হটাৎ  দেখা

কয়েক বছর পর আবার  দেখা দু’জনের- হাজার হাজার স্মৃতি এসে জড়িয়ে ধরল…কি বলবে ভেবে পারছিল না  দুজনই ।রাস্তার মোড়ে  দাড়িয়ে  ছিল নামকরা   LIC এজেন্ট  আবীর  মিত্র ।ও ই প্রথম দেখল মিতা কে।তত ক্ষণে মিতাও দেখেছে ওকে ।মিতা অনেক পাল্টে গেছে।শরীরে বেশ মেদ জমেছে ,চেহারায় এসেছে ব্যক্তিত্ব ।সুন্দরী ও বরাবরই ।আবীরের  দু চোখে  তখন সীমাহীন মুগ্ধতা ।অনেক পাল্টে গেছ,বলল মিতা কে।মিত হাসল, বলল জানো এখন আমি রান্না করতে পারি আমার হাতের  পচা  চা আর তোমাকে খেতে হবেনা।।একদিন এসো না আমাদের বাড়ী।বিয়ে করেছ? আবীর বলল হমম, করেছি তোমার বয়সী  হবে আমার স্ত্রী। আর আমার মেয়ের  বয়স পাঁচ বছর।তোমার কথা বোলো।মিতা  একটু হাসল। বলল আমার স্বামী কে তো তুমি  চেন।আমার একটাই ছেলে।সবে  বারোয়  পরল।ও এখানে একটা স্যার এর কাছে পরে।আমি দিতে আসি দাড়িয়ে থেকে নিয়ে যাই।চল , চা খাবে ,আবীর যেন একটু  ভরসা পেল।একদিন এই মিতা ই ওকে বুঝিয়ে দিয়েছিল যে কিছু পেতে হোলে যোগ্যতা  থাকা প্রয়োজন।আবীর ছিলো খুব সাধারন পরিবারের ছেলে ।ওর বাবা একটা রেশন  দোকানে স্লিপ লিখত।আর মা গেঞ্জির  সুতো কাট তো।পরিস্তিতি ওকে  বুঝিয়ে দিয়েছিল  আর পাঁচ  টা  ছেলের মত  ওর জীবন না।তাই উচ্চ মাধ্যমিক  দিয়েই জুটিয়ে নিয়েছিল কটা  টিউশনি ।নিজের পড়ার  খরচ চালিয়ে  বোনের ও কিছু খরচ যদি চলতে পারে ।বাবার সুরাহা  হয়।হটাৎ একদিন ওদের পাড়ায় একটা নতুন প্রতিবেশী এলো।ততদিনে আবীর পাড়ায়  নিজের একটা সুনাম করে  ফেলেছিল।ওর কাছে যারা পরত সবাই খুব ভাল রেজাল্ট করছিল।তো প্রতিবেশীর দুই মেয়ে ।বড়  টা  অনেক বড় ।কিন্তু ছোট বোন টা  ক্লাস ফাইভ এ পরে।ছোট টাকে পড়ানোর  কথা বলতে এসেছিল নতুন প্রতিবেশিনী ।মানে  মিতা আর রিতার মা।ভদ্র মহিলা র খুব অহঙ্কার ছিলো।কারোর সাথে মিশতো না।আবীর কে বলে দিয়েছিল যে ওনাদের বাড়ি  গিয়ে পড়াতে  হবে।আবীর না বলাতে  বলেছিল উনি না শুনতে অভ্যস্ত  নয় ।আর আবীর খানিক বাধ্য  হয়ে  পড়াণো শুরু করেছিল কারন উনি খুব  বেশি পরিমান টাকা অফার করেছিল।মেয়েটা একদিনও  পরা পারত না খুব রাগ হত আবীরের  ।একদিন খুব বৃষ্টি  পড়ছিল।আবীর ভেবেছিল আজ পরাতে যাবে না ।কিন্তু  যদি কাকিমা যদি কিছু  বলে  তাই গেল।কাকিমা সেদিন কাকুর সাথে বাইরে কোথাও গেছিল।ওরা দুই বোন শুধু ছিলো ।আর রিতা তো জন্মের  ফাঁকিবাজ  ছিলো ।ও যেতেই রিতা আবীরের কাছে বায়না  শুরু করে ছিলো আবীর দা আজ কিন্তু পড়ব না।দিদি পিয়াজী  ভাজছে  ।চা মুড়ি আর তেলে ভাজা খাবো  আর গল্প করব ।আবীর  বলেছিল ঠিক আছে কিন্তু চা টা   আমি করব।তার একটা কারন ছিল,আবীর যখনই  রিতা কে পড়াতে  যেত,মিতা চা করত সে চা এমন বিস্বাদ যে  মুখে তোলা যেতনা।  সেদিন ওরা তিন জন মিলে অনেক গল্প করেছিল।।। আর ক মাস  বাদে মিতার  উচ্চ মাধ্যমিক  পরীক্ষা  তো মিতা বলেছিল যদি আবীর ওকে কোনোভাবে হেল্প করে। তো আবীর কথা রেখেছিল।ও কদিন রিতা কে পড়াতে   পড়াতে  মিতা কেও দেখিয়ে দিত ।কিছু নোট  লিখে দিত।ধীরে ধীরে  মেয়ে টার  প্রতি  একটা  দুর্বলতা  হয়েছিল।একটা  সূক্ষ্ম  টান অনুভূতি হত।মিতা এমনিতে খুব চুপ চাপ ছিল,কিন্তু আবীর  কে দেখলেই যেন  প্রাণ পেত  মনে হত।এক দিন ও পড়াতে  গেলে দেখল কাকিমা বাপের বাড়ি গেছে আর রিতা ও সাথে গেছে ।ওকে না জানা নোয়  ওর একটু রাগ হলো কেনযে  এরা জানায় না।বেকার কত টা  সময় নষ্ট হল।মিতা ডাকল ঘরে,ও চলে যাচ্ছিল,মিতা বলল,একটা  ইংলিশ  এসে কিছুতেই  মুখস্ত  হচ্ছে না।যদি আবীর ওকে হেল্প করে।অগত্যা  আবীর ভিতরে এসে বসল । সামনেই  মিতার টেস্ট  পরীক্ষা  ছিল।তাই আবীর বসতেই বলো দেখাও   কি সমস্যা ।মিতা কিছু  একটা  খোঁজার  ভান করছিল।তারপর আস্তে আস্তে আবিরের কাছে এসে বসল  তারপর দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে ।এই পরিস্থিতি  তে  তো আবিরের  অবস্থা  খুব খারাপ হয়ে  পরে।কি হয়েছে তোমার ,কাঁদছ কেন, বলো।তারপর মিতা যা  বলে তার জন্য মোটেও প্রস্তুত  ছিল না।মিতার মা বাবা উচ্চ  মাধ্যমিকের পরই  ওর বিয়ে দিয়ে দেবে ,আর মিতা পড়তে  চায় ।ওর দুজনই  বোন কোনো  ভাই নেই।ওর বাবা যদি সব পয়সা পড়িয়ে,বিয়ে দিয়ে খরচ করে  তাহলে বুড়ো বয়সে খাবে কি।আর মেয়েরা  যদি পড়াশুনা  শিখে  চাকরি  করে লাভ তো সেই শশুর  বাড়ির।এত আর ছেলে নয় যে  চাকরি করে বাবা মাকে দেখবে।মিতা কাঁদতে  কাঁদতে বলতে থাকে।এক সময় বলে তুমি বাড়ী  যাও আবীর দা ।মা রা এসে পরবে ।আর পারলে আমায় বাঁচাও।আবীর বলে কাল  দুজনে মিলে একটা  উপায় বার করব।মিতা বলে খবরদার  বোনের সামনে কিছু বলবে না ।পরের দিন সকাল বেলায় ও যখন দিপুদার  দোকানে কটা  জিনিস কিনতে গেছিল।ও দেখল কাকিমা রিতা কে নিয়ে স্কুল এ দিতে যাচ্ছে। ও আর কিছু না ভেবে মিতা দের  বাড়ি গেলো।গিয়ে  বেল বাজাতে  মিতা  দরজা খুলল।ও দেখল মিতার চোখ দুটো অসম্ভব ফোলা ।তার  মানে মেয়েটা  কাল  রাতে খুব কেঁদেছে।ও মিতা কে কি বলবে ভাবতে পারছিল না।নিজের বোকামি তে নিজের অপর খুব রাগ করছিল।মিতা ওকে জিগ্গেস  করল কি হয়েছে  আবীর দা?
আবীর বলল :কিছু  ভাবলে
।মিতা বলল শুনে কি করবে তুমি কি  করার আছে  তোমার
আবীর:তুমি বলে তো দেখ আমি চেষ্টা করব তোমার সমস্যা দূর করার।
মিতা:আমার সমস্যা দূর কোনোদিনই  হবেনা।এই সমস্যা সমাধান হ ওয়ার  না।
আবীর:আরে তুমি বলো তো তারা তারি  কাকিমা এক্ষুনি চলে আসবে।
মিতা বলল:তুমি এখণ যাও, বিকাল  3টের  সময় আমি বোন কে আনতে  যাবো তখন তুমি বুড়ো শিব তলার গলিতে দাড়িয়ে  থাকবে ।যা  বলার ওখানেই বলব। যথারীতি  ওরা  দেখা করল।মিতা প্রথমে কিছু বলতে চায়নি ।অনেক জোর করার পর বলেছিল যে আমার মাথায় একটা  বুদ্ধি  এসেছে।মা বাবা তোমায় খুব ভাল বাসে,যদি আমরা বলি যে আমরা  প্রেম করি আর দুজনেই  কিছু বছর পর উপযুক্ত  হয়ে বিয়ে করব।তাহলে হয়ত ওরা  আটলীস্ট একটু টাইম দেবে আর সে সুযোগে  আমি  পড়াশোনা  টা  চালিয়ে যাব।
আবীর:যদি ওরা রাজি না হয়, খরচা  না দেয় ।
মিতা:নিজের খরচ নিজেই চালাব  তুমি শুধু পরীক্ষার  পর কটা  টিউশনি  জোগার করে  দিও ।
আবীর:হমম  ঠিক আছে তবে এখন ই বাবা মা কে কিছু বলো না।আগে পরীক্ষা টা  হোক ।তারপর বলো প্রয়োজনে  আমি ও কথা বলব ওদের সাথে
ভাবছেন তো তাহলে কি হলো  এরপর?
এরপর কালের  নিয়মেই দুজন পাশাপাশি  এসেছিল,বর্ষার জলে ভিজে  ছিল বই পাড়ায়,হাতে   হাত রেখে ঘুরে  ছিল  ভিক্টোরিয়া,প্রিন্সেপ  ঘাট।একজনের চোখে ধুলো এলে একজন সযত্নে ওড়নার ভাপ  দিয়েছিল।এক জনের পায়ে চোর কাটা  ফুটলে  আরেক জন পা কোলে নিয়ে সযত্নে টেনে বের করে কাঁধে হাত  নিয়ে সঙ্গী হয়েছিল।
কিন্তু বিধাতা  পুরুষ  হেসেছিল,মিতার  বাবা আবীর কে খুব তাড়া দিচ্ছিল।তাড়া  দিচ্ছিল  মিতা  ও।কারন ততদিনে দুজন মুখ ফুটে না বললেও  দুজনেই  আবিষ্কার করেছিল যে  তারা  দুজন দুজনার। আর আবীর একতা চলন সই  চাকরি পেয়ে গেছিল।
এক দিন মিতা   আবীর কে বলল, চলো, রেজেস্ট্রি  অফিসে  গিয়ে  ফর্ম  আনি।
আবীর: জিজ্ঞাসা  করে ছিল কেন।উত্তরে মিতা বলেছিল যে  যত  তাড়াতাড়ি সম্ভব  তাদের বিয়ে করতে হবে,কারন বাবা পাত্র  দেখা শুরু  করেছে ।আবীর বলেছিল তুমি বারণ  কর,আমি এখন কি করে বিয়ে করব তোমায়?আমার বাড়ির অবস্থা  দেখেছ?প্রতিদিন  ঠিক মত হাড়ি  চড়ে  না।বাবা অসুস্থ,আর কত দিন  কাজ করতে পারবে  জানি না ।মার  পায়ের গুফো  এবারে অপারেশন  না করলে ডাক্তার  বলে দিয়েছে  সেপটিমেসিয়া  হয়ে  যাবে ।বোনের পড়াশুনা  বন্ধ  হয়ে  যেতে  বসেছে ।এই অবস্থায় আমার যা  রোজগার  তাতে বিয়ে করার মত  দু:সাহস  দেখানো  পাগলামি।আমায় জাস্ট আর এক বছর  সময় দাও তার মধ্যে  আমি একটু গুছিয়ে ই তোমায় বিয়ে করব।আর তাছাড়া আমাদের থাকার জন্য একটা  ঘর ও তো বানাতে হবে।তুমি তো জানো ই আমাদের একটা  ঘর ।
মিতা কাঁদতে কাঁদতে  বলেছিল,বাবা কিছুই  শুনছে না  বলছে তুই আর ছেলে পেলিনা  হা হাভাতে  ঘরের ছেলে।তোকে কোনো দিন ই ও সুখে রাখতে পারবেনা।শোনো না  আমরা  বরং রেজেস্ট্রি  টা  করে রাখি ।তা হলে তো  আর বাবা জোর  করে  অন্য জায়গায় বিয়ে দিতে পারবে না ।
অতো:পর দুজনে শিয়ালদহের একটা  রেজেস্ট্রি  অফিস  থেকে  ফর্ম তোলে,অফিসার  বলে এক মাসের পর নোটিশ    নিতে  গেলে দু  মাস  পরে একটা  দিন দেবে সেই দিন ই হবে ওদের লিগাল ম্যারেজ ।দু জনেই সেদিন বসন্তের কোকিলে র গান শুনেছিল।মনে ওদের রামধনুর রঙ  লেগেছিল।কিন্তু বাড়ি আসার পর মিতার বাবা সেদিন মিতা কে খুব মেরে ছিল ।ঘর  বন্দী  করেছিল।জোর  কদমে পাত্র  দেখা শুরু করেছিল।পাত্র  ঠিক হলো।এক মাসের নোটিশে  গেলে আবীর কে  উকিল ডেট  দিয়েছিল ১৮ই এপ্রিল সকাল 11 টায় অফিসে পৌছে  যেতে।সেই খবর  মিতা কে দিতে হবে।এদিকে মিতার বাবা পাত্র রেডি  করে ফেলল।বিয়ে ঠিক করে ফেলল ।পাত্রের  মা একটু  তাড়াতাড়িই বিয়ে টা হোক  চাই ছিল।কারন ছেলে জৈষ্ঠ তাই জৈস্ঠ মাসে বিয়ে দেওয়া  যাবেনা ।কাজেই ১৯শে এপ্রিল  বিয়ের তারিখ ঠিক হলো।এদিকে চৈত্র  মাসের আগে কিছু কেনাকাটা করে  রাখতে হবে তাহলে চৈত্র মাসের ১৫তারিখের পর কেনাকাটা করা  যায়।তাই একদিন মিতার বাবা মা আর রিতা কেনাকাটা  করতে যাবে ঠিক করল,ওরা  মিতা কেও নিতে চাইল,কিন্তু মিতা বলল শরীর খুব খারাপ ও যাবে না।রিতা যা  পছন্দ  করবে তাই  ওর পছন্দ  হবে।ওরা  দুপুর দুপুর  বেরিয়ে গেল,শুধু রিতা কে মিতা একটা  অনুরোধ করেছিল যে  যে ভাবেই হোক  আবীর কে একটু দেখা  করতে বলতে।কিন্তু রিতা  আবিরের দেখা  পায়নি,ওর বাড়ী তে বলে এসে ছিল দিদি একটা  পড়া  দেখবে বলে আবীর দাকে দেখা  করতে বলেছে।মিতা একাই শুয়ে ছিল।হটাৎ  বেল বাজতে ও ছুটে গেছিল আবীর ভেবে কিন্তু দরজার ওপারে যিনি ছিল তাকে দেখে মিতা অবাক হয়ে গেছিল।
আবিরের মা হাত  জোড় করে ছেলেকর প্রাণ ভিক্ষা  চেয়েছিল।বলে ছিল তেলে জলে কোনোদিন মেলে না।আবিরের সামনে অনেক দ্বায়ীত্ব ,তার মধ্যে  যদি ও ঘাড়ে  চাপে তো আবিরের মরা  ছাড়া  পথ নেই।মিতার বাবা গিয়ে নাকি আবিরের বাড়ি  বয়ে শাসিয়ে এসেছে।বলেছে বামুন হয়ে চাঁদে  হাত বাড়ালে  সেই হাত  কেটে দেবে।কাজেই মিতার কাছে তার অনুরোধ ছিল যে “আমার ছেলে কে মুক্তি দাও,ও তো কেমন তুমি জানো ।কোন ঝুটঝামেলায়  থাকে না,আর ওর কিছু হয়ে গেলে আমার সংসার টা  শেষ হয়ে যাবে ।বলে কেঁদে ওঠে ।
তার পর খানিক পরে  শান্ত হয়ে  বলে ,আমি ওকে পাঠিয়ে দিচ্ছি  তুমি কিন্তু ওকে বলে দেবে তুমি  তোমার বাবার দেখা  ছেলের সাথে  বিয়ে করছ।বলেই বেরিয়ে যায় ।মিতা আছড়ে  পড়ে  বিছানায়।
কিছুক্ষণ  পর আবীর এসেছিল,জানাতে যে  উকিল রেজেস্ট্রির ডেট দিয়েছে ।আবীর সেদিন একটু  খুসিই  ছিল।কারন ভাগ্য সেদিন ওর প্রতি সুপ্রসন্ন  হয়েছিল।ওর এর চেয়েও ভাল একটা  চাকরি জুটে গিয়েছিলো।কিন্তু মিতা সেদিন কঠিন,রূঢ়  ভাষায় আবীর কে ফিরিয়েছিল ।
আবীর যখন এসেই  মিতা  কে বলেছিল যে  উকিল ডেট দিয়েছে।আর রেজেস্ট্রির এক বছরের মধ্যেই  ওরা  বিয়ে করবে।তত দিনে  আবীর গুছিয়ে নেবে।মিতা বাঁকা  চোখে  তাকিয়ে বলেছিল, পারবে ?ওই তো মাইনে পাবে ।তাতে কি করে আমার মত বড়লোকের মেয়েকে চালাবে?আগে যোগ্যতা  অর্জন  কর,তারপর  এসো বামুন হয়ে  চাঁদ ধরতে।আবীর বলেছিল কিন্তু তুমিই  ত  …..
মুখের কথা শেষ হয়নি মিতা বলেছিল আমি আমার বাবার পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করব,কারন জীবনটা   আবেগ ,ভালবাসা  দিয়ে কাটানো  যায় না ।কাটাতে  হয়  বাস্তবতা দিয়ে।আর যেটার  মুল  হলো টাকা, যেটা  তোমার  নেই।
এরপর ও আবীর তীর  গাঁথা  পাখির মত কিছু বলতে গিয়েছিল,কিন্তু মিতা বলেছিল,তুমি আজ আস ।বাবা রা এসে যাবে।কিন্তু তোমার পড়াশুনা?কিছু  একটা  আকড়ে  ধরার চেষ্টায়  আবীর বলেছিল।
মিতা মুখ ঘুরিয়ে  বলেছিল,সেটা তোমার না ভাবলেও হবে ওরা আমায় পড়াবে  বলেছে
আবীর :ও তাই জন্য
ছুটে বেরিয়ে  এসেছিল আবীর,ও সত্যি অভিনয় করতে গিয়ে মিতা কে ভালবেসে ফেলেছিল।কিন্তু সেটা  ও নিজেও বুঝতে পারেনি।তাই প্রত্যাখান  হয়ে ও কান্নায় ভেঙে পড়েছিল।দু দিন পরে ছিল ওর জয়েনিং ।এই দুদিন  ও মাথা  ব্যথার নাম করে শুয়ে ছিল।এক বিন্দু জল অবধি  খায়  নি।দু দিন পরে নাম মাত্র  মুখে দিয়ে জয়েন করতে হয়ে  ছিল।মিতার বিয়ের সময় ও বাড়ি আসে নি ।অফিসেই  থেকে গেছিল।এই সমস্ত  কিছু  র সাক্ষী  ছিল আবিরের মা আর বোন,আর খানিক টা রিতা।
মিতা কে বিয়ের পর একদিন স্বামী সহ দেখেছিল।সেদিন বাড়ি তে  এ এসে বালিশে মুখ গুঁজে   কেদেছিল।ও নিজেও বুঝতে পারেনি ওর মন অজান্তেই মিতা র হয়ে গিয়েছিল।অনেক পরে প্রায় পাঁচ  বছর পর  একদিন রিতা আবীর কে সব জানিয়েছিল ।
প্রকৃতি  নিজের খেয়ালে চলে ।বদলানো  তার স্বভাব ।আর মানুষ ত প্রকৃতির ই দাস  তাইনা?তাই অগত্যা  সেও বদলায়।দিন যায়  দিন  আসে।
তারপর আবীর উন্নতির চরম শিখর  ছুঁয়েছে ।পাড়া  বদলেছে,বোনের বিয়ে দিয়েছে,বাবা মায়ের চিকিৎসা করিয়েছে,স্ট্যাটাস  বদলেছে,সুন্দরী  স্ত্রী,বাড়ি,গাড়ি,নাম যশ  সব পেয়েছে ।কিন্তু সুখ? হ্যাঁ  তাও পেয়েছে বৈকি।মোট কথা  মিস্টার আবীর মিত্র একজন সম্পূর্ণ  মানুষ।কফি শপে বসে কফি খেতে খেতে  দুজনেই  দুজন কে লুকিয়ে  লুকিয়ে  দেখছিল।বিল মেটানোর পরে আবীর ই স্তব্ধতা  ভাঙল।বলল আজ উঠি বুঝলে।
মিতা বলল একদিন এসো আমাদের বাড়ি স্ত্রী কে নিয়ে।
আবীর:হেসে হ্যাঁ আর তুমিও এসো হ্যাজবেন্ড  কে নিয়ে।বলে ওর একটা  কার্ড  বাড়িয়ে  দিল,আসার আগে একটা  কল করে নিও প্লিজ।তাহলে সুবিধা হবে ।বলেই উঠে পরতেই মিতা হটাৎ কাতর স্বরে  বলল ,আমায় ছাড়া  ভাল আছ আবীর?
আবীর মৃদু  হেসে  বলল  তোমায় ছাড়া  আছি কে বলল?

                          যারা  কাছে আছে
তারা কাছে থাক।
                       তারা  তো পারে না জানিতে
তাহাদের চেয়ে
                       তুমি কাছে আছ
                                   আমার হৃদয় খানিতে ।।
বলেই আবীর কফিশপ ছেড়ে বেড়িয়ে গেল।হয়ত চোখের জল লোকাতে।কারন অনেকেরই চোখের জল  লোকানোর  ও যোগ্যতা  থাকে না।