“আজকে বাবা আসুক অফিস থেকে আজ বাদে কাল পরীক্ষা, কোন আক্কেলে খেলতে যাচ্ছিস তুই..?” মা’র বাণীবর্ষণ তীব্র হওয়ার আগেই আমি ব্যাট হাতে হাওয়া। বাড়ির সামনে খেলার মাঠ, আর তাকে ঘিরে চাবাগান। খেলার নেশা প্রবল কিন্তু ট্যাঁক খসিয়ে স্টাম্প কেনার ক্ষমতা নেই কারোর। তাই মাঠে নেমেই শুরু হয়ে যেতো গাছের ডাল কেটে স্টাম্প তৈরির কাজ। খেলতে খেলতে বল কখনো গিয়ে পড়তো বিশুদাদুর ফুলের বাগানে কখনো বা চাবাগানে। চাঁদা দিয়ে কেনা বল। হারালে খেলা বন্ধ। তাই নিয়ম বদল করে ঠিক হতো, বল যদি বিশু দাদুর বাগান অথবা চাবাগানে গিয়ে পড়ে তাহলে সোজা প্যাভিলিয়ন। বাবা ফেরার আগেই মাঠ ছেড়ে পড়ার টেবিলে আসতাম। অপেক্ষায় থাকতাম বাবা ফের কখন অফিস যাবে। সেই দিনগুলো আজ অতীত। চাবাগানের অফিসের সাইরেন এখন আর মাথায় হাত বুলোয় না, ট্রাফিক এর তীব্র ক্যকোফোনি ঘুম ভাঙ্গায় আমার। বাগানের মাঠ ছেড়ে আমার জীবন এখন সীমাবদ্ধ ৪/৪ এর কিউবিকলে। সেখানে ব্যাট নেই আছে কম্পিউটার। বল নেই আছে এলোমেলো ফাইল। ছুটিতে বাড়ি গেলে মাঠের সামনে গিয়ে দাঁড়াই। মাঠটা ঢেকে গেছে চোরকাঁটায়। বৃদ্ধ হয়েছে যেন। বিশুদাদুও নেই। তার ফুলের বাগান পরিনত হয়েছে জঙ্গলে। ফুলপ্রেমী মানুষটার ধূলোমাখা ছবিতে এখন কাগজের ফুল। জীবনের চাকা সত্যি খুব অদ্ভুত ভাবে ঘোরে। শুধু মনের ভেতর চলতে থাকে পুরানো স্মৃতির নিত্য আসা যাওয়া।