নীরব অনুভূতি

খাবার টেবিলে বসে বিজন স্ত্রী দীপালির উদ্দেশ্যে বলল_ আজ আশ্বিন মাসের ক’তারিখ? কেন বাংলা তারিখের হিসাব করছ কেন? ষোলো। বলল দীপালি। না এমনিই।
ছেলের কথা মনে পড়েছে বুঝি? আরও আট দিন আছে, ন’দিনের মাথায় ছেলে আসবে। ছাব্বিশ তারিখে মহালয়া মহালয়ার দিন থেকে রূপমের কলেজ ছুটি। বিজন বাবুর একমাত্র ছেলে রূপম। বিহারের এক কলেজে অধ্যাপনা করে। ভ্যাকেশন না হ’লে সচারচর বাড়ি আসতে পারে না। এদিকে রোজ খাবার সময় বাপ-মার ছেলের কথা মনে পড়ে। মা কষ্ট পাবেন ভেবে বিজনবাবু মুখ ফুঁটে কিছু বলেন না। দীপালি প্রায় দিনই খেতে বসে বলে, ছেলেটা যে আজ কি দিয়ে খেলো! হোটেলের রান্না , এক দিনও বোধহয় বাছা আমার পেট ভরে খায় না। বিজন বাবু কিন্তু আজ ছেলের কথা ভেবে তারিখের কথা বলেন নি। বিজন বাবু দেখলেন পাখার সুইচটা না দিয়েই দীপালি খেতে বসেছে। গরমের দিনে পাখা না চালিয়ে খেতে দীপালির কষ্ট হয়। মুখে কিছু বলে না, মনে মনে বিজন বাবুর উপর রেগে যান। মাসখানেক পর গরমটা আর থাকবে না, কিন্তু বিজন বাবুর আবার উল্টো , বাতাসে ভাত না কি ঠান্ডা হয়ে শক্ত হয়ে যায়। খেতে কষ্ট হয়। হবেই না কেন? মাড়ির দাঁত তো বছর পাঁচেক আগেই তাঁর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে চলে গেছে। তখন তাঁর বয়স ষাটও পুরো হয়নি। এসময় পাশের বাড়ির মাসিমা বৌমা বলে ডেকে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন_ কি দিন-কাল পড়েছে গো, আশ্বিন যেতে বসলো কিন্তু গরমের জন্য আর বাঁচি না বাপু!
বিজন বাবু উঠে পাখার সুইচটা অন করে দিয়ে আসতেই মাসিমা বললেন, তোমরাও দেখছি তোমাদের মেসোর মতো, গরমই হ’ক উনি খেতে বসে ফ্যান চালাবেন না। ভাত নাকি ঠান্ডা হয়ে শক্ত হয়ে যায়। আমি কিন্তু বাপু গরমের দিনে ফ্যান না চালিয়ে খেতে পারি না।
বিজন বাবু ও দীপালি একয়ে অপরের চোখে চোখ রেখে মিট মিটিয়ে হাসে।