শুকনো অশ্রু

“পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম: পিত্য হি পরমং তপঃ।
পিতরি প্রীতিমাপন্নে প্রীয়ন্তে সর্বদেবতা।।”

না, এই শ্লোকটার মমার্থ-
আমার ছোটবেলায় জানতাম না।
বাবা মানে এমন একজন,
যে, খুব বদমেজাজী ও গুরুগম্ভীর।
বাবা মানে একজন শাসক, শাসনই তাঁর অস্ত্র।
কিছু দুষ্টুমি করলেই,
“এই তোর বাবাকে বলে দেব কিন্তু!”
বাবা মানে রক্তচক্ষু, আর দাবড়ানি!
বাবা মানে একজন পাষাণ, হৃদয়হীন!
যে তার সন্তানের চোট লাগলে-
ছুটে গিয়ে হাউ হাউ ক’রে কাঁদে না! 
বাবা মানে স্নেহহীন একজন!
দূরদেশে থাকে পয়সার আশায়! 

ভুল.. ভুল.. ভুল ভাবি আমরা!
সমস্ত ধারণাযই মিথ্যে! 
আসলে বাবা হ’লো একজন পুরুষ!
এটাই তাঁর অপরাধ! 
পরিবার/সমাজের লোক তাঁকে, সেই চোখেই দেখে! এভাবেই তাঁরা তাকে গড়ে তুলেছেন! 
সে ইচ্ছে করলেই পারে না তাঁর সন্তানের কাছে থাকতে!   
কারণ তার হাড়ভাঙা পরিশ্রমেই-
ফুটে উঠবে ছোট্ট সোনার মুখে হাসি! 
সে আধপেটা খেলেই-
সকলের মুখে জুটবে পরিপূর্ণ খাবার! 
সে নাইট শিফট গেলেই তবেই-
বাড়ির সকলে রাত্রে স্বস্তিতে ঘুমাবে! 
সে ছেঁড়া পোশাক পড়লেই-
নতুন পোশাক পরে ঘুরে বেড়াবে তাঁর পরিবার ও সন্তান!
তা’হলে তোমরাই বলো;
সে কাঁদলে কেমনে চলে? কেমন একটা বেমানান লাগে না! 
সে কাঁদলে তুমি আমি উচ্চস্বরে হাসবো,
আর নির্দ্বিধায় আঙুল বাড়াবো আর বলবো,
“ন্যাকামো দেখো, যতসব মেয়েলিপনা।”
বাবা মানে তাঁর শরীর ধাতুর।
সেই শরীর কখনো অসুস্থ হ’তে নেই! তাই-
তাঁকে কংক্রিটের প্রাচীর বানিয়ে নিতে হয় হৃদয়ের চারিপাশে! 
আর সেই চারদেওয়ালেই  বন্দি থাকে-
তার আবেগ..গুমরে মরে কান্না..তাঁর ইচ্ছা! 

বাবা মানে যেন সেই ক্রুশ বিদ্ধ যীশু!
শত আঘাতেও যে অবিরত হেসে যায়!
আর পান থেকে চুন খসলেই তাঁকে দোষী সাজায়!
জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে মানিয়ে নিতে হয় তাঁকে!
না-হলেই বিপত্তি!
জীবনের দেখা স্বপ্নগুলো একে একে দিক হারায়!
কলুর বলদের মতো সংসারের ঘানি টেনে যায়! 
তবুও কোথাও যেন তাঁরা পিছিয়ে পড়ে।
এই সমাজের দৃষ্টিতে!
কত অভিযোগের আঙুল তাঁর দিকে! 
জীবনের সায়ংকালে,
সব বিলিয়ে সে যখন ক্ষান্ত,
হয়তো বা শেষ সলতেটুকু!
আমরা সন্তানেরা হিসাব চায়;
“কি করেছো জীবনে?”…
“কি রেখে যাচ্ছো আমাদের জন্য?”…
হয়তো চোখের কোণটা চিকচিক করে উঠে তাঁর!
তবুও সে হেসে বলে,
“দেখ বাবা, মাফ করে দে, সাধ্যমত যতটা পেরেছি…!”
বিধাতাও বোধহয় তখন ক্রুর হাসি হাসেন!!!

……………. সৌমেন দাস