বর্ধমানের সিরিয়াল কিলারকে ফাঁসির সাজা দিল

২০১৯ সালের ৩০ মে কালনার সিঙ্গারকোণ গ্রামে নিজের বাড়িতে একাই ছিল নাবালিকা ছাত্রী। সেই সুযোগ নিয়ে চুপিসারে বাড়িতে ঢুকে কামরুজাম্মান সরকার প্রথমে ওই নাবালিকাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। বাধা দেওয়াই ওই ছাত্রীকে একটি ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় নৃশংস ভাবে কোপ মারে ও গলায় লোহার শেকল পেঁচিয়ে ধরে। তারপর মৃত ভেবে ছাত্রীকে ফেলে চম্পট দেয় ওই ব্যক্তি। সোমবার ফাঁসির সাজা শোনাল কালনা আদালত। বিচারক ওই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত কামরুজাম্মান সরকারকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিলেন। এই রায়ে খুশি মৃত ছাত্রীর মা। চোখের জল মুছতে মুছতে তিনি বলেন, মেয়েকে তো আর ফিরে পাব না। কিন্তু অপরাধীতো শাস্তি পেল। ওকে যে এমন করে মারল সে চরম শাস্তি পেয়েছে। এটুকুই শান্তি।

তাঁর আর্ত চিৎকারে ছুটে আসেন পড়শিরা। রক্তাক্ত অবস্থায় ওই ছাত্রীকে পড়ে থাকতে দেখে তার পরিবারের সদস্যরা তাকে প্রথমে কালনা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়।  শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু এনআরএসের জুনিয়র ডাক্তার পরিবহ মুখোপাধ্যায়ের উপর গুন্ডাদের আক্রমণের প্রতিবাদে তখন ডাক্তারদের আন্দোলনে উত্তাল রাজ্য। তাই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই ছাত্রীর সঠিক চিকিৎসা হয়নি বলে অভিযোগ। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কয়েকদিন সেখানে ভর্তি  থাকার পর মৃত্যুর কাছে হার মানে নাবালিকা ছাত্রী।

তারপরেই নড়েচড়ে বসে কালনা থানার পুলিশ। শুরু হয় খুনির খোঁজে তল্লাশি। আততায়ীকে ধরতে বিভিন্ন থানায় তথ্য পাঠায় কালনা পুলিশ। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় চলে নাকা চেকিং। বর্ধমানের নানা প্রান্তে পরপর খুনের ঘটনায় যখন পুলিশ রীতিমতো হাবুডুবু খাচ্ছিল, সিরিয়াল কিলিংয়ের তত্ত্ব স্পষ্ট হওয়ার পরেও যখন খুনির নাগাল পাওয়া যাচ্ছিল না কিছুতেই, তখনই কামাল করে চার সিভিক ভল্যান্টিয়ার। পরে পুলিশের জেরায় স্বীকার করে, ছ’মাসে কালনা, মেমারি, মন্তেশ্বর ও হুগলির বলাগড় এলাকায় মোট ১২ জন মহিলার উপরে হামলা চালিয়ে ৬ জনকে খুন করে সে। একই ভাবে, সাইকেলের চেন পেঁচিয়ে। এই ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় সাত। সাজা শোনার পর এদিন অবশ্য আদালত চত্বরে কামরুজাম্মান দাবি করে, সে নির্দোষ। তাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে।