প্রাচীন ভারতে বেশ্যা ও গণিকাদের কথা (পর্ব- ১)

আমার এই প্রবন্ধের শুরুতে যে কথা ব’লে নিতে হ’তো সেটা বলা হয় নি। তবে হয়নি ব’লে না বলা কথা তো বাদ দিয়ে রাখা যায় না, তাই বিলম্বে হলেও বলছি। আমার ফেসবুক বন্ধুরা হয়তো ভাবতে পারেন লেখার মত অনেক বিষয় আছে তবে লেখক বেশ্যাদের নিয়ে পড়লেন কেন ? বিশেষ করে একটি অশ্লীল বিষয়কে নিয়ে! আমি বলব, আমার সব ফেসবুক বন্ধুরা না জানলেও অনেক বন্ধু আছেন যাঁদের সঙ্গে আমার ১০/২০ বছর বা তারও আগে থেকেই বন্ধুত্ব হয়েছে এবং এঁদের বেশির ভাগই আমার সাহিত্যিক বন্ধু। আমার এই সব বন্ধুরা আমার নাটক, গল্প, কবিতা, ভ্রমণ কাহিনী এবং প্রবন্ধের সংঙ্গে পরিচিত। এঁরা জানেন, আমি আমার কোন লেখায় শ্লীলতার সীমা অতিক্রম করি নি। হাংরি জেনারেশনের কবিদের আমি অশ্রদ্ধা না করলেও আমি সে পথে পা বাড়াবার সাহস করি নি। পস্ট করে বললে বলতে হয় আমি সেটা পছন্দ করি না। বেশ্যাদের নিয়ে লেখা মানেই সেটা অশ্লীলতা দোষে দুষ্ট নয়।
আমরা আসলে সামাজিক মর্যাদার দিকটাই চিরকাল ভেবে এসেছি, তাই গণিকাদের দুঃখ- কষ্টের বিষয়টি জানার চেষ্টা করি না। কিম্বা জেনেও আমারা অবহেলা ক’রে থাকি। শিক্ষিত মানুষেরা সব জেনে শুনেও সম্মান হানীর ভয়ে কেউ মাথা ঘামাতে চান না। আমি নিজেও এই দোষে দুষ্ট। যদিও আমি সাংবাদিকতা করতে গিয়ে নিষিদ্ধ পল্লীতে গিয়েছিলাম। ভাবনা ছিল পতিতাদের পেশাগত সমস্যা , ওদের সন্তান-সন্ততিদের সামাজিক বঞ্চনা কিম্বা অবজ্ঞার শিকার হ’তে হয় কী না, হ’লে কেমন!ওরা কী সমাজের অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা কিম্বা স্কুলে পড়ার সুযোগ পায় ? ইত্যাদি বিষয়গুলো জেনে পত্রিকায় ছাপাবো,যাতে প্রশাসন ও বৃহত্তর সমাজের মানুষ সহানুভূতির সাথে ওদের সমস্যা বোঝেন ও ওদের প্রতি যত্নবান হন। কিন্তু সম্মান হানীর ভয়ে আমি সরাসরি ওদের সাথে কথা বলার সাহস পাই নি, ওদের জন্য গঠিত একটা সংগঠনের মানুষদের সাথে কথা বলে চলে এসেছি। তাই ওদের সাথে সরাসরি কথা না হওয়ার ফলে সমস্যার গভীরে ঢুকতে পারিনি। এটা আমার দুর্বলতা বা ত্রুটি যা অকপটে স্বীকার করছি। যদিওবা বেশ্যাদের নিয়ে যা কিছু লেখা বেড়িয়েছে তা শিক্ষিত মানুষেরাই বেড় করেছেন। ওদের নিয়ে লেখা বা ওদের নিয়ে কাজ করা সামাজিক দায়বদ্ধতার মধ্যেই পড়ে। তাই ঘৃণা নয়, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ওদের দেখা উচিত।
রাশিয়ায় পূর্বতন জার ,শাসনের অবসানের পর সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নে পতিতালয়ের এবং বেশ্যা বৃত্তির অবসান ঘটে।পতিতারা নতুনভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতে কী এই প্রথার আবলুপ্তি ঘটানো যায় না? এই প্রত্যাশা থেকেই এই প্রবন্ধের অবতারণা।কেননা আমাদের লড়াই গণিকা বৃত্তির বিরুদ্ধে, গণিকাদের বিরুদ্ধে নয়।
এখানেই আমার ‘কৈফিয়ত’শেষ করলাম। এর পর আমরা আবার আমাদের ‘ধারাবাহিক প্রবন্ধ’ এ ঢুকব ।