আমেদাবাদ থেকে মাত্র ৭৫ কিমি দূরে, বরসাদ রোডের আনন্দের জিতোদিয়া গ্রামে বহু প্রাচীন, প্রায় হাজার বছরের প্রাচীন বৈজনাথ মহাদেব মন্দিরে অবস্থিত স্বয়ম্ভু শিবলিঙ্গ থেকে পবিত্র জল বের হয়। হাজার বছর ধরে প্রবাহিত এই জলের রহস্য আজও অধরা। এই প্রাচীন মন্দিরটি প্রায় 1017 বছরের পুরনো।
কথিত আছে এখানে ভীম পূজা করেছিলেন : পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, বর্তমান জিতোদিয়া গ্রামের স্থানটি বহু বছর আগে ‘হিন্দবা-বন’ নামে বিখ্যাত ছিল। সেই সময় ভীম হিড়িম্বা কে বিয়ে করেন এবং তার সাথে এই বনে থাকতেন। কথিত আছে যে ভীম শিবকে পূজা করার জন্য শিবলিঙ্গের সন্ধান করেছিলেন, তখন এই শিবলিঙ্গটি জান্ডিয়ার মাঝখানে পাওয়া গিয়েছিল, যা ভীম পূজা করেছিলেন। ধীরে ধীরে সময়ের কালচক্রে শিবলিঙ্গটি আবার মাটির নিচে ঢাকা পরে যায়!
এও জানা যায়, গরুর দুধ নিজে থেকেই বেরিয়ে ঐ শিবলিঙ্গের স্থানে ঝরে পড়তো! মন্দিরের পুরোহিত তিলকভাই গোস্বামীর মতে, 1212 সালে গুজরাটে রাজা সিদ্ধার্থ জয় সিং সোলাঙ্কির শাসন কালের একটি প্রচলিত কাহিনী অনুসারে একটি গোয়ালের গাভী সবসময় একটি নির্দিষ্ট জায়গায় যেত এবং তার বাট থেকে দুধ আপনা – আপনি বেরিয়ে আসতো। গো – পালক এ বিষয়ে সঙ্গীদের জানালে সবাই সেখানে খনন করে, এবং সেখানে এই শিবলিঙ্গ বের হয়েছিল। খননের সময় আঘাতের কারণে শিবলিঙ্গে কিছু দাগ পড়ে যায় এবং পরবর্তী সময়ে সেই গর্ত থেকে ধীরে ধীরে জল বের হতে থাকে, যা দেখে সেই সময় সবাই হতবাক হয়ে যায। বিষয়টি রাজার কাছে পৌঁছলে তিনি শিবলিঙ্গটিকে পাটনের সহস্র লিঙ্গ পুকুরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে মহাদেব স্বপ্নে পরম শিবভক্ত মাতা মিনালদেবীকে আদেশ দেন যে, এই শিবলিঙ্গটি ভগবান শিবের একটি অমূল্য উপহার, এর থেকে যে জল বের হয় তা গঙ্গার জলের মতোই বিশুদ্ধ। অতএব, এই শিবলিঙ্গটি ভাঙাগড়া করবে না এবং এটি যেখান থেকে বের হয়েছে সেখানেই এটি নির্মাণ করো। তার ফলস্বরূপ রাজা সিদ্ধার্থ 1212 সালে এখানে শিব মন্দির তৈরি করেন।
এদিকে মুঘলদের হাত থেকে এই মন্দির বাঁচাতে বহু সাধু – সন্তরা আত্মবলিদান দিয়েছিলেন! মুঘল শাসনকালে বৈজনাথ মহাদেব ও তাঁর মন্দির ভাঙার বহু চেষ্টা করা হয়েছিল। এমতাবস্থায় মন্দির বাঁচাতে গোসাই ও ঋষিরা নিজের জীবন বলিদান দিয়েছিলেন, যাদের সমাধি মন্দিরের কাছেই রয়েছে। মন্দিরের সিঁড়ি বেয়ে উঠলে ডান দিকে, গোসাই এবং ঋষিদের 75 টি সমাধি রয়েছে যারা মন্দিরটিকে বাঁচাতে নিজেদের জীবন বলিদান দিয়েছিলেন এছাড়াও মন্দির চত্বরে রয়েছে ভৈরবনাথ, হনুমন্ত, জলরাম বাপা, সাইবাবা, শনিদেব ও সন্তোষী মাতার মন্দির। জিতোদিয়ায় অবস্থিত বৈজনাথ মহাদেব মন্দিরে শিবলিঙ্গ থেকে প্রবাহিত জলের রহস্য এখনও অটুট। এই রহস্য জানতে, 1903 সালে, খেদার তৎকালীন কালেক্টর, প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের সহায়তায়, জল বিজ্ঞানীদের ডেকে তাদের তদন্ত করিয়েছিলেন, যাতে এটি সামনে আসে যে এই জল গঙ্গা নদীর জলের মতোই বিশুদ্ধ। বহু বছর পরও প্রকৃতির এই মহিমা কেউ এখনো জানতে পারেনি। এখনো একই ভাবে শিবলিঙ্গ থেকে জল বের হয়। এই শিবলিঙ্গটি মাটি থেকে তিন ফুট উঁচু। শিবলিঙ্গের সামনে 25 টি ছোট – বড় গর্ত রয়েছে। মাঝখানের গর্তটির ব্যাস দেড় ইঞ্চি। গঙ্গাজলের মতো বিশুদ্ধ জল এই ছিদ্র দিয়ে অবিরাম প্রবাহিত হয়ে চলেছে যা আজও এক অদ্ভুত রহস্যময়!