মাত্র ৫০০ মিটার ব্যবধানে ভারত-চীন সেনা

 নয়াদিল্লি: লাদাখের সীমান্ত পেরিয়ে হানায় তৈরি ভারতীয় যুদ্ধবিমান। ভারত-চীন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার অদূরে গলওয়ান উপত্যকায় উত্তেজনার পারদ এখনও চরমে। তার মধ্যেই ভারতের দুই পৃথক স্কোয়াড্রনের যুদ্ধবিমান মিরাজ ২০০০ এবং সুখোই থার্টি ফাইটার জেটকে নিয়ে আসা হয়েছে লাদাখের ফরওয়ার্ড বেসে। শুক্রবার সকাল থেকে লাদাখের আকাশে উড়ছে মিরাজ এবং সুখোই। একইসঙ্গে দৌলত বেগ আবদি এয়ারস্ট্রিপে মোতায়েন করা হয়েছে অ্যাপাচে এবং চিনুক মিলিটারি চপার। লে এয়ারফোর্স বেস স্টেশনে হাজির হয়েছেন স্বয়ং বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল রাকেশ সিং ভাদোরিয়া। তিনি আপাতত এখানেই কয়েকদিন থাকবেন। পিছিয়ে নেই সেনাও। গলওয়ান উপত্যকায় আগের পজিশন ছেড়ে ক্রমেই ভারতীয় সেনা এগিয়েছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে। কারণ, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার দিকে অন্তত তিন কিলোমিটার এগিয়ে ভারতের নাকের ডগায় বিপুল সেনা মোতায়েন করেছে চীন। পাশাপাশি গলওয়ান উপত্যকার অন্দরে ১৪ নম্বর পয়েন্ট ছাড়াও একাধিক ফিঙ্গার পয়েন্টে নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে অন্তত নতুন করে ৬২টি পজিশন গঠন করেছে লালফৌজ। ৩০০টির বেশি কাঠামোর মধ্যে রয়েছে অবজার্ভেশন পয়েন্ট, তাঁবু ও বাঙ্কার। সবার আগে এই কাঠামো থেকে চীনকে উৎখাত করতে চাইছে ভারত। দুই দেশের সেনা এতটাই কাছে এসে দাঁড়িয়েছে যে, বেশ কিছু জায়গায় ব্যবধান ৫০০ মিটারেরও কম। সরকারি সূত্রের খবর, যে বিকল্পগুলি নিয়ে ভাবা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে, লিমিটেড মিলিটারি অ্যাকশন এবং প্রিসিশন স্ট্রাইক। ‘প্রিসিশন গাইডেড মিউনিশন’ হল স্বল্প সময়ের মধ্যে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত টার্গেট ধ্বংস করে ফিরে আসা। বালাকোটে এই প্রক্রিয়া সাফল্য পেলেও ভারতকে মাথায় রাখতে হচ্ছে অন্য একটি বিষয়—প্রতিপক্ষ এখন প্রবল শক্তিশালী চীন। জানা গিয়েছে, তিব্বতকে মাঝখানে রেখে শুধুমাত্র ভারতকে টার্গেট করে ১৪টি এয়ারবেস তৈরি করেছে বেজিং। আর চীনের সঙ্গে উত্তর সীমান্ত বরাবর ভারতের রয়েছে চারটি আর্মি এবং তিনটি এয়ারফোর্স কমান্ড। তাই প্রত্যাঘাত প্রতিহত করার অস্ত্র ও কৌশল তৈরি রাখতে হচ্ছে ভারতকে। ঠিক সেই কারণেই নিয়ন্ত্রণ রেখার নজরদারির জন্য পি-৮১ নেভাল লং রেঞ্জ এয়ারক্র্যাফ্টকেও তৈরি রাখা হয়েছে। এই এয়ারক্র্যাফ্টের রাডার এবং ইলেকট্রোঅপটিক সেন্সরের মাধ্যমেই জানা সম্ভব, নিয়ন্ত্রণ রেখা অথবা সীমান্তের ওপারে প্রতিপক্ষ ঠিক কতটা পরিকাঠামো তৈরি করে ফেলেছে।
শুধু লাদাখ নয়, চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে থাকা ভারতের প্রতিটি সীমান্তে এখন হাই অ্যালার্ট। তাই অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডকে সম্প্রতি জরুরি ভিত্তিতে ২০টি আইটেমের অর্ডার দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে এমনভাবে স্টক পাঠাতে, যাতে অন্তত ১০ দিনের ‘যুদ্ধ’ একটানা চালানো যায়। ওই আইটেমগুলির মধ্যে রয়েছে, কোট ইসিসি (এক্সট্রিম কোল্ড কন্ডিশন), গ্লেসিয়ার ক্যাপ, সাপ্লাই ড্রপিং ইকুইপমেন্ট, ম্যান-প্যারাস্যুট। এছাড়া অস্ত্র তো রয়েইছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে সেনাবাহিনী জানিয়ে দিয়েছে, অবিলম্বে অন্তত ২০০ মাইন প্রোটেকডেট ভেহিকল দরকার। ভারতজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ৪১টি অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সাপ্লাইয়ের নির্দেশিকা গিয়েছে।
ভারতের অনড় মনোভাব দেখে চীন কিন্তু বুঝতে পারছে যে, পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। তাই চীনের বিদেশ মন্ত্রক শুক্রবার বিবৃতি দিয়েছে, লাদাখ সীমান্তে যদি কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, তার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী থাকবে ভারত। তবে নীরব নেই ভারতও। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীপদ নায়েক এদিন আবার বলেছেন, ২০ জন শহিদ সেনার আত্মবলিদান বৃথা যাবে না। ভারতীয় সেনা প্রত্যাঘাতে প্রস্তুত। এদিকে, গত সোম ও মঙ্গলবারের সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনাকে হত্যার পাশাপাশি ১০ জন সেনাকে অপহরণ করেছিল লালফৌজ। বৃহস্পতিবার লাদাখ সীমান্তে দুই সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল স্তরের বৈঠকের পর ভারতের প্রবল চাপে ওই ১০ জন ভারতীয় সেনাকে মুক্তি দেয় চীন।
ভারত-চীন সংঘাতে ক্রমেই তাৎপর্যপূর্ণভাবে পক্ষগ্রহণের দিকে অগ্রসর হচ্ছে আন্তর্জাতিক মহল। ন্যাটো ও আমেরিকা ভারতের পাশে দাঁড়ানোর স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে। সবথেকে বড় প্রশ্ন রাশিয়াকে ঘিরে। অতীতের প্রতিটি যুদ্ধে ভারতের সবথেকে বড় পার্টনার ছিল রাশিয়া। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে রাশিয়া ও চীনের মধ্যে নতুন মিত্রতার সূত্রপাত হয়েছে। তাই পুতিন কী করবেন, তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। আর ঠিক এমন একটা সময়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং যাচ্ছেন মস্কো। ২২ জুন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৭৫তম বিজয়োৎসবে যোগ দিতে। তিনি কি খালি হাতে যাচ্ছেন? মোটেই না। ভারত স্থির করেছে, রাশিয়ার থেকে ১২টি সুখোই এবং ২১টি মিগ টুয়েন্টি নাইন ফাইটার জেট কিনবে। সেই নতুন অস্ত্র-বাণিজ্যই হবে ভারত-রাশিয়ার নতুন চুক্তি। ডিল? অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকার!