গনেশবাবুর চার ছেলের মধ্যেই মেজছেলে সমরকে নিয়ে চিন্তা।নিজের খেয়ালে
চলে ।পৃথিবীর কোনো
শক্তি নেই তাকে কথা শোনাবার।সমর বড়ই স্নেহ
প্রবন।বাড়ির ছোটোবড়ো সকলের ভালোর জন্য
চেষ্টা চালিয়ে যান। বিএ পাশের পর বিদ্যুত
পর্ষদে চাকরি পেলো।কয়েকবছর পর কেউ বলে “সমরবাবু চাকরি ছেড়ে বিএড পাশ করলে স্কুলে
চাকরি পাওয়া যাবে।ভালো মাইনে আছে।”
সমর ভাবলো এটাই ঠিক।। চাকরি ছাড়লো।বাড়িতে কোনকিছু জানানো হয়নি।মা জিজ্ঞাসা করে” সমর অফিস যাচ্ছিসনা কেন?” অনেক দিন পর আসল কথা বললো।বিএড পাশ করলেন কিন্তু চাকরি কোথায়?যাহোক কোনোরকমে
কোলকাতার স্কুলে শিক্ষকতার কাজ পেলেন ।
প্রধান শিক্ষক তাকে ভালোবাসে।ছাত্রদের বকলে কখনো মারলে সমরবাবু পরে ওদের আদর করে
বলতেন” তোদের বেশি লাগেনি তো”?.এমন নরম
মনের টিচার খুব কম আছে।ছাত্রদের মন কেড়ে নিতে বেশি সময় লাগেনি।সমরস্যার একদিন না আসলে ছাত্রদের মন খারাপ হয়।
বাড়িতে বড়দার মেয়েদের ভালোবাসেন।নিজের
কাজ ফেলে রেখে ওদের সুবিধা অসুবিধার জন্য
ভাবনা।মাবাবা বিরক্ত হয়ে বলেন ” তোর বিয়ের
পর এইভাবে যদি ওদের পেছনে সময় দিস তাহলে
বৌ পালিয়ে যাবে।বৌদির আনন্দ এমন দেবর
থাকলে আর চিন্তা কি।
আপনমনে চলেন তিনি মনখুশিতে।সংসারে এমন
আপনজন থাকলে কোনো চিন্তা হবার নয়।মা
চিৎকার করে বলে” পৃথিবীতে সবাই এমন ভালোকে
পছন্দ করবে।কিন্তু ভালোমানুষী করতে গিয়ে নিজের আর কিছু হবেনা মনে রাখিস।”সমর
আপন খেয়ালী।একদিন স্কুলের হেডমাস্টার
ডেকে বলে ” আমার সুন্দরী মেয়েকে
বিয়ে করলে সুখী হবেন। ”
সমরবাবু বলে “এই বিষয়ে মাবাবা আগে
বলবেন। ” বিয়ে করবেন আপনি ,আপনার পছন্দ হলেই সব।” মেয়ে দেখে পছন্দ হয়েছে ওদের বলে।বাড়িতে খুবই আপত্তি উঠলো এইভাবে
না জানিয়ে যাওয়া।হেডমাস্টার সমরবাবুর বাড়িতে জানান ” আমার মেয়েকে ওর পছন্দ এবং
বিয়েতে রাজি।” মাবাবা বলেন ” আমরা রাজি নই।” মা বললেন ” আমার তিন ছেলের বৌ হবে এমএ বিএ পাশ আর তোমার বৌ যদি মাধ্যমিক পাশ হয় তাহলে অন্য বৌয়েরা হাসাহাসি করবে।”
সমর বলে ” একজনকে কন্যাদায় হতে রক্ষা করাই
ধর্ম মা।বিদ্যা কম হলেও অন্যগুন হয়তো থাকবে।”
“সমর সবসময় দয়া ধর্ম করে জীবন চলে না।সংসার সুখে সম্পদে মান সম্মান বজায় রাখতে হয়।নিজের খেয়ালে আর পরোপকারী হয়োনা।”
এখানে থেমে গেলেন মেজছেলে।অসুস্থ সেজভাইয়ের দেখা শুনা করতে স্কুল যেতে দেরি হয়েছে কয়েক দিন।বিয়ে নাকচ হেডস্যার সহজে
মেনে নিলেন না সাথে অন্যান্য টিচারও। ” সমরবাবু
আপনার দেরি হচ্ছে অনেক দূরের পথে
থাকেন দেখলাম তো গিয়ে।আপনার বাড়িঘর
কতসুন্দর।দাদা ভাইয়েরা ভালো রোজগার করে
এতো দূরে স্কুলে এসে কেন কষ্ট করবেন বরং বাড়ির কাছে চাকরি করুন।আপনি ভালো টিচার।”
সহকারী প্রধান শিক্ষক বলেন আমাদের কাছে অনেকেই আছে তাদের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ।আপনি ছেড়ে দিলে ওদের একজনের সুবিধা হয়। আপনি লিখে দিন যে দূর থেকে আসতে পারছেননা । হেডস্যারের নির্দেশে স্বেচ্ছায়
চাকরি ছেড়ে দিলেন। সমর কাজে যাচ্ছে না এখন।।বাড়িতে জিজ্ঞেস করলে ” স্কুল যাবিনা” ।এড়িয়ে গেল।পরে বলে” আমার থেকে অনিমেষবাবুর বেশি দরকার চাকরি করা”আমি যা করেছি সেটি ঠিক।
কাছে পিঠে স্কুলে পড়াবো।
সবশুনে সকলেই হতবাক।সংসার হলোনা।যত্রতত্র দাণ ধ্যাণ করাই কাজ।। সকলের উপকারে সুখ।
বাবার ও মায়ের অসুস্থতায় নিরলস সেবা সুশ্রুষা।
বাড়ির এহেন ছেলে আলাদা।অন্যান্য ভাইয়েরা যখন
পরিবারের সাথে আনন্দ করে উনি রাত জেগে মাকে দেখে।গরীব ছাত্রদের ফ্রীতে পড়িয়ে খুশি।
নিজের দিকে তাকানোর সময় কোথায়?
ভাইপো ভাইঝির পেছনে সময় দেয়া ওদের ভালোবেসে আনন্দ।তাদের উপকার করার মধ্যেই
নিজেকে উজার করা।আজো বেকার।সেবাই যে ওর কাছে পরম ধর্ম।