মালদা বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীকে গুলি করার অভিযোগে ছয় জন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করলো পুরাতন মালদা থানার পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে একজন বিজেপি দলের স্থানীয় এক নেতার ভাইপো রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে । বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দলের জেরেই যে দলীয় প্রার্থীকে গুলি করা হয়েছে, এই দাবি প্রথম থেকেই করে আসছিল জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব । আর সেই বিষয়টি এখন প্রকাশ্যে চলে এসেছে। যার ফলে চরম অস্বস্তিতে পড়েছে জেলা বিজেপি নেতৃত্ব ।
যদিও এব্যাপারে বিজেপির জেলা সভাপতি গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডল জানিয়েছেন, বিজেপি প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ বলে জানতে পেরেছি। দলীয় স্তরেও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।
এদিকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পৃথক কয়েকটি এলাকা থেকে বিজেপি প্রার্থীকে গুলি কাণ্ডের ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । শুক্রবার ধৃতদের মালদা আদালতের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৪ দিনের নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে পুরাতন মালদা থানার পুলিশ। তবে এই ঘটনার পিছনে আরও কেউ জড়িত রয়েছে কিনা সেটিও তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের নাম বিট্টু চৌধুরী (২০), আকাশ মণ্ডল (১৯), অর্জুন ঘোষ (৪৩), বিকাশ হালদার (২১), সুমন ঘোষ (২১) এবং সায়ন সাহা (১৯)। এদের বাড়ি পুরাতন মালদা এবং ইংরেজবাজার থানা এলাকায়। ধৃতদের মধ্যে আকাশ মন্ডল নামে এক অভিযুক্ত সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার এক বিজেপি নেতার ভাইপো। এছাড়াও প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে বিট্টু চৌধুরী নামে ওই অভিযুক্ত এদিন গুলি চালিয়েছিল । ঘটনার পর থেকে ওই অভিযুক্ত বিহারে আত্মগোপন করে ছিল। বিভিন্ন সূত্র ধরে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হয়েছে। এরপর তদন্ত চালিয়ে একে একে ছয়জনকে এই গুলিকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সপ্তাহের রবিবার রাতে সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝন্টুমোড় এলাকায় দলীয় কার্যালয় গুলিবিদ্ধ হন মালদা বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী গোপাল চন্দ্র সাহা। তার গলার ডান দিকে গুলি লাগে। এরপর জরুরি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ওই বিজেপি প্রার্থীর গলা থেকে গুলি উদ্ধার করেন চিকিৎসকেরা। যদিও এখনও বিজেপি প্রার্থী গোপাল চন্দ্র সাহা মালদা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
পুলিশের একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, রীতিমতো পরিকল্পনা করেই বিজেপি প্রার্থীর ওপর হামলা চালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা । তবে এই ঘটনায় আকাশ মণ্ডল নামে এক অভিযুক্তকে মালদার একটি নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । সেখানেই নাকি ওই প্রার্থীর ওপর হামলা চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ। পাশাপাশি বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই ওই অভিযুক্তের নাম জানা গিয়েছে। তবে এই ঘটনার পিছনে আরো কোনো বড় মাথা জড়িত থাকতে পারে বলেও পুলিশের ধারণা। কী উদ্দেশ্যে বিজেপি প্রার্থীর ওপর হামলা চালানো হয়েছিল, সেই ব্যাপারে পুলিশ এখনো পরিষ্কার করে কিছু জানায় নি । তবে পুরো ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুরাতন মালদা থানার পুলিশ।
এদিকে মালদা বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি নিয়ে দলের গোষ্ঠী কোন্দল রয়েছে বলে তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করে আসছিল। ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী উজ্জ্বল চৌধুরী জানিয়েছেন, আমরা প্রথম থেকে বলে আসছিলাম বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে এই ঘটনাটি ঘটেছে। এটা এখন প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। কারণ, এই ঘটনায় পুলিশ এলাকারই এক বিজেপি নেতার ভাইপোকে গ্রেপ্তার করেছে । এই কেন্দ্রের প্রার্থী নিয়ে বিজেপির দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে গোলমাল চলছিল । তারই জেরে হয়তো এই ঘটনাটি ঘটেছে। আর বিজেপি নেতারা তৃণমূলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছিলো। কিন্তু এদিন ছয়জন দুষ্কৃতী গ্রেপ্তারের ঘটনায় বিষয়টি পরিস্কার হয়ে গিয়েছে।
যদিও এব্যাপারে সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই বিজেপি নেতার বক্তব্য, আমার ভাইপো আকাশ মণ্ডল রিহ্যাব সেন্টারে ছিলো। তাকে কেন পুলিশ গ্রেফতার করলো কিছুই বুঝতে পারছি না। তাই এর বেশি আর কিছু বলতে পারব না।