জীবনে অনেক হাতির গপ্পোই শুনে থাকবেন কিন্তু মদ্যপ্রিয় বড়কর্তার রঙ্গরসের কথা হয়তো অনেকেই শোনেননি। আদিবাসী সমাজের বিয়ে। যেখানে সামাজিকতার মুখ্য উপাদান হাঁড়িয়া। হাঁড়িয়া এবং খাসির মাংসের ঢালাও বন্দোবস্ত না হলে সে বিয়ে বিয়েই নয়। অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণের একপাশে চলছে হাঁড়িয়ার মোচ্ছব। অন্যপাশে মান্দার, নাগাড়া সহযোগে নৃত্যগীত। আচমকা সভাস্থলে বড়কর্তার আবির্ভাব। দাঁতাল কর্তাবাবা মাঝে মাঝেই দেখা দেন। মাস্তানের মতো এসে বাড়ির কলাটা, কাঁঠালটা, শকর-কান্দা ( এক জাতীয় কন্দ) ধান,আখ যা জোটে হপ্তা তুলে নিয়ে যান। তবে একবার যদি হাঁড়িয়ার গন্ধ নাকে এলো তাহলে আর দেখতে হবে না। “আমি সব ছেড়ে মা ধরবো তোমার রাঙা চরণ দুটি” র মত হাঁড়িয়ার উৎস সন্ধানে মত্ত হবেন বাবা। বড়কর্তাকে দেখে বিয়ের আসর নিমেষে ফাঁকা। যে যেখানে পেরেছে লুকিয়েছে। দূর থেকে ক্যানেস্তারা পিটিয়ে মশাল জ্বেলে ভয় দেখাচ্ছে লোকে। কর্তাবাবা ডোন্ট-কেয়ার। প্রথমেই শুঁড় বাড়িয়ে যত হাঁড়িয়ার পাত্র ছিল সাবড়ালো। সাবড়ে আর দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই। টলতে টলতে খানিক দূরে গিয়েই পপাত ধরণীতলে। দু’চারটে নেড়িকুকুর পেছনে লেগেছিল। একটাকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে আছড়াতে গিয়ে
নেশার ঘোরে স্লিপ করায় সেটি ছিটকে পড়লো রান্না ঘরের চালে।
ভয়ে খেঁকিটার জবান সেই যে সিল হয়ে গেল খুলতে মাসখানেক লেগেছিল।
সারারাত নেশায় ঘোরে পড়ে থাকার পর ভোর নাগাদ খোয়ারি কাটলে কর্তামশায় উঠে দুলকিচালে হাঁটা ধরলেন বনের পথে। না, মদিরাহুত কর্তাবাবাকে সেদিন কেউই আর বিরক্ত করেনি। বরং তার আবির্ভাব মহাকালের আশীর্বাদ হিসেবেই গণ্য করেছিলো।