রেইন-ট্রি গাছদুটো আজও অতিকায় ছাতার মতো ছায়া বিছিয়ে রাখে বাগানে ঢোকার মুখে। অথবা চম্পাগুড়ি হাটের ঐ যে ঝুরিনামা বটগাছগুলো যারা আলো আঁধারি ঘেরা সন্ধ্যার বাতাসে ফিসফিসিয়ে ভাসিয়ে দেয় বহুযুগ আগে হারিয়ে যাওয়া বিবর্ণ দিনগুলোর গল্প আর সেই গল্পের রেশ ভাসতে ভাসতে হারিয়ে যায় ছোট ছোট চা-জনপদগুলো ছুঁয়ে পশ্চিমে জলঢাকার চর পেরিয়ে দূর অরণ্যের ভেতর, তারা এ মাটির ইতিহাস অনেকটাই জানে। কিন্ত উত্তরে প্রাচিরের মতো যুগযুগান্ত বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ঐ যে নীলরঙা আদিম পাহাড়, বয়সের যার কোনও মাপকাঠি নেই শুধু সে-ই জানে এ তল্লাট জুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রতিটি চা-বাগানের জন্ম ইতিহাস।
১৬.১০.১৮৮৫ তারিখে মিঃ ডি. ক্লার্ক সাহেব যেদিন নিদিম টি- কোম্পানির হয়ে চুপাগুড়ি (মতান্তরে চাঁপাগুড়ি)-র নামে প্রথমবার ৮০১.২৬ একর জমির ইজারা নিলেন চা চাষের জন্য সেই দিনটিও মনে রেখেছে ঐ নীলপাহাড়। পাহাড় দেখেছে ইঙ্গ-ভুটান যুদ্ধ। সাক্ষী থেকেছে কীভাবে১৮৬৫ র সিনচুলা চুক্তির পর জঙ্গলাকীর্ণ বিস্তৃত ডুয়ার্স অঞ্চল ভারত ভূখণ্ডের অন্তর্গত হল। ঠিক তার নয় বছর পর তিস্তাপাড়ে ১৮৭৪ সনে জন্ম নিল ডুয়ার্সের প্রথম চা-শিশু ‘গজলডোবা চা-বাগান’। আজ যার অস্তিত্ব মুছে গেছে। এর ঠিক পরপরই পুরো ডুয়ার্স জুড়ে শুরু হল একের পর এক জমি অধিগ্রহণ করে ইউরোপীয় চা-চাষীদের চা বাগান গড়ে তোলার স্বপ্ন উড়ান।
এই সময়কালেই ১৮৮৫ সালে নিদিম টি কোম্পানি চুপাগুড়ি বা চাঁপাগুড়ি চা-বাগানের গোড়াপত্তন করে প্রথমে ৮০১.২৬ একর ও পরে ২৬.৭.১৮৮৬ সালে ৯০৫.০৮ একরের ইজারা নিয়ে। ১৮৮৬ সালে কোম্পানির তরফে ইজারা নথিভুক্ত করা হয় মিঃ বেকিংহ্যাম সাহেবের নামে। নিদিম টি কোম্পানি ততদিন প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে চা চাষে। তারা একের পর এক জমির ইজারা নিয়ে ফেলেছে সাইলিহাট বা সাইলি,চ্যাংমারি, দালমোনি বা দলমোর, দলসিংপাড়া, তোর্সা প্রভৃতি চা বাগানের নামে। কিন্তু চুপাগুড়ির কী হল? না, এই নামে কোনও চা বাগান ডুয়ার্স অঞ্চলে খুঁজে পাবে না এখন আর কেউ। তবে চম্পাগুড়ি নামে একটি প্রাচীন সাপ্তাহিক হাট আজও রয়েছে ডুয়ার্সের মানচিত্রে । আড়ে বহরে বেড়ে জমজমাট হয়েছে এতদিনে অনেকটাই। নাগরাকাটা থেকে পাঁচ কিমি উত্তরে গেলেই এ হাটে পৌঁছনো যায়।
কিন্তু সেই চুপাগুড়ি চা-বাগানটি গেল কোথায়! বেমালুম উবে গেল নাকি! না, এই চম্পাগুড়ি হাটের জন্মও কিন্তু ঐ চুপাগুড়ি বা চাঁপাগুড়ি চা-বাগানের শরীর থেকেই। ১৯২২ সালে নিদিম টি কোম্পানি যখন মোট ২০০৫.২৬ একর জমির ইজারা নিল তখন তারা চুপাগুড়ির নাম পাল্টে তাদের আরেকটি বাগান সাইলির সাথে সামঞ্জস্য রেখে নাম রাখল নয়াসাইলি। হারিয়ে গেল চুপাগুড়ির নাম চিরতরে। তবে বাগানের নাম বদলালেও হাটের জায়গাটুকুর নাম কিন্তু চাঁপাগুড়ি বা চম্পাগুড়িই রয়ে গেল। দীর্ঘদিন হাটের হাটুরেদের থেকে সাপ্তাহিক খাজনা তুলত নয়াসাইলি চা বাগান কর্তৃপক্ষ। এই খাজনা তোলার জন্য বাগানের একজন কর্মচারী নিযুক্ত ছিলেন। প্রতি হাটে হাটুরেদের থেকে খাজনা তুলে তিনি পৌঁছে দিতেন নয়াসাইলি চা বাগানের অফিসের সিন্দুকে। পরবর্তীতে এই হাটের মালিকানা ছেড়ে দেয় বাগান কর্তৃপক্ষ। ছেড়ে দেয় হাট সংলগ্ন দুটি মিশনারি স্কুল সহ বিস্তির্ণ অঞ্চল। আর এই কাজটি করেন চা বাগানেরই তৎকালীন এক ইউরোপিয়ান ম্যানেজার শুধুমাত্র এক পাদ্রী মিশনারির সনির্বন্ধ অনুরোধে। সেকালে বাগানের ম্যানেজারের ক্ষমতা ছিল অসীম। এমনতর মহৎ কাজে জমি হস্তান্তর করার জন্যও তাদের মালিকপক্ষের সঙ্গে বিশেষ আলোচনারও প্রয়োজন পড়ত না। অতটা জমি ছেড়ে দেওয়ার ফলে নয়াসাইলির অনুমোদিত ইজারা বা লিজের পরিমাপ কমে দাঁড়ায় বর্তমানে ১৯১৫.১৮ একর। ১১৮০ একর প্রায় চা আবাদির অন্তর্গত।
পরবর্তীতে নিদিম টি কোম্পানি ডুয়ার্সের এই চা বাগানগুলোর পরিচালনার ভার তুলে দিল লন্ডনস্থিত একটি ন্যারোগেজ ট্রামওয়ে পাতার সংস্থা অক্টাভিয়াস স্টিল এন্ড কোং নামক এক এজেন্সি হাউসের হাতে। সংস্থার কর্ণধার মিঃ অক্টাভিয়াস স্টিলের নামে ছিল এই কোম্পানির নাম। ততদিনে আসামে বেশ কয়েকটি চা বাগান যেমন বাজালোনি, ডার্বি, ইশাভেল, লোবহ, তিলকা প্রভৃতি কোম্পানিতে ন্যারোগেজ লাইন পেতে ফেলেছে এই কোম্পানি। চা-বাগানে ন্যারোগেজ লাইন কেন? প্রশ্ন জাগতে পারে অনেকের মনে। আসলে এই ন্যারোগেজ লাইনের ওপর দিয়ে ছোট ছোট ওয়াগনে করে চা পাতা আনা হত সেকশন থেকে কারখানায়। আসামের বহু বাগানে এমন ব্যবস্থা ছিল। লাইনপাতার কাজ করতে এসে অক্টাভিয়াস স্টিল চা বাগান পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে যায় এবং অচিরেই নিদিম টি কোম্পানি চা বাগানগুলোর মালিকানা পুরোপুরি হস্তান্তরিত করে দিল অক্টাভিয়াস স্টিল এন্ড কোং-এর হাতে।
পরবর্তীতে অক্টাভিয়াস স্টিল কোম্পানির সিংহভাগ শেয়ার কিনে নেন বিখ্যাত শিল্পপতি মিঃ ডি. পি গোয়েঙ্কা। আসামে অক্টাভিয়াসের চারটি বাগান দিয়ং, দিশই, তিনালি ও কানু ও তাঁর মালিকানাধীন হয়। আসামের বাগানগুলিকে বলা হত গ্রোব টি গ্রুপ আর ডুয়ার্সের চারটি বাগান সাইলি, নয়াসাইলি, দলমোড় ও দলসিংপাড়া এই চারটি বাগানকে বলা হতো নিদিম গ্রুপ। ততদিনে চ্যাংমারি ও তোর্সার হাতবদল হয়ে গেছে। সামান্য কিছু শেয়ার অক্টাভিয়াস স্টিলের হাতে থাকায় তাদের লন্ডনস্থিত অফিসের সাথে যোগাযোগ রেখে চলতে হতো গোয়েঙ্কা সাহেবকে। পরবর্তীতে অবশ্য পুরোপুরি মালিকানাই চলে আসে গোয়েঙ্কাদের হাতে।
মিঃ ডি.পি গোয়েঙ্কা সাহেব মারা যাওয়ার পর তাঁর দত্তক কন্যা মিসেস পদ্মা কানোরিয়া কোম্পানির দায়িত্বভার নেন। তাঁর আমলেই কোম্পানির নাম বদলে হয় অক্টাভিয়াস টি এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এসময় বোর্ড অব ডাইরেক্টরস এর অন্যতম ব্যক্তিত্ব মিঃ পবন কানোরিয়ার অকস্মাৎ মৃত্যু এবং কোম্পানির আর্থিক দুরবস্থার কারণে কোম্পানি বিক্রি হয়ে যায় বিখ্যাত আমদানি রপ্তানিকারক সংস্থা এল.এম.জে কোম্পানির কাছে। কলকাতার ১৫-বি হেমন্ত বসু সরণির চকমেলানো বিরাট ইমারত “অক্টাভিয়াস সেন্টার” সহ চারটি চা বাগান সাইলি, নয়াসাইলি, দলমোর ও দলসিংপাড়া চলে যায় এল.এম.জে কোম্পানির হাতে। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মিঃ মদনলাল জৈন ছিলেন যার কান্ডারি। তাঁর পিতার নাম ছিল লছমিনারায়ণ জৈন। দুজনের নাম জুড়ে কোম্পানির নামকরণ করা হয়েছিল এল. এম. জে বা লছমিনারায়ণ মদনলাল জৈন। মিঃ মদনলাল জৈন তাঁর পূর্ব জীবনে আসামের চা বাগানে ম্যানেজার হিসেবে কিছুকাল কাজ করেন। চাকরি ছেড়ে তিনি নেমে পড়েন স্বল্প পুঁজি নিয়ে চা রপ্তানির ব্যবসায়। সেই শুরু। তারপর তিল তিল করে তিনি গড়ে তোলেন এক্সপোর্ট ইমপোর্টের বিশাল ব্যবসা।
অক্টাভিয়াস টি অধিগ্রহণের কিছুদিনের মধ্যেই নতুন কোম্পানি অবশ্য বিভিন্ন কারণে দলমোড় ও দলসিংপাড়া চা বাগানের মালিকানা ছেড়ে দেয় অন্য একটি কোম্পানির হাতে। হাতে রয়ে যায় শুধু সাইলি ও নয়াসাইলি। মিঃ মদনলাল জৈন মারা গেলে তাঁর ছেলে মিঃ জয়ন্ত কুমার জৈন বর্তমানে কোম্পানির অন্যতম নির্দেশক। কোম্পানির বর্তমান নাম বদলে হয়েছে নয়াসাইলি টি এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড। অক্টাভিয়াস নামটি এখন শুধুই বেঁচে আছে অতীত “লোগো”য়।
নয়াসাইলি চা বাগানের উত্তরে হোপ চা বাগান, দক্ষিণে নাগরাকাটা চা বাগান ও চম্পাগুড়ি হাট, পূর্বে কুর্তি চা বাগান, পশ্চিমে হিলা চা বাগান। চার দিকে চা বাগান ঘেরা মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত এই সুন্দরী নয়াসাইলি টি এস্টেট । ইংরেজিতে এই যে “এস্টেট” শব্দটির অর্থ এককথায় জমিদারি। তা জমিদারিই বটে। এককালে যতদিন পঞ্চায়েতরাজ চা বাগানে প্রবেশ করেনি ততদিন এই চা বাগান গুলো একরকম জমিদারি কায়দাতেই চলত। ম্যানেজার ছিলেন বাগানের সর্বেসর্বা। মালিক কালেভদ্রে বাগানে আসতেন। তিনি পুরোপুরি নির্ভর করতেন ম্যানেজারের ওপর। এখন অবশ্য চিত্রটি সব চা বাগানেই আমূল বদলে গেছে বলা চলে।
নয়াসাইলির গা ঘেঁষে চলে গেছে ৩১/সি জাতীয় সড়ক থেকে জন্ম নেয়া ভুটান সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত সার্ক রোড। এই রাস্তাটির দুদিকে শতাব্দী প্রাচীনগুলো গাছগুলো আজও বেঁচে আছে। সার্ক রোড ছেড়ে বাগানে ঢোকার দুটি রাস্তা। একটি চলে গেছে ডাইরেক্টর্স বাংলো কাম রিসর্টের দিকে। একটু এগিয়ে তেমাথায় বাঁদিকে ঘুরে বাগানে ঢোকার প্রধান রাস্তা টি চলে গেছে বাবুদের বাসালাইন হয়ে কারখানা ও অফিসের দিকে। বাগানে ঢোকার মুখে শ্রমিকদের কোয়ার্টারগুলো ডানহাতে রেখে ঢাল বেয়ে নেমে গেলেই চোখে পড়বে কাচস্বচ্ছ পাহাড়ি ঝোরার কুলকুল স্রোত। বড় বড় বাঁশের ছায়া যেখানে জলের মুখ ঢেকে রাখে অন্ধকারে। অদূরে ধানক্ষেত। শরতের সোনারঙ শস্যে মায়াময়। ঝোরা পেরিয়ে কিছুটা এগোলেই বাবুদের কোয়ার্টার বা ‘বাসা লাইন ‘। মাঝে ডানহাতে চা বাগানের ভেতর ফাঁকা অবকাশে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে আধুনিক সভ্যতার ঔদ্ধত্যপূর্ণ মুঠোফোনের টাওয়ার। বাসালাইনে ঢুকতেই ডানহাতে পড়বে সুদৃশ্য দুর্গামণ্ডপ। ১৯৬৬ সালে যে মণ্ডপ প্রতিষ্ঠিত হয়। যদিও পরবর্তীকালে বাগানের শ্রমিক কর্মচারী ও কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগে মণ্ডপটি আমূল সংস্কার করা হয়।
১৯৬৪ সাল থেকে দুর্গাপুজো শুরু হয় নয়াসাইলিতে। উল্টোদিকে দক্ষিণের ফাঁকা জমিতে বাঁশ, ত্রিপলের প্যাণ্ডেল তৈরি করে দু’ বছর পুজো হয়। পরবর্তীতে সেখানে বাবু-কোয়ার্টার তৈরি হওয়ার (যেখানে বর্তমান কলমচির ডেরা) পুজো স্থানান্তরিত হয় উল্টোদিকের মাঠে। এই মাঠেই পুজোর সময় একসময় বসতো জমজমাট মেলা। নবমীর বিকেলে হতো আদিবাসী নৃত্য গান। ধামসা মাদলের শব্দে ভরে থাকত পুজো প্রাঙ্গণ। সেসব দিন হায় ডানা মেলে হারিয়ে গেছে। ফেরে না আর বহুকাল। এখন শুধু ডি-জে নামক শব্দাসুরের দাপট। অথচ এই মণ্ডপ দালানেই একসময় নিয়ম করে প্রতিবছর হতো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। হতো যাত্রাপালা। পরবর্তীতে থিয়েটার হয়েছে নিয়ম করে প্রতি বছর। নয়াসাইলির থিয়েটার সংস্কৃতির সূচনা ঘটে আমার স্বর্গত বাবা ও মা ৺ বিশ্বেশ্বর নাহা ও ৺ অনিতা নাহা’র হাত ধরে। পরবর্তীতে চ্যাংমারি চা বাগান থেকে শ্রী অজিতকুমার সেন নয়াসাইলিতে বড় গুদাম বাবু হিসেবে চলে আসায় থিয়েটারের উন্মাদনা বেড়ে যায়। এছাড়াও ফার্মাসিস্ট শ্রী নারায়ণ সরকার ছিলেন আরেকজন উৎসাহী নাট্যমোদী। নয়াসাইলির নাটমঞ্চে অভিনীত হয় “ওরা থাকে ওধারে”, “চোর”, “মায়ামৃগ “। নৃত্যনাট্যের তালিম দিয়ে গেছেন ৺ অনিতা নাহা। তাঁর প্রেরণায় অনুষ্ঠিত হয়েছে নাচের অনুষ্ঠান। নৃত্যনাট্য ” নটীর পূজা”, “পূজারিণী” প্রভৃতি নৃত্যনাট্য ও ‘ঋতুরঙ্গ’ ইত্যাদি। শ্রী অজিতকুমার সেনের সুযোগ্য পুত্র আকাশবাণী কলকাতার নিয়মিত শিল্পী ৺স্বপন সেন গান গেয়ে গেছেন নয়াসাইলির মঞ্চে। আবৃত্তি করে গেছেন চলচ্চিত্রশিল্পী ও বাংলা ধারাবাহিক “বামাক্ষ্যাপা”য় মোক্ষদানন্দ চরিত্রে অভিনয়কৃত শিল্পী শ্রী কুনালজিৎ মিত্র।
মণ্ডপ সংলগ্ন মাঠটি এককালে ছিল প্রশস্ত। যেখানে হারিয়ে গেছে আমাদের শৈশব থেকে কৈশোরের ফুটবল পেটানোর দিনগুলো। প্রথমদিকে গাছ থেকে পেড়ে আনা বাতাবি, পরবর্তীতে কোম্পানির দাক্ষিণ্যে পাওয়া লেস লাগানো রাশিয়ান ফুটবল। ছোট্ট মাঠে বাবু- শ্রমিকদের ছেলেদের দঙ্গলবাঁধা ফুটবল হুল্লোড়। শীতে নামতো ভলিবল। রাতে লাইট জ্বালিয়ে ব্যাডমিন্টন। যে ব্যাডমিন্টন কোর্টে নামার অধিকার মিলত বড়রা খেলে যাওয়ার পর । চেয়েচিন্তে পাওয়া ধ্বস্ত শাটল-কক আর ‘নষ্ট-না-করা’র কড়ারে হাতে পাওয়া Racket। দেখতাম আমার পিতৃদেবের হাতে Racket যেন কথা বলছে। অবাক চোখে চেয়ে দেখতাম অমিয় বিশ্বাস, শ্যামল সরকারদের হাতে দূরন্ত smash । অমিত বিশ্বাসের শিল্পীত খেলা। এরা সকলেই ব্যাডমিন্টন খেলতে বাইরেও গেছেন। আমার পিতৃদেব ৺ বিশ্বেশ্বর নাহা ছিলেন ডুয়ার্স অঞ্চলে সমসাময়িক কালে ফুটবলের নামকরা স্ট্রাইকার। খালি পায়ে অ্যাঙ্কলেট পড়ে তিনি খেলে গেছেন ব্রিটিশ সাহেবদের বুটের বিরুদ্ধে। নয়াসাইলির ডেভিড তির্কি বিখ্যাত ফুটবলার যিনি কলকাতায় খেলার ডাক পেয়েছিলেন। এছাড়াও তেজকুমার মিঞ্জ, ভিক্টর মিঞ্জ, এরাও ছিলেন ভাল ফুটবলার। তাদের সময়ে নয়াসাইলি ফুটবল টিম বেশ কয়েকবার চ্যাম্পিয়ন হয়। এছাড়া বর্তমানেও বেশ কিছু ছেলেমেয়ে খেলাধুলার জগতে কৃতিত্বের সাক্ষ্য রাখছে।
নয়াসাইলিতে একসময় দুটি মাত্র প্রাইমারি স্কুল ছিল। যে দুটো আজও আছে। একটিতে আমার পিতৃদেব ছিলেন প্রধান শিক্ষক। সেই স্কুলঘরটি অবশ্য অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়েছে। পুরনোটি পর্যবসিত হয়েছে শ্রমিক মায়ের শিশুদের জন্য স্থায়ী ‘ক্রেশ’ ঘরে। বর্তমানে বেশ কিছু অঙ্গনওয়াড়ি ও শিশুশিক্ষা কেন্দ্র হওয়ায় শিক্ষার প্রসার ঘটছে। কাছাকাছি রয়েছে বাগান লাগোয়া চম্পাগুড়িতে ছেলেদের সেন্ট মেরিজ ও মেয়েদের সেন্ট ক্যাপিটানিও নামে দুটি হিন্দি মাধ্যম আবাসিক স্কুল। দূরদূরান্ত থেকে ছেলেমেয়েরা এখানে পড়তে আসে। বাংলা মাধ্যম স্কুল রয়েছে সাত কিমি দূরে নাগরাকাটা উচ্চ বিদ্যালয়। বাগান থেকে স্কুল বাসের ব্যবস্থা রয়েছে।
নয়াসাইলির জঙ্গল-লাইন এ রয়েছে ১১৮ বছরের পুরনো ক্যাথলিক গির্জা। বর্তমানে গির্জা দালানটি ভগ্নপ্রায় হওয়ায় পাশে নতুন ভবন তৈরির কাজ চলছে। প্রতি রবিবার নিয়ম করে এখানে প্রার্থনা সভা বসে। গীর্জার চারপাশে শতাব্দী প্রাচীন বটগাছ , শালগাছগুলো ছায়াচ্ছন্ন করে রাখে গীর্জা প্রাঙ্গণ। প্রাঙ্গণের অদূরেই কবরখানা। সারসার কাছিমের পিঠের মতো পড়ে থাকা কবরগুলো ছায়া নিবিড়, শান্ত, নির্জনে ঘুমিয়ে থাকে । বছরে দুটি দিন ১লা ও ২রা নভেম্বর কবর-পরবের দিন সংস্কার করা হয় কবরগুলো। চুনের প্রলেপ পড়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। রঙবেরঙের ফুল পাতায় সুসজ্জিত হয়ে সন্ধ্যায় সেজে ওঠে মোমের আলোয়। ক্রিসমাসে সাজানো হয় গীর্জা। রাতের প্রার্থনায় ধর্মপ্রাণ মানুষ ছুটে যায় চম্পাগুড়ির বড় ক্যাথলিক গীর্জায়। যদিও বয়সের দিক থেকে জঙ্গল-লাইন গীর্জাই এ অঞ্চলের প্রাচীনতম।
শ্রমিক কর্মচারী মিলিয়ে নয়াসাইলির মোট স্থায়ী কর্মী সংখ্যা ১১৭০। জনসংখ্যা ৫৫০০-এর মতো। বাবুদের বাসালাইন মিলিয়ে মোট লাইন (বস্তি) এর সংখ্যা ৭টি। আদিবাসী, নেপালি, বাঙালি, বিহারী সহ বিভিন্ন জনজাতির বাস এই চা বাগানে। স্টাফ কোয়ার্টার তেরটি। সাতটি সহকারী ম্যানেজারের বাংলো। একটি ম্যানেজারের বাংলো ও একটি ডাইরেক্টরস বাংলো কাম রিসর্ট। রয়েছে একটি হাসপাতাল। একজন ডাক্তার, একজন স্টাফ নার্স, দুজন সহকারী নার্স ও একজন সহায়ক রয়েছে হাসপাতালে। একটি অ্যাম্বুলেন্স। রয়েছে মেল ও ফিমেল ওয়ার্ড। মোট বেডের সংখ্যা ১১। যদিও রোগীদের একটু আশংকাজনক হলেই বাইরের হাসপাতালেই পাঠানো হয়।
নয়াসাইলির চা-কারখানাটি প্রশস্ত জায়গাজুড়ে রয়েছে। কারখানা চত্বরেই অবস্থিত বাগানের প্রশাসনিক দপ্তর বা অফিস। মালগুদাম বা স্টোর। কারখানা গেটের পাশেই পুরনো সেই প্রাইমারী স্কুল, বর্তমানে ‘ক্রেশঘর’। কারখানায় মোট পাঁচটি সিটিসি। দুটি সি. এফ.এম বা ফার্মেন্টিং মেশিন, দুটি ড্রায়ার, চোদ্দটি পাতা শুকানোর ট্রাফহাউস। মূলতঃ সিটিসি গোত্রের কালো চা তৈরি হয় এখানে। নয়াসাইলির চা নিয়ে গিয়ে কোম্পানি বিভিন্ন সুগন্ধ যুক্ত করে প্যাকেটজাত ফ্লেভারড টি হিসেব “অক্টাভিয়াস” টি নামে বিক্রি করে থাকে। সুদৃশ্য প্যাকেটে মোড়া সেই চায়ের ভিনরাজ্যের বাজারে চাহিদা প্রচুর।
নয়াসাইলিতে রয়েছে একটি মনোরম বাংলো কাম রিসর্ট। ইন্টারনেটে অক্টাভিয়াস টি রিসর্ট নামে খুঁজলেই যা দেখতে পাওয়া যায়। শতাব্দী প্রাচীন হেরিটেজ বাংলোটিকে বর্তমান কোম্পানি আমূল সংস্কার করে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে। মনোরম পরিবেশে এখানে রয়েছে পাঁচতারা সুবিধে সহ তিনটি সুদৃশ্য সুইট। ফায়ারপ্লেস সহ একটি লিভিংরুম। রয়েছে বিলিয়ার্ড খেলবার আয়োজন। একটি সাজানো ডাইনিং রুম। সামনে প্রশস্ত বারান্দা। যেখানে বসলে দুচোখ জুড়ে খেলা করে সবুজ চায়ের ঢেউ। সামনে সবুজ লন। বাংলোর সীমানা পেরোলেই সারসার ছায়াগাছ। নীল ভুটান পাহাড়। সূর্যোদয়ের আগে বারান্দায় এসে দাঁড়ালে দেখতে পাওয়া যাবে মনোমুগ্ধকর সূর্যোদয়। আর হেমন্ত অথবা বসন্তের শুক্লপক্ষে পূর্ণিমার দিন অথবা তার দু একদিন পর সন্ধ্যে নামার ঠিক আগে এই বাংলোর বারান্দা থেকে কিংবা বড় রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে অদূরে ভুটান পাহাড়ের কোলে চোখ রাখলে দেখতে পাওয়া যায় অনির্বচনীয় চন্দ্রোদয়। যা দেখতে পেলে মনে হবে জীবন সার্থক। তবে সেক্ষেত্রে আকাশ পরিস্কার থাকা বাঞ্ছনীয়। বাংলোটি সুন্দর তবে শাকাহারীদের জন্যই কেবলমাত্র উন্মুক্ত। ভাড়াও বেশ উচ্চ তারে বাঁধা।
নয়াসাইলি চা বাগানে যে সমস্ত ব্রিটিশ ও স্বদেশী ম্যানেজারেরা ২০০৫ সাল অবধি স্থায়ী ভাবে কাজ করে গেছেন তাদের নামগুলো নিচে দেওয়া হলো
1)MR.Bishop 1935-19442) “Gardon1944-483)” Forest 1948-19544) ” Miller 1954-585) ” Carnoe 1958-19606) ” Tibbet 1960-637) ” S M choudhary 1963-19668)” SJ Rana 1966-679) ” R. B Banerjee 1967-6910)” G. A. D GREY 1969-197311)” SM CHOUDHARY-1974-8012)” OCA LOBO 1981-8413) ” AC SARDER 1984-199314) ” R. SIRCAR 1993-199515) ” A. K DUTTA 1995-9616)” R. K KHANNA 1996-199716)” A. K CHATURVEDI-1997-2005
এরপর অনেকেই এসেছেন বিভিন্ন সময়ে ম্যানেজার হিসেবে কিন্ত একমাত্র মিঃ অনুপ প্রতাপ সিং(২০১২-২০১৫) ছাড়া কেউই বছরখানেকের বেশিদিন স্থায়ী হননি। তাই তাঁদের নাম উল্লেখ করা গেল না। বর্তমান ম্যানেজারের নাম মিঃ অজয় সিং ।
নয়াসাইলি চা বাগানের বড়বাবুর দায়িত্বে যাঁরা দক্ষতার সাথে কাজ করে গেছেন তাঁরা হলেন৺ বরদাপ্রসন্ন চৌধুরী, ৺ বেণীমাধব চৌধুরী, ৺কমলাপতিবাবু ব্যানার্জী, ৺ বিভূতিভূষণ চৌধুরী, ৺ জ্ঞানরঞ্জন মিশ্র ও শ্রী প্রদীপ চৌধুরী প্রমুখ।
খুব ছোটবেলায় দেখেছি ফ্যাক্টরির সুউচ্চ টিনের ছাউনির ওপর বড় বড় অক্ষরে বাগানের নাম লেখা থাকত । কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করি বাগানের অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ কর্মচারী শ্রী অসীম বিশ্বাসকে। তিনি জানান ব্রিটিশ যুগে কলকাতা থেকে ডাক কিংবা পার্শেল আসত ছোট ছোট জামিয়ার কোম্পানির প্লেনে। প্লেন নামতো কাছাকাছি ঘাসমারীর ছোট্ট বিমানবন্দরে। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে করে ডাক এনে ওপর থেকে ফেলা হত চা-বাগানগুলো লক্ষ্য করে। ওপর থেকে পাইলট যাতে ছাউনির ওপর লেখা দেখা বাগানটি চিনতে পারে তাই ঐ ব্যবস্থা। ডাক- পার্শেল ওপর থেকে পড়তেই চৌকিদার ছুটত সেগুলো খুঁজে আনতে। পার্শেলে করে চিঠি পত্র ছাড়াও আসত সাহেবদের জন্য পাউরুটি, শুকনো মাংস, মাখন, চকলেট, কাপড়জামা ইত্যাদি। বাগানের অবসরপ্রাপ্ত বড়বাবু শ্রী প্রদীপ চৌধুরীর পিতা ছিলেন ৺ বিভূতিভূষণ চৌধুরী। তিনি জানালেন, “বাবার কাছে শোনা, সেযুগে বাবুরা ছিল বহির্জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন। বাঙালির প্রিয় মাছ খাওয়ার জন্য তারা হা-পিত্যেস করে বসে থাকতেন। সে সময় একজন মাছের এজেন্ট এসে বাগানে বাগানে ঘুরে মাছের “রিকোয়ারমেন্টে” লিখে নিয়ে যেতেন। তারপর সেই অনুযায়ী কলকাতায় পাঠানো হত মাছের অর্ডার। সেই মত প্লেনে চেপেমাছ আসত। সেই এজেন্ট টি তখন সেই মাছ গুলো এনে দিয়ে যেতেন বাড়ি বাড়ি। মাংস খেতে চাইলে একা কেউ খেতে পারতেন না। কয়েকজন মিলে একটা গোটা পাঁঠা কিনে কাটিয়ে সেটি ভাগ করে নিতেন।”
প্রদীপবাবু আরো জানান, “চা বাগানে উৎসব পার্বণে সেযুগে ব্রিটিশ সাহেবরা শ্রমিকদের মদ উপহার দিতেন। নয়াসাইলিতেও সাহেবদের তত্বাবধানে মদ প্রস্তুত হত। তারপর শ্রমিকদের ডেকে সাহেবরা প্রত্যেকের হাতে তুলে দিতেন মদের পাত্র। ব্রিটিশরাই শ্রমিকদের মদ্যপানে আসক্ত করে তুলেছিলেন। কেননা নেশায় আসক্ত করে তুলতে না পারলে তাদের দিয়ে কাজ করানো সহজ হত না।”
নয়াসাইলি চা বাগানে ছিলেন বিখ্যাত শিকারী ৺ রাকেশ রঞ্জন ধর। তিনি তার ডাবল ব্যারেল রাইফেল দিয়ে শিকার করেছেন অজস্র চিতাবাঘ, বুনো শুয়োর। চিতাবাঘ মারার জন্য আশপাশের বাগান থেকে তাঁর ডাক পড়ত।
শতাব্দী পেরিয়ে নানান উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে নয়াসাইলির পথচলা আজও অব্যাহত। চায়ের ইতিহাসে “অক্টাভিয়াস” ছিল একটি সুপরিচিত নাম। কালের নিয়মে শতাব্দী এই প্রাচীন চা কোম্পানির বর্ণময় গৌরব কিছুটা ফিকে হলেও বর্তমান মালিকপক্ষ দক্ষতার সাথেই বাগান পরিচালনা করে চলেছেন। শ্রমিকদের বেতন সময়মতো দেয়া হয়। বেতনের টাকার সিংহভাগ শ্রমিকদের স্ব-স্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দেয়া হয় যথাসময়ে। অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বেশ কিছু বকেয়া থাকলেও মালিকপক্ষের সদিচ্ছা রয়েছে তা পরিশোধের। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২০১৬ সালে ৮৩ দিনের জন্য বাগান বন্ধ হয়ে যায়। পুনরায় খোলার পর ২০১৮ ও ২০২০ সালে কোম্পানির ইতিহাসে সর্বকালের রেকর্ড পরিমাণ চা-উৎপাদিত হয় নয়াসাইলিতে। সাম্প্রতিক কালে বাগানের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে কর্তৃপক্ষ ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করার সর্বস্তরে আশার আলো জেগেছে।
রোজ সকালে কারখানায় আজও বেজে ওঠে সাইরেন। শ্রমিকরা দলবদ্ধভাবে কাজে ছোটেন। বিকেলে ফিরে আসেন তারা কাজ সেরে ঘরে। ফ্যাক্টরির চিমনি দিয়ে বেরিয়ে আসা ধোঁয়া জানান দেয় বাগানের প্রাণস্পন্দন। দিন যায়। বছর ঘোরে। ঘুরে চলে জীবনের চাকা । দিন বদলায়। বদলায় মানুষের জীবন যাত্রার মান। চা বাগানে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার প্রচলনে এখন শ্রমিক লাইনে গড়ে উঠেছে সরকারি প্রকল্পের পাকা বাড়ি। রাস্তা ঘাট পাকা হয়েছে। ঘটেছে ব্যপক শিক্ষার প্রসার। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থারও ঘটেছে পরিবর্তন।
তবু আজও যেন কান পাতলে শোনা যায় সেই ধূসর অতীতের গর্ভ থেকে ভেসে আসা লাইনে লাইনে ঘুরে সর্দারদের চিৎকৃত ঘোষণা আর ক্যানেস্তারা পেটানোর শব্দ , “শুনা, শুনা, শুনা… আইজ বাগানকর উত্তরি দিশাকর ডিপা বাটে জাঙ্গল সাফ করেক লাগিন পৈসা ছিটল যা-ই-ই-ই-ই।” অর্থাৎ বাগানের উত্তর দিকের জংগল পরিস্কার করার জন্য জঙ্গলে পয়সা ছেটানো হবে। বস্তায় করে খুচরো পয়সা ছেটানো হতো জঙ্গলের ভেতর। আর সেই পয়সার লোভে ছুটতো কিছু মানুষ। কেননা সে যুগে হাতে নগদ পয়সা কাউকে দিতেন না সাহেবরা। মজুরি দেওয়া হত ক্যাশে নয় কাইন্ডে। অর্থাৎ জিনিসপত্রের বিনিময়ে। কেননা পয়সা হাতে পেলেই শ্রমিকরা বাগান ছেড়ে পালাবে। তাই নগদ টাকার প্রতি সহজাত আকর্ষণ ছিল শ্রমিকদের। সেই পয়সার টানে ওরা ছুটতেন জঙ্গল পরিষ্কার করতে। জঙ্গল পরিষ্কার করো আর খুঁজে নাও নগদ টাকা। এইভাবে ধূর্ত ব্রিটিশরা গরীব শ্রমিকদের লোভ দেখিয়ে জঙ্গল পরিষ্কার করিয়ে শুরু করেছিল চায়ের চাষ। নয়াসাইলি তেও এভাবেই একসময় জঙ্গল পরিষ্কার করে চা গাছ লাগিয়েছিলেন ইউরোপীয় চা করেরা। তারা ঘোড়ায় চড়ে কাজের তদারকি করতেন। কাজে বেচাল হলে শ্রমিকদের ওপর নেমে আসত চাবুক। সেকালে হাসপাতাল ছিল না। ডাক্তারবাবুরা এই ঘোড়ায় চড়েই ওষুধপত্র নিয়ে লাইনে লাইনে ঘুরে ওষুধ দিতেন অসুস্থ শ্রমিকদের।
আজ সেই ঘোড়াও নেই। নেই চাবুক। দিন বদল হলেও অলক্ষ্যে চাবুক যেন কোথাও আজও জেগে থাকে সমস্ত চায়ের সাম্রাজ্য জুড়ে। তাই আজও শ্রমিক, কর্মচারী দিন বদলের স্বপ্ন দেখে। দেখে ন্যূনতম মজুরির স্বপ্ন । আরেকটু ভালভাবে বাঁচার স্বপ্ন। দেশজুড়ে হাজারো চা বাগানের মাঝে নয়াসাইলিও সেই একই স্বপ্নদর্শী চা-ভূখণ্ড।
…………………….সুকান্ত নাহা