে কোনও কারণ উল্লেখ ছাড়াই ন’জনের নাম বাদ দেওয়া হয়৷ যাঁরা প্রত্যেকেই হাওড়ার তৃণমূল নেতা। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে তথ্যপ্রমাণের অভাবে এই মামলা থেকে বেকসুর খালাস পান চার্জশিটে নাম থাকা বাকি পাঁচ অভিযুক্ত।
তবে ২০১৭ সালে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নিম্ন আদালতের সেই রায় খারিজ করে দেয়। হাই কোর্টের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যায় অভিযুক্তরা৷ কিন্তু, হাই কোর্টের নির্দেশই বহাল রাখে শীর্ষ আদালত৷ সেইসঙ্গে হাই কোর্টকেই দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেয়।
তপনবাবুর স্ত্রী প্রতিমা দত্তের দাবি, তাঁর স্বামীর হত্যার সঙ্গে জড়িয়ে হাওড়ার তৃণমূল নেতা (তথা রাজ্যের মন্ত্রী) অরূপ রায়, কল্যাণ বসু, ষষ্ঠী গায়েন-সহ তৃণমূলের একাধিক নেতা ও বিধায়ক৷ এদিন কলকাতা হাইকোর্টের এই নির্দেশের পর তিনি বলেন, ‘‘সিবিআই তদন্ত চেয়েছিলাম।
আমার মনে হল প্রশাসনের মুখে একটা থাপ্পড় মারতে পেরেছি। আমি খুশি। সিবিআইয়ের ওপর আস্থা রয়েছে। অন্যায় যারা করেছে, তাদের শাস্তি দিয়েই ছাড়ব। সাংঘাতিক কষ্ট। বাড়িতে থাকি বন্দির মতো। দরজাও খুলতে পারি না৷ পুলিশ বলে গিয়েছে৷ আমার যা ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষতিপূরণ কে দেবে?’’