পূর্ব ডুয়ার্সের কথা ভাবলেই ২৮ মাইল বনগ্রামের কথা মনে পড়ে যায় ।
চারিদিকে নিবিড় ঘন অরণ্য, সেখানে সবুজের কত শেড , অরিন্দম দাদা হিমশিম খেয়ে যেত সেই শেড তুলিতে ধরতে । হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায় নীল পাহাড় । শীতকালে গোটা গ্রাম ভরে যায় হলুদ সরষে খেতের ঢেউয়ে । সরষেখেতের মাঝে মাঝে কিছু টংঘরের সোভা কখনও ভোলা যায় না ।
ছবির মতো সুন্দর এই গ্রামের নাম ২৮ মাইল । গ্রামের এই অদ্ভূত নামে কৌতুক বোধ করলেও পরে জানতে পারবেন রাজধানী কোচবিহার থেকে এর দূরত্বের কথা।
এই গ্রামে থাকা খাওয়ার একমাত্র ব্যবস্থা ওয়াইল্ড হোম । ছোট্ট দোতলা কাঠের বাংলো , একদম পুরনো বনবাংলোর আদলে তৈরি । দোতলায় তিনটে বিরাট ঘর । সামনে- পিছনে- পাশে বড় খোলা বারান্দা । এই বারান্দায় বসে উপভোগ করা যায় ভূটান পাহাড়ের সৌন্দর্য , বক্সা জঙ্গলের প্রকৃতি । ঘরগুলো বড়ো, দুটো বিরাট খাটো । বিদ্যুৎ, জল সবকিছুর সুবন্দোবস্ত রয়েছে এখানে । ড্রাইভারদের আলাদা থাকার ঘর , পার্কিং – এর কোনও সমস্যা নেই ।
রাত্রির আহার সেরে যখন ঘুমাতে যাবেন , হঠাৎ আতঙ্কের হল্লায় চোখ জেগে যাবে । রিসর্টের জানালা খুলতেই দেখতে পাবেন বনবাসীর সঙ্গে বুনো হাতিদের সংঘর্ষপাত । দূরে দূরে জ্বলে উঠছে মশাল দৌড় । কখনও বা ক্ষুধার্ত চিতা বাঘের সঙ্গে পাঞ্জা লড়াই ।
২৮ মাইল গ্রাম এভাবেই বেঁচে আছে । শীতের সময় বিস্তৃত ধানক্ষেতে হাতিরা তান্ডব চালিয়ে যায় , বনবাসী কেবল অশ্রু চোখে জেদ ধরে রাখে ।
আজ চেনা অচেনা পর্যটকের মুখে মুখে টুরিস্ট ডেস্টিনেশন এই ২৮ মাইল গ্রাম । কিন্তু বনবাসী কতটা ভালো আছে , তা সকলের অজানা ।
এই গ্রামের ঢিল ছোড়া দূরত্বে জয়ন্তি , কিন্তু জয়ন্তির ঘিঞ্জি পরিবেশ এখানে একেবারেই নেই । জলনিকাশির সমস্যা নেই । সরষেখেতের আলপথ ধরে এক বন বালক ঘুড়ি হাতে দৌড়ে চলছে । আকাশের গায়ে উড়ে বেড়াচ্ছে রাজ হাসের পাল । মেঘে পাহাড়ের লুকোচুরি দেখে মরে যায় ।
চাইলেই মেঘের গায়ের বক্সা জেলখানা দেখে আসতে পারেন । এখান থেকে যাওয়া যায় স্বর্গছেড়া সব পাহাড়ি গ্রামে , লেচপা খা , আদমা , রূপম ভ্যালি । নামগুলো শুনলেই মন মুহূর্তে উড়ে যেতে চায় ।
২৮ মাইলের কাছাকাছি জঙ্গলে জিপ সাফারি, ওয়াচটাওয়ার, পোখরি পাহাড়, মহাকাল এইসব প্রথাগত ভ্রমণ, যা জয়ন্তি থেকে হয় , সেসব এখান থেকেও হয়ে থাকে । চাইলে বিদেশ ভ্রমণে ভূটানের ফুন্টশোলিং বা কোচবিহার রাজবাড়ী , এমনকি রসিকবিলও ঘুরে আসতে পারেন ।
এই হোমস্টেতে বসে আপনি দর্শন পেতে পারেন হাতি , হরিন , ময়ূর । মধুচন্দ্রিমার জন্য যদি অরণ্য পছন্দ করেন , তবে এই ওয়াইল্ড হোম আপনাকে দিতে পারে কাঙ্ক্ষিত বনবাস ।
শব্দের পেছনে যাই থাক না কেন, ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয় । তাই সময় নষ্ট না করে দেখে যান ২৮ মাইলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য ।