৪ ফুটের রডের মাথায় কাঁটা বসানো অস্ত্র ছিল চীনা ফৌজের হাতে

১৯৭৫ সালের পর থেকে ভারত-চীন  সীমান্ত পৃথিবীর সবচেয়ে শান্ত সীমান্তগুলোর অন্যতম বলে একটা তত্ত্ব প্রচলিত ছিল সামরিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। কিন্তু, সেই ধারণা বদলে গিয়েছে সোমবার রাতে লাদাখের গলওয়ান উপত্যকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায়। অতীতে দুই বাহিনীর মধ্যে হাতাহাতি, ধস্তাধস্তি, পাথর ছোঁড়াছুঁড়ির ঘটনা সামনে এসেছে বারবার। তবে এবার চীনা জওয়ানরা যা নিয়ে হামলা করল, তা গোলা-গুলির থেকেও ভয়ঙ্কর ‘অস্ত্র’ বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
প্রায় চার ফুট লম্বা লোহার রড। তার মাথার দিকে এক থেকে দেড় ফুট অংশে সারি সারি পেরেকের মতো ধারাল কাঁটা লাগানো। এ রকমই বেশ কিছু কাঁটা লাগানো লোহার রড উদ্ধার হয়েছে  সংঘর্ষস্থল থেকে। সেই প্রসঙ্গ টেনে ভারতীয় সেনার নর্দার্ন কমান্ডের এক শীর্ষকর্তা ফোনে বলেন, আমরা আঁচই করতে পারিনি, এমন কোনও অস্ত্র নিয়ে হামলা করবে চীনের জওয়ানরা। পাথর বা লাঠি নিয়ে হামলা হয়েছে, কিন্তু এবারের অস্ত্র যেন সবকিছুর থেকেই আলাদা। অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল অরুণ রায় জানালেন, গোলাগুলির বদলে যে অস্ত্রগুলি উদ্ধার হয়েছে, তা অনেক বেশি প্রাণঘাতী। তেজস যুদ্ধবিমানের বাঙালি পাইলট তথা বায়ুসেনার অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার শুভাগত জোয়ারদারের কথায়, হাতাহাতির বদলে চীনের জওয়ানদের এখন উদ্দেশ্য ভারতীয় সেনাদের ক্ষতবিক্ষত করে দেওয়া। যে কারণে তারা এমন মারাত্মক অস্ত্র ব্যবহার করছে। বিশেষজ্ঞদের কথায়, লাদাখ থেকে অরুণাচল পর্যন্ত ভারত-চীন সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ হাজার ৩৮০ কিলোমিটার। লাদাখে হোক বা অরুণাচলে, উত্তরাখণ্ডে হোক বা সিকিমে, কোথাও স্থায়ীভাবে চিহ্নিত কোনও সীমান্তরেখা নেই। নিয়ন্ত্রণ রেখাই কেবল আলাদা করে রেখেছে দুই দেশকে। স্বাভাবিকভাবে সঙ্ঘাতের এটাই সবচেয়ে বড় কারণ বলে দাবি তাঁদের। এক সেনাকর্তার কথায়, একটা বিষয় খুব পরিষ্কার— চীন পরিকল্পিতভাবেই হামলা করেছে। ওদের জওয়ান সংখ্যা সেই সময় উপস্থিত ভারতীয়দের তুলনায় অনেকটাই বেশি ছিল। ফলে যে অস্ত্র চীনারা ব্যবহার করেছে, তার পাল্টা ভারতীয় জওয়ানদের হাতে পাথর ছাড়া আর কিছুই ছিল না। ফলে ওই কাঁটা লাগানো বিশেষ অস্ত্র দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে আমাদের জওয়ানদের। সেনা সূত্রে খবর, যে চার জওয়ানের অবস্থা সঙ্কটজনক ছিল, তাঁদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। বেশিরভাগেরই মাথায় আঘাত রয়েছে। এদিকে, নয়াদিল্লি থেকে সেনাকে প্রয়োজন অনুযায়ী রসদ কেনার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়ন্ত্রণরেখায় মোতায়েন সেনাকর্মীদের জন্য ‘বডি আরমার’ বা এক বিশেষ ধরনের বর্মের মতো পোশাক পাঠানো হচ্ছে। এই পোশাক ধারাল অস্ত্রের আঘাত রুখতে পারবে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্র।