যদি ভুলে যাওয়া যেতো

কেন এরকম হয়, কেন ওকে দেখার সময় আসলেই বুকের ভেতর পুজোর ঢাক বাজতে থাকে খুব জোরে, মনে হয় যেন শেষ বিকেলের হলুদ আলোটাকে সঙ্গে নিয়ে ও বাড়ি ফিরে যাচ্ছে আর তখনই কেন এমন হাত পা অবশ হয়ে আসে আমার-
রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে এসব কথাই ভাবছিল অনিমেষ। পাগলের মতো মেয়েটা টানছে ওকে এখন। যখন যেখানে যায় সবসময় মনের মধ্যে ওর কথা ঘোরে। সকাল সন্ধ্যেতে বাড়িতে যেই বই খুলে পড়তে বসে তাতেও মনে হয় যেন ওর মুখই দেখছে বইয়ের পাতায়। মাঝে মাঝে অস্থির লাগে খুব। মনে হয় এরকম সবসময় যন্ত্রণা পাবার থেকে একটা কিছু হয়ে গেলে খুব ভালো হয়। এরকম সুতোয় ঝুলতে থাকা জীবন আর ভালো লাগছে না ওর।
অবশ্য এসবের জন্য অনি নিজেই দায়ী। সেদিনই যদি বাসে পাশে বসে বলে দিতে পারতো কথাটা তাহলে আজকে আর এই পরিস্থিতি হত না। ও জিজ্ঞেসও করেছিলো। কিন্তু কেন যে ঠিক কাজের মুহূর্তে মুখ দিয়ে দরকারী কথাটা বেরোয় না অনির। হাত পা কাঁপতে থাকে তখন। মনে হয় যেন এক্ষুণি জল না খেলে হয়তো মরে যেতে পারে ও। আর ঠিক তখনই বাড়ির ওপর খুব রাগ হয়। কেন যে ওর বাড়িটা এরকম। কেন বাবাকে দেখলেই বুকের রক্ত জল হয়ে আসে অনির। কেন আর বাদ বাকি সব বন্ধুর মতো বড় মোবাইল কিনে দেয় না ওকে বাড়ি থেকে। চাইলেই বলে মানুষ হও। মানুষ তো সে বটেই। না হলে কি আর ভেতরে এমন প্রেম আসে। না হলে কি আর প্রতি রাতে মেয়েটা হাইহিলে এমন টকটক আওয়াজ তুলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে অনি তখন। শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে কবে যে শেষ হবে এইসব। কবে যে এমন আওয়াজ তুলে আর চলে যাবে না ও।
উফ,দারুণ লাগছে মাইরি-
সত্যি বলেছিস অনি-
যেন মনে হচ্ছে পুজো এসে গেলো বল-
হ্যাঁ,ঠিক তাই। আর সেজন্যই তুই আজকে খাওয়াবি-
অদ্ভূত,আমি খাওয়াতে যাবো কেন?
কারণ এই পুজোয় প্রেম হচ্ছে তোর-
ধুর শালা-
আজকে এই সিজনের প্রথম কুয়াশা পড়লো। কি ভালোই যে লাগছে চারিদিক।শুনশান মফস্বলের সকালে বন্ধুরা মিলে রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালিয়ে পড়তে যাচ্ছিলো অনিরা। আর কদিন পরই মহালয়া।তার ওপর ও মেসেজ করেছে আজ সকালে। লিখেছে পড়তে আসছিস তো?কেন এমন করে মেয়েটা মাঝেমাঝে।কোন কোন দিন রাতে শোবার সময় অনি ভাবে যে কাল থেকে আর ওর কথা ভাববে না। ভুলে যেতে চেষ্টা করবে ওকে। আর সেদিন সকালেই এমন একটা মেসেজ চলে আসে ওর ছোট্ট ফোনটায়। আবার হয়তো গিয়ে দেখবে যে আজ কথাই বললো না।
বন্ধুরা এগিয়ে গেলেও ইচ্ছে করেই দাঁড়ালো অনি। যদি কিছু বলে। যদি আজ একসাথে ফেরা যায় তাহলে ও বলে দেবে সব। বলে দেবে সব সেদিন বাসে যা যা বলতে পারেনি।
প্লিজ, দেখ না রে আমার সাইকেলটার চেন পড়ে গেলো-
উফ, কেন যে এই মেয়েটা বোঝে না। শুধু চেন কেন। ওর জন্য সব করে দিতে পারে অনি। এভাবেই যদি ও পাশে দাঁড়িয়ে থাকে।
একটা মিষ্টি হালকা গন্ধ নাকে লাগছে। আচ্ছা এটা কি ওর গায়ের গন্ধ।এত এত সুন্দর হতে পারে সব। মনে হচ্ছে যেন এই চেন তোলা সারা জীবন চলুক। এভাবেই কালি মাখা হাত ধুইয়ে দিয়ে যাক সকালের নরম আলো এসে।
আমার একটা কাজ করে দিবি-
রিনরিনে গলাটা বেজে উঠতেই অনি বুঝলো ওর চেন তোলা শেষ হয়ে গিয়েছে।
এই চিঠিটা বাবাইকে একটু দিয়ে দিবি?
হাত বাড়িয়ে চিঠিটা নিলো অনি। ওর জন্য ও সব করতে পারে। এমনকি ভুলে যেতেও…

…………সত্যম ভট্টাচার্য