চা শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি যেন অধরা মায়াহরিণ

২০১৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি শেষবারের মতো চা শ্রমিকদের জন্য স্বাক্ষরিত হয়েছিল মজুরি চুক্তি (যা বলবৎ হয়েছিল এপ্রিল ২০১৪ থেকে)। গঠিত হয়েছিল চা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের জন্য অ্যাডভাইজরি কমিটি। সেই কমিটির ওপর দায়িত্ব বর্তেছিল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব’ ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করতে। তারপর এত বছর কেটে গেলেও কেউ কথা রাখেনি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব’ কথাটি শুনে আশায় বুক বেঁধেছিলেন উত্তরবঙ্গের ২৮৩টি চা বাগানের প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ শ্রমিক কর্মচারী। কিন্তু মায়াহরিণ আজও অধরা।

আইন অদ্যাবধি চালু তো হয়ইনি, বরং তিন বছর অন্তর মজুরি চুক্তিও বন্ধ হয়ে আছে। মাঝে রাজ্য সরকারের মধ্যস্থতায় ‘নাকের বদলে নরুন’-এর মতো বারকয়েক অন্তর্বর্তীকালীন মজুরি বৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু এই অন্তর্বর্তীকালীন মজুরি চা শ্রমিকরা চান না। এই যৎসামান্য হকদার। প্রাপ্তির ফলে চা শ্রমিক একতিল হাঁফ ছাড়তে না ছাড়তেই মাথায় চেপে বসে মূল্যবৃদ্ধির জগদ্দল পাথর। ফলে চা শ্রমিকরা যে তিমিরে ছিলেন, সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছেন।

বাগানের ক্ষেত্রে ন্যূনতম মজুরি কর্মচারীদের একযোগে আন্দোলনের ফলে ত্বরান্বিত হয়েছে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনার গতি। ফলে ফের আশায় বুক বাঁধা শুরু করেন চা শ্রমিকরা। সরকার এই সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট। কিন্তু আসল তুরুপের তাস সেই মনিবদের হাতে। বরাবরের মতো তারাই শেষকথা বলার

ফলে ঘরপোড়া শ্রমিকদের নানা আশঙ্কায় দিন কাটছে। তার কারণ দুটি। প্রথমত, শ্রমিককুল আশঙ্কিত। তড়িঘড়ি ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করতে গিয়ে না আপস মীমাংসায় জোড়াতালি দিয়ে যা হোক একটা’ ঘোষণা করে দেওয়া হয়।

দ্বিতীয়ত, আপাতসুন্দর দেখতে মজুরির অঙ্ক কষতে গিয়ে তাদের বিধিবদ্ধ সুযোগসুবিধাগুলো না বাদ চলে যায়।

ন্যূনতম মজুরি চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে কমিটি হয়েছে। হয়েছে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকও। কিন্তু সমাধানসূত্র বের হয়নি। চা বর্তমানে সরকারি র‍্যাশন ব্যবস্থা শ্রমিকের আশা-আশঙ্কায় দিন গোনার প্রহর ক্রমশ প্রলম্বিত হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ঈপ্সিত মায়াহরিণ ধরা দেবে নাকি গলায় দড়ি বেঁধে একটা এঁড়ে বাছুর ধরিয়ে দেওয়া হবে চা শ্রমিকের হাতে – সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। যদি তাই হয়, তাহলে প্রতারিত চা শ্রমিকরা পুনরায় আন্দোলনের রাস্তায় যাবেন না তো?

চালু থাকায় ধরে নেওয়া যায় যে, শ্রমিকরা অনাহারে থাকেন না। চা বাগানে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু থাকায় এবং বিভিন্ন সরকারি সুযোগসুবিধা চালু হওয়ায় মনিবরা আবাসন মেরামত, চিকিৎসা, শিক্ষা সহ বহুক্ষেত্রে দায়মুক্ত। এত কিছুর পরও ন্যায্য হারে মজুরি বৃদ্ধির কথা উঠলে তাঁরা কাঁদুনি গাইতে প্রশ্ন সেটাও।