কলকাতার বুকে কফি শপের মোড়কে রমরমিয়ে চলছিল হুক্কা বার, ধৃত মালিক সহ ৩

সরকারি নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে খোদ কলকাতার বুকে রমরমিয়ে চলছিল হুক্কা বার। কফি শপের মোড়কে কিছুটা রাখঢাক রেখেই বার চালাচ্ছিলেন মালিক। শনিবার হাঙ্গারফোর্ড স্ট্রিটের সেই কফি শপে হানা দিয়ে মালিক যশবন্ত জয়সোয়াল সহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করলেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। রবিবারই অভিযুক্তদের ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়েছে। প্রসঙ্গত, প্রশাসন রেস্তরাঁ খোলার অনুমতি দিলেও পানশালা বা হুক্কা বার খোলার অনুমতি দেয়নি এখনও।
মিন্টো পার্কের মুখে যে নামী বেসরকারি নার্সিংহোম রয়েছে, তাকে ডাইনে রেখে যে রাস্তাটি সোজা চলে গিয়েছে শেকসপিয়র সরণীর দিকে, সেই রাস্তাতেই পড়ে এই কফি শপ। আনলক পর্ব শুরু হতেই সরকার বিভিন্ন অফিসের পাশাপাশি বিধি মেনে রেস্তরাঁগুলি খোলার অনুমতি দিয়েছিল। সেই সুযোগে এই কফি শপও খুলেছিলেন মালিক। চা-কফির পাশাপাশি প্রকাশ্যেই বিক্রি হতো নানা ধরনের স্ন্যাকস। তবে আড়ালে চলত হুক্কা বার। সেখানে সবার প্রবেশাধিকার নেই। অতি ঘনিষ্ঠ বা নিয়মিত কাস্টমার ছাড়া কাউকেই ঘেঁষতে দেওয়া হতো না সেদিকে। বাকিদের এক্তিয়ার সামনের অংশের টেবিল পর্যন্ত। ভিতরে সামাজিক দূরত্বের বিধি মানার একাধিক পোস্টার সাঁটা। একসঙ্গে অনেককে ঢুকতেও দেওয়া হতো না ভিতরে। কয়েকজন কাস্টমার ঢুকলে বাইরের গেট বন্ধ করে দেওয়া হতো। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে যেন সরকারি নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে তারা।
কলকাতা জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় বার বা এই জাতীয় হুক্কা বার চলছে কি না, তার উপর নজরদারি রাখছিল লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ। সেই মতো গোয়েন্দাদের আতসকাচের তলায় চলে এসেছিল শেকসপিয়র থানা এলাকার এই কফি শপ। খবর ছিল, এখানে কফি শপের আড়ালে অন্য কিছু চলছে। কারণ সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা বা তারও বেশি সময় পর্যন্ত ওই শপের সামনে ভিড় জমছে। ভিড় করছে মূলত ২৫ থেকে ৩০ বছরের যুবক-যুবতীরা। তাঁদের বেশিরভাগই আসছেন চার-চাকা বা দু’চাকার গাড়ি চালিয়ে। ফলে পার্কিং লটে গাড়ির ভিড় বাড়ছে। গোয়েন্দারা খোঁজ নিতে গিয়ে দেখেন, সামাজিক দূরত্বের বিধি দূরঅস্ত, ভিতরে আগের মতো পরিস্থিতি। ভিতরে কিছুটা আড়াল রেখেই রমরমিয়ে চলছে হুক্কা বার। নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার রাতে সেখানে হানা দেন গোয়েন্দারা। হাতেনাতে পাকড়াও করা হয় মালিক যশবন্ত জয়সোয়াল এবং দুই কর্মী সুদীপ্ত শীল ও ইমরান আলিকে।
যাঁরা হুক্কা বারের নিয়মিত কাস্টমার, তাঁদের নামের তালিকা ওখানে রয়েছে। ফোন করে তাঁদের ডেকে পাঠানো হতো। আবার ফেসবুকের বন্ধুদের মধ্যে যাঁরা বিশ্বস্ত এবং আসক্ত, তাঁদেরও আসতে বলা হতো এই কপি শপে। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপও খুলেছিল তারা। তার মাধ্যমেও ডেকে আনা হতো হুক্কা-প্রেমীদের। সব মিলিয়ে ‘গোপনীয়তা’ রেখেই ব্যবসা করছিলেন মালিক। শেষ অবধি গোয়েন্দাদের চোখ এড়ানো গেল না। অভিযুক্তদের আইনজীবী বিজয়শঙ্কর চৌবে বলেন, কফি শপের মালিক সহ তিনজনকে গোয়েন্দারা ওই রাতেই তুলে নিয়ে গিয়েছেন। কফি শপটিও আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এদিন ব্যাঙ্কশাল আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আমার মক্কেলদের। তবে আদালত তিনজনের জামিনের আবেদনই মঞ্জুর করেছে।