স্মৃতির হিমালয় যখন বই হয়ে ধরা দেয়

পার্থ নিয়োগী ঃ ভারতীয় সংস্কৃতি তথা আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে হিমালয় এক বিশাল ভূমিকা নিয়ে আছে। দেশ বিদেশের বহু মানুষ ও পর্যটকরা তাই বারবার ছুটে যায় হিমালয়ে। প্রাচীন কাল থেকে হিমালয়কে নিয়ে লেখা হয়েছে বহু বই। তবুও আজ হিমালয় রয়ে গেছে অজানা। এই বিশ্বে বহু মানুষ আছে যাদের কাছে পাহাড় ভালো লাগেনা। তাই তাদের কাছে হিমালয় থেকে গেছে ব্রাত্য। তবে এর বিপরীতে এমন কিছু মানুষ আছে যাদের কাছে প্রথম দিকে হিমালয় অত ভালো না লাগলেও , পরবর্তী সময়ে সেই হিমালয় হয়ে গিয়েছে তাদের ভালোবাসার অন্যতম প্রধান স্থান। আর সেই ব্যাক্তিরা যদি হিমালয়কে নিয়ে বই লেখে তবে সেই বই নিয়ে পাঠকের আগ্রহ একটু হলেও বেশি হবে। কেননা যে হিমালয় তাদের প্রথম দিকে একদমই টানতনা। হটাৎ এমন কি হোল যে সেই হিমালয় হয়ে উঠল তাদের ভালোবাসার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। এমনই একজন ব্যাক্তি হলেন ডঃ সৈকত মুখোপাধ্যায়। ছোটবেলা থেকেই সৈকত বাবুর সমুদ্র খুব ভালো লাগত। ভারতের প্রায় সব সমুদ্র তট তিনি ভ্রমণ কয়েছেন। নেহাত বাধ্য হয়ে কয়েকবার পাহাড়ে গিয়েছেন। পাহাড়ের শান্ত পরিবেশ ছিল তার কাছে অপছন্দের। কিন্তু সময় অনেক সময় বদলে দেয় মানুষ কে। আর সেটাই হয়েছে সৈকত বাবুর ক্ষেত্রে। আর এই পরিবর্তনের পেছনে তার শ্বশুর মশায় গোরাচাঁদ চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। ২০০৩ সালে গোরাচাঁদ বাবুর মৃত্যুর পর সময়ের সাথে সৈকত বাবুর অবচেতনেও এক পরিবর্তন এসেছিল যা স্বীকার করে নিয়েছেন খোদ সৈকতবাবু। ছবি আঁকাও তাঁর অন্যতম ভালোবাসার জায়গা। সেই ছবি আকাতেও ক্রমশ সৈকত বাবুর ক্যানভাসে স্থান পেতে লাগল পাহাড়। ক্যানভাস থেকে বাস্তবেও হিমালয়ের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ করে বেড়ালেন তিনি। তার স্মৃতিতে পরিপূর্ণ হল হিমালয়ের বিভিন্ন স্থানের অভিজ্ঞতা । এরপর চলে এল সেই অতিমারি। সারা বিশ্ব গৃহবন্দি। চারপাশের এই মৃত্যুমিছিল দেখে তিনিও স্বাভাবিকভাবে ক্লান্ত হয়ে উঠেছিলেন। তার ছোটবেলার এক বন্ধু সবসময় সৈকতবাবুকে উৎসাহ দিয়ে বলতেন সৈকত বাবুর পাহাড়ের বিভিন্ন তীর্থক্ষেত্র ভ্রমণের অভিজ্ঞতা লিখে ফেলার কথা । আর সেখান থেকেই এই বই টির জন্ম। আসলে করোনা অতিমারির সময় মানেই এক অন্ধকারময় সময় নয়। এই অন্ধকারের মাঝেও আলোর পথ দেখাতে হয়েছে অনেক সৃষ্টি। আর তার এক বড় উদাহরন হল ‘ হিমালয় তীর্থ ও আমি’ বইটি। পাঠকের সুবিধার্থে আলাদা আলাদা করে কেদারনাথ, তুঙ্গনাথ ও চন্দ্রশিলা, বদ্রীনাথ, কল্পেশ্বর,ধারী মা, বৈষ্ণোদেবী কে তিনি অসাধারন কলমের জাদুতে বই এর পাতায় লিপিবদ্ধ করেছেন ঠিক যেভাবে ক্যানভাসে তিনি রং তুলি ধরতেন। ‘হিমালয় ও আমি’ শীর্ষক লেখায় নিজের সাথে হিমালয়ের সর্ম্পক তুলে ধরে বইটিকে যেন আরও প্রানবন্ত করে তুলেছে। হিমালয়ের তীর্থ স্থান নিয়ে বইটি হলেও কেবল আধ্যাত্মিক গুরুগম্ভীর ভাবে বইটি তুলে না ধরে অনেকটা এডভেঞ্চার স্টাইলে হিমালয়ের তীর্থস্থান বর্ণনার মাধম্যে এক নতুনত্ব লেখার ভাবনা তুলে ধরেছেন। যারজন্য বইটি পাঠকের কাছে আরও গ্রোহনযোগ্য হয়ে উঠেছে। তীর্থস্থানের রঙ্গিন অনবদ্য ছবিগুলোও বইটির নাম ও বিষয়বস্তুকে আরও সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছে। প্রচ্ছদ নিজেই করেছেন লেখক। এতে তার সামগ্রিক ভাবনার বিস্তার বইটির উৎকর্ষতাকে তুলে ধরেছে।