সকাল থেকে মন ভাল নেই প্রাপ্তির।বাইরে লক গাউন।সবাই গৃহবন্দী ।এমন কি বাবা ও বাড়ীতে।সারাদিন ইমোশনাল অত্যাচার।পুপুমা ভাল করে পড়ো ।পুপুমা মানুষ হতে হবে।পুপুমা দেখিয়ে দিতে হবে মেয়ে রাও পারে ।একেক সময় প্রাপ্তির মনে হয় এতই যদি মেয়েরা পারে তো মা কে কেন নিজের পায়ে দাড়াতে দেয়নি বাবা।কেন বলে আগে মেয়ে মানুষ হোক ।তারপর নিজেকে নিয়ে ভেবো।মেয়ে যদি মানুষ না হয় তাহলে আত্মগ্লানি তে ভুগবে ।তখন মনে হবে কিসের জন্য রোজগার।কিসের জন্য বেঁচে থাকা ।আসলে প্রাপ্তি আগে এমন ছিল না। মাধ্যমিক এর এত চাপ থাকা সত্বে ও ওর রেজাল্ট দিয়ে ওর বাবাকে খুশি করতে পেরেছিল।কিন্তু এবার মনে হচ্ছে হবেনা কারন ও প্রেমে পরেছে। কিছু দিন যাবত ওদের পাশের গলির একটা ছেলের সাথে।অর্পণ ব্যানার্জি ।মাস কম নিয়ে যাদব পুর এ পড়ছে।খুব চুপচাপ ।আজকালকার ছেলেদের মত না।চোস্ত ইংলিশ বলে ।প্রাপ্তি শুনেছে দারুন গিটার বাজায় ।অর্পণ বলেছে বিয়ের পর উটি যাবে।রূম হিটার জ্বালিয়ে গিটার বাজিয়ে গাইবে মিলে হ তুম হম কো হাম কো, বরে নসিবো সে।। চূড়ায়া ম্যনে তুম কো কিসমত কি লকির সে।।
উফ্ফ জাস্ট ভাবা যায় না।কিন্তু এই লকডাউন সব কিছু ভেস্তে দিল।কত প্ল্যন করেছিল।দিনে ওদের তিন বার দেখা হয় সকালে যখন ও স্কুল এ যায় অর্পণ ওর সাথে বাস স্ট্যান্ড এ দেখা করে।যেদিন ও কলেজে যায় সেদিন দেখা হয় না।কারন সেদিন অর্পণ অন্য স্ট্যান্ড দিয়ে বাসে ওঠে।বিকালে অর্পণ ওর কোচিং সেন্টার এর সামনে যায় ।একেক দিন কথা হয় একেক দিন হয় না।আর মাঝে মাঝে দুজনেই ছাদে উঠে দেখা করে।ওদের পরের গলির মুখোমুখি বাড়িটাই অর্পণদের।মাঝে মিত্র ও বসাক কাকু দের বাড়ি।লাস্ট ওদের দেখা হয়ে ছিল22 শে মার্চ ।বিকেল পাঁচ টার সময় সবাই সবার বাড়ির ছাদে উঠে দেশের ডাক্তার,পুলিশ,সাফাইকর্মী দের উদ্যেশে তালি বাজিয়ে ছিল করোনার বিরুদ্ধতা করছে বলে।কিন্তু আজ তো প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা করেছেন যে মোমবাতি জ্বালাতে হবে।আজ কি অপু মানে অর্পণ রা ছাদে যাবে।কাল যখন রাতে খাবার টেবিলে মা বাবা কে বলল যে আজ বাজার এ গিয়ে তিনটে মোমবাতি আনতে।বাবা বলল ,যে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা তলানিতে।হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ , গ্লাভস ,মাস্ক নেই,।আজ খেলে কাল কি খাবো এই চিন্তায় দেশের অর্ধেকের বেশি লোকের রাতের ঘুম চলে গেছে,সেই দেশে মোমবাতি জ্বালিয়ে কি বোঝাব?যে কাল আমি বিনা চিকিৎসায় মারা যাবো তাই কেউ যদি না থাকে আজ নিজের চিতার পাশের বাতি টা নিজেই জ্বালিয়ে যাই। মা আর কিছু বলেনি ।আসলে জানে বাবা কে বুঝিয়ে কোন লাভ নেই যেটা ভাল বুঝবে সেটাই করবে।তারপর খেয়ে ওঠার সময় বলল তুমি স্বাধীন ভারতের নাগরিক তুমি যা খুশি করতে পার ।শুধু এটুকুই বলব যা করবে বুঝে করবে।মা কিছু বলে নি ।কিন্তু জানি মা আজ মোমবাতি জ্বালাবে না।মার ইচ্ছা করলে ও বাবা কে অসন্তুষ্ট করে মা কিছু করবে না।বাবার জয় সবসময়।কিন্তু বাবা কি মার এই ভালবাসাকে সম্মান করে কি জানি?কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে অর্পণ কে নিয়ে।ও কি করবে?আজ কি একটু কথা বলব।কিন্তু বাবা তো বাড়ি।
প্রাপ্তির ফোন নেই ।ওর মায়ের ফোন থেকেই স্যার আর বন্ধুদের করে।তবে বাবা কে লুকিয়ে।কারন বাবার সময় নাকি বই পড়ে পরীক্ষা দিতে হত আর বাবা বই ছাড়া স্কুলে প্রথম হত প্রতিবার।তাই ফোনে র নাকি কোন ভুমিকা নেই।কে যে বোঝায় এই লোকটাকে ।
পৃথা আমি বাজারে যাচ্ছি কি কি আনতে হবে বলো।আর মাস্ক টা দাও কোথায় রেখেছ?
হ্যা দিচ্ছি
একটু পরে প্রাপ্তি রান্নাঘরে গেল, গিয়ে মাকে বলল,
মা আমি তোমার ফোন টা একটু নিলাম দেখি স্যার রা কোন নোট পাঠিয়েছে কি না।
মা বলল, ঠিক আছে নে, আর কি খাবি বল।কি করব টিফিন ।
খিদে পাচ্ছে না পরে খাবো।
ঘরে ঢুকেই রিং করল অর্পণ কে
বাড়িয়ে দাও তোমার হাত
আমি আবার তোমার সাথে হাটতে চাই…
প্রাপ্তি:হ্যালো
অর্পণ:কেমন আছো ।
প্রাপ্তি:কি করে বুঝলে।
অর্পণ:ও তুমি বুঝবেনা ।
প্রাপ্তি:তুমি কেমন আছো।
অর্পণ:তুমি যেমন রেখেছ ।
প্রাপ্তি:কি করব বলো বাবা যে বাড়ীতে
অর্পণ:তাতে কি, আটলীস্ট ছাদে তো উঠতে পারো
প্রাপ্তি:বাবা যে ছাদে ও উঠতে দেয় না
অর্পণ:তাহলে আর কি গলা টিপে মেরে ফেল।
প্রাপ্তি:কাকে
অর্পণ:আমাদের প্রেম কে
প্রাপ্তি:দেশের অবস্থা ভাল না।চতুর্দিকে দেখছো না কি হচ্চে ?কত মানুষ মারা যাচ্ছে।দিন দিন মৃত্যু র হার বেড়ে যাচ্ছে ।
অর্পন:আমাদের প্রেম টাও তো মরতে বসেছে পুপু।
প্রাপ্তি:বেচে থাকলে প্রেম বাঁচবে।আর শোনো বাইরে এক্দম বের হওনা ।বারবার হাত ধুয়ো ।আর মাস্ক পড়ো ।
অর্পণ:হমম ভাবছি
প্রাপ্তি:কি?
অর্পণ:এই সুযোগে আমাদের পাড়ার কাউন্সিলর দাদাকে ধরে তোমার একটা চাকরি করে দিতে পরি কিনা।হেলথ ডিপার্টমেন্ট এ মনে হয় হয়ে যাবে।
প্রাপ্তি:ধ্যাত অসভ্য
অর্পণ:এই শোনো না আজ ছাদে আসবে তো pls
প্রাপ্তি:না গো কাল বাবা বলেছে যে দেশের মানুষের অবস্থা খুব খারাপ।সাস্থ্য পরিকাঠামো ভাল নয় তাই বাবা মোমবাতি জ্বালবে না।
অর্পণ:এবার বুঝতে পারছি হেরিডেটি!
প্রাপ্তি:কি ।
অর্পণ:না কিছু নয়।শোনো না তুমি বলবে তুমি মোমবাতি জালাতে যাচ্ছো না।তুমি দেখতে যাচ্ছো।
প্রাপ্তি:কি দেখতে?
অর্পন:রাতের কলকাতা ।এ কদিনে পলিউশন কমে গিয়ে হাওড়া ব্রিজ দেখা যা চ্ছে তুমি তা দেখতে ছাদে যাবে।তোমর বাবাকে বলবে এই কদিন বন্ধ ঘরে থেকে, না বেরিয়ে তুমি নিশ্বাস নিতে কস্ট পারছ।তাই তুমি ছাদে গিয়ে প্রাণ ভরে নিশ্বাস নেবে।
প্রাপ্তি:কিন্তু বাইরে যে ভাইরাস ?
অর্পণ:কে বলেছে ওটা যারা বিদেশ থেকে এসেছে তাদের জন্য।তাদের সাথে ডিসটেন্স মেনে চললে কিছু হবে না।তা বলে ছাদে যাবে না।এই শোন তোমার বাবা না একটু বেশি ই জানে সব কিছু।আজ তুমি ছাদে আসবে ব্যস।
পুপু মা পড়া হলো,আমি এসে গেছি ।খেতে আয়
প্রাপ্তি:হ্যালো অর্পণ বাবা এসে গেছে রাখছি বাই।
অর্পণ:বাই ডিলিট করে দাও নম্বর টা ।আর ছাদে এস pls বাই।ভাল থেকো।
(২)
লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কে বাঁচায় কে বাঁচে এই গল্পটার সাথে আজকের পরিস্স্তিতিতে দেশের অনেক লোকের মিল খুঁজে পাবি বুঝলি পুপুমা ।বিশেষ করে নিখিলের চরিত্রের সঙ্গে বাস্তববাদী কিছু মানুষের খুব মিল পাবি।মৃত্যুঞ্জয়ের মত আবেগি মানুষ হলে এখন বোকামি শেষে ওর মতনই হবে অবস্থা।আসলে আবেগ দিয়ে কোনোদিনই কিছু, কিরে পুপুমা শুনছিস না।
হ্যা বাবা শুনছি তো
ঘুম পাচ্ছে
না তো।
তোর মা কে ডাক একটু চা করতে বল ।
আচ্ছা বলছি
।দুপুরে খাওয়ার পর বাবা বলল চল ,একটু বই নিয়ে বসি,নিজেও বনফুলের অগ্নীশ্বর পড়ছিল।পুপুর খুব ঘুম পাচ্ছিল ।হটাৎ বাবা বলল কিরে পরছিস না আয়, আমি আজ তোকে পড়াই ।সেই ছোটবেলার মত বাবার কোলে মাথা দিয়ে ও পড়া শুনছিল বাবা পরে শোনাচ্ছিল ওকে ক্লাস 12 এর একটা গল্প।পড়াতে পড়াতে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল ,আর ও তো এমনিতেই ঘুম কাতুরে, তাই ঘুমিয়ে পরেছে ।কিন্তু মা কোথায়?মাকে দেখল ছাদের সিড়িতে বসে গল্পের বই পড়ছে। গিয়ে দেখল ব্যোমকেষ ।এবারের বইমেলার থেকে বাবা এনে দিয়েছে।মা যদিও ডিটেকটিভ গল্প ভালোবাসেনা ।তবু বাবার গিফট বলে কথা।
ও গিয়ে মাকে বলল মা বাবা তোমাকে চা দিতে বলছে
ওর মা হেসে বলল, কিরে হলো বাবার আদর খাওয়া?
পুপু বলল আদর?
মা বলল দেখেছি বাবার কোলে মাথা দিয়ে চোখ বুঝে আরাম করে শুয়ে ছিলি ।
ও মাথা নিচু করে বলল হ্যা গো মা অনেক দিন পর ।
মা হেসে বলল চল চা করি, বাবাকে দিয়ে আয়।আজ সন্ধ্যা বেলা মুড়ি মাখা খাবি তো……
মা এখন চা করছে,বাবা ফোন ঘাটছে শুয়ে শুয়ে,ও ঠাম্মীর কাছে গিয়ে বলল ,ঠাম্মী আমার চুল টা একটু আঁচড়ে দাওনা।
প্রাপ্তির ঠাম্মী খুব হাসিখুশি মহিলা।প্রাপ্তি র একেক সময় মনে হয় বাবা আর কাকাই এর মধ্যে কত তফাৎ।কাকাই পুরো ঠাম্মা ।আর বাবা পুরো দাদাই।প্রাপ্তি ঠাম্মীর মুখে শুনেছে দাদু ও খুব রাগি ছিল যেমন টা বাবা।পুরো বিগ বস।কাকা বাবার মত রাগি না। যখন কলকাতায় আসে তখন বাড়িটা জমজমাট হয়ে ওঠে ।কাকা খুব মজার মানুষ ।কাকাই আর কাম্মার এখন অফিস ছুটি।ভাই কেও হোস্টেল থেকে নিয়ে এসেছে।ওরা ও নিশ্চয়ই খুব মজা করছে।কাম্মা জানে অর্পণের ব্যাপারটা ।আসলে কাম্মা এমন একটা মানুষ যাকে কিছু লুকিয়ে রাখা ইমপসিবল ।এবারে ক্রিসমাস এর ছুটিতে যখন ভাই আর কাকাই কে নিয়ে কাম্মা কোলকাতায় এসেছিল।তখন ই প্রাপ্তি কে জিজ্ঞাসা করেছে যে তুই প্রতিদিন ছাদে উঠিস কেন রে ?যখনি বিকালে ফোন করি তোর মা বলে তুই ছাদে।কি ব্যাপার বল তো?তো তাই কোন উপায় না থাকাতে ও বলেছে।কাকিমা ও বলেছে ভাল করে পড়া লেখা কর।অর্পণ কে নিজের পায়ে দাঁড়াতে বল।তারপর আমি দেখছি।
ওদিকে রান্না ঘরে পৃথা মানে প্রাপ্তির মা চা করে মুড়ি মাখছিল নারকেল কোরা দিয়ে ।হটাৎ প্রাপ্তির বাবা গিয়ে বলল ওষুধ তো দেখলাম শেষ ,আনতে হবে কিনা মাকে জিগ্গেস কর।প্রাপ্তির মা বলল জিগ্গেস করতে হবে না ।মুড়ি খেয়ে যাও, তুমি এনে দাও।
প্রাপ্তির তো সুবর্ণ সুযোগ ।বাবা বেরলেই ও মার ফোন টা নিয়ে ঘরে গেল ।এবং অর্পণ কে কল করল ।
বাড়িয়ে দাও তোমার হাত
আমি আবার তোমার সাথে হাটতে চাই ।
দু দুবার ফোন টা বেজে গেল ।অর্পণ কি কাছাকাছি নেই ফোনের?একটু পরে বাবা চলে আসবে।
এক একটা মূহুর্ত এক একটা বছর মনে হতে লাগল।ওর খুব রাগ হচ্ছে।১০ মিনিট হয়ে গেল কোথায় গেল?
নাকি ওকে ভুলে যাচ্ছে অর্পণ।নিজের অজান্তেই চোখ টা ভিজে যাচ্ছে ।আর একবার শেষ চেষ্টা ।এবার যদি না ধরে……….
কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন টা নিয়ে রিং করল
বাড়িয়ে দাও তোমার হাত
আপ জিসে কল কর রহা হ্যায়
ও নম্বার ব্যস্ত হে।
রাগে দুঃখে ফোন টা নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিল সোফায় ওকে ইগনোর করছে?জাস্ট ইগনোর! ভাবা যায় ।?
সত্যিই ও খুব বোকা ।ওর প্রথমেই বোঝা উচিত ছিলো ।অর্পণের মত একটা এস্টাব্লিশ ছেলে ওর মত একটা মেয়ের সাথে,আর তাছাড়া অর্পণ তো সবসময় ওকে বাচ্চাই বলে।ভুল টা ওরই।চোখের জল বাঁধ মান ছে না।
হয়ত তোমার ই জন্য
হয়েছি প্রেমে যে বন্য
জানি তুমি অনন্য
আশায় হাত বাড়াই
অর্পণ ফোন করেছে! ও চোখ মুছে ফোন টা রিসিভ করল।
প্রাপ্তি:হ্যালো
অর্পণ:বলো
প্রাপ্তি:(দাতে দাত চিপে )ফোনটা ধরছিলে না কেন?কাওকে পেয়ে গেছ না?ঐ জন্যেই আমায় ইগনোর করছ?
অর্পণ:আরে কুছ তো শোরম কর মেরি মা।
প্রাপ্তি:মানে (রেগে)
অর্পণ :শশুরমশাই পাশে দাঁড়ানো ।তখন কি আর বৌ এর সাথে প্রেম কর যায়?
প্রাপ্তি:মানে টা কি?
অর্পণ:আরে আমি ত তোমাদের বাড়ির নিচে,একচ্যুয়ালি আমাদের এলাকা কমিটি মেম্বারস রা একটা ডিসিশন নিয়েছে যে বিশেষ কারন ছাড়া কেউ পাড়া থেকে বেড়াতে পারবে না বা পাড়ায় ঢুকতে পারবে না।তাই গেট লাগানো হচ্ছে ।আর আমার বাবা যেহেতু পূজা কমিটির সেক্রেটারি তো কিছুটা দায়িত্ব পালন তো করতেই হবে।আর আমার বাবার ৬০ বছর বয়স তো সে এখন রিস্ক জোনে আছে ।তাই অগত্যা তার একমাত্র ছেলে হওয়ার দরুন আমার ওপরেই এখন দায়িত্ব ।এছাড়া আমাদের পেছনের পাড়ার কিছু বাড়িতে সবাই চাঁদা তুলে চাল, ডাল দিচ্ছি ।সেই ব্যাপারেই শশুর জামাই যুক্তি করছিলাম আর কি ।
প্রাপ্তি:উফফ্ থ্যাংক্স গড…
অর্পণ:এই ভগবান মাল টা না খুব লাকী !
প্রাপ্তি:কেন?
অর্পণ:কিছুই করার ক্ষমতা নেই খালি সুন্দরী মেয়েদের থ্যাংকস পাবে।আর আমরা এই দুর্যোগের দিনে বাইরে পরে রয়েছি কেউ ডেকে এক কাপ চা ও খাওয়ায় না,ভাইরাসের ভয়ে।
প্রাপ্তি:ধ্যাৎ ,বলছি শোনো না তুমি যে বাইরে বেড়াচ্ছ এসে হাত পা মুখ সব ধুচ্ছ তো?
অর্পণ:তোমার বাবা ও বলছিল
প্রাপ্তি:কি বলছিল,আর শোনো:বেশি লোকের মাঝে একদম যাবে না।মাস্ক পরবে ।আর বাড়ী গিয়েই ঘরে ঢুকবে না,বি কেয়ার ফুল।।
অর্পণ:আচ্ছা পুপু তুমি যে সান্যাল কাকুর মেয়ে কাওকে বলে দিতে হবে না।পুরো বাপ কি বেটি।তবে মানুষ টা কিন্তু খুব ভালো ।কত বড় হৃদয়ের মানুষ।এই শোনো না একটা কথা বলবো কাওকে বলবে না বলো।
প্রাপ্তি:কি বলো,না বলব না
অর্পণ:জানো এইমাত্র কাকু আমাকে বলল দাড়াতে , এটিএম এ গিয়ে 10000 তুলে এনে দিচ্ছে আমি যেন এই টাকাটা অসহায় মানুষের সাহায্যের জন্য খরচ করি।পর্যাপ্ত চাল,ডাল ,তেল ,মসলা কিনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দিয়ে আসি।আর কাওকে যেন ব্যাপার টা না জানাই ।আমায় খুব বিশ্বাস করে ।সবাই কে বলতে বলল আমি দিয়েছি ।পরে লাগলে আরো দেবে।আসল ভগবান তো তোমার কাছেই আছে পুপু ।কিন্তু বেচারা জানে তো না যে তার ঘরেই ডাকাতি করবো আমি।তার রাজকন্যা কে হরন করব।
প্রাপ্তি:ধ্যাত্ অসভ্য ।হমম।জানি আমার বাবা খুব ভাল।আচ্ছা অর্পণ তুমি কি আমার বাবার সুখ্যাতি করার জন্য ফোন টা করলে।আর জানো আমরা পাশ করে গেছি ।মুখ্যমন্ত্রী আমাদের পাশ করিয়ে দিয়েছে।
অর্পণ:না না ।আমি তো বাবার মেয়ের সুখ্যাতি করার জন্য ফোন টা করলাম।জানি আমাদের সময় তো আর মা মানুষ আর মমতা দি ছিল না, পড়ে পাশ করতে হয়েছিল।আর পরিস্থিতি ও তো অনুকূল ছিল।।শোনো কাল থেকে বিকালে তোমাদের দোতলার বারান্দায় আসবে আমি নিচে গেট গুলো লাগাবে, দেখব ।সাথে তোমাকেও।সেদিন তো ছাদে এসেই চলে গেলে
প্রাপ্তি:কি করব ,অন্ধকারে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না ।সব লাইট নিভিয়ে কালীপুজো পালন করছিল।বাজি ফাটাছিলো ।
অর্পণ:আমি কিন্তু তোমাকে দেখেছি ,তাহলে কাল আসছ তো?
প্রাপ্তি:কিন্তু ঐ সময় তো বাবা মা ঘুমায়।আর ওটা তো ওদের ঘর। দরজা বন্ধ করে শোয় না যদিও তবুও । একটা কথা বলি তুমি বাবা কে ফোন করে বোলো না যে তুমি কাজ দেখতে এসেছ আর খুব মশা যদি ধূপ বা কিছু থাকে ….
অর্পণ:good idea .ok done তাহলে তাই হোক darling শশুর বাড়ী পদার্পণ টা এভাবেই হোক ।সাথে চা বা টা হবে তো?
প্রাপ্তি:জানি না যাও…
অর্পণ:জানি না মানে প্রথমবার তোমাদের বাড়ী পদার্পণ করছি চা তো আমি খাবোই।এই তোমার বাবা আসছে আমি রাখ্ছি।
প্রাপ্তি:হমম বাই
অর্পণ :শুধু বাই
প্রাপ্তি:কেন কি।
অর্পণ:কিছুই না ।রাখুন কাল বিকালে আপনার বাড়ী চাল ডাল সব পৌছে যাবে।রাখছি।
প্রাপ্তি:অর্পণ না একটা যাতা শেষে আমাকেও ……..
ফোন টা নিয়ে ছুটে গিয়ে দাঁড়াল দরজার সামনে ডাইনিং হলে মা আর ঠাম্মী টিভি দেখছে।ঠাম্মী মাকে বলছে পুজোর আগে সব ঠিক হযে যাবে তো পৃথা?ছেলেটা কে আবার কাছে পাব তো ।নাতি টা কে কতো দিন দেখিনি ।বললাম কোলকাতায় পোস্টিং নে শুনল না আমার কথা এখন বোঝ ঠেলা ।মাইনে না পেলে খাবি কি?থাকবি কোথায় ?আর পারছি না আমি অসুস্থ হয়ে যাবো,আবার বাড়িতে একজন ব্রিটিশ আছে তার কথাই শেষ কথা।
মা তুমি যদি এখন অসুস্থ হযে পড়ো কি হবে বলত?ভাই ঠিক একটা ব্যবস্থা করে নেবে।ওর দাদাও তো বলছিল সাময়িক লকডাউন উঠলেই ওদের নিয়ে আসার ব্যবস্থা করবে।তুমি এত চিন্তা কোরোনা।এখন ডাক্তার দেখানো যাবে না।এই জন্যই তোমার ছেলে বলছে তোমাকে টিভি দেখতে দিতে না।😱😱
প্রেম প্রেম এই প্রেমে পড়েই অতো দুরে যাওয়া এখন দেখ,প্রেম আগে না জীবন।বৌ যা বলবে,
কি হলো, আবার মা টিভি দেখছিল নিশ্চয়ই ।কতবার বলেছি টিভি এখন দেখতে হবে না ।যত বেশি সম্ভব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।পৃথা আমি বাথরুম এ যাচ্ছি,চা বসাও আর মা আর পুপুকেও দিও ।ঘন ঘন চা খেতে হবে ।পুপু টিভি টা বন্ধ করত মা।
করছি বাবা।
(৩)
প্রাপ্তি দের বাড়ীর ডাইনিং আজ জমজমাট।ঠাম্মী,বাবা, মা,অর্পণ,প্রাপ্তি,সবাই খুব আনন্দে গল্প করছে।অর্পণ ঠাম্মী কে কথা দিয়েছে যে কাকাই কে আনতে সাহায্য করবে ,ওর নিজের কাকা বর্ধমানের পুলিশ সুপার ।কাকাই কে দূর্গাপুর থেকে আনার ব্যবস্থা করতে আজই ও কাকাকে বলে পারমিটের চেষ্টা করবে।বাড়ির একমাত্র ছেলের কথা কাকা ফেলতে পারবে না ।অন্তত: আজ অবধি ফেলেনি।আজ আদিত্য বাবু ও খুব খুশি ।ছেলেটার এলেম আছে।এলাকাটা পুরো নিজের হাতে রক্ষা করে চলছে আসেপাশের বৃদ্ধ মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে বাজার দোকান করে দিচ্ছে ।আজ বাজারে দেখা হয়েছিল মিত্র বাবুর সাথে উনি ই বললেন ।এদিকে পৃথা আজ নিজের দল ভারী করতে পেরে খুব খুশি।চিরকাল আদিত্য উল্টো মানুষ।হয় বিদেশি লেখক দের বই,নয় প্রাণের কবি রবীন্দ্রনাথ।পৃথা বরাবর একটু চুপচাপ ছিল,ওর কোন ইচ্ছাই কোনোদিনই মাথা তুলতে পারেনি।আদিত্যর ঋণ কোনোদিনই শোধ হবেনা।অসুস্থ বাবার হাত ধরে কথা দিয়েছিল,তার মেয়ের কোন ত্রুটি রাখবেনা ।সত্যিই রাখেনি ।বাবার মৃত্যুর পর আদিত্যর বাবা পরম যত্নে এই বাড়ির বৌ করে এনেছিল পৃথাকে।আর আদিত্যর মা আজ ও বলে আমার দুই ছেলে এক মেয়ে,সত্যিই মা মরা পৃথা কে উনি কোনোদিনই নিজের স্নেহ বাত্সল্য থেকে বঞ্চিত করেনি। শুধু তারপর ও যে কিসের একটা দ্বিধা তা হয়ত পৃথা ও জানে না। প্রথম ভালবাসার মানুষ টা একবার জন্মদিনে হাতে তুলে দিয়েছিল ছাড়পত্র ।তখন থেকেই
যে মন টা অজানার প্রতি আসক্ত ।
সে ভাষা বোঝে না কেউ,কেউ হাসে কেউ করে মৃদু তিরস্কার।বাড়িতে ছিল সাহিত্য নিষেধ ।তাই রাতের অন্ধকারে মোমের আলোয় জেনেছিলো একটি মোরগের কাহিনী ।আর যখন ও উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী কলেজের ফেস্টিভালে সবার অনুরোধে দীপ্ত কণ্ঠে বলে উঠেছিল,
আঠারো বছর বয়স কি দু:সহ
স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুকি ।।
আঠারো বছর বয়েসই অহরহ
বিরাট দু:সাহসেরা দেয় উকি।।
দু:সাহস উকি মারার আগেই বাবা চলে গেল।আর ওর দায়িত্ব দিয়ে গেল অফিসের সহ:কর্মীর ছেলের হাতে ।আজ অর্পণ এইমাত্র ছাড়পত্র আবৃত্তি করে শোনাল।মন টা যেন অনেকদিন পরে ফিরে গেল সেই আঠারোয় ।
অর্পণ ও সুকান্তের ভক্ত ।আদিত্য ও আজ অবাক, এ যেন অচেনা পৃথা ।খুশি প্রাপ্তি ও ।মায়ের সাথে অর্পণের এত মিল।মায়ের চোখে অর্পণ যদি ক্রমে ক্রমে জায়গা করে নেয় ।তাহলে প্রাপ্তির টেনশন একটু কমে।ক্রমে ক্রমে ওদের গল্পে এলো শরৎচন্দ্র চোট্টপ্যাধায় ,নজরুল,বনফুল,সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়,সমরেশ বসু,তসলিমা নাসরিন,শেক্সপিয়র,মঁপাসা,আর ও অনেকে।
আদিত্য আজ মুগ্ধ ।এতো জ্ঞান ছেলেটার।ও অভিভূত ।হটাৎ সবাই কে চমকিয়ে অর্পণ বলল আচ্ছা কাকু বলুন ত এই লক ডাউন এ সবচেয়ে ভুক্তভোগী কারা?
আদিত্য:(হেসে )তুমিই বলো
অর্পণ:প্রেমিক প্রেমিকারা
আদিত্য::(অবাক হয়ে)তাই?
অর্পণ:হমম কাকু আপনি শেক্সপিয়রের রোমিও জুলিয়েট পড়েন নি।ওদের ট্র্যাজেডি বা এন্ডিং পার্ট তো লক ডাউন এ ।আপনি জানেন না?বলেই আড় চোখে তাকাল নিজের জুলিয়েট থুড়ি প্রেমিকার দিকে।
পৃথা:তাই ,কিগো তুমি তো পড়েছো শেক্সপিয়র প্লিজ বোলোনা গল্পটা শুনি।
আদিত্য:আমি সংক্ষেপে বলছি।মহামারি এভাবেই বারবার তছনছ করে প্রেম। শেক্সপিয়রের রোমিও জুলিয়েট দুজন দুজনকে ভালবাসত।ওদের প্রেম আজ ও লোকের মুখে মুখে ।প্রেমের সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ ।শেক্সপিয়রের রোমিও জুলিয়েট যাজক ফ্রায়ার লরেন্স এর সাহায্যে গোপনে বিয়ে করে পরিবারের অসম্মতিতে। কারন তাদের দুই পরিবার এই সম্পর্কে অসম্মতি দিয়েছেন।স্ত্রীর থেকে তাই দূরত্ব রাখতে হচ্ছে রোমিও কে।ঠিক ভাবে মিলন হচ্ছে না দুজনের।বিরহে দুজনেরই অবস্থা সঙ্গীন ।এদিকে দুই পরিবারের চাপে ভেরোনা শহর থেকে অচিরেই বহিষ্কৃত হয় রোমিও ।ফ্রায়ার লরেন্স বুদ্ধি করে জুলিয়েট কে একটি ওষুধ দেন ও সেবন করতে বলেন।যেটি সেবন করলে ও মৃতের মত পরে থাকবে।অথচ মৃত্যু হবে না ।এদিকে লরেন্স রোমিও কে একটি গোপন চিঠি লেখেন, ভয় পেতে নিষেধ করেন,আশ্বস্ত করেন জুলিয়েটের মৃত্যু হয়নি।এদিকে জুলিয়েটের বাড়ির সদস্য রা তাকে সমাধিস্থ করতে সমাধি স্থলে নিয়ে যায় ।
এখানেই মহামারির খেলা ।প্লেগের ভয় যাজক রা কোয়ারিন্টিনে।সুতরাং চিঠি রোমি
এক্দম বের হওনা ।বারবার হাত ধুয়ো ।আর মাস্ক পড়ো ।
অর্পণ:হমম ভাবছি
প্রাপ্তি:কি?
অর্পণ:এই সুযোগে আমাদের পাড়ার কাউন্সিলর দাদাকে ধরে তোমার একটা চাকরি করে দিতে পরি কিনা।হেলথ ডিপার্টমেন্ট এ মনে হয় হয়ে যাবে।
প্রাপ্তি:ধ্যাত অসভ্য
অর্পণ:এই শোনো না আজ ছাদে আসবে তো pls
প্রাপ্তি:না গো কাল বাবা বলেছে যে দেশের মানুষের অবস্থা খুব খারাপ।সাস্থ্য পরিকাঠামো ভাল নয় তাই বাবা মোমবাতি জ্বালবে না।
অর্পণ:এবার বুঝতে পারছি হেরিডেটি!
প্রাপ্তি:কি ।
অর্পণ:না কিছু নয়।শোনো না তুমি বলবে তুমি মোমবাতি জালাতে যাচ্ছো না।তুমি দেখতে যাচ্ছো।
প্রাপ্তি:কি দেখতে?
অর্পন:রাতের কলকাতা ।এ কদিনে পলিউশন কমে গিয়ে হাওড়া ব্রিজ দেখা যা চ্ছে তুমি তা দেখতে ছাদে যাবে।তোমর বাবাকে বলবে এই কদিন বন্ধ ঘরে থেকে, না বেরিয়ে তুমি নিশ্বাস নিতে কস্ট পারছ।তাই তুমি ছাদে গিয়ে প্রাণ ভরে নিশ্বাস নেবে।
প্রাপ্তি:কিন্তু বাইরে যে ভাইরাস ?
অর্পণ:কে বলেছে ওটা যারা বিদেশ থেকে এসেছে তাদের জন্য।তাদের সাথে ডিসটেন্স মেনে চললে কিছু হবে না।তা বলে ছাদে যাবে না।এই শোন তোমার বাবা না একটু বেশি ই জানে সব কিছু।আজ তুমি ছাদে আসবে ব্যস।
পুপু মা পড়া হলো,আমি এসে গেছি ।খেতে আয়
প্রাপ্তি:হ্যালো অর্পণ বাবা এসে গেছে রাখছি বাই।
অর্পণ:বাই ডিলিট করে দাও নম্বর টা ।আর ছাদে এস pls বাই।ভাল থেকো।
(২)
লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কে বাঁচায় কে বাঁচে এই গল্পটার সাথে আজকের পরিস্স্তিতিতে দেশের অনেক লোকের মিল খুঁজে পাবি বুঝলি পুপুমা ।বিশেষ করে নিখিলের চরিত্রের সঙ্গে বাস্তববাদী কিছু মানুষের খুব মিল পাবি।মৃত্যুঞ্জয়ের মত আবেগি মানুষ হলে এখন বোকামি শেষে ওর মতনই হবে অবস্থা।আসলে আবেগ দিয়ে কোনোদিনই কিছু, কিরে পুপুমা শুনছিস না।
হ্যা বাবা শুনছি তো
ঘুম পাচ্ছে
না তো।
তোর মা কে ডাক একটু চা করতে বল ।
আচ্ছা বলছি
।দুপুরে খাওয়ার পর বাবা বলল চল ,একটু বই নিয়ে বসি,নিজেও বনফুলের অগ্নীশ্বর পড়ছিল।পুপুর খুব ঘুম পাচ্ছিল ।হটাৎ বাবা বলল কিরে পরছিস না আয়, আমি আজ তোকে পড়াই ।সেই ছোটবেলার মত বাবার কোলে মাথা দিয়ে ও পড়া শুনছিল বাবা পরে শোনাচ্ছিল ওকে ক্লাস 12 এর একটা গল্প।পড়াতে পড়াতে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল ,আর ও তো এমনিতেই ঘুম কাতুরে, তাই ঘুমিয়ে পরেছে ।কিন্তু মা কোথায়?মাকে দেখল ছাদের সিড়িতে বসে গল্পের বই পড়ছে। গিয়ে দেখল ব্যোমকেষ ।এবারের বইমেলার থেকে বাবা এনে দিয়েছে।মা যদিও ডিটেকটিভ গল্প ভালোবাসেনা ।তবু বাবার গিফট বলে কথা।
ও গিয়ে মাকে বলল মা বাবা তোমাকে চা দিতে বলছে
ওর মা হেসে বলল, কিরে হলো বাবার আদর খাওয়া?
পুপু বলল আদর?
মা বলল দেখেছি বাবার কোলে মাথা দিয়ে চোখ বুঝে আরাম করে শুয়ে ছিলি ।
ও মাথা নিচু করে বলল হ্যা গো মা অনেক দিন পর ।
মা হেসে বলল চল চা করি, বাবাকে দিয়ে আয়।আজ সন্ধ্যা বেলা মুড়ি মাখা খাবি তো……
মা এখন চা করছে,বাবা ফোন ঘাটছে শুয়ে শুয়ে,ও ঠাম্মীর কাছে গিয়ে বলল ,ঠাম্মী আমার চুল টা একটু আঁচড়ে দাওনা।
প্রাপ্তির ঠাম্মী খুব হাসিখুশি মহিলা। প্রাপ্তি র একেক সময় মনে হয় বাবা আর কাকাই এর মধ্যে কত তফাৎ।কাকাই পুরো ঠাম্মা ।আর বাবা পুরো দাদাই।প্রাপ্তি ঠাম্মীর মুখে শুনেছে দাদু ও খুব রাগি ছিল যেমন টা বাবা।পুরো বিগ বস।কাকা বাবার মত রাগি না। যখন কলকাতায় আসে তখন বাড়িটা জমজমাট হয়ে ওঠে ।কাকা খুব মজার মানুষ ।কাকাই আর কাম্মার এখন অফিস ছুটি।ভাই কেও হোস্টেল থেকে নিয়ে এসেছে।ওরা ও নিশ্চয়ই খুব মজা করছে।কাম্মা জানে অর্পণের ব্যাপারটা ।আসলে কাম্মা এমন একটা মানুষ যাকে কিছু লুকিয়ে রাখা ইমপসিবল ।এবারে ক্রিসমাস এর ছুটিতে যখন ভাই আর কাকাই কে নিয়ে কাম্মা কোলকাতায় এসেছিল।তখন ই প্রাপ্তি কে জিজ্ঞাসা করেছে যে তুই প্রতিদিন ছাদে উঠিস কেন রে ?যখনি বিকালে ফোন করি তোর মা বলে তুই ছাদে।কি ব্যাপার বল তো?তো তাই কোন উপায় না থাকাতে ও বলেছে।কাকিমা ও বলেছে ভাল করে পড়া লেখা কর।অর্পণ কে নিজের পায়ে দাঁড়াতে বল।তারপর আমি দেখছি।
ওদিকে রান্না ঘরে পৃথা মানে প্রাপ্তির মা চা করে মুড়ি মাখছিল নারকেল কোরা দিয়ে ।হটাৎ প্রাপ্তির বাবা গিয়ে বলল ওষুধ তো দেখলাম শেষ ,আনতে হবে কিনা মাকে জিগ্গেস কর।প্রাপ্তির মা বলল জিগ্গেস করতে হবে না ।মুড়ি খেয়ে যাও, তুমি এনে দাও।
প্রাপ্তির তো সুবর্ণ সুযোগ ।বাবা বেরলেই ও মার ফোন টা নিয়ে ঘরে গেল ।এবং অর্পণ কে কল করল ।
বাড়িয়ে দাও তোমার হাত
আমি আবার তোমার সাথে হাটতে চাই ।
দু দুবার ফোন টা বেজে গেল ।অর্পণ কি কাছাকাছি নেই ফোনের?একটু পরে বাবা চলে আসবে।
এক একটা মূহুর্ত এক একটা বছর মনে হতে লাগল।ওর খুব রাগ হচ্ছে।১০ মিনিট হয়ে গেল কোথায় গেল?
নাকি ওকে ভুলে যাচ্ছে অর্পণ।নিজের অজান্তেই চোখ টা ভিজে যাচ্ছে ।আর একবার শেষ চেষ্টা ।এবার যদি না ধরে……….
কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন টা নিয়ে রিং করল
বাড়িয়ে দাও তোমার হাত
আপ জিসে কল কর রহা হ্যায়
ও নম্বার ব্যস্ত হে।
রাগে দুঃখে ফোন টা নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিল সোফায় ওকে ইগনোর করছে?জাস্ট ইগনোর! ভাবা যায় ।?
সত্যিই ও খুব বোকা ।ওর প্রথমেই বোঝা উচিত ছিলো ।অর্পণের মত একটা এস্টাব্লিশ ছেলে ওর মত একটা মেয়ের সাথে,আর তাছাড়া অর্পণ তো সবসময় ওকে বাচ্চাই বলে।ভুল টা ওরই।চোখের জল বাঁধ মান ছে না।
হয়ত তোমার ই জন্য
হয়েছি প্রেমে যে বন্য
জানি তুমি অনন্য
আশায় হাত বাড়াই
অর্পণ ফোন করেছে! ও চোখ মুছে ফোন টা রিসিভ করল।
প্রাপ্তি:হ্যালো
অর্পণ:বলো
প্রাপ্তি:(দাতে দাত চিপে )ফোনটা ধরছিলে না কেন?কাওকে পেয়ে গেছ না?ঐ জন্যেই আমায় ইগনোর করছ?
অর্পণ:আরে কুছ তো শোরম কর মেরি মা।
প্রাপ্তি:মানে (রেগে)
অর্পণ :শশুরমশাই পাশে দাঁড়ানো ।তখন কি আর বৌ এর সাথে প্রেম কর যায়?
প্রাপ্তি:মানে টা কি?
অর্পণ:আরে আমি ত তোমাদের বাড়ির নিচে,একচ্যুয়ালি আমাদের এলাকা কমিটি মেম্বারস রা একটা ডিসিশন নিয়েছে যে বিশেষ কারন ছাড়া কেউ পাড়া থেকে বেড়াতে পারবে না বা পাড়ায় ঢুকতে পারবে না।তাই গেট লাগানো হচ্ছে ।আর আমার বাবা যেহেতু পূজা কমিটির সেক্রেটারি তো কিছুটা দায়িত্ব পালন তো করতেই হবে।আর আমার বাবার ৬০ বছর বয়স তো সে এখন রিস্ক জোনে আছে ।তাই অগত্যা তার একমাত্র ছেলে হওয়ার দরুন আমার ওপরেই এখন দায়িত্ব ।এছাড়া আমাদের পেছনের পাড়ার কিছু বাড়িতে সবাই চাঁদা তুলে চাল, ডাল দিচ্ছি ।সেই ব্যাপারেই শশুর জামাই যুক্তি করছিলাম আর কি ।
প্রাপ্তি:উফফ্ থ্যাংক্স গড…
অর্পণ:এই ভগবান মাল টা না খুব লাকী !
প্রাপ্তি:কেন?
অর্পণ:কিছুই করার ক্ষমতা নেই খালি সুন্দরী মেয়েদের থ্যাংকস পাবে।আর আমরা এই দুর্যোগের দিনে বাইরে পরে রয়েছি কেউ ডেকে এক কাপ চা ও খাওয়ায় না,ভাইরাসের ভয়ে।
প্রাপ্তি:ধ্যাৎ ,বলছি শোনো না তুমি যে বাইরে বেড়াচ্ছ এসে হাত পা মুখ সব ধুচ্ছ তো?
অর্পণ:তোমার বাবা ও বলছিল
প্রাপ্তি:কি বলছিল,আর শোনো:বেশি লোকের মাঝে একদম যাবে না।মাস্ক পরবে ।আর বাড়ী গিয়েই ঘরে ঢুকবে না,বি কেয়ার ফুল।।
অর্পণ:আচ্ছা পুপু তুমি যে সান্যাল কাকুর মেয়ে কাওকে বলে দিতে হবে না।পুরো বাপ কি বেটি।তবে মানুষ টা কিন্তু খুব ভালো ।কত বড় হৃদয়ের মানুষ।এই শোনো না একটা কথা বলবো কাওকে বলবে না বলো।
প্রাপ্তি:কি বলো,না বলব না
অর্পণ:জানো এইমাত্র কাকু আমাকে বলল দাড়াতে , এটিএম এ গিয়ে 10000 তুলে এনে দিচ্ছে আমি যেন এই টাকাটা অসহায় মানুষের সাহায্যের জন্য খরচ করি।পর্যাপ্ত চাল,ডাল ,তেল ,মসলা কিনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দিয়ে আসি।আর কাওকে যেন ব্যাপার টা না জানাই ।আমায় খুব বিশ্বাস করে ।সবাই কে বলতে বলল আমি দিয়েছি ।পরে লাগলে আরো দেবে।আসল ভগবান তো তোমার কাছেই আছে পুপু ।কিন্তু বেচারা জানে তো না যে তার ঘরেই ডাকাতি করবো আমি।তার রাজকন্যা কে হরন করব।
প্রাপ্তি:ধ্যাত্ অসভ্য ।হমম।জানি আমার বাবা খুব ভাল।আচ্ছা অর্পণ তুমি কি আমার বাবার সুখ্যাতি করার জন্য ফোন টা করলে।আর জানো আমরা পাশ করে গেছি ।মুখ্যমন্ত্রী আমাদের পাশ করিয়ে দিয়েছে।
অর্পণ:না না ।আমি তো বাবার মেয়ের সুখ্যাতি করার জন্য ফোন টা করলাম।জানি আমাদের সময় তো আর মা মানুষ আর মমতা দি ছিল না, পড়ে পাশ করতে হয়েছিল।আর পরিস্থিতি ও তো অনুকূল ছিল।।শোনো কাল থেকে বিকালে তোমাদের দোতলার বারান্দায় আসবে আমি নিচে গেট গুলো লাগাবে, দেখব ।সাথে তোমাকেও।সেদিন তো ছাদে এসেই চলে গেলে
প্রাপ্তি:কি করব ,অন্ধকারে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না ।সব লাইট নিভিয়ে কালীপুজো পালন করছিল।বাজি ফাটাছিলো ।
অর্পণ:আমি কিন্তু তোমাকে দেখেছি ,তাহলে কাল আসছ তো?
প্রাপ্তি:কিন্তু ঐ সময় তো বাবা মা ঘুমায়।আর ওটা তো ওদের ঘর। দরজা বন্ধ করে শোয় না যদিও তবুও । একটা কথা বলি তুমি বাবা কে ফোন করে বোলো না যে তুমি কাজ দেখতে এসেছ আর খুব মশা যদি ধূপ বা কিছু থাকে ….
অর্পণ:good idea .ok done তাহলে তাই হোক darling শশুর বাড়ী পদার্পণ টা এভাবেই হোক ।সাথে চা বা টা হবে তো?
প্রাপ্তি:জানি না যাও…
অর্পণ:জানি না মানে প্রথমবার তোমাদের বাড়ী পদার্পণ করছি চা তো আমি খাবোই।এই তোমার বাবা আসছে আমি রাখ্ছি।
প্রাপ্তি:হমম বাই
অর্পণ :শুধু বাই
প্রাপ্তি:কেন কি।
অর্পণ:কিছুই না ।রাখুন কাল বিকালে আপনার বাড়ী চাল ডাল সব পৌছে যাবে।রাখছি।
প্রাপ্তি:অর্পণ না একটা যাতা শেষে আমাকেও ……..
ফোন টা নিয়ে ছুটে গিয়ে দাঁড়াল দরজার সামনে ডাইনিং হলে মা আর ঠাম্মী টিভি দেখছে।ঠাম্মী মাকে বলছে পুজোর আগে সব ঠিক হযে যাবে তো পৃথা?ছেলেটা কে আবার কাছে পাব তো ।নাতি টা কে কতো দিন দেখিনি ।বললাম কোলকাতায় পোস্টিং নে শুনল না আমার কথা এখন বোঝ ঠেলা ।মাইনে না পেলে খাবি কি?থাকবি কোথায় ?আর পারছি না আমি অসুস্থ হয়ে যাবো,আবার বাড়িতে একজন ব্রিটিশ আছে তার কথাই শেষ কথা।
মা তুমি যদি এখন অসুস্থ হযে পড়ো কি হবে বলত?ভাই ঠিক একটা ব্যবস্থা করে নেবে।ওর দাদাও তো বলছিল সাময়িক লকডাউন উঠলেই ওদের নিয়ে আসার ব্যবস্থা করবে।তুমি এত চিন্তা কোরোনা।এখন ডাক্তার দেখানো যাবে না।এই জন্যই তোমার ছেলে বলছে তোমাকে টিভি দেখতে দিতে না।😱😱
প্রেম প্রেম এই প্রেমে পড়েই অতো দুরে যাওয়া এখন দেখ,প্রেম আগে না জীবন।বৌ যা বলবে,
কি হলো, আবার মা টিভি দেখছিল নিশ্চয়ই ।কতবার বলেছি টিভি এখন দেখতে হবে না ।যত বেশি সম্ভব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।পৃথা আমি বাথরুম এ যাচ্ছি,চা বসাও আর মা আর পুপুকেও দিও ।ঘন ঘন চা খেতে হবে ।পুপু টিভি টা বন্ধ করত মা।
করছি বাবা।
(৩)
প্রাপ্তি দের বাড়ীর ডাইনিং আজ জমজমাট।ঠাম্মী,বাবা, মা,অর্পণ,প্রাপ্তি,সবাই খুব আনন্দে গল্প করছে।অর্পণ ঠাম্মী কে কথা দিয়েছে যে কাকাই কে আনতে সাহায্য করবে ,ওর নিজের কাকা বর্ধমানের পুলিশ সুপার ।কাকাই কে দূর্গাপুর থেকে আনার ব্যবস্থা করতে আজই ও কাকাকে বলে পারমিটের চেষ্টা করবে।বাড়ির একমাত্র ছেলের কথা কাকা ফেলতে পারবে না ।অন্তত: আজ অবধি ফেলেনি।আজ আদিত্য বাবু ও খুব খুশি ।ছেলেটার এলেম আছে।এলাকাটা পুরো নিজের হাতে রক্ষা করে চলছে আসেপাশের বৃদ্ধ মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে বাজার দোকান করে দিচ্ছে ।আজ বাজারে দেখা হয়েছিল মিত্র বাবুর সাথে উনি ই বললেন ।এদিকে পৃথা আজ নিজের দল ভারী করতে পেরে খুব খুশি।চিরকাল আদিত্য উল্টো মানুষ।হয় বিদেশি লেখক দের বই,নয় প্রাণের কবি রবীন্দ্রনাথ।পৃথা বরাবর একটু চুপচাপ ছিল,ওর কোন ইচ্ছাই কোনোদিনই মাথা তুলতে পারেনি।আদিত্যর ঋণ কোনোদিনই শোধ হবেনা।অসুস্থ বাবার হাত ধরে কথা দিয়েছিল,তার মেয়ের কোন ত্রুটি রাখবেনা ।সত্যিই রাখেনি ।বাবার মৃত্যুর পর আদিত্যর বাবা পরম যত্নে এই বাড়ির বৌ করে এনেছিল পৃথাকে।আর আদিত্যর মা আজ ও বলে আমার দুই ছেলে এক মেয়ে,সত্যিই মা মরা পৃথা কে উনি কোনোদিনই নিজের স্নেহ বাত্সল্য থেকে বঞ্চিত করেনি। শুধু তারপর ও যে কিসের একটা দ্বিধা তা হয়ত পৃথা ও জানে না। প্রথম ভালবাসার মানুষ টা একবার জন্মদিনে হাতে তুলে দিয়েছিল ছাড়পত্র ।তখন থেকেই
যে মন টা অজানার প্রতি আসক্ত ।
সে ভাষা বোঝে না কেউ,কেউ হাসে কেউ করে মৃদু তিরস্কার।বাড়িতে ছিল সাহিত্য নিষেধ ।তাই রাতের অন্ধকারে মোমের আলোয় জেনেছিলো একটি মোরগের কাহিনী ।আর যখন ও উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী কলেজের ফেস্টিভালে সবার অনুরোধে দীপ্ত কণ্ঠে বলে উঠেছিল,
আঠারো বছর বয়স কি দু:সহ
স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুকি ।।
আঠারো বছর বয়েসই অহরহ
বিরাট দু:সাহসেরা দেয় উকি।।
দু:সাহস উকি মারার আগেই বাবা চলে গেল।আর ওর দায়িত্ব দিয়ে গেল অফিসের সহ:কর্মীর ছেলের হাতে ।আজ অর্পণ এইমাত্র ছাড়পত্র আবৃত্তি করে শোনাল।মন টা যেন অনেকদিন পরে ফিরে গেল সেই আঠারোয় ।
অর্পণ ও সুকান্তের ভক্ত ।আদিত্য ও আজ অবাক, এ যেন অচেনা পৃথা ।খুশি প্রাপ্তি ও ।মায়ের সাথে অর্পণের এত মিল।মায়ের চোখে অর্পণ যদি ক্রমে ক্রমে জায়গা করে নেয় ।তাহলে প্রাপ্তির টেনশন একটু কমে।ক্রমে ক্রমে ওদের গল্পে এলো শরৎচন্দ্র চোট্টপ্যাধায় ,নজরুল,বনফুল,সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়,সমরেশ বসু,তসলিমা নাসরিন,শেক্সপিয়র,মঁপাসা,আর ও অনেকে।
আদিত্য আজ মুগ্ধ ।এতো জ্ঞান ছেলেটার।ও অভিভূত ।হটাৎ সবাই কে চমকিয়ে অর্পণ বলল আচ্ছা কাকু বলুন ত এই লক ডাউন এ সবচেয়ে ভুক্তভোগী কারা?
আদিত্য:(হেসে )তুমিই বলো
অর্পণ:প্রেমিক প্রেমিকারা
আদিত্য::(অবাক হয়ে)তাই?
অর্পণ:হমম কাকু আপনি শেক্সপিয়রের রোমিও জুলিয়েট পড়েন নি।ওদের ট্র্যাজেডি বা এন্ডিং পার্ট তো লক ডাউন এ ।আপনি জানেন না?বলেই আড় চোখে তাকাল নিজের জুলিয়েট থুড়ি প্রেমিকার দিকে।
পৃথা:তাই ,কিগো তুমি তো পড়েছো শেক্সপিয়র প্লিজ বোলোনা গল্পটা শুনি।
আদিত্য:আমি সংক্ষেপে বলছি।মহামারি এভাবেই বারবার তছনছ করে প্রেম। শেক্সপিয়রের রোমিও জুলিয়েট দুজন দুজনকে ভালবাসত।ওদের প্রেম আজ ও লোকের মুখে মুখে ।প্রেমের সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ ।শেক্সপিয়রের রোমিও জুলিয়েট যাজক ফ্রায়ার লরেন্স এর সাহায্যে গোপনে বিয়ে করে পরিবারের অসম্মতিতে। কারন তাদের দুই পরিবার এই সম্পর্কে অসম্মতি দিয়েছেন।স্ত্রীর থেকে তাই দূরত্ব রাখতে হচ্ছে রোমিও কে।ঠিক ভাবে মিলন হচ্ছে না দুজনের।বিরহে দুজনেরই অবস্থা সঙ্গীন ।এদিকে দুই পরিবারের চাপে ভেরোনা শহর থেকে অচিরেই বহিষ্কৃত হয় রোমিও ।ফ্রায়ার লরেন্স বুদ্ধি করে জুলিয়েট কে একটি ওষুধ দেন ও সেবন করতে বলেন।যেটি সেবন করলে ও মৃতের মত পরে থাকবে।অথচ মৃত্যু হবে না ।এদিকে লরেন্স রোমিও কে একটি গোপন চিঠি লেখেন, ভয় পেতে নিষেধ করেন,আশ্বস্ত করেন জুলিয়েটের মৃত্যু হয়নি।এদিকে জুলিয়েটের বাড়ির সদস্য রা তাকে সমাধিস্থ করতে সমাধি স্থলে নিয়ে যায় ।
এখানেই মহামারির খেলা ।প্লেগের ভয় যাজক রা কোয়ারিন্টিনে।সুতরাং চিঠি রোমিও এর কাছে পৌছায় না।সুতরাং প্রিয়তমা স্ত্রী র মৃত্যু খবরে আত্মহত্যা করে রোমিও ।এবং জুলিয়েট তার স্বামীর মৃত দেহ কোলে তুলে চুম্বন করে ।এবং একটি ছুরি দিয়ে নিজেকে শেষ করে।ইতালীয় প্রেমিক প্রেমিকাদের কাল জয়ী ট্রাজেডির জন্য দায়ী প্লেগ।
সারা ঘরে নিস্তব্ধতা ।খানিক পরে অর্পণ বলে ওঠে ,কাকু ম্যাকবেথ,কিং লিয়ার,শেক্সপিয়র লক ডাউন এ ঘরে বসে লিখেছেন।শরৎচন্দ্রের গৃহদাহ অরক্ষনিয়া ও কিন্তু প্লেগ জনিত মহামারির দ্বারা আক্রান্ত ।রবীন্দ্রনাথের অনেক গল্প ও মহামারীর শিকার ।
আদিত্য বাবু বলে ওঠেন হমম ,তোমার তো দেখছি ভাল দখল সাহিত্যে ।তা তুমি তো মাঝে মাঝে পুপু কে একটু সাহায্য করতে পার বাংলা টায়।
পৃথা ও বলে ওঠে হ্যাঁ গো আমিও ভাব ছিলাম।আর মাঝে মাঝে কেন,তুমি ওকে প্রফেশনাল টিউশোন করাতে পারো ।রুটিন করে ।
অর্পণ আর চোখে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে বলে আমার কোনো সমস্যা নেই ।কিন্তু ওকি সাচ্ছন্দ হবে ।দেখুন।
প্রাপ্তি:(মনে মনে)দাড়াও মাস্টার এখন কিছু বলব না,পড়াতে আস তখন বোঝাব আমি কিসে কিসে সাচ্ছন্দ হব ।
পৃথা :কিরে তোর কি অর্পণ দার কাছে পড়তে কোন আপত্তি আছে ।
প্রাপ্তি:না না
আদিত্য:তাহলে কাল থেকেই আস,ড্রয়িংরুমেই পড়াও ।আজ যেমন হাত স্যানিটাইজ করে, পা ধুয়ে বসলে,তেমন ভাবে বুঝলে।
অর্পণ:আজ্ঞে কাকু।(মনে মনে) হ্যা শশুর জী হাতের সাথে আমাদের প্রেমটাও স্যানিটাইজ করে নেব।নো টেনশন ।তারপর বলে আজ তাহলে উঠি ।মা আবার চিন্তা করবে।
পৃথা:হ্যা যাও বাবা অনেক রাত হলো।পুপু যা তো মা অর্পণ দার সাথে নিচে।একেবারে তালা দিয়ে আসিস গেটে।
অর্পণ এর সাথে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে আস্তে করে পুপু জিজ্ঞেস করল কি কেমন লাগল শশুর বাড়ী?
অর্পণ:বলল দাড়াও এক্ দিনেই কি সার্টিফিকেট নেবে?
পুপু: হ্যা তোমার ত আবার সচ্ছন্দ হতে টাইম লাগে
অর্পণ:(হেসে) বিশ্বাস কর শুধু সচ্ছন্দ হতেই টাইম লাগে,তারপর সব কিছুই ছন্দময় করে তুলি।
প্রাপ্তি ঘুষি মারতে মারতে নিচে নামল এবং বলল কাল থেকে আস তারপর বোঝাব কাকে বলে …………
মুখের কোথা শেষ হলো না অর্পণ টেনে নিল কাছে।কানের পাশে হাত দিয়ে চুল সরিয়ে মুখটা কানের কাছে নামিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল আমি কিন্তু উইনার।করোনার সাথে যুদ্ধ করে আমার প্রেম টা কিন্তু বাঁচিয়েছি।তার গিফ্ট টা কিন্তু ডিউ রইল।মনে থাকে যেন ।বাইরে ঘুরছি তাই এখন ডিউ রাখলাম।
প্রাপ্তি জড়িয়ে ধরল তার রোমিও কে কয়েক সেকেন্ড পরে নিজেকে ছাড়িয়ে বেরিয়ে গেলো অর্পণ বাড়ির উদ্দ্যেশে ।প্রাপ্তি চেয়ে রইল সে পথে।
এমন ভাবেই যেন জিতে যায় সব প্রেম।