সে তখন একটা বয়েস ছিল।তখন সবারই একটা পেরেম -পেরেম ভাব আসে মনে।দুনিয়াটাকে বেশ রঙীন মনে হয়।আমারও মনে হচ্ছে।ইস্কুলের বান্ধবীরা লুকিয়ে খাতার ভেতর পেরেম পত্তর চালাচালি করছে।
সাইকেলে চড়ে রোমিওরা ছুটির সময় গেটের বাইরে লাইন দিচ্ছে।কৃষ্ণচূড়া গাছ থেকে লাল ফুলে- ফুলে রাস্তাটা ঢাকা।রোমিওরা কেমন পেরেমপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় আর জুলিয়েটরা তাদের হাত ধরে ঐ কৃষ্ণচূড়া ফুলে ছাওয়া পথ মাড়িয়ে বিকেলের ছায়া-ছায়া রোদে হাসতে হাসতে অনেক দূরে মিলিয়ে যায়।
“কোথায় যাচ্ছিস রে?”
প্রশ্ন করলেই গম্ভীর উত্তর মিলতো কোচিং এ পড়া আছে।কোন সেই অমরাবতী?সেখানে কি এমন অমৃতময় পড়া হয় যে এমন করে চখাচখির মতো হাঁটতে হয়?খুব রাগ হতো মাঝে- মাঝে।আমাদের নাকি বনেদী বাড়ী!এসব বাড়ীর ছেলেমেয়েরা নাকি কোচিং এ যায় না।সেখানকার মেয়েরা নাকি বাবা, মা, বা পুরোনো কাজের দাদা বা দরোয়ানজীর হাত ধরে ইস্কুল ছুটির পর সুবোধ বালিকার মতো বাড়ী ফিরে আসে।তারপর মাষ্টারমশাই খুকু বলে হুঙ্কার ছাড়ে।সেই গলায় বুক পেট শুকিয়ে যায়।কৃষ্ণচূড়া ফুল সরষে ফুলে পরিণত হয়।তারপর সারা সন্ধ্যে অঙ্ক ইংরেজী নিয়ে ঘষটে রাতের খাবার খেয়ে সোজা বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়তে হয়।বাড়ী নয়তো যেন জেলখানা।
উফফ কি কষ্ট!জীবনে একটা কোচিং এ যাওয়া হল না।কেউ একটা কাগজে ভালবেসে ফুলপাতা পাখি নিদেন পক্ষে একটা নৌকার ছবিও এঁকে দিল না।কি সুন্দর বান্ধবীরা একা-একা ইস্কুল থেকে ফেরে।তাদের ইয়েরা কেমন টিয়ে পাখির মতো ট্যাঁ ট্যাঁ করে কথা বলতে বলতে যায়।ল্যান্ড লাইনে ছেলেরা মেয়েদের মতো সরু গলা করে বলে-
” প্রিয়া আছে কাকীমা?আমি শ্যামা বলছি।”
কত শ্যাম শ্যামা সাজতে গিয়ে নাকে মুখে ঝামা ঘষা খেয়েছে।সে যাই হোক কি রোমাঞ্চ সে সব ঘটনায়।একটা কেউ ফোনও করলো না গো! গা জ্বলে যায় না?ক্লাস নাইনেও কেউ কাউকে ইস্কুলে আনতে আসে!
“মনা এদিক ওদিক তাকিও না বাড়ী চলো।দাদাবাবু শুনলে রাগ করবে।”
আরে ধুর্ তাকাবার বয়েসে তাকাব না?
যাইহোক এমন দুঃখের দিন কাটাতে- কাটাতে একদিনবেড়ালের ভাগ্য শিকে ছিঁড়ল। লেটার বক্সে একটা আমার নামে চিঠি এল।ওপরে বেশ লতা পাতা ফুল আঁকা।চিঠিতে একটি গান সম্পূর্ণ লেখা ছিল।
“চিরদিনই তুমি যে আমার যুগে যুগে আমি তোমারই ——–“ইত্যাদি।
পুরো গানটা অজস্র ভুল বানানে লেখা।তবু তো পেরেম পত্তর বলে কথা।আহা!প্রথম পেরেমের চিঠি।বুকটা চিন্ চিন্ করে উঠেছিল।সে নয় বানান শুধরে দেওয়া যেত।তলায় আবার লেখা ছিল ইতি তোমারই—-আমারই কে?সেটা তো বুঝতেই পারলাম না ভাল করে।বাবা পেছন থেকে এসে খপ্ করে চিঠিটা নিয়ে মুখখানা এমন করলো যেন মশা হাতী গিলে ফেলেছে।খুব এক প্রস্থ বকা ঝকা আর লম্বা লম্বা জ্ঞানবাণী শুনলাম। ফাউ হিসেবে মায়ের কানমলা দু একটা চড় চাপড় খেয়ে গেলাম।যাচ্চলে! আমি কি করলাম?আমাকে যদি কেউ পেরেম পত্তর দেয় সেকি আমার দোষ আপনারাই বলুন??