রাজনগরেও হারিয়ে যাচ্ছে চড়ুই

আজ বিশ্ব চড়ুই পাখি দিবসে মনে পড়ে যায় কবি তারাপদ রায়ের সেই লাইনটি ‘রাত্রির নির্জন ঘরে আমি আর চড়ুই একাকী’। তবে চড়ুই আর আমি নয়। হাল আমলে যা অবস্থা তাতে চড়ুই কে ছারাই আমাদের থাকতে হবে। কারন বিশ্ব উষ্ণায়ন ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে সারা বিশ্বে হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। এর ব্যতিক্রম নয় রাজনগর কোচবিহারও। আজ থেকে বছর দশেক  আগেও শহর কোচবিহারে এন্তার দেখা মিলত শালিক, চড়ুই, বাবুই,ঘুঘুর মত পাখির। শীত পরতেই দেখা মিলত পরিযায়ী সাইবেরিয়ার পাখির দলের। কিন্ত আজ ছবিটা আমূল বদলে গেছে। সাইবেরিয়ার পরিযায়ীরাও অনিয়মিত। সেই সাথে দেশীয় পাখির দেখা মিলছে খুব কম। এরমধ্যে অন্যতম হল চড়ুই। শহরের প্রবীণদের অনেকের কথাতেই জানা গেল গ্রামগঞ্জের পাশাপাশি শহর কোচবিহারের গাছে গাছেও দেখা মিলত চড়ুই এর। কিন্তু সেই চড়ুই এর দেখা মেলা এখন ভার এই শহরে।এর বড় কারন চড়ুই পাখি গৃহস্থের বাড়ির টিনের তলায় কাঠের সিলিং এ বাসা বেধে থাকতে ভালবাসে। আর রাজ আমল থেকে শহর কোচবিহারের প্রধান বৈশিষ্ট ছিল টিনের চালের বাড়ি। স্বাভাবিকভাবেই তাই চড়ুই পাখি বাসা বেধে থাকত শহরে। একই সাথে দিঘির শহর কোচবিহারের দিঘিগুলির জল তাদের জলখাবারের প্রধান জায়গা ছিল। কিন্তু গত বিশ বছর ধরে আধুনিকতার ছোয়ায় কোচবিহারে ক্রমশ ফ্ল্যাট কালচার থাবা বসিয়েছে। টিনের বাড়ির চেয়ে মানুষের পছন্দের এখন সিমেন্টের ছাদ। অবস্থা এতটাই করুন যে বহুতল ফ্ল্যাট আর ছাদের বাড়ির মাঝে টিনের চালের বাড়ির সংখ্যা নামমাত্র। ফলে চড়ুই এর বাসস্থানের অভাব আজ প্রকট হয়ে উঠেছে রাজনগরে।শহরের দিঘিগুলির অবস্থা তথৈবচ। অনেক পুকুর আজ ভরাট হয়ে গেছে। বাকিগুলিও আজ দূষনের পাল্লায়। ফলে চড়ুই দের জলপানেরও এক সমস্যা  বড় হয়ে দেখা যাচ্ছে। সেইসাথে বাইক,টোটো,গাড়ির কোলাহলও দিনকে দিন বেড়ে চলেছে। তবে চড়ুই পাখি নিশ্চিহ্ন হলে সেটা আমাদের পক্ষে যে কতটা ভয়ানক হবে তা বছর পঞ্চাশ  আগে চীনের একটি  অবৈজ্ঞানিক ঘটনাকে দেখলেই বোঝা যাবে। চীনের রাষ্ট্রপতি মহা প্রতাপশালী মাও জেদং কোন বৈজ্ঞানিক মতামত ছাড়াই ঘোষণা করেছিলেন যে চড়ুই পাখি নাকি ফসল উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটার প্রধান কারণ। তাই তিনি নির্দেশ দিলেন চড়ুই পাখি কে হত্যা করার।ফলে নির্বিচারে সেসময় চড়ুই পাখি নিধন করা হলো চীনে। আর তারপরের বছরই ভয়াবহ ছবি ফুটে উঠল সেখানে। ক্ষতিকারক কীট-পতঙ্গ ফসলের মাঠে আরো বেশি বেশি করে এসে ফসল নষ্ট করে দিতে লাগল। অথচ আগে এই ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গগুলিকে চড়ুই পাখি খেয়ে নিয়ে ফসলকে রক্ষা করত। তাই আগামী দিনে চড়ুই পাখি না থাকলে আমাদের রাজনগরের কেবল নান্দনিক সৌন্দর্যের অভাব ঘটবেনা সেইসাথে কৃষিনির্ভর আমাদের কোচবিহার জেলার ফসল উৎপাদন এক বাধার সম্মুখীন হবে যদিও এই ব্যাপারে কারো কোন হেলদোল নেই।। তাই আগামী দিনে চড়ুই পাখি না থাকলে আমাদের রাজনগরের কেবল নান্দনিক সৌন্দর্যের অভাব ঘটবেনা সেইসাথে কৃষিনির্ভর আমাদের কোচবিহার জেলার ফসল উৎপাদন এক বাধার সম্মুখীন হবে যদিও এই ব্যাপারে বরাবরের মতন আমরা সেই উদাসীনই আছি।