এক
বিপিন মান্না বলে দিয়েছিল নদী পেরিয়ে জয়রামপুরে যাওয়া কোনও সমস্যাই নয়। তমালের চিন্তার কোনও কারণ নেই। কী কী ব্যবস্থা আছে – বিপিন সব বলে দিয়েছিল। নৌকো, রিক্শা, বাস, অটো এবং হাঁটাপথ তো আছেই। এসব বাহনে কেমন করে জয়রামপুরে পৌঁছনো যেতে পারে – সব বুঝিয়ে দিয়েছিল। তবে কীর্তনডাঙা, যেখানে তাদের ব্যাঙ্কের নতুন ব্রাঞ্চ খোলা হয়েছে, সেখান থেকে জয়রামপুরে পৌঁছনোর সবচেয়ে সুবিধাজনক এবং শর্টকাট পথ হল নৌকোয় পাড়ি দেওয়া। সারা বছরই খেয়া চালু থাকে। তারপর সে জয়রামপুরে যাওয়ার বিভিন্ন পথের হদিশ বুঝিয়ে দিয়েছিল।
শুনে প্রথমে মনে হয় জয়রামপুর বুঝি এক মস্ত শহর। তমাল অবশ্য আগেই শুনে এসেছিল জয়রামপুর আসলে দুটো নদীর মাঝে প্রায় একটা দ্বীপের মত অঞ্চল। সেই অঞ্চলের লোকজনের ভালোমন্দ, সুবিধা-অসুবিধা দেখার জন্য ইদানীং সবাই যেন খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিপিন মান্নার কথা সুরেও বেশ একটা হামবড়া ভাব ছিল। শুনেটুনে তমাল বুঝতে পেরেছিল ওপার থেকে আসা লোকজন সবাই কেন ব্যাঙ্কের কাজকর্ম তাড়াতাড়ি সেরে ফেলতে চায়। যেন মেট্রো কিংবা লোকাল ট্রেন ধরার তাড়া আছে সবার। মাঝে মাঝে ঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা শুনে প্রথমে সে ব্যাপারটা অত খেয়াল করে দেখেনি। ঘটনার বিশদে না যাওয়ার প্রবণতা তমালের চিরকালের দোষ। যার মুখে যা শোনে, বিশ্বস্ত শ্রোতার মত চুপচাপ শুনে যায়। তারপর কী হল, কেমন করে হল, এ রকম আবার হয় নাকি – এসব কথার ভেতরে সে কোনও কালেই যায় না। কোথাকার একজন মানুষের মাথায় একুশ বার বাজ পড়েছে, এখনও সে দিব্যি বেঁচে আছে – শুনেও সে এমন হাসিমুখে কথকের দিকে তাকায় – স্পষ্টই বোঝা যায় সে বিস্মিত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বক্তাকে অবিশ্বাস করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।
এপারে কীর্তনডাঙা, ওপারে জয়রামপুর। মাঝে চম্পানদী। খেয়ানৌকোয় চম্পা পেরিয়ে জয়রামপুরের বিশাল ফসলের খেত শেষ করে কেউ যদি সোজা পশ্চিমে যেতে থাকে, তার পথ শেষ হবে আর একটা নদীর কিনারায়। সে নদীর নাম মালতী। দুই বোনের মত এই দুই নদীর মাঝের দোয়াব অঞ্চল হল জয়রামপুর। বাস, অটো বা বাইকে যেতে হলে কীর্তনডাঙা থেকে সোজা উত্তরমুখো পিচঢালা বড় সড়ক ধরে নাগের মোড়। সেখান থেকে আর একটা সরু পিচঢালা পথ বাঁ দিকে গোল হয়ে ঘুরে গেছে জয়রামপুরের দিকে। রিক্শা, ম্যাটাডোর ভ্যান, অটোভ্যান ওদিক দিয়েই জয়রামপুরে ঢোকে। ফসল বোঝাই করে ওপথ দিয়েই ফিরে আসে।
জয়রামপুর দোয়াব অঞ্চল। দু’পাশে দুই নদীর পলিমাটিতে উর্বর জমি। দক্ষিণে জয়রামপুর ভারতের ম্যাপের মতই ক্রমশঃ সরু হয়ে গেছে। চম্পা আর মালতী অনেকটা ভাটিতে গিয়ে যেখানে মিশেছে, বর্ষাকালে যেখানে ঢেউ-এর দিকে তাকিয়ে পাকামাঝি ইন্দ্রমোহনেরও বুক কেঁপে ওঠে – সেখানে শেষ হয়েছে জয়রামপুর। প্রতি বর্ষায় সেখানে চম্পামালতীর জোড়াঢেউ-এর দাপটে পাড় ভেঙে দক্ষিণ সীমানার সরু ভাবটা আর থাকে না। জলের রং গেরুয়া থেকে সবুজ হতে শুরু করলেই জয়রামপুরের ডানহাত আবার আগের মত হয়ে যায়। নদীর নাম চম্পাই থাকে, কিন্তু তার স্বভাবচরিত্র আর আগের মত থাকে না। মালতীকে সঙ্গে নিয়ে তার দু’পারের আঁচল্ভাঙা যৌবনের তরঙ্গ ঘরদোর, জমিজিরেত, স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র — সব ভাসায়। ওখানেই নতুন ব্রিজের কাজ শুরু হয়েছে।
বাতাসে ভেসে আসুক, পাখির ঠোঁট থেকে খসে পড়া হোক – জয়রামপুরের মাটিতে বীজ পড়লেই হল, ফনফনিয়ে বেড়ে ওঠে লাউকুমড়োপুঁইপালং। ধানগমপাটতামাক এখানে কেউ করে না। সব আনাজের খেত। যে সিজনে যেটা। কে জানে ভগবান এখানকার মাটিতে কী ছড়িয়ে রেখেছেন। ঝিঙে, পটোল, আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ঢ্যাঁড়স, মুলো, টমাটো – ফসল যেন একুশ বছরের যুবতীর আঁচলভাঙা গতরের মত উপচে পড়ে। পুরো পশ্চিমবঙ্গেই সব্জি-উৎপাদক অঞ্চল হিসেবে বেশ নামডাক হয়েছে জয়রামপুরের। ঘরবাড়ি কম, শুধু আনাজের খেত। কোম্পানির লোক এসে ন্যায্য দামে তরিতরকারি কিনে নিয়ে যায়। ক্যাম্প বসিয়ে চাষবাসের আধুনিক কায়দাকৌশল শিখিয়ে দেয়। সেই সব চাষবাস করা লোকজন লুঙি ভাঁজ করে তার ভেতরে হাজার হাজার টাকা সাজিয়ে এপারের ব্যাঙ্কে নিয়ে আসে। তমালের ব্যাঙ্ক কীর্তনডাঙায় একটা ব্রাঞ্চ খোলার ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিল, সেটা এখন ফসল দিতে শুরু করেছে। তমাল তার ক্যাশিয়ার, অ্যাকাউন্ট্যান্ট ভরত ব্যানার্জী আর ভগীরথ প্রামাণিককে নিয়ে ক্যাম্পেনিং-এর জন্য বেশ ক’বার জয়রামপুরে গিয়েছিল। কাজ হয়েছে। বেশির ভাগ লোকজন ঘট ভেঙে, খুঁটির বাঁশ ফাটিয়ে, বালিশ ছিঁড়ে তুলোজড়ানো টাকা এনে তমালের ব্যাঙ্কে বই খুলেছে। তার ব্রাঞ্চে লক্ষ্মীপ্যাঁচা উড়ে এসেছে। আমানত বৃদ্ধির হার দেখে হেড-অফিসের ক্যান্টিনে বড় ইউনিয়নের মাঝারি নেতা ছোট নেতাকে কানে কানে জানায় যে অনেকেই আপত্তি করেছিল, কিন্তু সে-ই জোর দিয়েছিল জয়রামপুরে ব্রাঞ্চ খোলার ব্যাপারে।
— বুঝলেন না, নদী শুনলেই মনে হয় খুব ঢেউ, মাঝিমাল্লা, মাছ ধরার নৌকো, ঘাটে মেয়েছেলেরা স্নান করছে। মাঝে চোতবোশেখেই যা একটু কমতি, না হলে আমাদের চম্পানদী তো সে রকমই। অথচ কী আশ্চর্য ম্যানেজারবাবু, জয়রামপুর পেরিয়ে মালতীর ঘাটে গিয়ে দেখুন, সে এক সরু নালা যেন। পরিষ্কার টলটলে সবুজ জল, কিন্তু কিন্তু ওই শ্রাবণভাদ্রেই তার যা একটু কেরামতি। মাঝে জয়রামপুরের মাটি যেন সোনার খনি। জেলা কৃষিমেলায় প্রত্যেকবার প্রাইজ পাবেই পাবে। তা সে লাউ, কুমড়ো, টোমাটো, বেগুন – যে কোনও আনাজই হতে পারে। একবার শীতে ক্যামেরা নিয়ে অনেক লোকজন এসেছিল। লাউকুমড়ো, সজনে, বকফুল, শিসপালং, শিমবরবটির শুটিং করল।
কীর্তনডাঙা ব্রাঞ্চের ফোর্থগ্রেড স্টাফ বিপিন মান্নার বাড়িতে ব্যাঙ্কের স্টাফদের নেমন্তন্ন ছিল। স্টাফ সাকুল্যে চারজন। বিপিনকে বাদ দিলে বাকি তিনজনই গিয়েছিল। আধাগ্রাম, আধাগঞ্জ কীর্তনডাঙায় নতুন ব্রাঞ্চে পোস্টিং পেয়ে বিপিন ছাড়া বাকি তিনজনেরই সময় বড় মন্থর ভাবে কাটছিল। সন্ধের পর কিচ্ছু করার থাকে না। বিপিনের ছেলের জন্মদিনের নেমন্তন্ন পেয়ে তমাল, ভরত ব্যানার্জী, ভগীরথ প্রামাণিকের বেশ একটা উত্তেজনা এসেছিল। যাক, একটা সন্ধ্যা অন্তত একটু অন্য রকম ভাবে কাটবে।
— তোমার নিজের খেত নেই ? তুমি তো বরাবর এখানকার, যাকে বলে ভূমিপুত্র। মানে ওই … সান অফ দা সয়েল আর কী। কীর্তনডাঙায় দোতলা করে ফেলেছ, ব্যাঙ্কের স্টাফদের বাড়িভাড়া দিচ্ছ। জয়রামপুরেও নিশ্চয় খেতখামার আছে। জমি নিশ্চয় অনেকটাই রেখেছ ?
— জমি নয় ম্যানেজারবাবু, বলতে হয় মাটি। জমিতে ঘরবাড়ি হয়, দালাল আসে, ঝড়ে টিনের চালা উড়ে যায়। একদিন ঘরবাড়ি সব মাটিতে মিশে যায়। মাটিই হল খাটি। শেষ কথা। বচনেরও তো একটা ওজন আছে। অনেক কথা আছে শুনলেই মনে হয় পলকা। একটু জোরে বাতাস উঠলেই কোথায় উড়ে যাবে। ঘুড়ি, তুলো, শুকনো পাতা, পশম। আবার অনেক কথা শুনলে মনে হয় কতকাল ধরে ঠাঁই গেড়ে বসে আছে। কার বাপের সাধ্যি তারে একচুলও এধার ওধার সরায়। বটগাছ, দিঘি, মনসাতলা, কালাঙ্গির বিল। মাটিও তেমনি। ভারভারিক্কি একটা শব্দ।
— তো, মাটি কিছু রাখোনি ?
— তা স্যার, আছে কিছু খুদকুঁড়োর মত। গতবার লংকায় মার খেয়ে গেছি। সবার এত বেশি ফলন হল যে, দামই পেলাম না। এবার ক্যাপসিকাম করব ভাবছি। প্রথমবার অল্প জমিতে করব। শুধু মাটি হলে তো আর হয় না, জলবাতাসেরও একটা গুণাগুণ থাকে। চেনা-অচেনা পোকামাকড়ের উপদ্রব আছে। ভালো কথা স্যার, মাশরুমের ব্যাপারটা কিছু জানেন নাকি ?
— কেন, তোমাদের জেলা কৃষি আধিকারিকের দপ্তরে গেলেই তো সব জানতে পারবে। বাসস্ট্যান্ডের পাশেই তো ওদের অফিস। হলুদ বোর্ডের ওপরে কালো অক্ষরে কঠিন বাংলায় লেখা আছে – অবর জেলা কৃষি আধিকারিকের করণ।
— গেছিলাম স্যার, ওরা কোনও গ্যারান্টি দিতে পারল না। উন্নত ধরণের শশার কথা বলছিল। বিচি খুব কম হয়।
বিপিন, তোমার জমি, ইয়ে … মাটি দেখাতে নিয়ে যাবে একদিন ?
ঝাল তেলমশলার একটা ঢেকুর উঠল তমালের। বিপিন এমনি সময়ে বিড়ি টানে। তমাল সামনে পড়ে গেলে মুখটা ঘুরিয়ে নেয় একটু। আজ বিড়ির সামান্য ওপরে সিগারেটের প্যাকেট এগিয়ে ধরল তমালের দিকে। ভরত আর ভগীরথ হাতের জল না শুকোতেই রওনা হয়েছে। তমাল ভাবছিল ধীরে সুস্থে যাবে। তার সঙ্গে বাইক আছে, চিন্তার কিছু নেই। এদিক ওদিক লোন আদায়ের তাগাদার জন্য ঘোরাঘুরি করতে হয়। কীর্তনডাঙা, ঘুঘুপোতা, আড়বাঁশি, গাজির চর। জয়রামপুরে অবশ্য সেই নাগের মোড় হয়ে ঘুরে যাওয়ার কোনও মানে হয় না। ইন্দ্রমোহনের খেয়ায় নদী পেরিয়ে বেশ ক’বার গেছে। আর, তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরে করবেই বা কী।
— কবে যাবেন বলুন ? আমাদের অবশ্য ধানগমের কোনও সিন নেই। মরসুমি আনাজের ব্যাপার। এখন গেলে আমার খেতে সর্ষেফুল ছাড়া আর কিছু দেখতে পাবেন না। কোম্পানির লোক অবশ্য তাও অ্যাডভান্স বুকিং করে গেছে। ফুলের বাহার দেখেই পেছনে তেলের আন্দাজ পেয়ে যায় ওরা। আমিও পাই।
— বিপিন, একটা কথা জিজ্ঞেস করব ? কিছু মনে মনে কোরো না, আচ্ছা, তোমার খেতের সামনে দাঁড়িয়ে কোন কথা ভাবো তুমি ? গাছে ফলে-থাকা আনাজপাতির দেখতে দেখতে তোমার কি কখনও টাকাপয়সার কথা মনে পড়ে ? তরিতরকারি থেকে কত ইনকাম হতে পারে, খরচ বাদ দিয়ে কত প্রফিট থাকবে – তখন কি এসব কথা মাথায় আসে ?
বিপিন কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। কথাটা জিজ্ঞেস করার পর তমালের কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছিল। সে মাঝে মাঝে বিপিনের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিচ্ছিল। বিপিন কী উত্তর দেবে, যেন তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে – এমন মনে হচ্ছিল তমালের।
জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ। শাল, সোয়েটার, বাঁদুরে টুপিপরা দু’চারজন পড়শি খড়কে দিয়ে দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে বিপিনকে বলে চলে যাচ্ছিল। অন্যমনস্ক ভাবেই বিপিন তাদের গুডনাইট বলছে, রান্নাবান্নার কথা জিজ্ঞেস করছিল। তমালের দিকে তাকালে তমাল দেখল বিপিনের চোখে অদ্ভুত এক রকম আলো।
— না স্যার, টাকাপয়সার কথা তখন মাথায় আসে না। খেতের আনাজের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার কেমন যেন ঘোর ধরে যায়। মনে হয় অনেক রাতে ছাদে শুয়ে কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। লক্ষ লক্ষ তারা ফুটে আছে। তখন মনে হয় কে ফলায় এত ফসল, কে সেই কিষাণ। আকাশজুড়ে যেন লাউকুমড়োঝিঙেপটোলঢ্যাঁড়োসবেগুন, প্রণাম করতে ইচ্ছে করে – ঠিক সে রকম মনে হয়। পয়সাকড়ির কথা মনেই পড়ে না তখন।
বিপিনের কথা শুনে মৃদু হাসল তমাল।
দুই
কিছুক্ষণ পরপর খুটখুট শব্দ শুনে তমাল বুঝতে পারছিল না কীসের শব্দ। এখানে এসে তমাল অনেক পাখি চিনেছে। মৌটুসি, দোয়েল, বুলবুলি, ইষ্টিকুটুম, পানকৌড়ি। প্যাঁচার ডাক শুনেছে, কাঠঠোকরাকে নারকেল গাছে ঠুকে ঠুকে পোকা বার করে খেতে দেখেছে। কাঠঠোকরা অনেকটা এ রকম শব্দ করে। ওদের ঠোঁট গাছের কান্ডে যখন ঠুকরে ঠুকরে গর্ত করে, তখন অনেকটা এ রকমই শব্দ হয়, কিন্তু এত ধীর লয়ে নয়। অনেক দ্রুত ঠরররর ঠরররর শব্দ হয়।
ফেব্রুয়ারির এক শনিবারের বিকেলে বিপিন আর তমাল রওনা হয়েছিল জয়রামপুরে। চম্পানদীর ঘাটে পৌঁছনোর একটু আগে, তখন ফেব্রুয়ারির বিকেল দ্রুত ফুরিয়ে সন্ধ্যা নেমে এসেছে কীর্তনডাঙায়, একটা পলাশগাছের পাশ দিয়ে যেতে যেতে তমাল শুনল ক্লান্ত কোনও কাঠঠোকরার আওয়াজ। অনেক মন্থর, কিন্তু অবিকল কাঠঠোকরাই। যেন অনেক বছর ধরে এক টুকরো কাঠ ঠুকরে যাচ্ছে।
— বিপিন, কীসের শব্দ হচ্ছে বলো তো ?
— ছোটবাবু নৌকো বানাচ্ছে। একটু হেসে বিপিন উত্তর দিল।
— কে ছোটবাবু ? কীসের নৌকো ? একটু থমকে গেল তমাল।
— নবীন চৌধুরী। পাটগোলার শ্যামবাবুর ছোটছেলে। সে এক মজার গল্প। দুনিয়ায় কত রকমের যে পাগল থাকে।
— ব্যাপারটা খুলে বলো তো। কী পাগলামি করে ? আর, পাটগোলার শ্যামবাবুর ছেলে খামোখা নৌকো বানাতে যাবে কেন?
— পাগল নয় তো কী, বলুন। ছোট ছোট গাছের ডাল জোগাড় করে ঘরে এনে হাতুড়িবাটালি দিয়ে নৌকো বানানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে আজ কতকাল ধরে। দেড়দু’হাত লম্বা ডাল থেকে কি আর নৌকো গড়া যায়। কিছুদিন বাদে সেটা ছুঁড়ে ফেলে আবার একটা কাঠের টুকরো জোগাড় করে খুটখাট শুরু করে দেয়।
তমালের মনে হল এর পেছনে গল্প আছে। পেছনে তাকিয়ে যে ঘর থেকে শব্দ আসছিল, সেদিকে আবার দেখল। এখন আর শব্দ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে না। কিন্তু তমালের কানে শব্দটা লেগে ছিল।
— বিপিন, তুমি কোনও দিন ছোটবাবুর সঙ্গে কথা বলেছ ? জানতে চেয়েছ কেন সে নৌকো বানায় ?
— আমি অত ডিটেলস্ জানি না স্যার। ইন্দ্রমোহন ভালো জানে। ঘাটে চলুন, ইন্দ্রমোহনের সঙ্গে কথা বলা যাবে। ফেরার সময় না হয় একবার ছোটবাবুর নৌকো বানানো দেখতে যাব আমরা।
— ভায়োলেন্ট টাইপের নয় তো ? মানে, আমাদের দেখে আবার রেগেটেগে যাবে না তো ?
— না স্যার, দেখবেন, মুনিঋষি গোছের মনে হয় এখন।
ছোটবাবুর কথা ভাবতে গিয়ে বিপিনের মনে হল তাদের এই ম্যানেজারবাবুও একটু খ্যাপা টাইপের আছে। একটু যেন টাল খাওয়া লোক। সংসারের আর দশজন লোক যে হিসেব কষে দিন পার করে, অতি সূক্ষ্ম লাভ-লোকসানের কড়ি গোণে – তার থেকে তমাল সেন কোথায় যেন আলাদা। নইলে খেতভরা ফসলের সামনে দাঁড়িয়ে বিপিনের কী মনে হয় – সেটা আবার কেউ সিরিয়াসলি জানতে চায় নাকি। তার মত চাষাভুসো, মূর্খ মানুষের সঙ্গেও প্রথম কিছুদিন ‘আপনি’ করে কথা বলেছে। অনেক বলার ‘তুমি’তে নেমেছে। ফ্যামিলির ব্যাপার কিছু বোঝা যাচ্ছে না। বয়স তো না হোক চল্লিশ পার হয়েছে। কখনও টানা তিনচার দিনের ছুটি পড়লে আর সবাই বাড়ি ফেরার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ম্যানেজারবাবু শুধু একা একা ঘরে শুয়ে বই পড়েন, না হয় তার বাইক নিয়ে দূরে কোথায় কোথায় চলে যান। বিপিন একবার বলেছিল এ রকম হুটহাট এখানে ওখানে যাওয়া ঠিক নয়। সামনে পঞ্চায়েত ভোট। কীর্তনডাঙার মানুষ হয়তো ম্যানেজারবাবুকে চিনবে, কিন্তু দূরের মানুষজন অচেনা মানুষকে ঘোরাফেরা করতে দেখলে ঝামেলা পাকাতে পারে। শুনে ম্যানেজারবাবু একটু হেসেছিলেন। তারপর বচন আউড়েছিলেন – সমুদ্রে পেতেছি শয্যা, শিশিরে কী ভয়। টালখাওয়া তো বটেই। এই যে তার খেত দেখতে যাবে বলে বাই তুলেছিল, বেশ ভালো কথা। তা দিনের বেলা নয়, পুন্নিমা চাই, ঝমঝমে চাঁদের আলো চাই। সেই আলোতে তিনি খেতের ফসল দেখবেন। যত সব টালমাটাল কেস। কোথাও কিছু গড়বড় আছে। তলে তলে কোন পোকা সবুজপাতার আড়ালে থেকে ফলনের সর্বনাশ করে দিচ্ছে। ওপর থেকে কিছু বোঝা যায় না। শেষে একদিন গাছটা নেতিয়ে পড়ে। অনেক দেখেছে বিপিন।
পূর্ণিমা নয়। পুব আকাশে তাকিয়ে তমাল দেখল চাঁদটা পুরো গোল হতে হতেও নীচের দকটায় সামান্য একটু যেন কানা-ভাঙা সানকির মত। অসম্ভব সুন্দরী কোনও নারী যেন চলার পথে একটা পা সামান্য টেনে হাঁটছে। কেউ সেটা খেয়াল করে। তাদের মন খারাপ হয়ে যায়। কেউ খেয়াল করে না। তারা বাড়িতে গিয়ে বউকে বলে – বড় টিপ পরতে পার না। রাতে বিছানায় লোকটার অতিরিক্ত উত্তেজনা বউ বুঝতে পারে, কিন্তু কারণ ধরতে পারে না। ষোলোকলার একরতি কম নিয়ে জয়রামপুরের উর্বর মাটির দিকে চাঁদের আলো ছড়িয়ে আছে।
— স্যার, পুন্নিমা লাগবে রাত এগারোটা সাঁইতিরিশ মিনিট গতে। আপনার কি পুরো পুন্নিমা দরকার ? জোছনা কিন্তু ফিনিক দিয়ে ফুটেছে। কী আর এমন কম বলুন। দিনের বেলা হলে দেখতেন সবুজ আর হলুদের জড়াজড়িতে আপনার চোখ ঝলসে যেত। মাথাটা আলোয়ান দিয়ে ঢেকে নিন স্যার, হিম লেগে যাবে।
বিপিনের সর্ষেখেতের সামনে দাঁড়িয়েছিল তমাল সেন। ধবল জ্যোৎস্না মৃদু কুয়াশা ছিঁড়ে রুপোর মত ঝরে পড়ছিল জয়রামপুরের সবজিখেতের ওপর, বিপিন মান্নার সবুজহলুদ ফুলের ওপর। হলুদ স্পষ্ট বোঝা যায় না। সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঘোর লাগছিল তমাল সেনের। তার বুকের ভেতরে টুপটাপ শিশিরপাতের মত মৃদু রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। আদিম পৃথিবী, ইতিহাসের ধূসর ছায়াপথ, হলুদ শাড়িপরা কোনও নারীর জন্য তার খুব কষ্ট হচ্ছিল।
আধফোটা জ্যোৎস্নায়; তখন ঘাসের পাশে কতদিন তুমি
হলুদ শাড়িটি বুকে অন্ধকারে ফিঙার পাখনার মতো
বসেছ আমার কাছে – আসিয়াছে শটিবন চুমি
গভীর আঁধার আরো – দেখিয়াছি বাদুড়ের মৃদু অবিরত
আসাযাওয়া আমরা দুজন ব’সে – বলিয়াছি ছেঁড়াফাঁড়া কত
মাঠ ও চাঁদের কথাঃ ম্লান চোখে একদিন সব শুনেছ তো।
এখন আর বিপিন মান্না অবাক হচ্ছিল না। একটু দূরে আলের ওপর দাঁড়িয়ে তার সর্ষেখেতের দিকে তাকিয়ে ছিল সে। এর আগে কোনও দিন এ রকম জ্যোৎস্নাধোয়া তার নিজের খেতের দিকে তাকিয়ে দেখেনি বিপিন। তারও কেমন যেন ঘোর ধরে যাচ্ছিল। বাঁ দিকে, একটু তফাতে ম্যানেজারবাবু জোছনাভরা সর্ষেখেতের দিকে তাকিয়ে কী যেন একটা পদ্য মুখস্থ বলে যাচ্ছে। হঠাৎ বিপিনের মনে হল ম্যানেজারবাবু, হাতুড়িবাটালি নিয়ে অবিরত ঠুকঠুক করা ছোটবাবু, আর জোছনাধোয়া এই রাত – এ সবের ভেতর গোপন কোনও সম্পর্ক আছে। লাভলোকসান, ক্ষমাঘেন্না, হিংসাভালোবাসার বাইরে কিছু আশ্চর্য ব্যাপার। কথা দিয়ে তাকে ধরা যায় না।
— স্যার চলুন, ঘাট বন্ধ হয়ে গেলে মুশকিল হয়ে যাবে।
— কেন, আসার সময় তো ইন্দ্রমোহনকে বলে এলাম আমরা ফিরব। নৌকো যেন বন্ধ না করে।
— স্যার, শীতের রাত। ঠান্ডাফান্ডা লেগে যেতে পারে।
তিন
— খিলেম নাও বোঝেন, পাতাম নাও ? গাবগোবর মানে কী জানেন ? ছোটবাবুর কিস্সা শুনবেন তো এসবও জানা দরকার।
নদী পেরিয়ে জয়রামপুরের সবজিখেতে যাওয়ার সময় নয়, তখন অন্য যাত্রীদের ভিড় ছিল। এসব কথা হয়েছিল ফেরার পথে। ঘাটে এসে ওরা দেখেছিল ইন্দ্রমোহন তার ছোট চালাঘরে বসে রয়েছে। তমাল গাঁজার গন্ধ পাচ্ছিল। নিশ্চয় ইন্দ্রমোহন সারাদিন খেয়া টেনে সন্ধের পর একটু মৌতাত করেছে। ব্যথা মারার ওষুধও বটে। এ গন্ধ তমালের চেনা। এক সময়ে বন্ধুদের সঙ্গে পার্কে বসে বন্ধুদের সঙ্গে দু’এক টান সে-ও দিয়েছে।
যাওয়ার সময় মরা বিকেলের মরা আলোয় ঘাটের সামনে এসে ওরা দেখেছিল কিছু লোক রয়েছে। ওরা দু’জন নৌকোয় বসতেই ইন্দ্রমোহন কাছি খুলে আগ্গলুই-এ বসে তার লগির ঠেলা দিল। নৌকো কীর্তনডাঙার ঘাট ছেড়ে রওনা হল জয়রামপুরের দিকে। ইন্দ্রমোহনের নৌকো বাওয়া দেখছিল তমাল। নদীর মত তার শরীরেও ঢেউ উঠছে। দুটো হাতে, পায়ে, ঘাড়ে ঘামের ফোঁটার ওপর আলো পড়ে বিন্দু বিন্দু আলোর কণা ঝিলমিল করে উঠছে। তমালের মাথায় তখনও অস্পষ্ট খুটখাট শব্দটা রয়েছে। বিপিন বলছিল ফেরার সময় ইন্দ্রমোহনের মুখে ছোটবাবুর গল্প শুনবে।
তমালকে দেখে ইন্দ্রমোহন পরিচয়ের হাসি হেসেছিল। এর আগে দু’চারবার নদী পেরিয়ে তমালকে জয়রামপুরে যেতে হয়েছে। ইন্দ্রমোহনের নিশ্চয় মনে আছে। চম্পানদীর জলের রং এখন পরিষ্কার বোঝা যায় না। দিনের নদী রাতে কেমন রহস্যময় হয়ে ওঠে। ছোট ছোট ঢেউ-এর মাথায় আলো পড়লে নদীর চলন বোঝা যায়। খুব বেশি চওড়া নয় চম্পা। বর্ষায় নিশ্চয় কূল ছাপিয়ে আরও নদী আরও দূরে সরে যায়। ইন্দ্রমোহনও নতুন ঘাট বানিয়ে তার নৌকো বাঁধে।
— বিপিন, তোমার মাঝিকে বলে দিও আমরা কিন্তু আবার ফিরব। ঘাট যেন বন্ধ না করে দেয়।
— ও বলতে হবে না। ওপারে যখন যাচ্ছি, ইন্দ্রমোহন জানে ওর নৌকোতেই আমাদের ফেরা ছাড়া গতি নেই। গল্প শুনবেন তো ? মনে আছে আমার। বেশি দেরি করা যাবে না কিন্তু। সন্ধের পর ইন্দ্রমোহন ছিলিম চড়াতে থাকে। তখন আবার কী মুডে থাকবে কে জানে। এক গল্প থেকে অন্য গল্পে চলে যাবে।
— না, তাড়াতাড়ি ফিরব। আচ্ছা, সর্ষেফুলে সর্ষেদানা ঠিক কোথায় থাকে বলো তো ?
হেসে ফেলল বিপিন। ম্যানেজারবাবু হয়তো ভেবেছেন লাউকুমড়োর মত সর্ষেদানা ফলে থাকে। কিংবা আমজামের মত সাবধানে পাড়তে হয়।
— তা ধরুন নভেম্বরের গোড়ায় মাটি তৈরি করে দানা ছড়িয়ে দিই। মাস দুয়ের ভেতর মাঠ হলুদ হয়ে যায়। তারপর ফুল সামান্য একটু শুকিয়ে এলেই শুঁটি বেরোয়। এই, এতটুকু লম্বা হবে। ফুল ঝরে যেতে শুরু করলেই শুঁটিসুদ্ধ গাছ তুলে আনতে হয়। তারপর ঝাড়াই করতে হয়। শুঁটি ভেঙে কালো বা বাদামি দানাগুলো বেরিয়ে আসে। ঠিক টাইমে তুলে ফেলতে না পারলে শুঁটি ফেটে মাঠেই সব দানা ছড়িয়ে পড়বে। ওখানেই আবার চারা গজিয়ে উঠবে। এখানকার মাটি, বুঝলেন না …
এসব কথা টুকটাক হতে হতে ওপারে পৌঁছে গিয়েছিল ওরা। ফেরার সময় ঘাটে এসে দেখল আর কোনও চড়নদার বা সওয়ারি নেই। বিপিনই তাকে শিখিয়েছিল নৌকোর পুরুষ যাত্রী হল চড়নদার, মেয়েদের বলে সওয়ারি। তখন ইন্দ্রমোহনের চালাঘরের সামনে গাঁজার গন্ধ পেয়েছিল তমাল।
— নৌকোর তক্তা পাশাপাশি রেখে খিল দিয়ে একটার সঙ্গে আর একটা জুড়ে দিলে হয় পাতাম নাও, আর খাঁজ কেটে তক্তার জোড় মিলিয়ে দু’দিকে চ্যাপটা লোহা দিয়ে জোড় মিলিয়ে দিলে হয় খিলেম নাও।
— গাবগোবর ? তমাল জানতে চেয়েছিল।
— নৌকোর ফাঁক বন্ধ করার জন্য গাবের রস আর চালের কুঁড়ো মিশিয়ে আঠা বানানো হয়। সেই হল গাবগোবর করা। জলে কিচ্ছু হয় না। ছোটবাবু মাঝে মাঝে এসে এসব খোঁজখবর নিত। আমাকে বলত নৌকো বানানো তার প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। আমিও তার ঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় খুটখাট শব্দ শুনতাম। একদিন একটু রাতে তার উঠোনে গিয়ে পড়েছিলাম।
তমাল বুঝতে পারল আসল গল্প শুরু হতে যাচ্ছে। গায়ের চাদর টেনে মাথা ঢেকে নিল ভালো করে। একটু শীত-শীত করছে এখন। প্রথম শীত আর যাওয়ার শীত – সাবধান না থাকলে কামড় একটা দেবেই।
— ওরা রাতের সফর চেয়েছিল। কিন্তু মানুষের সব চাওয়া ভগবান শুনতে পান না বোধহয়। হয়তো বাওবাতাসের হেরফেরে তার কানে অন্য কিছু গিয়ে পৌঁছয়। তার নাম হল নিয়তি। ছোটবাবু আর মুনিয়ার গল্প হল সে রকমই। ছোটবাবু তো বরাবরই আউলবাউল গোছের। তার বাপের পাটগোলার ছায়ায় কোনও দিন মাড়ায়নি। ও রকম বাওরা মানুষ কি ব্যবসা বোঝে। ছেলেবেলা থেকেই তো চিনি। একবার যাত্রাপার্টির সঙ্গে চলে গেল। একবার গারোদিয়াবাবুদের রাইস মিলের ট্রাকে চড়ে কোথায় পালিয়ে গেল। আর একবার শ্রীমন্তর ডিঙি নিয়ে রাতদুপুরে বড়বিলের মাঝখানে বসে রইলেন। পদ্মফুলের ফুটে ওঠা দেখবেন। আস্ত পাগল বরাবরের। সংসারের নিয়মকানুনের বাইরে-থাকা লোকজনের বড় কষ্ট বাবু।
তমাল মনে মনে হাসল। এ সত্য তার চেয়ে বেশি আর কে জানে। সেও তো একদিন রাতের সফর চেয়েছিল। ভেবেছিল নীপাকে নিয়ে একদিন ভেসে যাবে আলো-অন্ধকারের পথে। ভাঙা রূপকথা থেকে এখন শুধু শ্রাবণজল গড়িয়ে নামে। তীক্ষ্ণ হয়ে জেগে থাকা স্মৃতিগুলো অবিরত রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে চলেছে আজ কত বছর ধরে।
— মুনিয়ার সঙ্গে ছোটবাবুর সম্পর্ক আমি বুঝতে পারতাম। আমার চোখ ঠিক টের পেয়েছিল ওদের মরণের কথা। এক বিকেলের কথা শোনেন বাবু। শ্রাবণ মাস ছিল। ছোটবাবু তখন রোজ ওপারে গিয়ে ফলন্ত খেতের মাঝখানে দাঁড়িয়ে কী যেন ভাবত। তাদেরই জমিজমা, তাদেরই ফসল। হয়তো বড়বাবু জোর করে খেতখামার চেনানোর জন্য পাঠাত। তো, রাসেশ্বর মন্ডলের যুবতী মেয়ে মুনিয়াও সেদিন আমার না’য়ে উঠেছে। বড় দেমাকি ছিল মেয়েটা। অল্পবয়েস, ধব্ধবে ফর্সা। মাসে এক আধবার আমার না’য়ে পারাপার করত।
একটু থামল ইন্দ্রমোহন।এখন আর অতটা গাঁজার গন্ধ পাচ্ছিল না তমাল। কিন্তু হালকা একটা তামাকপোড়া গন্ধ বাতাসে রয়েছে। পাশে তাকিয়ে দেখল বিপিন একটু দূরে গিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বিড়ি টানছে। তামাকের গন্ধেই তমাল বুঝল বিপিন বিড়িই ধরিয়েছে। চাঁদ অনেকটা ওপরে। প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে এসেছে তার গোলাই। পূর্ণিমা ধরতে আর বেশি দেরি নেই। ষোলোকলা পূর্ণ হবে চাঁদের। হালকা কুয়াশার ভেতর দিয়ে জ্যোৎস্না ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের গাছপালার ওপর। ঠান্ডা সামান্য একটু বেড়েছে মনে হয়।
— ছোটবাবু আর মুনিয়ার গল্প কতকাল ধরে আমার বুকের ভেতরে চেপে বসে আছে। সবাইকে তো বলা যায় না। কিন্তু আমি জানি সেদিন ওই ঝড়তুফানের রাতে মুনিয়াকে বড়বাবু কীভাবে লোপাট করে দিয়েছিল। হা ঈশ্বর, আমাকেই তো নৌকো বাইতে হয়েছিল কীর্তনডাঙায় সাপও শ্যাম চৌধুরী, ওঝাও শ্যাম চৌধুরী। রাসেশ্বর মন্ডল তার মেয়ের প্রাণটুকু বাঁচাতে পেরেছিল, এই যথেষ্ট।
খাপছাড়া ভাবে কথা বলছিল ইন্দ্রমোহন। হতে পারে গাঁজার অ্যাকশনে তার কথা একটু এতোল বেতোল হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তার গলার স্বরে একটা গোপন কান্না ছিল – তমাল টের পাচ্ছিল।
— একদিন কী হয়েছে শোনেন। শ্রাবণ মাস, মুনিয়া বসেছে পাছগলুই-এ, আমার ঠিক উল্টোদিকে। নৌকোয় আরও কিছু লোকজন ছিল। গত দু’দিন টানা বৃষ্টির পর মেঘ কেটে আকাশ ঝকঝকে উঠোন। সূর্য তখন একটু পশ্চিমে ঢলেছে। ছোটবাবুও না’য়ে ছিল। হঠাৎ দেখি ছোটবাবুর চোখে কেমন যেন পাগল পাগল দৃষ্টি। খেয়াল করে মুনিয়ার দিকে তাকালাম। আমারও চোখে কেমন যেন নেশা লেগে গেল। পশ্চিমের হলদে-কমলা আলো এসে পড়েছে মুনিয়ার মুখের এক পাশে। অন্য দিকটায় একটু আঁধারমত, ছায়াছায়া ভাব। বিশ্বাস করেন বাবু, আমার শরীর কেমন যেন শিউরে উঠল। তাকে যেন এই পৃথিবীর কোনও মানুষ বলেই মনে হচ্ছিল না। হঠাৎ আমার মনে হল আকাশ থেকে কোনও পরী নেমে এসে আমার নৌকোয় সওয়ারি হয়েছে। আমারই বুকের ভেতরে ধড়াস্ করে উঠেছিল, তা ছোটবাবুর আর দোষ কী। সে-ই হল শুরু। দুজনাই এমন উচাটন হয়ে পড়ল, কোনও কিছুর আর হুঁশ রইল না। ছোটবাবু রোজ ওপারে যেতে লাগল। মুনিয়াও ঠিক সময়ে ঘাটে এসে পড়ত। দুজনে পাশাপাশি বসত। কথা বেশি বলত না ওরা। এ ওর চোখের দিকে মাঝে মাঝে লুকিয়ে তাকাত। ধরা পড়ে চোখ নামিয়ে নিত। আমি ঠিক বুঝতে পারতাম। বেশ মজা লাগত আমার। সব বুঝতে পারতাম। দু’জনারই সর্বনাশ হয়েছে।
— কথা বলত না, অথচ তুমি বলছ হাবুডুবু খাচ্ছিল …
— বলত, যেদিন নৌকোয় অন্য লোক থাকত না, সেদিন কত কথা যে কইত। কথার যেন শেষ নেই। আমি দুচোখ ভরে ওদের দেখতাম। না’ ভাসিয়ে দিতাম আলগা হাতে। ইচ্ছে করে দেরি করতাম ওপারে যেতে। যেদিন মুনিয়া আসতে দেরি করত, বা হয়তো আসতই না, শ্যামনাগর ছোটবাবুর রাইকিশোরীর জন্যি সে কী ছটফটানি। আমার সঙ্গে কোনও কথাই বলত না। পরদিন আরও মজা হত।
— কীসের মজা পরদিন ?
— মানভঞ্জন পালা বোঝেন ? চোখের সামনে পালা দেখতাম আমি। ছোটবাবু চুপ করে আছেন, কথা বলছেন না। মুনিয়া মাথা নিচু করে আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছছে। মনে মনে বলতাম – জয় রাধে, জয় গোবিন্দ। ছোটবাবুর তো কোনও আক্কেল ছিল না। আর, তখন তো তিনি এই সংসারের নিয়মকানুনের বাইরে। হুঁশপবন বলে আর কিছু নেই। মুনিয়ার থুতনি তুলে চোখের জল মুছিয়ে দিতেন। আমার বুকের ভেতরটা খুব ভার ভার লাগত। একটা কষ্ট আর একটা আনন্দ কেমন যেন জড়াজড়ি করে বুকের ভেতর খেলা করত। বলেন বাবু, এমন হয় না ?
বিপিন বসে আছে তমালের পাশে। একটা মাফলার দিয়ে কানমাথা মুড়ে নিয়েছে। গরম চাদর দিয়ে ভালো করে মাথা ঢেকেছে তমাল। ঘাটের একটু দূরে বাখারির বেঞ্চে বসে আছে ওরা দুজন। সমকোণে আর একটা ছোট বেঞ্চ। সেখানে বসে ইন্দ্রমোহন কথা বলছিল। ঘড়ি দেখে তমালের মনে হল এখনই পূর্ণিমা লাগবে। কাঠের নৌকো বানানোর গল্প শোনার জন্য তার কৌতূহল ক্রমশ বাড়ছিল।
— কোনও কোনও দিন মুনিয়া আগেই এসে নৌকোয় বসে থাকত। আমি তার সঙ্গে রঙ্গ করতাম। বলতাম – তুই সহদেব মন্ডলের বোন, রাসেশ্বর মন্ডলের মেয়ে বামুনের ছেলেটার জাত মেরে দিলি ? কষ্ট পাবি রে মুনিয়া।
— তারপর ? মুনিয়া কী বলত ?
— জানি, কিন্তু ওকে যে আমি ফেরাতে পারি না কাকা। এমন পাগলের মত করে। আমাকে নিয়ে একদিন নাও ভাসিয়ে ওই ভাটির দিকে যেতে চায়।
আমি জানতাম এখনও ওদের শরীরের সম্পর্ক হয়নি। কিন্তু ছোটবাবু বোধহয় মুনিয়াকে অন্য রকম ভাবে পেতে চাইছে। দুজনে ওপারে গিয়ে সবজিখেতের ভেতরে নিশিপাওয়া মানুষের মত ঘুরে বেড়াত। লকলকে লাউডগা, মাচায় ঝুলে-থাকা কুমড়ো, তরতরিয়ে বেড়ে-ওঠা পুঁইডাঁটা – এসব ছুঁয়ে ছুঁয়ে খেতের ভেতর দিয়ে ঘুরে বেড়াত।গাঁগঞ্জের ব্যাপার, এসব আর কতদিন লুকিয়ে রাখা যায়। কথায় বলে মুচকি হাসি, গোপনপিরিত আর গন্ধ – এ তিনটে জিনিস লুকিয়ে রাখা যায় না। তা ছাড়া, তখন ওদের কোনও হুঁশও ছিল না। লোকজন কথা চালাচালি শুরু করেছিল। নৌকোয় ওদের দুজনকে দেখলেই হাওয়ায় কথা ভাসিয়ে দিত।
— তারপর ?
— ছোটবাবুর খুব ইচ্ছে ছিল ভরাপূর্ণিমার রাতে মুনিয়াকে নিয়ে আমার নৌকোয় ওই ভাটির দিকে, যেখানে চম্পা আর মালতী মিলেছে, বড় বড় ঢেউ – সেখানে যাবে। আমি বুঝতে পারতাম মুনিয়ার শরীরের ঢেউ-এর জন্য তার শরীরেও ভরা কটাল আসতে চাইছে। এ তো অস্বাভাবিক কিছু নয়। রাতের সফর চেয়েছিল ছোটবাবু। আমি কিন্তু কিন্তু করেও রাজি হয়েছিলাম।
গিয়েছিলে ওদের নিয়ে ?
— হল না বাবু। ভেবেছিলাম আগ্গলুই-এ বইঠা হাতে আমি বসে থাকব। পাছগলুই-এ ওরা দুজন শুকশারির মত কথা বলে যাবে। ভরাপূর্ণিমার ফটফটে আলো পড়বে চম্পার ঢেউ-এর মাথায়। মানুষ ভাবে এক, ভগবান ভাবেন আর এক। শ্যাম চৌধুরীর বাড়িতে রাধামাধবের দেউল। নিত্য ভোগারতি। এসব অনাচার সে সইবে কেন। তার কানে খবর পৌঁছে দেবার লোকের অভাব নেই। শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা ছিল। বিকেল থেকে এমন কালো মেঘ সাজল, তখনই বুঝেছি আজ ওদের মিলন হবার নয়। রাতের সফরের ইচ্ছে পূর্ণ হবে না। সে কী বৃষ্টি ধেয়ে এল। কড়াত্ কড়াত্ ঠাঠা পড়ছে। সঙ্গে খ্যাপা হাওয়া। নারকেলসুপুরির বাগান নুয়ে পড়ছে, যেন ঠাকুরের পায়ে রেহাই চাইছে। চম্পা যেন খ্যাপা যুবতী। ঘাটে কেউ নেই। আমি একা এই চালাঘরে ভিজে একশা হয়ে ওদের জন্য বসে আছি। ছোটবাবু ঠিক এসে হাজির। ঝোড়োকাকের মত অবস্থা।
— মুনিয়া ?
— শ্যাম চৌধুরীর দাপে রাসেশ্বর মন্ডল তার মেয়েকে দরজা বন্ধ করে ঘরে আটকে রেখেছিল।
— তারপর ? বলো মাঝি বলো, ছোটবাবুর কথা বলো।
— অনেকদিন বাদে ছোটবাবু একদিন ঘাটে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন খিলেম নাও আর পাতাম নাও-এর কথা। আমি বুঝিয়ে দিলাম। তখনই সন্দেহ হয়েছিল কোথাও কিছু একটা বিগড়েছে। ছোটবাবু বোধহয় পুরোই বাওরা হয়ে গেছেন। শুনেছিলাম ঘাটের একটু দূরে কদমগাছের পাশে শ্যামবাবুর দোচালা ঘরে ছোটবাবু একা একা থাকেন। অনেকেই বলত ঘর থেকে সারাদিন ঠুকঠাক শব্দ শোনা যায়।
— তোমার কাছে মুনিয়ার খোঁজ করেনি ?
— না বাবু। যে সময়ে মুনিয়ার ঘাটে আসার কথা, নৌকোয় চড়ে একসঙ্গে চম্পার ঢেউ-এ পাড়ি দেবার কথা, ছোটবাবু ঠিক সে সময়েই এসেছিলেন। নৌকোয় বসে কতক্ষণ একা একা বৃষ্টিতে ভিজলেন। আমিই বললাম মুনিয়া বোধহয় এই ঝড়বাদলায় আসতে পারবে না। ছোটবাবু হেসে বলেছিলেন – সে আসবেই।
তারপর ?
— ঝড়বাদল থেমে যাওয়ার পরও প্রায় মাঝরাত্তির পর্যন্ত ছোটবাবু নৌকোয় বসে রইলেন।বুঝতে পারছিলাম খুব কষ্ট পাচ্ছেন। আমারও খারাপ লাগছিল। শেষে আমিই জোর করে বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম। রাত আরও গড়ালে, আবারও ঝুপ ঝুপ বৃষ্টি শুরু হয়েছে তখন – রাস্বশ্বর মন্ডল, সঙ্গে পাটগোলার দুজন মুশকো জোয়ান, সঙ্গে মুনিয়া – ওরা এসে আমাকে ডেকে তুলল। বলল এখনই খেয়া পার করে দিতে হবে। জয়রামপুরের ভেতরের পথ ধরে নাগের মোড়ের দিকে যাবে। দরকারি কাজ আছে। ডাক্তারবদ্যির ব্যাপার। প্রথমে আমার সন্দেহ হয়নি। মেয়েটা দেখলাম থরথর করে কাঁপছে। কিন্তু পাটগোলার একজন হঠাৎ আমার চুলের মুঠি পেঁচিয়ে ধরে চাপা গলায় বলল – শ্যামবাবু বলে দিয়েছে কেউ যেন কোনও দিন কিছু জানতে না পারে। তা হলে তো মরণ। তখনই ধা করে মাথাটা কিলিয়ার হয়ে গেল। রাসেশ্বর মন্ডলের মেয়ের রাইকিশোরী সাজার শখ এবার শ্যামবাবু মিটিয়ে দেবেন। মেয়েটাকে ওরা কোথাও পাচার করে দিচ্ছে। কে জানে, দুনিয়া থেকেই কিনা। ব্যস, ওই শেষ দেখেছি মুনিয়াকে।
বিপিন মান্না আবার একটু দূরে গিয়ে ধোঁয়া ছাড়ছে। হালকা কুয়াশায় বিড়ির ধোঁয়া মিশে যাচ্ছিল। চাঁদের আলোয় ধোঁয়া বোঝা যায়, কিন্তু নীল বা সাদা বোঝা যায় না। অস্থির লাগছিল তমালের। সেও তো একদিন একটা অসম্ভব রূপকথা তৈরি করতে চেয়েছিল। এখন ভাঙা রূপকথা বেয়ে অবিরল শ্রাবণজল গড়িয়ে নামে। প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত টুপটাপ রক্ত চুঁইয়ে পড়ে বুকের ভেতর।
— তারপর ছোটবাবু মুনিয়ার খোঁজে মুলুক চষে বেড়াতে লাগল। আহার নেই, নিদ্রা নেই, দেহ হয়েছে কঙ্কাল, পাগলের মত চোখের দৃষ্টি। হাটেমাঠেবাটে কী যেন খুঁজে বেড়ায়। আপন মনে হাসে, আপন মনে কাঁদে। শেষে একদিন জঙ্গল থেকে একটা মোটামত গাছের ডাল কাঁধে করে ঘরে এনে তুলল। কোথা থেকে হাতুড়িবাটালি জোগাড় করে শুরু করল ঠুকঠাক। একদিন আর থাকতে না পেরে তার উঠোনে গিয়ে উঠলাম। সেও এক শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা।
— কী দেখলে তার উঠোনে গিয়ে ?
— হাতুড়িবাটালি দিয়ে ছোটবাবু একটা কাঠের টুকরো দিয়ে নৌকো বানাচ্ছেন। তা, সে ডালে সত্যি একটু নৌকো-নৌকো ভাব ছিল। একটু যেন ইশারা। দেখলেই জলের কথা, নদীর কথা মনে পড়ে।খেয়াল করে দেখুন পড়-পড় কোনও পাথর দেখলেই হাতটা কেমন নিশপিশ করে ওঠে। ইচ্ছে করে একটু টোকা দিয়ে পাথরটা গড়িয়ে দিতে। কী যেন পুরোটা কমপিলিট হচ্ছে না। এও তেমন।
— নৌকোর কথা বলো ইন্দ্রমোহন, ছোটবাবুর কথা বলো।
— ঘরে আলোর নীচে বসে নয়, ছোটবাবু উঠোনে বসে চাঁদের আলোয় কাঠ কুঁদে তার ভেতর থেকে নৌকো বার করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
তমালের চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছিল। ভাগ্যিস এখানে অন্ধকার। চোখ মুছল না তমাল। গড়াক, রোজ রাতেই তো তার চোখে শ্রাবণধারা নামে। তার খুব ইচ্ছে করছিল ছোটবাবুর উঠোনে গিয়ে দাঁড়াতে।
— মাঝি, একবার তার উঠোনে একবার আমাকে নিয়ে যাবে ?
বিপিন মান্না তমালের পাশে বসে ফিসফিস করে কথা কইছিল। তমাল প্রথমে বুঝতে পারেনি। পরে খেয়াল করল।
— বাদ দিন স্যার। রাত কিন্তু বেশ হয়েছে। আর, ইন্দ্রমোহন সন্ধে থেকে সেবা করেছে। ওর সব কথা কী আর সত্যি।
— না বাবু, সে তো এক মন্দির। মনের মানুষের সঙ্গে মিলনের জন্যি, তার কাছে পৌঁছবে বলে এক পাগল নাও বানায়। সত্যি কী আর বানায়। আমি তো নিজের চোখেই দেখে এসেছি। কাঠগুলো সে সত্যি খুঁজেপেতে জোগাড় করে আনে। পেটমোটা, একটু বাঁকা। কিন্তু মাসখানেক ঠুকঠাক করার পর সেটা ছুঁড়ে ফেলে দেয়। আবার একটা কাঠ জোগাড় করে আনে। এমনি করে কত কাঠ তার উঠোনের এদিক সেদিক পড়ে রইল। চাঁদের আলোয় আমি সেগুলো দেখে এসেছি।
— কী দেখেছ ইন্দ্রমোহন ? সে কি নৌকো নয় ?
— না বাবু। পাগলছাগল মানুষ, ভাবছে নৌকো, কিন্তু সবগুলো প্রায় একটা মেয়েছেলের শরীর। ভারি বুক, সরু কোমর, ভারি পেছন। নৌকোও হয়, আবার মুনিয়াও হয়। শুধু মুনিয়া কেন, যে কোনও মেয়েছেলেই বলা যায়। নৌকো আর হয়ে ওঠে না বাবু। কাঠঠোকরার মত ছোটবাবু ঠুকঠুক করতেই থাকে। কে জানে, কতকাল ধরে করবে।
তোমার জন্য আমার মন কেমন করে। হালকা কুয়াশাঢাকা পূর্ণচাঁদের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে, প্রায় মন্ত্রোচ্চারণের মত বলছিল তমাল। তার চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছিল।
………………… বিপুল দাস