ঘুম ভাঙ্গতে অভ্যাস মতোই বিছানা থেকে হাঁক মারলো শুভ্র –
- “বৃষ্টি! চা দিয়ে যাও।
বলেই আবার চোখ বুজলো।
কিছুক্ষণ হয়ে গেছে। এখনো চা এলো না দেখে, আবার ডাকতে গিয়েই থমকালো। বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।
আর কোনো দিনই বৃষ্টি আসবে না। বুকের মধ্যে যতো মেঘই জমুক।
কালই আদালতে কলমের এক খোঁচায় চুকে গেছে তাদের সাত বছরের সম্পর্ক।
আচ্ছা কলমের কালির একটা দাগের কি এতোটাই শক্তি, যে রবারের মতো মুছে দিতে পারে জীবনের একটা অধ্যায়!
ভাবতেই সকালটা যেনো এক বিষন্নতায় ভরে গেলো।বিছানার পাশে রাখা প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে ধরালো। ধোঁয়াটা পাক খেতে খেতে ওপরে উঠে যাচ্ছে। আর স্মৃতির দরজা খুলে যাচ্ছে।
সেদিন ছিলো মহাষ্টমী। পাড়ার প্যান্ডেলে বসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারছিলো। তখনই প্রথম দেখা। বান্ধবীর সঙ্গে ঠাকুর দেখতে এসেছিলো। হঠাৎই বিপত্তি। বাঁশের একটা খুঁটিতে ধাক্কা খেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়লো ওরা যেখানে বসেছিল ঠিক তার সামনেই। কনুইয়ের কাছটায় একটু কেটে গিয়ে অল্প রক্ত বেরোচ্ছে। ওর তখন অবস্থা, পালাতে পারলে বাঁচে। একে তো রাস্তার ধুলো লেগেছে শাড়িতে, তায় আবার এতোগুলো ছেলের সামনে পড়ে যাওয়া।
সামনেই শুভ্র’র বাড়ি।
একরকম জোর করেই বাড়ি থেকে ফার্ষ্ট এড বক্স এনে জায়গাটা পরিস্কার করে একটু মলম লাগিয়েছিলো। তখনই একবার ওর চোখের দিকে চোখ পড়েছিল। সে দৃষ্টিতে কি ধন্যবাদের সঙ্গে আরো কিছু মিশে ছিলো! কে জানে!
তবে তারপর থেকে প্রায়ই দেখা হয়ে যেতো। এভাবেই একদিন আলাপ। তার থেকে মন দেওয়া নেয়ার পালা। দুজনে অনেক কাছাকাছি চলে এসেছিলো। একটা ঘোরের মধ্য দিয়ে দিন কেটে যেতো।
অবশেষে বিয়ে হলো। বেশ স্বপ্নের মতোই কাটলো ক’বছর। তারপর যা হয়। বৃষ্টির অস্তিত্বটা জীবনের আর পাঁচটা সম্পর্কের মতো তার বিশেষত্ব হারিয়ে ফেললো।
কিন্তু সত্যিই কি তাই! শুভ্র ভাবতে চেষ্টা করলো, তাহলে বুকের ভেতরটা আজ টনটন করে ওঠে কেনো? কোনো সন্তান হয় নি তাদের।কিন্তু তা নিয়ে কোনো অনুযোগ তো কোনো দিন করে নি কেউই। তবে!
সিগারেটের আগুন নিভে আসে, ভাবনা নয়।
এক বন্ধু বলেছিল – আসলে জানিস পুরুষ মানুষের কাছে প্রেম একটা নতুন পাওয়া খেলনার মতো। একটু ঘাটাঘাটি, দেহের উত্তাপ পোহানো, একটা শরীরকে জানা, ব্যস! তারপরে দাম্পত্য জীবন যেনো যান্ত্রিক হয়ে পড়ে। প্রেম হয়ে যায় একটা অভ্যাস মাত্র। দায়, দায়িত্বের মাঝে পড়ে প্রেম কোথায় চুপ মারে।
কিন্তু সত্যিই কি তাই !বৃষ্টির প্রতি ভালোবাসার তবে কি আর কিছুই অবশিষ্ট ছিলো না!
মাঝে মধ্যে বৃষ্টি কোথাও গেলে তাকে কি শূন্যতা ঘিরে ধরতো না!
তবু কেনো এতো অনুযোগ করতে আমি পাল্টে গেছি বলে! অভিমানী হয়ে বলতে মরে গেছে ভালোবাসা।
শুভ্র মনে মনেই বলে
-” বিশ্বাস করো বৃষ্টি, ভালোবাসা ছিলো! সংসারের ব্যাঞ্জনে নুন হয়ে মিশে ছিলো। বোঝো নি।
মনে আছে সেবারে যখন আমার পক্স হলো, বুক দিয়ে আগলে আমার সেবা করেছিলে। কতো বারুণ করেছি, বেশি কাছে এসো না।
কথা শুনেছিলে?
তারপর আমি উঠতে না উঠতেই, তুমি পড়লে। আমি সেবা করতে চাইলেও,আমায় বেশি কাছে ঘেঁষতে দিতে না দূর্বল শরীর বলে। তাহলে?
আসলে আমাদের মধ্যে বোধহয় একজনের সঙ্গে অন্যজনের প্রত্যাশায় অমিল হতো। তুমি খুঁজেছো আমার মধ্যে সেই আগের প্রেমিককে। তখন আমার প্রেম যে রূপ বদল করে আটপৌরে হয়ে গিয়েছিল। যা হয়তো আমরা মানিয়ে নিতে পারি নি। তাই মতান্তর, তা থেকে মনান্তর।
দুজনেই ভেবেছিলাম তাপ্পি দিয়ে সম্পর্ককে টিকিয়ে না রাখাই ভালো।
কিন্তু আজ!
সম্পর্ক তো ভেঙ্গে গেছে।মনের আকাশ তবু কেনো মেঘে মেঘাচ্ছন্ন!
আমি যে আর পারছি না।
চাতকের মতো ফোন টা নিয়ে রিং করে যাচ্ছি। কেউ ধরছে না, হয়তো বেজেই যাবে।
বৃষ্টি আসবে না।