প্রাচীন ভারতে বেশ্যা ও গণিকাদের কথা (২)

এই চৌষট্টি কলা বলতে যে তালিকা পাওয়া যায় তার অন্তর্ভুক্ত ছিল সঙ্গীত ও নৃত্য, তার সংগে অভিনয়, বিনা প্রস্তুতিতে মুখে মুখে কবিতা রচনা, এছাড়া সময় নিয়ে প্রস্তুত হয়ে কবিতা রচনা, ফুল দিয়ে ঘর সাজানো, মালা গাঁথা, সুগন্ধি দ্রব্য ও প্রসাদনের সামগ্রী প্রস্তুত করা, রন্ধন বিদ্যা, পোষাক-পরিচ্ছদ তৈরি করতে পারা, সূচী শিল্প, ডাকিনীবিদ্যা, ইন্দ্রজাল ও হস্ত কৌশল, ধাঁধা তৈরি করার ক্ষমতা,এমন     বাক্য রচনা, যা উচ্চারণ করতে গেলে আটকে যাবার বা গুলিয়ে যাবার সম্ভাবনা, অসিচালনা, লাঠি খেলা, ধনুর্বিদ্যা, ব্যায়াম কৌশল, ছুতোরের কাজ, স্থাপত্যবিদ্যা, তর্কশাস্ত্র, রসায়ন ও খনিজতত্ত্ব, উদ্যান রচনা, মোরগের লড়াই, তিতির পাখির লড়াই, ও ভেড়ার লড়াই শেখানো, টিয়া ও ময়নাকে কথা বলা শেখানো, নকল ফুল ও মাটির মূর্তি তৈরি করা।

গণিকারা প্রকৃতপক্ষে এই উদ্ভট তালিকার অন্তর্ভুক্ত এতগুলি বিষয় যে শিখতো তা সম্ভব বলে মনে হয় না। তবে এই তালিকা থেকে বোঝা যায় কি কি তাদের কাছে প্রত্যাশিত ছিল। তাদের জীবিকার পক্ষে উপযোগী এইসব বিদ্যার যতগুলি সম্ভব আয়ত্ত করতে পারলে তার ভবিষ্যৎ যে উজ্জ্বল হ’তো তাতে সন্দেহ নেই।
      ‘ কামসূত্র ‘ থেকে জানা যায়, রাজপ্রাসাদে দুই প্রকার বেশ্যা থাকত _(১) আভ্যন্তরীকা ও (২) নাটকীয়া। আভ্যন্তরীকা বেশ্যা গণের পৃথক অন্তঃপুর থাকত, তারা পুরুষ দিগের নয়ন পথের অন্তঃরালে অবস্থান করত। নাটকীয়ারা অভিনয়ে নিপুনা এবং সকলের দর্শনযোগ্যা, এদেরও অন্তঃপুর থাকত তবে তা আভ্যন্তরীকা বেশ্যাদের বহির্ভাগে থাকত।        কৌটিল্যের  ‘অর্থ শাস্ত্র ‘ থেকে গণিকাদের জীবন যাপনের একটা বিবরণ পাওয়া যায়। “মৌর্যযুগ বা তাহার অনেক পূর্ব হইতে গণিকাগণ রাষ্ট্রের একটি প্রয়োজনীয় অংশ বলিয়া বিবেচিত হইত। তাহাদের রক্ষা শিক্ষা ও প্রতিপালনের ভার রাজার উপরেই থাকিত।”       গৌরীশঙ্কর দে ও শুভ্রদীপ দে রচিত ” ভারত বর্ষের ইতিহাস ” গ্রন্থে উল্লেখ আছে সমাজে বহু ধরনের গণিকা ছিল। এক ধরনের গণিকারা ছিলেন নানা বিদ্যায় পারদর্শিনী। সমাজে তাঁদের যথেষ্ট সম্মান ছিল। এঁদের সামাজিক অবস্থান ছিল প্রাচীন অ্যাথেন্সের হেটারিদের মতো। ‘ বিনয়পিটক থেকে জানা যায়, জনৈক বণিকের অনুরোধে মগধরাজ (ক্রমশঃ)