খড়কুটো 

আবার কেমন মাথাটা ভারী হয়ে গেছে স্নেহার ৷ কাল থেকে গা টাও হালকা গরম ৷ তাই নিয়েই সারাদিন কাজকর্ম সারছে ৷ ইন্দ্রনীল ফিরলে স্নেহা একবার বলার চেষ্টা করল তার শরীরটা খারাপ । কিন্তু ইন্দ্রনীল খুব রুক্ষ ভাবে বলে উঠল,  শরীর থাকলেই খারাপ হবে শুনে আমি কি করব !
স্নেহা নিজের ঘরে চলে এল ….এই ধরনের কথা গুলো শুনতে সে অভ্যস্ত ৷ একসময় খারাপ লাগলেও এখন কেমন গা সওয়া হয়ে গেছে ৷ নিজের ভালো মন্দের আলোচনা ইন্দ্রনীল এর সঙ্গে আর করতেই ইচ্ছে হয়না ৷
প্রয়োজন এর বাইরে দুজনের কেউই কথা বলে না ৷
ঘর আলাদা হয়ে গেছে প্রায় দশ বারো বছর ৷  একসঙ্গে এক বিছানায় থাকার ইচ্ছে দুজনের করোরই নেই ৷ তবু সংসার টা তো অনেক দিনের তাই এভাবেই চলছে বা হয়তো ছেড়ে যাওয়াটা খুব  সহজ নয় তাই ৷
স্নেহা ও ইন্দ্রনীল এর ছেলে শীর্ষ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার ৷ দিল্লী নিবাসী ৷ বছর সাত হল চাকরি করছে ৷ অবিবাহিত ৷ নিজের একটা ফ্ল্যাট ও কিনেছে দিল্লীতেই ৷ আগেরবার যখন এসেছিল মাকে সঙ্গে করে নিয়ে চলে যেতে চেয়েছিল ৷ স্নেহা রাজী হয়নি  ৷ ছেলে প্রায় রাগ করেই ফিরে গিয়েছিল ৷
স্নেহা বলেছিল , গেলে তো দুজন কেই যেতে হয় ৷ আর তোমার বাবা তো রাজী হবেন না আর আমি তোমার বাবা কে একা রেখে কি করে যাই !
আমি বাবাকে নিয়ে যেতে চাই না মা … সেটা তুমি ভালো করেই জানো ৷
কেন এত রাগ পুষে রেখেছিস ৷ বাবা তো তার সব দায়িত্বই পূরন করেছে ৷ তোর যখন যা প্রয়োজন হয়েছে সবটুকুই করেছে ৷ তবে?
হ্যাঁ নিশ্চয়ই ৷ কিন্তু টাকা দিলেই কি সব দায়িত্ব পূরণ করা হয়ে যায় মা? জ্ঞান হওয়ার পর থেকে দেখে আসছি প্রত্যেকটা পেরেন্ট টীচার মিটিং এ একা তুমি ‘ আমাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আসা আমার টিউশন … কলেজ এর ভর্তি … আমার যখন পড়ে গিয়ে পা ভেঙে গেল তখন তুমি একাই দৌড়েছিলে ৷ আমার প্রচন্ড জ্বর তুমি ঘুমোতে পারোনি ‘ ৷ বাবাকে তো কোনদিন দেখিনি কপাল এ হাত রাখতে !
আরে বাবু সেতো সব মায়েরাই করে ৷ আর তোমার বাবার সময় কোথায় থাকতো ৷ সারাদিন অফিস করে ফিরে কি আর রাত জাগা যায়?
হতে পারে যায় না ৷ ছুটির দিনেও তো কোনও দিন তাকে কাছে পেতাম না ৷ কোথায় থাকতেন বলো ? কোন মানুষটাকে একা রেখে যেতে পারবে না বলছো ? আমি সব জানি মা ৷ তুমি কত অপমান নিয়ে এখনো এখানে রয়েছো আমি সবটাই জানি ৷ অনেক লুকোবার চেষ্টা করেছো | ওই মানুষ টাকে মহান করে গেছো ৷ ক্লাস টুয়েলভ্ এ পড়ার সময় ই আমি জানতে পারি বাবা আর ওনার কলিগ দীপালী আন্টির কথা ৷ কিন্তু আমি তোমাকে কখনো বুঝতে দিইনি যে আমি জানি ৷ তখন না হয় তোমার বেরোবার উপায় ছিল না ৷ আমাকে নিয়ে গিয়ে দাঁড়াবার মতো জায়গা ছিল না ৷ কিন্তু এখন তো আর কোনও অসুবিধা নেই ৷
স্নেহা কিছুক্ষন কোনও কথা বলতে পারেনা ৷ তারপর আস্তে আস্তে বলে সেই সময়টা তো পার করেই ফেলেছি বাবু ৷ আর এখন এই মধ্য বয়সে এসে লোক হাসিয়ে কি হবে ! আর তোমার বাবা ও তো নিজেকে শুধরে নিয়েছে ৷ আমি ভালো আছি বাবু তুই এতো ভাবিস না ৷
সত্যি বলছো মা ? আর তুমি এতো সহজে বাবাকে ক্ষমা করে দিচ্ছ ? আমি বেশ ভালো করেই জানি তোমরা এখনও আলাদাই থাকো ৷ তাহলে  ?
বেরিয়ে এসো মা এই সম্পর্ক টা থেকে ৷ তুমি প্রাণ খুলে হাসো মা ‘ | তোমাকে তো কতদিন আমি সাজতেই দেখিনি ! আমি কথা দিচ্ছি মা …. বাবার প্রতি আমার যা কর্তব্য তা আমি করবো ৷ কিন্তু নিজের কাছে রাখতে পারব না ৷ তার জন্য তুমি আমাকে ক্ষমা করেদিও ৷
স্নেহা সেদিন ছেলের হাত ধরে বেরিয়ে যেতে পারেনি ৷ যে সম্পর্ক টা থেকে সে কিছুই পায়নি সেই সম্পর্কটা আঁকড়েই পড়ে আছে ৷

             
                        ৷৷  সবাই শেষ থেকে শুরু করতে পারে না ৷ বিশেষ করে যার শুরুটাই শেষ হয়ে গেছে ৷৷