আত্মহত্যা

● বি.কম পাশ ছেলেটি ঘুষ দিয়ে চাকরি না কিনে, পাড়ার মোড়ে মুদির দোকান খুলেছে। এক কেজি চিনি কিনতে আসা পাড়াতুতো কাকু পান চিবোতে চিবোতে যখন বলে,

– “কি করলি জীবনে বি.কম পাশ করে? শেষে মুদিওয়ালা হলি? হেহেহেহে। আমার ছেলেকে দেখ! প্রাইভেট সেক্টরের অফিসার। আর তুই বসে বসে চিনি মাপছিস।”

বিশ্বাস করুন, সেই মুহুর্তে চিনি মাপতে মাপতে ছেলেটি নিজের ব্যার্থতায় মরে গেছিল -এটাও আত্মহত্যা। কিন্তু আমরা কেউ এই মৃত্যুর খবর পাই না।

● বিয়ের মাত্র একমাসের মাথায়, বরের হাতে দ্বিতীয় চড়টা খাওয়ার পর মেয়েটি তার মা’কে ফোন করে বলেছিল,

– “মা, আমার বর ভালো মানুষ নয়। আমায় তুমি নিয়ে যাও।”

কিন্তু যখন মায়ের থেকেই উত্তর আসে,

– “মেয়েমানুষ একটু মানিয়ে নে। ছেলেদের একটু রাগ বেশী হয়। আর তোর বর তো সরকারি চাকরি করে, অত মাইনে। একটু মানিয়ে নে।”

বিশ্বাস করুন, সেদিন নিজের মায়ের মুখে একথা শুনে লজ্জায় মেয়েটি মরে গেছিল -এটাও আত্মহত্যা। কিন্তু আমরা কেউ এই মৃত্যুর খবর পাই না।

● শ্যামলা রঙের মেয়েটি একখানা টুকটুকে লাল রঙের একটা শাড়ি পড়ে পাড়ায় বেরোতেই পাশের বাড়ির ফর্সা বৌদি বলে ওঠে,

– “মনা, তোর গায়ের রঙ্ বড্ড চাপা। লাল তোকে মানায় না। গিলে খাচ্ছে একদম। হালকা রঙ্ পরে আয়।”

বিশ্বাস করুন, ঘরে এসে নিজের শ্যামলা মুখটার দিকে তাকিয়ে মেয়েটির যখন মনে হয়েছিল কেন সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলা যায় না এই কালো রঙ্, ঠিক সেই মুহুর্তে মেয়েটির মরে গেছিল -এটাও আত্মহত্যা। কিন্তু আমরা কেউ এই মৃত্যুর খবর পাই না।

● বন্ধুদের গ্রুপে চিকেন পিৎজা উইথ এক্সট্রা চিজ্ অর্ডার দেওয়ার পর, সবথেকে গোলগাল মেয়েটিকে নিয়ে রসিকতা হচ্ছিল,

– “তুই পিৎজা বাদ দিয়ে একটু জল খেয়ে দেখ যদি রোগা হোস। আমার তো মনে হয় তুই জল খেলেও মুটিয়ে যাবি।”

বিশ্বাস করুন, ঠিক সেই মুহুর্তে মেয়েটির মনে হয়েছিল সে বেমানান বন্ধুদের ভীড়ে, সে একা, হাসির খোরাক -মরে গেছিল মেয়েটি -এটাও আত্মহত্যা। কিন্তু আমরা কেউ এই মৃত্যুর খবর পাই না।