সেসব দিনে পুজোর পর থেকেই ডুয়ার্সের মফস্বলগুলিতে সার্কাসের তাঁবু পড়তো।বিশাল এলাকা জুড়ে সেই তাঁবু আর সন্ধ্যে হলেই সেখানকার সার্চলাইটটা মাথার ওপর চক্কর দিতে থাকতো।সারারাত ধরে বাঘ সিংহের হুঙ্কারে মুহুর্মুহু কেঁপে কেঁপে উঠতাম আমরা ছোটরা। গুটিসুটি মেরে ঢুকে পড়তাম লেপ কম্বলের ভেতর। বাড়ির বড়রা বলতো কথা না শুনলেই কিন্তু এক্ষুণি তারা চলে আসবে। চারিদিকে বেশ একটা সাড়া পড়ে যেতো সেসময়। আত্মীয়রা আসতো বাড়িতে। সার্কাস তো একাধিক দিন দেখতে যাওয়া হতোই। আর প্রায় সন্ধ্যেতেই বাড়ির বড়দের সাথে যাওয়া হতো সার্কাস ঘিরে যে মেলা বসে যেতো সেখানে। তো এই সার্কাসের হাতিদেরকে নিয়ে তাদের মাহুতরা দিনের বেলা বেরুতো খাওয়াতে। যেখানে যা পায়।হাতি চলতে চলতে নিচু হয়ে আসা গাছের ডাল ভেঙে খেতো। কেউ কিছু বলতো না।আর হাতির খানিক পেছন পেছন ঘুরে বেড়াতো ছেলে ছোকরার দল। মাহুত বকতো,পাড়ার লোক বলতো সরে যেতে কিন্তু তারা ঘুরেই বেড়াতো। এমনই একদিন মা ভাড়াবাড়ির কুয়োরপাড়ে স্নান করাচ্ছিলো। হট্টগোল শুনে বোঝা গেলো হাতি এসেছে।মা তো তাড়াতাড়ি করে আমাকে ঘরে এনে রেডি করিয়ে দিয়েছে। আমরাও হাতি দেখতে যাবো। কিন্তু ইতিমধ্যেই সে হাতি উপস্থিত আমাদের বাড়ির সামনে। আমি বিছানার ওপর জানালার গরাদ ধরে দাঁড়িয়ে আছি।আর সে এগিয়ে এসেছে। এবারে কথা নেই বাত্তা নেই, শুঁড়টা সে সোজা গলিয়ে দিলো গরাদের ফাঁক দিয়ে। আমি তো চিতকার করে বিছানা থেকে নেমে দৌড়।কি প্রত্যাশা করে যে সে শুঁড় ঢুকিয়েছিলো বলতে পারিনা কিন্তু সে দৃশ্য এতবছর পরেও আজো চোখে ভাসে।