আজ খেলায় কে জিতবে ঠাকুর?
ঠাকুর বললেন : দলবদ্ধ ভাবে যে দল আজ পরিশ্রম করে দক্ষতা আর বিচক্ষণার সাথে খেলবে সেই জিতবে l
এবারের পরীক্ষায় সব প্রশ্ন যেন কমন পাই ঠাকুর l
ঠাকুর বললেন : পরীক্ষার সব প্রশ্ন এবার পাঠ্য পুস্তক থেকেই আসবে, ঐটি ভালো করে খুঁটিয়ে পড়া থাকলেই সব প্রশ্ন কমন আসবে l
ঠাকুর সংসারে অর্থকষ্ট না থাকে দেখো l
ঠাকুর বললেন : অপচয় কোরোনা আর লোক দেখানো আতিশয্য কোরো না l নিজের ওজন বুঝে ভোজন কোরো, অভাব হবে না l
ঠাকুর আরো অর্থ দাও l
ঠাকুর বললেন : টাকা থাকলে চোখ কান খোলা রেখে নিজের বুদ্ধিমত্তা আর বিচক্ষণার সাথে সঠিক জায়গায় বিনিয়োগ করো, অর্থবৃদ্ধি হবে l
ঠাকুর মনে আনন্দ পাবো কিসে ?
ঠাকুর বললেন : সেবায় l জীব সেবাতেই পরমানন্দ রে l অন্যের আনন্দেই যে নিজের আনন্দ l মুখের কথা নয় গো,একবার উপলব্ধি করে দেখ , কি আনন্দ, কি মজা l
ঠাকুর বিশ্বাস কি?
ঠাকুর বললেন : তিনি, যিনি এই জগৎ সৃষ্টি করেছেন তুমিও তাঁরই সন্তান l আর মহাপ্রকৃতি – যিনি ব্রহ্মাণ্ড’র সর্ব শক্তির আধার , তাঁর শক্তিই তোমার অন্তরে l এটাই তো বিশ্বাস l
ঠাকুর বিবেক দাও, জ্ঞান দাও, ভক্তি দাও l
ঠাকুর বললেন : আশীর্বাদ করি তোমাদের চৈতন্য হোক l
ঠাকুর কিছু একটা চমৎকার করে দাও জীবনে l
ঠাকুর বললেন : জীবন অনিত্য, মৃত্যুই একমাত্র নিত্য l ২৪ ঘন্টা ৩৬৫ দিন একটানা একটা মেশিন নিরন্তর চলছে জীবনপ্রদীপ হয়ে l মুহূর্তের জন্যে থেমে গেলেই জীবনের ইতি – মৃত্যু l তাই যতক্ষণ প্রতিটি শ্বাস প্রশ্বাস পড়ছে, ততক্ষণই জীবনের সবচেয়ে বড় চমৎকার ঘটে চলেছে l মিউজিক্যাল চেয়ারের মতো l তাঁর হতেই রিমোট l তিনিই ইচ্ছে মতো রিমোর্টের স্টার্ট বোতামটা টিপে জীবনের গানটা চালাচ্ছেন, আবার যেই রিমোটের স্টপ বোতামটা টিপছেন জীবনের গান বন্ধ, মুহূর্তে যিনি চেয়ারের বাইরে তিনিই আউট l এর চেয়ে বড় চমৎকার আর কি হতে পারে?
ঠাকুরের কথায় এক নিমেষে মনের যত অন্ধ বিশ্বাস, ধর্মীয় গোঁড়ামি, ভয় থেকে ভক্তি – সব অন্ধকার যেন কেটে গেলো l মনের আকাশ ঝলমলে না হলে জ্ঞানের কিরণ সেখানে প্রবেশ করে না l বদ্ধ মনের ঘরের সব জানলা দরজা না খুললে শুদ্ধ বাতাস আসবে কোথা থেকে ! আর নিজের এই জ্ঞান, চেতনা জাগ্রত করতেই মনকে শান্ত বা ধ্যানস্থ করতে হয় l একমাত্র একাগ্র চিত্তেই জীবনের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর বোধে উপলব্ধ হয় l সাধারণ দুর্বল চিত্ত মানুষের পক্ষে এই অনুশীলন কষ্ট সাধ্য l তখন অহেতুকী ভক্তি ভরে কোনো এক ঐশ্বরিক কৃপার প্রার্থনা করে মন l আমরা নিজেরা অপরিষ্কার জায়গায় থাকতে পারি না, তবে মনকেও তো পরিষ্কার রাখতে হবে না কি? ভক্তিরসে মন স্বচ্ছ হয় পরিষ্কার জলধারার মতো – তখন মনের অহংকার, জটিলতা,আকর, বিকার সবই সেই ভক্তি জলে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায় l প্রকৃতি যেমন সহজে সরলে সাদা কাগজের মতো নির্মলতায় আমাদের জীবনসৃষ্টি করেছিলেন, তখন ঠিক তেমন অবস্থাতেই ফিরে আসে মন সদ্যজাত শিশু মনের মতো পবিত্রতায় l তখন আনন্দ, দুঃখ, প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি, ভোগ, ত্যাগ, দুর্ভোগ এসব মায়া-মোহের ভ্রান্ত ধারণাতে মন আর কোনো ভাবেই প্রভাবিত হয় না, সে বুঝে যায় এ সব কিছুই মনের কেবল একটা স্থিতিমাত্র, আর কিছুই নয় l তখনই তো চেতনার চৈতন্য উদয় হয় আমাদের l
আসলেই ঈশ্বরের কোথাও কোনো বুজরুকি, ধাপ্পাবাজি, লোকদেখানি অস্তিত্ব নেয় l আমাদের বিবেক বোধেই আছেন তিনি পরমানন্দে l লোকশিক্ষা দিতে এমনই সুচেতনার বার্তা গোটা জীবন জুড়ে নানান ভাবে দিয়ে গেছেন নরেন, নরেন্দ্রনাথ দত্ত l তাই তো বিশ্ব তাঁকে চিনেছিল বিবেকানন্দ নামেই l এই নাম তিনি জন্মসূত্রে পান নি কিন্তু, তাঁর কর্ম আর জীবনাদর্শ দিয়ে তিনি এই নামে ভূষিত হয়েছিলেন l নাম তো আমাদের সবার আছে, কিন্তু নিজের জীবনে নিজের নামটুকুকেই সার্থক করতে আমাদের গোটা জীবন কেটে যায় ,তবুও পারি না l সেখানে কর্মযোগে নিজের নাম প্রতিষ্ঠা করে গেছিলেন যেসব মহামানব তাঁদের মধ্যে বিবেকানন্দ অন্যতম l তাঁর জন্মদিন পালন, তাঁর নামের স্লোগান, জয়গান, তাঁর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, রাস্তায় তাঁর নামে পদযাত্রা-এসবই উপলক্ষ মাত্র l তাঁকে জানতে গেলে শুধু বই পড়ার মতো তাঁর জীবনী পড়ে তাঁকে আলমারিতে সাজিয়ে রাখলেই হবে না l তাঁর যুক্তিবাদী মনের চিন্তা,চেতনাকে আত্মস্থ করার অনুশীলন করতে হবে আমাদের নিজেদের বোধে, চেতনাতে l তাঁর নিস্বার্থ ও নিঃশর্ত জীবের সেবা কর্মকে আমাদের নিজেদের জীবনের ধর্ম করে তুলতে হবে l এসব কথা মুখে বলে দিলাম আর হয়ে গেলো এমন রাতারাতি কোনো চমৎকার নয় l বিবেকানন্দ আসলে আমাদের নিজের বিবেকে এক শুভ শক্তির প্রকাশ ও তাকে ধরে রাখার নিয়মিত চর্চা, যা আমাদের পরমানন্দের সন্ধান দেবে l তাই আমাদের প্রত্যেকের বিবেকে আনন্দ ‘র আসনখানি পাতা থাক ll