স্বাধীনতার পঁচাত্তর ও হীরক সামন্তের মেটামরফোসিস

আমি ভাই সাতে-পাঁচে থাকি না। ঝুট ঝামেলায় জড়াই না। লাফরা দেখলেই যঃ পলায়তি জপে লাফ দিয়ে কেটে পড়ি। পরমহংসের বাণী একটু মডিফাই করে সন্তানদেরও বীজ মন্ত্রে দীক্ষিত করেছি, জীবনে বাঁচো পাঁকাল মাছের মতো। সমাজটাই এখন পাঁকে ভর্তি। তোমার গায়ে যেন পাঁক না লাগে। প্যাঁক-প্যাঁক দেখেছ তো। আরে বাবা প্যাঁক প্যাঁক হল গে হংস মানে হাঁস। তোমরা তো আবার বাংলা বোজো না। হংস হল মহাজ্ঞানী। মহা ধড়িবাজ। দুধে জল মিশিয়ে দাও। জলটা ফেলে রেখে দুধটা ঠিক মেরে দেবে। কী শিখলে? মরাল অব দি স্টোরি কী? সেটা হলো ফোকাসটা ঠিক রাখো। পাঁকে থেকেই পদ্ম হয়ে ফুটে বের হতে চেষ্টা করো। সময়মত ক্রিমটা তুলে নিতে শেখো।

পরমহংস বলেছেন সংসারে থাকবি, সব দায়দায়িত্ব পালন করবি কিন্তু কোনও আসক্তি যেন না জন্মায়। মন পড়ে থাকবে তাঁর প্রতি। অর্থাৎ কিনা সমাজে আছো সামাজিক হয়ে থাকার ভানটুকু করে যাও। এই বারখাওয়া সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে সোশ্যাল হওয়া খুব সহজ। হোয়াটস অ্যাপ, ফেবুতে তেড়ে স্ট্যাটাস দাও সমাজের অবক্ষয়, দুর্নীতি, ভন্ডামি, ছ্যাবলামি, নোংরামির বিরুদ্ধে। তবে স্ট্যাটাসটা যেন বেশ প্রগতিশীল, মারকাটারি টাইপ হয় (দেখো আবার, সেটি যেন রাজনীতির কেউকেটাদের পশ্চাতে হুলদংশন না করে বসে। তাহলেই রাষ্ট্র তোমায় ১২৪- এ নম্বর খাঁড়ায় হাড়িকাঠে শহীদ করে ছেড়ে দেবে)। বরং এক আধটা কবিতা ঝাড়তে পারো। যে কবিতার পঁচাত্তর শতাংশ বিমূর্ত রয়ে যাবে। পাঠক বোঝার জন্য মাথা চুলকোতে থাকবে । শেষের চারটে লাইনে শুধু তোমার সমাজসচেতন বিদারী-হৃদয়ের চিড় ধরা ক্লিভেজ টুকু আঁচল খসিয়ে দেখিয়ে দেবে, ব্যস। হাততালি জুটে যাবে। আর কী চাই। কিন্তু মনে রেখো দিনের শেষে তুমি গোপাল। তোমার আলটিমেট টার্গেট হলো রুপোর চাঁদমারি। অর্জুনের সেই পাখির চোখ লক্ষ্যভেদ করার মতো। গোপালকে চেনো তো! ওহো, তুমি তো আবার ইংরিজি…। বর্ণপরিচয় পড়নি। গোপাল বড় সুবোধ। তার বাপ মা যা বলেন সে তাই করে। এটুকুই জেনে রাখো।  সারাদিন গালে দাড়ি, কাঁধে ব্যাগ, জিনসের ওপর চে-গ্যাভেরা, গিন্সবার্গ কিংবা ডিলানের ছবি আঁকা প্রিন্টেড টি সার্ট , লালন কিংবা মহিনের ঘোড়াছাপ পাঞ্জাবি পড়ে যতই প্রগতিবাদী বাক্যি ঝাড়ো আর কুলোপানা চক্কর কাটো না কেন ওটা তোমার আউটার পার্ট।  দিন ফুরোলে তুমি ঢোঁড়াগোপাল । ফিরে আসবে সেই গর্তেই। ফিরে আসতেই যে হবে। হোম সুইট হোম। গোপাল হয়ে গর্তে বসে রাত জেগে পড়াশোনা করবে। লক্ষ্য তোমার এআইজেইই, আইআইটি, পোস্টডক্, আইআইএম, নিদেন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সরণী। গ্রে-ম্যাটার কিছু কম পড়িলেও কুছ পরোয়া নেই। ম্যায় হুঁ না। এই যে এতগুলো বছর সরকারি উচ্চপদে একঠ্যাংয়ে মাছরাঙা হয়ে উচ্চাসীন রইলাম তা কি এমনি এমনি। এমন একটি মাস যায়নি অন্তত গোটা দশেক শাসালো মাছ আমার শিকার হয়নি। তবে হ্যাঁ, কাজের ব্যাপারে আমি পাক্কা ছিলাম। এক হাতে দাম অন্য হাতে কাম। কর্মে ফাঁকি দিইনি কস্মিনকালেও। আমার (উ)পরি-সেবায় কেউ ক্ষুণ্ণ হয়নি কোনও দিন। বরং লোকে আমায় খুঁজে বেড়াতো সর্টকাটে কাজ হাসিল করতে। আরো বছর দুই টিঁকে যেতাম বহাল তবিয়তে। কিন্তু ওই শা….সরি ঐ মানে ভিজিলেন্সের বাড়াবাড়িটা শুরু না হলে…যাকগে ভলান্টারি নেবার আগে পরিষেবা দিয়ে যা সেবা নিয়েছি তাতে আমার দুই পুরুষ বসে খাবে। তবু সন্তানদের পরমুখাপেক্ষী করিনি। তাদের বলে গেছি এগিয়ে যাও। ঐ যে বিবেকানন্দ কি যেন বলে গেছেন না, ওঠো ছোটো, প্রাপ্য বরান নিবোধত। অর্থাৎ প্রাপ্যটা বুঝে নাও। যে করে হোক লক্ষ্যে পৌঁছলেই তো মোক্ষ। একলাখির পার্কস অ্যান্ড স্যালারি। ফরেন ভিসা। অ্যাব্রডে ব্রড প্রসপেক্ট। একবার ইউএস, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, বা অন্য যেখানেই টেক অফ করো না কেন ব্রাইট ফিউচার।  বাট নট ইন দিস কান্ট্রি।

যদিও কবি বলে গেছেন ‘ধনধান্য পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা, তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা।’ দ্বিতীয় লাইনটা বুঝতে হবে। ওটাই কবিতার জান্। ওতেই দূরদর্শী কবি যা বলার বলে গেছেন। ‘ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা। ” কবিরা বড় মারাত্মক হন। এমন ইনার মিনিং ছেড়ে যান যে বুঝতে কালঘাম ছুটে যাবে। লাইনটা এতদিন বাদে কিছু মানুষ বুঝতে শিখেছে বটে। স্বপ্ন আর স্মৃতি দুটোই বায়বীয়। মোস্ট আনরিয়ালিস্টিক অ্যান্ড ইমম্যাটেরিয়াল ।  স্বপ্ন দেখতে দেখতে পঁচাত্তর বছর পেরিয়ে গেল আজও ভারত জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন নিতে পারল নি। না একেবারে যে পারেনি তা নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পেছন থেকেও তো গুনতে শিখতে হয়। তাছাড়া এই যে একশো তিরিশ কোটির মানবসম্পদ সেও কি কম কথা। সারে যাঁহা সে আচ্ছা হিন্দুস্তাঁ হামারা। কি সুন্দর লিরিকস। কদম কদম বাড়ায় যা খুশিকে গীত গায়ে যা। আহা স্বাধীনতা দিবস কি গণতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে যখন চারপাশে বেজে ওঠে বুকের ভেতরটাতেই  মনে হয় যেন লালকেল্লা বা রেড রোডের প্যারেড চলছে। সত্যি, দেশের কথা বলতেই  কেমন যেন মোচড়, কেমন যেন একটা ইয়ে মানে….মানে ঠিক বোঝানো যাবে না ফিলিংসটা। বুকের ভেতরটা কেমন যেন শ্মশানের বাতাসের মতো হু হু করে ওঠে নামগুলো শুনলে। সুভাষচন্দ্র,ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকি, বিনয়-বাদল-দীনেশ, মাস্টারদা, ভগৎসিং-শুকদেব-রাজগুরু কি সব মানুষ ছিলেন ওঁরা। কি সব দিন চলে গেছে। অগ্নিযুগ। সব আজ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা। আচ্ছা, ‘আমাদের গ্যাছে যে দিন একেবারেই কি গ্যাছে। কিছুই কি নেই বাকি।’ এই তো…এই তো রবীন্দ্রনাথ বেরিয়ে গেল ফস করে মুখ দিয়ে( হুঁ হুঁ বাবা, পড়াশুনোটা করিচি। সেই কোন কালে পড়া। এখনও ভুলিনি)। যাক গে যা বলছিলাম, আবার ফেরানো যায় না কি দিনগুলো? ফিরলে ঠিক ঝাঁপিয়ে পড়তাম। কেমন যেন উসখুস করতে থাকে আজকাল মনের ভেতরটা জানেন। ভাবতে ভাবতে রক্ত গরম হয়। মুঠো পাকিয়ে আসে। আসলে কি এই স্বাধীন দেশে শত্রুপক্ষট যে কে সেটা চিহ্নিত করে উঠতে পারছি না। কে শোষক, কারা শোষিত,আদৌ শোষিত কিনা ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। ইংরেজরা আরো কিছুদিন থেকে গেলে বেশ হতো। আমার এই তীব্র দেশপ্রেম দেখানোর একটা প্লাটফর্ম পাওয়া যেত। আর ঠিক এই কথাটাই কাল চায়ের দোকানে আলটপকা যেই না ছেড়েছি স্বদেশদা ক্যাঁক করে চেপে ধরেছিল।

একদা আগুনখেকো রাজনীতি করতেন স্বদেশ দা। সেই রাজনীতির সুবাদে শরীরটা অষ্টবক্রমুণির মত হয়ে গেছে। সারা মুখে কাঁচাপাকা দাড়ি। উস্কোখুস্কো চুল। ক্রাচে ভর দিয়ে চলেন। সকালে বাড়ি থেকে এসে চায়ের দোকানে বসে খবরের কাগজ পড়েন, চা খান আর বিড়ির পোঁদে ফুঁ মেরে ফস করে একের পর এক বিড়ি ধরান। গোটা পাঁচেক বিড়ি ফুঁকে কাগজটা আদ্যোপান্ত পড়ার ফাঁকে চশমার ওপর দিয়ে জুলজুল করে মানুষ জরিপ করেন। কথাবার্তা বিশেষ বলেন না। শুধু শোনেন। তবে কেউ রাজনীতি বা দেশ সম্পর্কে আধখ্যাঁচড়া জ্ঞান নিয়ে বেশি মাতব্বরি মারতে এলে তাকে ছেড়ে কথা বলেন না। ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলো মায় টলি-বলি গুলে খাওয়া লোকটার সামনে পড়ে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা হয় অপোনেন্টের। সেই স্বদেশদা আমার কথাটা কপ্ করে লুফে নিলেন।

-” কী বললি রে হীরক? স্বাধীন দেশে শত্রু খুঁজে পাচ্ছিস না! সত্যজিতের গণশত্রু দেখেছিস? ইবসেনের এনিমি অব দ্য পিপল?”

-” ইয়ে- হ্যাঁ- মানে… ” আসলে আমি বুঝতেই পারিনি কাগজের আড়ালে পেছনে স্বদেশদা বসে। জানলে কি আর নিজেকে বিপন্ন করে তোলে কেউ।

-” পুরো দেশটাই তো শত্রুতে ভরে গেছে রে। গণশত্রু সিনেমাটা দেখলে বুঝবি নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য কিভাবে একদল স্বার্থান্বেষী মানুষ গোটা মানবজাতিকে বিপন্ন করে তোলে। তোর চারপাশে এমন শয়ে শয়ে শত্রু ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেশের শত্রু, দশের শত্রু, মানবতার শত্রু। শত্রুর অভাব নেই। খুঁজে নে আর ঝাঁপিয়ে পর দেখি। দেখি তোর কলজেয় কত দম। “

বুঝে গেছি অস্থানে খাপ খুলে ফেলেছি। ভাগ্য ভাল আমাকে সেদিনকার মতো রেহাই দিয়ে বিড়ির শেষাংশটুকু নর্দমায় ছুঁড়ে দিয়ে শুধু মাত্র কয়েকটি কথা বলে আমার দিব্যচক্ষু উন্মীলন করে গেসলেন, ” একটু তলিয়ে দেখলে হয়ত দেখবি তুই নিজেই দেশের শত্রু। এই যে একটু আগে চা খেয়ে প্লাস্টিকের কাপটা রোডে ছুঁড়ে দিলি, কোনও সভ্য দেশের শিক্ষিত নাগরিকের কি এটা করা উচিত? আসলে আমরা নিজেরাই ঠিক নই। উই আর টোটাল কনফিউজড। কনফিউজড না হলে কি আর সব জেনে শুনেও গণশত্রুদের ভোটে জেতাই। ” বলে মুচকি হেসে চলে গেলেন স্বদেশদা।

আমি নুন পড়া জোঁকের মতো গুটিয়ে, মাথার ভেতরে সব তালগোল পাকিয়ে বসে আছি বেঞ্চের কোণায়। ঠিক এমন সময় টিং টিং করে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজটা ঢুকলো। আলতো চোখ বোলাতে গিয়ে পুরো মেসেজটাই আমাকে গিলে খেলো। মেসেজটা এমন,” ধরুন একটি ভোটে তিনজন প্রার্থী। তাদের একজন ক-ভোট পেল ৪৩%, খ-পেল ৩৮%, খ-পেল ১৯%। অর্থাৎ ৫৭% মানুষ ক- বাবুকে পছন্দ করে না, ৬২%পছন্দ করে না খ-বাবুকে, আর ৮১% পছন্দ করে না গ-বাবুকে। এবারে ধরুন গ-বাবুকে যারা ভোটে জিতিয়েছেন  সেই ১৯% ভোটারকে বলা হলো ক আর খ বাবুর মধ্যে একজনকে ভোট দিয়ে বেছে নিতে। দেখা গেল এবারে ক বাবু পেলেন ৬% আর খ বাবু পেলেন ১৩% ভোট। অর্থাৎ এবারে মোট ৫১% ভোট পেলেন খ আর ৪৯% পেলেন ক বাবু। তার মানে দুজনের মধ্যে বিচার করতে গেলে হিসেবটা উল্টে যাচ্ছে। সুতরাং দেখা গেল জনগনের মতামত পরিস্কার নয়। ভোটারস আর টোটাল কনফিউজড।

দেশের জনগণের আশি শতাংশই আজ স্ববিরোধী। জনগণ দুর্নীতিমুক্ত সমাজ চাইবে অথচ আখের গোছাতে ঘুষ দিতে পেছপা হবেনা, চাইবে তার কাজগুলো সরকার ঠিক সময়ে করে দিক অথচ নিজে কোনও কাজ সময়ে করবে না। জমি অধিগ্রহণের বিরোধিতা করবে অথচ নিজে সুযোগ পেলে জায়গা দখল করে ঘর বানাবে। জনগণ চাইবে সরকার উন্নয়ন করুক অথচ নিজে ট্যাক্স ফাঁকি দেবে। জল, বিদ্যুৎ এসবের দেদার অপচয় করবে  অথচ আধঘণ্টা বিদ্যুৎ-বিভ্রাট ঘটলেই সরকারকে দূষতে ছাড়বে না। যত্রতত্র নোংরা ফেলে পরিবেশ দূষণ করবে অথচ মিউনিসিপ্যালিটির গাড়ি ময়লা নিতে না এলেই ক্ষোভে ফেটে পড়বে। চাইবে দেশটা শোষণমুক্ত, দুর্নীতি মুক্ত সুন্দর হয়ে উঠুক অথচ ভোটের বাক্সে সেই দুর্নীতিবাজকেই নির্বাচিত করবে। আসুন আমরা প্রত্যেকে আগে নিজেকে বদলাই। তারপর স্বপ্ন দেখি সুন্দর একটি উন্নত দেশের।”

পড়া শেষ করে আরো ঘেঁটে গেলাম। কী করা উচিত বুঝে উঠতে পারছি না। একটু আগে দুটো লটারির টিকিট কেটেছিলাম। রোজ স্বপ্ন দেখি বড়সড় দান মারলে কলোনির দিকে আরে দু একটা প্লট কিনে রাখব। একটা ছোটখাটো গাড়ি হলে মন্দ হয় না। দোতলার ওপর আরেকটা ফ্লোর বাড়িয়ে নিয়ে ভাড়া দিতে পারলে প্রতি মাসে কড়কড়ে দশ, বিশ হাজার ইনকাম। হতচ্ছাড়া মিডলটাই খেললো না। টিকিটটা ছিঁড়ে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলতে গিয়েও দলা পাকিয়ে হাতে রেখে দিলাম।

হাঁটতে হাঁটতে ঘরমুখো হয়েছি। একটু দুরে নর্দমার কাছে গিয়ে ছেঁড়া টিকিটটা  ফেলে দিলাম। হঠাৎ কেন যেন মনে হল মনের ভেতর বৈরাগ্যের পোকাটা মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে। এবারে বড় দানটা মারলে সব টাকা দান করে দেব কোনও বৃদ্ধাশ্রম বা অনাথ আশ্রমে। নয়তো দুঃস্থদের সেবায় বিলিয়ে দেব। সন্ধে নামছে। ঘরে ঢোকার মুখে দেখি পাড়ার বাচ্চারা আয়োজন করছে স্বাধীনতা দিবস পালনের। কাল সকালে পতাকা উঠবে। তেরঙ্গা। তিনটি রঙ। মনে পড়ে যাচ্ছিল তারাপদ স্কুলের ইতিহাসের ভাদুড়ীস্যার বুঝিয়ে দিচ্ছেন, গৈরিক হল ত্যাগের, ত্যাগ থেকে আসে শান্তি, পরের রঙটি তাই সাদা, শান্তির প্রতীক। আর যে জাতি ত্যাগ ও শান্তির সুললিত বাণী প্রচার করে আসছে যুগ যুগান্ত ধরে সারা বিশ্বে শৌর্যে সেই জাতিই সেরা। তাই সবুজ হল শৌর্য বীর্যের প্রতীক।

গুলিয়ে যাচ্ছে। ভীষণ গুলিয়ে যাচ্ছে স্যার। সব তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। আমি এই হীরক সামন্ত আজ টোটাল কনফিউজড। সাতে- পাঁচে থাকি নি এতকাল। শুধু নিজেরটাই ভেবে এসেছি। ‘দেশ’ বলতে বুঝেছি মানচিত্র আর দশ বলতে টেবিলের নিচে…. থাক স্যার, ওগুলো ভাবতেই লজ্জা করছে। আজ একি হল! বৈরাগ্যের অতিকায় পোকাটা যে গ্রাস করে ফেলল আমায়! আমার  কী হবে স্যার! এই বাড়ি, জমি, ব্যাংক-ব্যালান্স, মিউচুয়াল ফান্ড, শেয়ারে ইনভেস্টমেন্ট ওসবের কী হবে? আমার দু’ দুটো ছেলে। একজন আমেরিকা, অন্যজন ব্যাঙ্গালোর। সব বিলিয়ে দিলে ওরা তো পথে বসবে। মানসিকতার অভিমুখ ঘোরাতে চাই আপ্রাণ। আবার ফিরে যেতে চাই সাতে-পাঁচে না থাকা ঐ নির্ঝঞ্ঝাট জীবনে। কিন্তু তুমি একি করলে ঠাকুর পরমহংসদেব। নরেনের শরীরে আঙুল ছুঁইয়ে তাকে এই ব্রহ্মান্ড দর্শন করিয়েছিলে। স্বদেশদা আর ঐ হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজটা যে আমার সেই দশা করে ছাড়ল গো। 

সাতে-পাঁচে না থাকা আমি চোখের সামনে এখন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি দোদুল্যমান দুটি সংখ্যা ৭ ও ৫। কাল ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস। স্বাধীনতার প্লাটিনাম জয়ন্তী বর্ষ। আজ রাতেই  যদি মেটামরফোসিস ঘটে গিয়ে গণশত্রু হীরক সামন্ত দানবীর হীরক সামন্তে পরিণত হয়ে যায়। কী হবে তাহলে পরমহংসদেব? বলুন না ভাদুড়ীস্যার। বলুন না যদি এমন হয় তাহলে..।

……………… সুকান্ত নাহা