আবে এই, ওঠ না !
ওঠ, ওঠ !
মস্করা হচ্ছে ?
পেটে খোঁচা খেয়ে চমকে তাকাই!
- ছোড়দা কে নিয়ে তো বড়ো লিখলি, আর বড়দা পুরো বাদ?
না মানে, আমতা আমতা করে বলি, - ঠিক বুঝলাম না।
- কোন জায়গাটা বুঝলি না ?
- হাগু নিয়ে তো পিসির সাথে বেজায় গল্প করলি,
- আর হাগুর বড়দা পাদু কে নিয়ে তো কিছুই বল্লি না!
- না মানে ওই আর কি, লিখবো ভেবেছিলাম কিন্তু …
শোন, ৩৫ কোটিবার পায়খানা নিয়ে সাহিত্য চর্চা হয়েছে কিন্তু আমাকে নিয়ে তোদের লেখারই সময় হয় না।
টিনের চেয়ার খড় খড় করে টেনে বসলো মুশকো স্যান্ডো গেঞ্জি!
আমিও বসতে যাচ্ছিলাম সামনের চেয়ারে,
তর্জনী তুলে বললো একদম বসবি না, দাঁড়িয়ে থাক!
তুই নাকি ৬-৮ ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে সার্জারি করিস ?
দেখি কত দম তোর !
শুধু ওরকম একটা অপারেশনের পর আমি পেশেন্টের পেট থেকে বেরোবো না। তুই সোও-জা কাঠগড়ায়।
খ্যাক খ্যাক করে হাসতে থাকে স্যান্ডো গেঞ্জি!
স্পষ্ট বুঝতে পারলাম গলা শুকিয়ে যাচ্ছে আমার।
আজ আমি বলবো আর তুই শুনবি !
শুধু তুই না, কেউ বলে না আমাকে নিয়ে।
বিদেশের গপ্পো না শুনলে তো তোদের শান্তি হয় না। তবে তাই শোন ।
২০১৬ তে কানাডার পার্লামেন্ট বন্ধ করে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডেপুটি স্পিকার কে দুই মেম্বার অফ পার্লামেন্ট মিশেল রেম্পেল আর এলিজাবেথ মে- এর ঝগড়া থামাতে হয়। মিশেল শুধু বলেছিলো “Why does the government treat ‘Alberta’ (কানাডার এক রাজ্য) like a fart in the room that nobody wants to talk about or acknowledge?”
যেন পৃথিবীর কেউ পাদে না !
মিনমিন করে বলি, - তা কেন, সবাই তো গ্যাস পাস্ করে!
- চো ও ও প্ , একদম কথা বলবি না ! গ্যাস আবার কি, পাদ বলতে কি জাত যায় ? নেহাৎ পাদু ?
তোদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৮ তম প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড, পাদু করে ফেললে সেটা সোভিয়েত গুপ্তচরদের চক্রান্ত বলে বলতেন, জানিস কি ?
সব চেয়ে বড় কেলেঙ্কারি বোধহয় Crazy Toot Trial — 2016 সালে বার্লিন পুলিশ পাদু করার অপরাধে একজনকে 900 ইউরো জরিমানা করে। এককথায় দুকথায় মামলা গড়ায় হাইকোর্টে এবং শেষ পর্যন্ত প্রায় ২৫ জন হোমরা-চোমরা আমলা এবং পুলিশ শীর্ষ কর্তাদের কোর্টে যাতায়াত করে সমস্যার সমাধান করতে হয়। রাজকোষের কয়েক লক্ষ টাকার বাজে খরচের পর জার্মান লোকজন খেপে যায় এই মামলার বিরুদ্ধে।
মেলবোর্নে ডেভিড হিংস্ট তার আপিসের বসকে বেশি পাদু করার অপরাধে ১.৩ মিলিয়ন ইউএস ডলার ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করেন। খবর রাখিস ?
এক নাগাড়ে তোড়ে চিৎকার করে এক গেলাস জল ঢকঢক করে গিলে ফেলে স্যান্ডো গেঞ্জি।
একদিন পায়খানা না হলে চলে যায় – একদিন পাদু না হলে চলে না রে ! কবে বুঝবি আর তোরা!
রক্ত চক্ষুতে এবার উদাসী দৃষ্টি !
সুযোগ পেয়ে জিজ্ঞেস করে ফেলি মেলবোর্নে মামলা কে জিতলো পাদু-দা ?
সবই যদি আমি বলে দেবো তাহলে তুই গুগুল সার্চে দেখবি কি? আবার খেঁকিয়ে ওঠে স্যান্ডো গেঞ্জি!
আমাকে এড়িয়ে থাকবি কি করে তুই ?
দিনে কতবার হয় সেই নিয়েও গবেষণা হয়েছে।
দিনে বার চোদ্দ তো বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই নর্মাল।
ধর প্লেনে করে প্যারিস বেড়াতে যাচ্ছিস। যে বাতাসে তুই শ্বাস নিবি সেটাতে কি শুধু কেলভিন ক্লাইন এর পারফিউম এর গন্ধ?
গন্ধ না পেলেও বাতাসে পাদু।
ধর ২০০ জন সহযাত্রী। আর ঘণ্টা ১০ এর ফ্লাইট ।
গুনে দ্যাখ ১০০০ পাদু ইভেন্ট নিয়ে প্লেন উড়ছে।
বিমান যত দূর যাবে, তত উপরে উঠবে আর তত এয়ার প্রেসারের তারতম্য।
সাধারণত এরোপ্লেনের কেবিনের যে প্রেসার থাকে সেই প্রেসার আমাদের গ্রাউন্ড লেভেলের প্রেসার এর থেকে খানিকটা কম সুতরাং গ্যাস আরো প্রসারিত হয়ে যায়। আকুলি-বিকুলি চেষ্টা করে তত বেশি গ্যাস বেরয় আমাদের নিচ থেকে।
প্লেনের হাওয়া পরিশুদ্ধ করার মেশিনকে তাই অনেক বেশি কাজ করতে হয়।
আর একেকবারে কতখানি পাদু হয় সেটা নিয়েও প্রচুর গবেষণা হয়েছে খোদ ইংল্যান্ডেই। দ্যাখ, এই সেদিন Sheffield এর Royal Hallamshire Hospital এ বিজ্ঞানীরা Gut বলে এক আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নালে ঘোষণা করলেন বেশিরভাগ মানুষই একেকবার গড়ে ৯০ মিলিলিটার মত পাদ দেয়।
আর সবাই এমন ভাব করে যেন পাদ এক নিষিদ্ধ বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক!
কি আর বলবো তোকে, তোর দেশের আদালত তো এক্সট্রা মেরিটালকেও এপ্রুভ করে দিয়েছে কিন্তু তবুও ভিক্টোরিয়া বসে চুমু খেলেই মরাল পুলিশ রে রে করে তেড়ে আসবে আর আরাম করে একটু পাদু দিলে সবার রক্তচক্ষু।
স্বাধীন আমরা নামেই হয়েছি।
একটু সুযোগ পেয়েই বলে ফেলি
- আসলে পাদু-দা , পাদুর সাথে ওই গন্ধটাই যত নষ্টের গোড়া। ওই নাক বন্ধ করার ঝামেলাতেই একটু অন্যায় অন্যায় ভাব হয়।
- থাম তুই ! গোলাপের গন্ধ পেতে হলে গাছের কাছে যাও। মানুষের শরীর থেকে জুঁই ফুলের গন্ধ আশা করো না।
- তোর পেটের যে জীবাণুগুলো ভিটামিন দিচ্ছে আর ক্যান্সারের সাথে লড়াই করছে সেগুলোই না হয় একটু আধটু হাইড্রোজেন সালফাইড আর মিথেন তৈরী করলই- তাতে অসুবিধেটা কোথায় !
আর মেনুতে একটু বেশি সালফার ওয়ালা খাবার থাকলে না হয় একটু বেশি গন্ধ হলো।
তাই বলে কপি, বিটনুন, চানাচুর কি কেউ খায় না ?
ফুচকা আর চিলি চিকেনকে কি নির্বাসন দিবি ?
সামাজিক অসুবিধা হলেও কোনো শারীরিক অসুবিধার কথা এখনো জানা যায়নি।
যাঁদের দুধ সহ্য হয় না, তাঁদের তো দুধ খেলেই আধঘণ্টা অন্তর পাদু ।
তাই বলে তাঁদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট বলে একঘরে করে দিবি ?
বাবা মা কিছু শিক্ষা দেয়নি তোকে ?
এমন কড়কে দেবো সারা জীবনেও ভুলবি না।
মনে রাখিস পাদুর গ্যাস কিন্তু বেজায় দাহ্য।
বেশি কথা বললে নেক্সট টাইম পাদু করার সময় পিছনে জ্বলন্ত বুনসেন বার্নার ধরবো – পেছন তো পুড়বেই আর তার সাথে হাসপাতাল।
- উফফ আর বা ভয় দেখাবেন না তো ! জড়সড় হয়ে বসি।
- একদম টেন্ডাই মেন্ডাই করবি না। অপবাদে আর দোষারোপে ঢেকে দিয়েছিস আমাকে !
রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুঝে তর্জনী তুলে আবার হুঙ্কার!
নিজেরা টেনশন করে, দুশ্চিন্তা করে নার্ভাস হয়ে গন্ডায় গন্ডায় হাওয়া খাবি, পেট ফুলে থাকবে আর সহানুভূতি পাবার আশায় বলবি অম্বল হয়েছে!
Aerophagy এর নাম দিবি ‘গ্যাস’ !
আমাকে দোষারোপ করা এবার বন্ধ কর।
শুধু তাই নয় ইস্ট্রোজেন বলে এক ধরনের মহিলা-হরমোন পেটের মধ্যে পটির রাস্তার চলন ক্ষমতা খানিকটা কমিয়ে দেয় যার ফলে পিরিওড এর আশেপাশে মহিলারা এই সমস্যায় আরও বেশি ভোগেন।
আর তোরা বলবি মেয়েদের টেনশন বেশি।
যত্ত সব মিসজিনিস্টিক কনসেপ্ট।
যাদের শরীরে মেদ বেশি তাদের ও পেট অনেক সময়ই ফুলে থাকে।
কারণ একটাই।
পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে এই অতিরিক্ত মেদের থেকে বের হয় মেয়েদের হরমোন।
গ্যাস ও হয় একটু বেশি।
তাই বলছি, সেলিব্রেট কর আমাকে।
হাগুর সাথে পাদু না বেরোলে তার নাম Intestinal obstruction। ।
যা রোগীর ক্ষেত্রে প্রাণসংশয় এবং ডাক্তারদের ঘর্মাক্ত করে তোলে।
পেটের বড়োসড়ো অপারেশন হলে যতক্ষণ না পেশেন্টের পাদু না হচ্ছে ততক্ষণ ডাক্তারদের দুশ্চিন্তা লাঘব হয় না।
নিজেকে কন্ট্রোল না করতে পেরে আবার বলি, - ঠিকই বলেছ পাদু দা ।
একবার এক- নাম- না- জানা- দেশে নববিবাহিতা বধূর অপারেশন করেছিলাম। অভিজাত পরিবারের ততোধিক অভিজাত বউ। প্রোটকল মেনে পোশাকের রং । খাবার টেবিলের চামচের সাইজ পর্যন্ত প্রোটকল মেনে। বিলাসবহুল কেবিনে, শ্বশুরবাড়ির আর নিজের বাড়ির শুভানুধ্যায়ীর ভিড়ে ঠাসা।
বর বেচারা এক কোণে।
সাধারণতঃ, দিন তিনেকের মধ্যেই মোটামুটি সেরে ওঠার কথা।
কিন্তু দিন ছয় কেটে যাবার পরেও তার পাদু হচ্ছে না। সে বাড়িও যেতে পারছে না ।
আমারও রাতে ঘুম হচ্ছে না – দুশ্চিন্তায় জেরবার ।
প্রায় সিটি স্ক্যান করাবো করাবো কিনা ভাবছি।
শেষে আরেক নাম-না-জানা-দেশের সিনিয়র নার্স আমাকে বলল – ডোন্ট ওয়ারী, মাই সান ।
আমার একটা সন্দেহ হছে।
আমি একটা এক্সপেরিমেন্ট করতে চাই।
পরদিন রাউন্ডে যেতেই, বউ থেকে শ্বশুর সবাই একগাল হেসে বলল আমাদের সব্বার পাদু হয়েছে ।
আমি একটু অবাক হয়ে বলি, সব্বার? সেতো সুসংবাদ !
আমি যদিও পেশেন্টের হয়েছে কিনা সেটুকুই আপাতত জানতে চাই।
শাশুড়ি এবার উঠে এসে পরম শান্তিতে বলেন, হ্যাঁ ডাক্তার আমরা সবাই ফ্রেশ আর হেলদি ।
আমি বেরিয়ে এসে সিস্টার ইন চার্জ কে বললুম আপনি কি করেছেন বলুন তো ?
যা উত্তর পেলাম তাতে আমার চোখ কপালে –
- আমি গতকাল রাতে পেশেন্টের পাশে আমার ফোন থেকে গোপনে একটু fart এর রিং টোন বাজাই । সবাই ছিছি করার আগেই আমি বলি আমাদের হাসপাতালে আমরা পাদু কে সম্মানের আসন দিই। we believe in a principle ‘better out, than in’.
যাঁরা পাদু করেন তাঁরা বেশি ফ্রেশ আর বেশি হেলদি। বুঝেছ ডক্টর, পেশেন্ট যে পাদু করছে তা আমি অনেকদিন আগেই বুঝেছি – কিন্তু শ্বশুরবাড়ির সামনে সে বলতে পারছিল না।
আমার গল্প শুনে পাদুদা বিগলিত করুণা।
বলে, - আয় তোকে গলায় জড়িয়ে ধরি। তোকে চুমু খেতে ইচ্ছে করছে ডাক্তার। কথায় রে এমন হসপিটাল ?
আমি এবার চোখ পাকিয়ে বলি, সব যদি আমিই বলে দেবো তবে তুমি গুগুলে কি সার্চ করবে পাদু দা !
তবে হ্যাঁ, আমরা সার্জেনরা তোমাকে খুব রেস্পেক্ট করি। পাদু হল জীবন আর মৃত্যুর নির্ণায়ক।
- বেঁচে থাক বাবা, আজ আসি – মুশকো স্যান্ডো গেঞ্জির অট্টহাসিতে ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার।
ধড়মড় করে উঠে বসি ।
জানুয়ারির ঠাণ্ডাতেও ঘামে বিছানা ভিজে।
ঘড়ি দেখি – ভোর তিনটে !
সাথে সাথেই পিসির ফোন – প্রচণ্ড ভয়ার্ত গলা, প্রায় হাঁফাচ্ছে পিসি।
শোন এক স্যান্ডো গেঞ্জি পরা গুন্ডার স্বপ্ন দেখলাম। কি সব ভয়ঙ্কর কথা এসে বলল …
পিসিকে থামিয়ে দিয়ে বলি, - ভয় পেও না পিসি, জল খেয়ে ঘুমিয়ে পড় । আমিও জানি ও কি বলেছে, তবে যা শুনেছ সওব সত্যি । গুড নাইট!
উপসংহারের উপসংহার : আঠারোশো শতাব্দীতে ফরাসি বেকার জোসেফ পুজোল তার বাতকর্মকে লা পেটোমেন নামে এক স্টেজ ভিত্তিক অনুষ্ঠানে নিয়ে যান।
ইংল্যান্ডে মিস্টার মিথেন বলে এক Fart Artist জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো Britain’s Got Talent সুযোগ পেয়েছিলেন।
বলসন পাপফিশ উত্তর মেক্সিকোর মাছ সমুদ্রের তলার শৈবাল খেয়ে ফেলে। এর ফলে মাছের পেটে যে গ্যাস তৈরি হয় সেটা যদি মাছ পাদু না করে ফেলতে পারে তাহলে সেই মাছ খুব সঙ্গত কারণেই জলে ভেসে উঠবে এবং শেষ পর্যন্ত মারা যাবে।
আর হ্যাঁ মুশকো স্যান্ডো গেঞ্জির পিছনে কি সব লেখা দেখেছিলাম। ঘুম চোখে যেটুকু মনে আছে তাই লিখলাম। সত্যি মিথ্যে আপনারাই বিচার করবেন।
রাজা ভড়ক পাদে,
তস্য মন্ত্রী টুং টাং।।
ফুসফুসায় মলয়গন্ধা,
নিঃশব্দ প্রাণঘাতী।।