ছেলেটি

বিপাশার কলেজে পড়তে পড়তে বিয়ে হয়ে যায়। ছেলে পয়সাওয়ালা বাড়ীর একমাত্র পুত্র, বড় ব্যবসা আছে, তাই বাবা মা আর দেরী করেনি।

বিপাশা ঘোর সংসারী এখন – এক ছেলে আর এক মেয়ের মা। ছেলে মেয়ে বড় স্কুলে পড়ে। মেয়ে ক্লাস ফোরে পড়ে, ছেলে ক্লাস এইট এ। মেয়েকে গাড়ী করে স্কূল পৌঁছে দেওয়া আর নিয়ে আসার কাজ বিপাশাই করে। ড্রাইভার আছে।

সেদিন মেয়েকে স্কূলে পৌঁছে দিয়ে বাড়িতে এসে যখন গাড়ী থেকে নামছে, মনে হল দূর থেকে কে যেন তাকে দেখছে। আশেপাশে নজর চালিয়ে সে ভাবে কাউকে সে দেখতে পেল না, অথচ সিক্সথ সেন্স বলছে কেউ দেখছিল।

মাঝে মাঝেই এটা হতে লাগল এরপর – মনে হচ্ছে কেউ যেন দেখছে, কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না। ব্যাপারটা বিপাশার কাছে ধীরে ধীরে আতঙ্কের হয়ে উঠল। ঘুমের মধ্যেও মনে হচ্ছে কে যেন দেখছে। বরকে সব কথা খুলে বলল সে।

বর বুদ্ধি করে শহরের নাম করা মানসিক ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল বিপাশাকে। যদিও বিপাশা সেটা জানত না, তাকে বলা হয়েছিল অন্য কথা – ডাক্তারের বাড়িতে তাকে নিয়ে যাওয়া হত, চেম্বারে নয় – ডাক্তারের পরিচয় দেওয়া হয়েছিল পুলিসের অফিসার হিসেবে যে কিনা খুঁজে বের করবে নজরদারি ব্যক্তিকে।

কয়েকটি সিটিং দেওয়ার পর ডাক্তারবাবু বিপাশার বরকে একদিন ডেকে পাঠাল আলাদা করে। নিজের বাড়িতে বসিয়ে বিপাশার বর অভ্রকে ডাক্তার রুদ্র সান্যাল বলে উঠলেন :

” যেটুকু বুঝলাম ব্যাপরটা সম্পূর্ণ মানসিক – কলেজে পড়ার সময় একটি ছেলে আপনার স্ত্রীর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত। এমনকি আপনার স্ত্রী যেখানে যেত ছেলেটি ফলো করত। ছেলেটি আপনার স্ত্রীর থেকে এক ক্লাস ওপরে পড়ত। ছেলেটি হয়ত আপনার স্ত্রী কে খুব ভালোবাসত এবং আপনার স্ত্রী ও হয়ত মানসিক ভাবে ছেলেটির ওপর নির্ভর হয়ে পড়েছিল। কিন্তু কেউ কাউকে বলতে পারেনি, কারন হঠাৎ করে আপনাদের বিয়ে হয়। অবচেতন মনের সেই ভালোবাসাই ফিরে এসেছে আপনার স্ত্রীর মনে এবং এটা তারই প্রতিফলন।”

থামলেন ডাক্তার সান্যাল, ফের শুরু করলেন :

” আমি যেটুকু বুঝেছি, আপনি আপনার স্ত্রী কে খুব ভালোবাসেন। তাই বলছি, একমাত্র আপনার সহমর্মিতা, সান্নিধ্য আর আরো নিবিড় সহানুভুতিই পারে আপনার স্ত্রী কে সম্পূর্ণ রোগমুক্ত করতে। আর উনি আমার ট্রীটমেণ্টে থাকবেন – মাঝে মাঝে সিটিং দিতে হবে। আশা করি আপনার সম্পূর্ণ সহযোগিতা আমি পাব। “

থামলেন ডাক্তার রুদ্র সান্যাল আর বিহ্বল কণ্ঠে অভ্র বলে উঠল :

” সম্পূর্ণ সহযোগিতা আপনি নিশ্চই পাবেন ডাক্তারবাবু – নিশ্চই পাবেন – ওকে আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলুন ডাক্তারবাবু – আমি যে ওকে ভীষণ ভালবাসি – ওকে ছাড়া আমি বাঁচব না….”

……………নির্মাল্য ঘোষ