বাড়তে থাকা বাজার মূল্যের কারণে চাপ পড়ছে মিড ডে মিল

পেট্রোলের দাম বাড়ায় দিন প্রতিদিন বেড়েই চলেছে বাজার মূল্য৷ বাজার অগ্নিমূল্য৷ সবজি থেকে মাছ-ডিম, সব কিছুর দাম উর্ধ্বমুখী৷ যার আঁচ পড়ল মিড ডে মিলে৷ সপ্তাহে দু’দিন করে ডিম পাওয়ার কথা পড়ুয়াদের৷ কিন্তু, সেটাও আর দিতে পারছে না অনেক স্কুল৷ গোটা ডিমের বদলে ডিম ভেজে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে খিচুড়িতে৷ শুধু তাই নয়, পড়ুয়াদের পাতে জুটছে না ডাল বা সোয়াবিন৷ শিক্ষকদের কথায়, পড়ুয়াদের পুষ্টিকর খাবার দিতে হলে মাথাপিছু বরাদ্দ বাড়াতে হবে৷

শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, মিড-ডে মিলের জন্য পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র পিছু দৈনিক বরাদ্দ ৪ টাকা ৯৭ পয়সা। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র পিছু দৈনিক বরাদ্দ ৭ টাকা ৪৫ পয়সা। শিক্ষকরা বলছেন, একটা ডিম কিনতে গেলেই পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ টাকা খরচা পড়ে। যে দুই দিন মিড-ডে মিলে ছাত্রদের ডিম দেওয়ার কথা, সেই দিন এইটুকু বরাদ্দে কী ভাবে খরচ সামলানো সম্ভব? এই বাজার দরে সপ্তাহে দু’দিন ডিম দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এক দিন কোনও মতে গোটা ডিম দেওয়া গেলেও, আরেকটা দিন খিচুড়ির সঙ্গে ডিমের ভুজিয়া করে দেওয়া হচ্ছে।

হাওড়ার ডোমজুড়ের কেশবপুর হাইস্কুল প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর দাসের কথায়, ২০০ জন পড়ুয়া থাকলে ১২০টি ডিমের ভুজিয়াতেই সামাল দেওয়া যায়৷ আবার পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণাংশু মিশ্র জানান, বাজারে ডালের দামও চড়া৷ সপ্তাহে যে দিন ভাত, ডাল আর সোয়াবিনের তরকারি দেওয়ার কথা, সে দিন ডাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কোনও ভাবেই এই বরাদ্দে এক সঙ্গে ভাত-ডাল-সয়াবিন দেওয়া সম্ভবপর নয়৷

আবার অ্যাডভান্স়ড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস-এর রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতির বলেন, মিডি মে মিলে পড়ুয়াদের যে খাবার দেওয়া হচ্ছে, তাতে খাবারের মানের সঙ্গে আপস করত হচ্ছে। নির্দিষ্ট দিনে পড়ুয়াদের ডাল দেওয়া হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু, যতটা ঘন ডাল দেওয়ার কথা, তার থেকে পাতলা ডাল রান্না করা হচ্ছে। মশলাপাতি থেকে রান্না তেন, সব কিছুর দাম বেড়ে গিয়েছে৷ বেড়েছে রান্নার গ্যাসের দাম৷ এই বর্ধিত বাজার মূল্যর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলা যাচ্ছে না৷

চন্দনবাবু জানান, মিড-ডে মিলের মধ্যে শুধু চালটাই বিনা মূল্যে আসে৷ তাও সেটা দেয় কেন্দ্রীয় সরকার৷ যে ভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে তাতে ছাত্র পিছু দৈনিক দশ টাকা খরচ করলে সম্পূর্ণি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার দেওয়া সম্ভব৷ বেশ কিছু স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, স্কুলের কোষাগারে এত অর্থ নেই যে, ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব৷ এ প্রসঙ্গে শিক্ষা দফতরের মিড-ডে মিলের এক অধিকর্তা বলেন, “রাজ্য সরকার সাধ্য মতো চেষ্টা করছে৷ এই বিষয়ে দ্রুত কেন্দ্রের পদক্ষেপ করা দরকার।”