আচার খাবি?
মন্দ হয় না, আছে ?
হ্যাঁ হ্যাঁ
তোর পিসে খুব পছন্দ করে বলে বানানোই থাকে
ছুট্টে গিয়ে রান্না ঘরের সেল্ফ থেকে আচার নামাতেই
আর্তনাদ শুনলাম
কোমরে হাত দিয়ে পিসিমা তখন বেঁকে দাঁড়িয়ে পড়েছে
কোনোভাবে এসে বিছানায়
রইলো পরে আমের আচার
রইলো পরে পিসির বাড়ির চিকেন ঝোল আর বাসমতি
একটু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখলাম মাসল স্প্যাসম বলেই মনে হলো।
বেডরুম থেকে বেরিয়ে আসতেই শুনলাম
তুই খেয়ে যাস কিন্তু, আমি কদিনেই ঠিক হয়ে যাবো
কোমরে ব্যথা কার না নেই ? তবে কুড়ি বছর বয়সে যে কোমরের ব্যথা কে আমরা হারিয়ে দিতে পারি রাতে ঘুমোলেই, সেখানে ৫০ পেরোলেই কোমরের ব্যথা চিরসাথী হয় অনেকেরই।
২০১০ সালের এক গবেষণায় জানা গেছে মানুষের প্রায় ৩০০ টি অসুখের মধ্যে কোমরের ব্যথা মানুষকে পর্যুদস্ত করে সব থেকে বেশি। অফিস কাছারিতে অনুপস্থিতির একটা শীর্ষস্থানীয় কারণ কোমরে ব্যথা।
অনেক মা বলেন সন্তানের জন্মের পর কোমর ব্যথা বাড়ছে। প্রেগন্যান্সির সময়ের কথা আর বিশেষ বলছি না, কারণ শরীর তখন একটা অন্যরকম অবস্থার মধ্যে দিয়ে যায়। শরীর চর্চার কথা সবাই শুনলে বা ভাবলেও, অনেকের পক্ষে সেই সময় শরীর চর্চা করা খুব একটা সম্ভব হয়ে ওঠে না। সাথে বাড়তি ৬-৭ কেজি ওজন পেটে নিয়ে ৬ মাস বাড়িতে থাকলে কেন কোমরে ব্যথা হয় তা সহজেই অনুমেয়।
তবে লাদাখ থেকে ঘুরে এসে কেউ যদি বলেন কোমরে ব্যথা হচ্ছে, বা কোমরে ব্যথার জন্য কেউ যদি বিছানাটাকে যত নষ্টের গোড়া বলে ঠাউরে বসেন, তাহলে কোমর ব্যথা সৃষ্টির আসল কারণ আমাদের অগোচরেই থেকে যায়।
লাদাখে গিয়ে ভারী সুটকেস তোলা ,গাড়িতে লম্বা সময় বসে থাকা বা মোটা গদিতে আরাম করে শোয়ার মতো ছোট ছোট কারণগুলো ভুলে যাওয়া অবশ্য খুব সহজ।
সোফায় কাত হয়ে নেটফ্লিক্স, ল্যাপটপের জীবিকার অনিবার্যতা বা ঘাড় নিচু করে হোয়াটসাপ / ফেসবুক নামক নতুন যুগের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে নিজেকে সঁপে দেওয়া, সবই এত মোলায়েম ভাবে আসে যে কেউই Z।নতি পারে না। টনক নড়ে যখন ব্যথা বাড়ে।
কিন্তু কেন শরীরের মধ্যভাগে ব্যথার এই বাড়বাড়ন্ত হয় ?
এটা তো নিশ্চয়ই জানেন যে আমাদের শরীরের পুরো ওজন এই কোমর দিয়েই সংবাহিত হয় দুই পায়ে। হাড়, লিগামেন্ট, মাংসপেশি এবং তাদের জোড় গুলোর মধ্যে যখনই কোনো ভারসাম্যহীনতা হয় তখনই কোমরের ব্যথা মাথা চাড়া দেয়।
জেনারেল নলেজের এর সেই বিখ্যাত প্রশ্ন মনে আছে তো ? মানুষের শরীরে হাড়ের সংখ্যা কত ? ভুলে গিয়ে না থাকলে আপনি চটপট বলে উঠবেন ২০৬ ।
আর আমাদের কোমরে থাকে প্রায় ১১ টা হাড়। সেই হাড় দিয়ে কোমরের মতো প্রায় গোলাকার একটা কাঠামো তৈরী করা কি শক্ত ব্যাপার ভেবে দেখুন!
বললে বিশ্বাস করবেন না, এই কোমরের হাড় গুলির প্রতিটি অদ্ভুত অদ্ভুত ধরনের জোড় বা সন্ধি দিয়ে পরস্পরের সাথে আটকে থাকে । সমস্ত হাড়গুলো আবার জোড়া থাকে ইলাস্টিকের মতো একধরনের খুব শক্তিশালী জিনিস দিয়ে, যাকে কিনা বলে লিগামেন্ট !
তবে এতেই শেষ নয়! এর উপরেও থাকে নানা ধরনের ছোট-বড় মাংসপেশি। । কোমরের আশেপাশের হাড়গুলোর জয়েন্ট এতটাই রোমহর্ষক যে ডাক্তারির কোনো ফার্স্ট ইয়ার ছাত্র/ছাত্রীকে জিজ্ঞেস করে দেখুন! পড়তে গিয়ে, আর মনে রাখতে গিয়ে কিরকম বেগ পেতে হয় !
দাঁড়ান দাঁড়ান ! এরপরের ক্রমশ কঠিন আরো জটিলতার কথা খানিক পরে বলছি ।
ফেসবুকে গল্পের ছলে পড়তে গিয়ে এতো জিনিস নিয়ে আপনাকে একসাথে বোর করতে মোটেও চাই না !
তা এহেন জটিল কোমরের কাঠামোয় ব্যথা হলেও, তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কমে যায় নিজে থেকেই। নিদেনপক্ষে কিছু প্যারাসিটামল বা ঠান্ডা-গরম সেঁক,অথবা বাঙালির আদি-অকৃত্রিম মালিশ।
ব্যথা কতটা আয়োডেক্সে যায় আর কতটা নিজের প্রতি বাড়তি নজরে যায় বা কতটাই বা আরেকজনের মালিশের আড়ালে কোমল স্পর্শে যায় সেই বিতর্কে না যাওয়াই ভালো।
যে ব্যথা নিজে থেকে প্রস্থান না নেয় সে ব্যাথার চিকিৎসা মাঝে মধ্যে একটু জটিল হয়ে পড়ে । কোন ওষুধে যে কি কাজ করে বা আদৌ কাজ করে কিনা সেটা বিজ্ঞান এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি।
তাই এক্ষেত্রে আমাদের এক এবং একমাত্র হাতিয়ার, প্রতিরোধ। নিয়মিত লম্বা হাঁটাচলার পাশাপাশি যোগব্যায়াম, পারলে এ্যারোবিক্স।
কাজের করার সময়, দাঁড়িয়ে থাকার সময়, কম্পিউটারের সামনে বসে থাকার দেহভঙ্গি বা পশ্চার – এও নজর রাখুন। হাঁটাচলা লম্বা হওয়া বাঞ্ছনীয়।
বাড়িতে রান্নাঘর থেকে বসার ঘরে ১০ হাজার বার হাঁটাচলা করলেও বিশেষ কিছু সুবিধা করতে পারবেন না।
ভারী সুটকেস, বাজারের ব্যাগ, বা জলের বালতি তোলা থেকে বিরত থাকুন। খাবারে ক্যালসিয়াম এর পরিমাণে নজর দিন।
সকালে ১৫ মিনিট মিষ্টি রোদ আপনাকে দিতে পারে আরো স্বাস্থ্যবান অস্থি।
রোদ আর আপনার ত্বক মিলে যে উৎকর্ষ ভিটামিন D তৈরী করে সেই একই মানের ভিটামিন কৃত্রিম ভাবে তৈরী করতে কালঘাম ছুটে যায় ল্যাবরেটরিতে।
গাড়িতে সফর করলে সিটে বসা এবং নামার সময় সতর্ক থাকুন।
কোমরের ব্যথায়, ব্যথা কমানোর ওষুধ দেয়া হয় আর তার সাথে সাথে অনেক সময়ই মাংসপেশি গুলোকে খানিকটা বিশ্রাম দেওয়ার জন্য মাসল রিলাক্সেন্ট ব্যবহার করা হয়। কদিন আগে প্রকাশিত ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে এক গবেষণায় বহুল প্রচলিত এই মাসল রিলাক্সেন্ট এর কার্যকারিতা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন চিহ্ন উঠে গেলো।
প্রায় সাড়ে ছয় হাজার মানুষের উপরে চালানো এই গবেষণায় জানা যাচ্ছে এই মাসল রিলাক্সেন্টগুলো কোমরের ব্যথা কমাতে একদমই পারদর্শী নয়।
শুধু তাই নয়, এই মাসল রিলাক্সেন্ট ব্যবহারে মানুষের মধ্যে মাথা ঝিমঝিম থেকে শুরু করে বমি বমি ভাব এবং কখনো কখনো পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা এই ধরনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া আরো বেড়ে যাচ্ছে।
তাই মাসল রিলাক্সেন্ট খাওয়ার আগে ভালো করে সচেতন থাকুন। এবং, ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করে নিন।
এইবার আসি জটিলতর অধ্যায়ে।
অন্ধকার সুড়ঙ্গে এঁকেবেঁকে চলছেন একজন। তার দুপাশে দুই নদী। এক নদী যায় উজানে , আর আরেকজন ভাটিতে। ব্যথা উৎস খুঁজতে আঁতিপাতি করে চললো গবেষণা। জীবিত মানুষের ওপর নানা টেস্টে। সাথে মৃতমানুষের পোস্টমর্টেমে। কি অদ্ভুত তথ্য পেলাম আমরা
অন্ধকার সুড়ঙ্গে এঁকেবেঁকে চলছেন একজন। তার দুপাশে দুই নদী। এক নদী যায় উজানে , আর আরেকজন ভাটিতে। ব্যাথার উৎস খুঁজতে আঁতিপাতি করে চললো গবেষণা।
এনাটমি ক্লাসে এক প্রবাদপ্রতিম শিক্ষকের কাছে পড়ার সুযোগ হয়েছিল। তাঁর খুব কম ‘ক্লাস’ লেকচার থিয়েটারে করেছি। বেশিরভাগই হত ডিসেকশন টেবিলে বা ওনার ঘরে। প্রফেসর পি কে সেন।
অনেক কিছু তিনি পড়িয়েছিলেন। তার থেকেও যেটা বেশি পড়িয়েছিলেন যেটা তা হলো কিভাবে পড়াতে হয়।
তিনি বলতেন অন্ধকার সুড়ঙ্গে এঁকেবেঁকে চলছেন একজন। তার দুপাশে দুই নদী। এক নদী যায় উজানে , আর আরেকজন ভাটিতে।
বেশিরভাগ কোমরের ব্যথা হাড় মাংসপেশী এবং লিগামেন্ট এর মধ্যেকার ক্রিয়া-বিক্রিয়ার জন্য হলেও কিছু ধরনের কোমরের ব্যথা আরো বেশি মনোযোগের দাবি করে।
যিনি এঁকে বেঁকে চলছেন তিনি নার্ভ বা স্নায়ুতন্ত্র। তিনি একা হাঁটেন না। সাথে চলে আর্টেরি বা ধমনী নদী। এই নদীর রক্ত তীরবেগে ছুটছে হৃদয় থেকে অক্সিজেন নিয়ে কোষে-কলায়। আর আরেকপাশে কুলকুল করে বইছে ভেইন বা শিরা। এই নদীর রক্ত শান্ত ভাবে বইছে উজানে , হৃদয়ের দিকে।
লক্ষ্য একটাই, কোষ কলা থেকে সব মলিনতা ধুয়ে নিয়ে হৃদয় আর ফুসফুসের গর্ভগৃহে বাতাসের পরশপাথরে স্পর্শ করে রক্ত কে করবে আরো লাল। আরো বেশি অক্সিজেন সমৃদ্ধ। যে রক্ত আবার ছুটবে ধমনী দিয়ে।
প্রায় তিন দশক পেরিয়ে গেলেও, ওঁনার পড়া ভুলিনি এখনো।
তবে যা বলছিলাম। অভিযোজনের প্রয়োজনে স্নায়ু স্থান নিয়েছে হাড়-মাংসপেশির আড়ালে। যাতে শ্বাপদের সাথে লড়াই করার সময় স্নায়ু জখম হয়ে মানুষ পঙ্গু হয়ে না যায়।
আরো গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ু গুলো আশ্রয় নিয়েছে হাড়ের প্রকোষ্ঠে বা হাড়ের সুড়ঙ্গে। হাড়ের সুড়ঙ্গে স্নায়ু সাথে নেয় ধমনী আর শিরা কে। রক্তবাহগুলো ক্ষমা ঘেন্না করে ছিটেফোঁটা রক্ত দিয়েই সুড়ঙ্গগামী স্নায়ুকে তাজা রাখে।
কিন্তু সমস্যা অন্য। সুড়ঙ্গে এই তিনমূর্তির জন্য কোনোক্রমে পরিসর থাকলেও অতিরিক্ত কোনো জায়গা নেই।
এমনকি এই সুড়ঙ্গে একটু জল জমলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে স্নায়ু।
ধমনীর রক্তের দুর্নিবার গতি কে বাঁধা দেওয়ার সাহস খুব কম পরিস্থিতিরই হয়। আর কুলকুল করে বয়ে যাওয়া শিরা এতটাই cool যে তাকে বাঁধা দিলেই সে অন্যপথে হৃদয়ে পাড়ি জমায়। সমস্যা শুধু নার্ভের।
শুধু জল নয়। সুড়ঙ্গের পরিসরে কখনো কখনো ভাগ বসায় বেসামাল হাড়, বেয়াদব কার্টিলেজ। কাঁদতে থাকে স্নায়ু। আমরা ব্যাথা পাই।
সুড়ঙ্গ পরিষ্কার না করে দিলে কাঁদতে কাঁদতে স্নায়ু অবশ হয়ে পড়বে। জায়গাগুলো ঝিনঝিন করবে যাকে বলে পিনস এন্ড নিড্লস।
তাও যদি সুড়ঙ্গ পরিষ্কার না হয় তাহলে একদিন স্নায়ু রাগ করে সব কাজ বন্ধ করে দেবে। তাঁকে ধরলে মারলেও সে আর কিছু করবে না। সে যা কাজ করছিলো সব পঙ্গু হয়ে যাবে।
সে যদি সংবেদনশীল স্নায়ু হয় তাহলে ত্বক হয়ে যাবে অসাড়। আর সে যদি করিৎকর্মা স্নায়ু হয় তাহলে আমরা হবো পঙ্গু।
এই ধরনের কোমরের ব্যথায় আগেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। আবার বলি , কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ধরনের কোমর ব্যথায় পা ঝিমঝিম করতে থাকে, পায়ের একটা নির্দিষ্ট অংশ সাময়িকভাবে অসাড় হয়ে যেতে পারে, কখনো পেচ্ছাপ করার সমস্যাও হতে পারে । কখনো কখনো এমনও হয় যে কোমরের ব্যথা একদম তীব্র বর্শাফলকের মতো পায়ের দিকে ছড়িয়ে পরে ইলেক্ট্রিক শকের মতো। যেব্যথা হাঁচলে কাশলে প্রচন্ড বেড়ে যায় সেটাও দাবি করে ডাক্তারের পরামর্শ।
ব্যথার জন্য আপনার দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত হলে, আস্তে আস্তে যদি ব্যথা আরো বাড়তে থাকে বা ব্যথার জন্য আপনি যদি সত্যি সত্যি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন তাহলে অপেক্ষা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই বাড়বাড়ন্ত হয় না।
দরকারের থেকে যাদের বেশি ওজন রয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও কোমরের হাড় – মাংসপেশি বেঁকেচুরে যেতে পারে। , যাদের হাড় হালকা (অস্টিওপিনিয়া বা অস্টিওপোরোসিস ) বা যাদের কোমরের আশেপাশে রেডিওথেরাপি হয়েছে তাঁদেরও ব্যথার একটা বাড়তি সম্ভাবনা থাকে।
তবে কোমরের কোন সুড়ঙ্গের অভ্যন্তরে এবং কোন মাংসপেশির আড়ালে কি ঘটছে সেটা অনুমান করা খুব কঠিন ব্যাপার। মোটের উপর বলতে গেলে দেখা যায় যে ১০ জনের মধ্যে ৯ জনের কোমরের ব্যথা অনির্দিষ্ট কারণের জন্য হয়।
যে কারণ খুব চট করে প্রচলিত পরীক্ষা যেমন এক্সরে ইত্যাদিতে ধরা পড়ে না। কিন্তু দশে একটি কোমরে ব্যথা আরো বেশি বিশ্লেষণের এর দাবি করে এবং তার জন্য অনেক সময় এমআরআই স্ক্যান ইত্যাদির দরকার পড়তে পারে। খুব বড়সড়ো হাড়ের সমস্যা না হলে সাধারণত এক্স-রেতে কোমরের ব্যথার কারণ খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা বিরল।
সত্যি সত্যি কোমরের ব্যথার কারণ জানার দরকার হলে খানিকটা ব্যয়সাপেক্ষ হলেও এমআরআই স্ক্যান নিতে পারে নির্ণায়ক ভূমিকা।
তবে হ্যাঁ আপনার কোমর আপনার নজর চায়। যেদিন সে কাঁদতে শুরু করবে সেদিন নয় ! তার আগে থেকেই।
হ্যাঁচকা টানে ডিভান খোলা বা অ্যামাজনের বাক্স তোলার সময় সাবধানে থাকুন।
আপনার মনের জোর কোমরের জোর থেকে বেশি।
আচমকা কোনো ভারী কাজ আপনি পারবেন মনে করলেও আপনার কোমর নাও পড়তে পারে। আপনার বাইসেপ্স সাবলীল হলেও কোমরে ধাক্কা লেগে কি হতে পারে সচেতন থাকুন সেদিকে।
তবে পিঠে ব্যথার মূল কারণ হ’ল ক্রনিক ত্রুটিপূর্ণ দেহভঙ্গিমা বা পস্চার। বার বার ঝুঁকে বা হেলে কাজ করলে ( যাকে বলে স্ল্যাউচিং) ব্যাথা আরো বেড়ে যায়।
কম্পিউটারে কাজ করার সময় কিবোর্ডের ওপর ঝুঁকে পড়বেন না। কাঁধ রিলাক্স করে, সোজা হয়ে বসুন। চেয়ার আরো সামনের দিকে টেনে এমনভাবে বসুন যাতে আপনার পিঠ চেয়ারের পেছনে সমান্তরাল ভাবে ঠেকে থাকে।
কোনো উঁচু চেয়ারে বসে যদি আপনার পায়ের পাতা পুরোটা মাটিতে না ঠেকে তাহলে চেয়ার পাল্টান। আর না পাল্টানো গেলে পায়ের তলায় একটা টুল নিন যাতে পা কে যথেষ্ট সাপোর্ট দিতে পারেন আপনি। মেঝেতে পা সমতল রাখুন।
দেহভঙ্গিমা নিয়ে একটা বিজ্ঞানের শাখা আছে যার নাম আর্গোনোমিক্স। খুব ভালো আর্গোনমিক চেয়ার কিনতে গেলে আপনার পকেটের ইকোনোমিক অবস্থা অবশ্য বেসামাল হতে পারে।
ভালো চেয়ারের দাম লাখের ওপরে উঠতে পারে।
তবে বেশি কাজ করবে আপনার সচেতনতা। চেষ্টা করেও চেয়ার আর আপনার পিঠের মাঝে গ্যাপ ভরাতে না পারলে খাঁটি তুলোর পাতলা বালিশ নিন।
ফাইবার, পালক বা সস্তা স্পঞ্জের বালিশে কাজ করার সম্ভাবনা কম। গাড়ির ড্রাইভিং সিটেও একই ব্যবস্থা করুন।
শোয়ার সময় মেরুদণ্ডকে একটি নিরপেক্ষ মোটামুটি সোজা অবস্থানে রাখুন। অন্য কোনো সমস্যা না থাকলে আপনার দুই হাঁটুর মধ্যে সেই পাতলা বালিশ রাখুন। যদি আপনি সবসময় চিৎ হয়েই ঘুমান তাহলে হাঁটুর নীচে বালিশটি স্লাইড করে ঢুকিয়েও নিতে পারেন।
নিয়মিত শরীরচর্চা করে ফিটনেস বাড়িয়ে নিন আগে ভাগেই।
আবারও বলি আপনার মনের জোর কোমরের জোর থেকে বেশি। মনের জোর কে শরীর চর্চার সাফল্যের জন্য ব্যাবহার করুন।
……….মানস চক্রবর্তী