ভূত যজ্ঞ

(অমিতাভ চক্রবর্তী)

অনিমেষ চক্রবর্তী জাঁদরেল মানুষ। জাঁদরেল শব্দটা এসেছে জেনারেল থেকে। সংসারে জেনারেল সুলভ আচার আচরণ দেখানোর থেকে জাঁদরেল হওয়া ভালো। সেই জাঁদরেল চক্রবর্তীবাবুর ঘরে বিড়ালের আনাগোনা। সৌজন্যে তার স্ত্রী। এই হ্যাট হ্যাট… যা পালা…..ভাগ…. এইসব শব্দ অনিমেষ চক্রবর্তীর মুখ থেকে বেরিয়ে আসে। প্রতিদিন বাজার থেকে এই অভাগা প্রাণীগুলোর জন্য মাছ আনতে তিনি কিন্তু ভোলেন না। কোভিড পরিস্থিতিতে যখন ব্যবসা টলোমলো, কখনো এই উৎপটাংদের জন্য মাছ বা মাংস আনতে তিনি ভোলেননি। কিন্তু ঘরে ? নৈব নৈবচ: বিড়ালের হাজারো নাম। কুকুর তিনটি। আবার বলতে বাধ্য হচ্ছি সৌজন্যে অনিমেষবাবুর স্ত্রী এবং কন্যাও বটে। সুতরাং তিনি মাইনোরিটি। একবার যখন ব্যবসা খারাপ হলো অনিমেষবাবুর স্ত্রী বলে বসেছিলেন আমি কি এই অভাগাদের মাছ, মাংস দিতে পারব না!!! অনিমেষ চক্রবর্তী অবাক হয়ে তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে ছিলেন! যাই হোক ব্যবসা খারাপ হয়নি। তাই মাছ বা মাংস আনাও বন্ধ হয়নি। আসলে অনিমেষ চক্রবর্তী এই প্রাণীগুলোতে বিস্তর ভালোবাসেন। তিনি চান ঘরে আসুক, আর তিনি কপোট ছলনায় হ্যাট… হ্যাট করেন। এরা সকলেই চক্রবর্তী পরিবারের সদস্য।
কিছুদিন আগে, অনিমেষ চক্রবর্তীর দূর যাত্রার সুযোগ এলো। সঙ্গে তারই বন্ধু, যিনি বিশিষ্ট শিল্পপতিও বটে। সারাদিন ধরে ব্যবসা সংক্রান্ত আলাপ আলোচনা সারলেন। রাত গভীর হলে অনিমেষবাবু একটু উর্ধ্বলোকে চলে যান। সৌজন্যে আল্কোহল।ওটা তার লাগে। অন্তত নিজেকে আস্বাদন করবার জন্য। যে দূর যাত্রায় তিনি গিয়েছিলেন, সেই দূরযাত্রার শেষ প্রান্তে এসে তার একটু চা খাবার সাধ হলো । রাত বারোটা হবে। সারাদিনে গাড়ি চলেছে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার। বাড়ির কাছাকাছি আসার আগে একটু জিরিয়ে নিতে মন চাইলো। দাঁড়ালেন। চায়ের গেলাসে চুমুক দিয়ে এদিক ওদিক চাইলেন। একটাই ছোট দোকান খোলা। শিল্পপতি বন্ধু দোকান থেকে একটা বড় মাপের বিস্কুটের প্যাকেট নিয়ে হাজির হলেন।
কয়েকটা পথকুকুর ঘিরে ধরে ধরেছে তাদেরকে। শিল্পপতি বন্ধু এক করে প্রতিটি কুকুরকে বিস্কুট খাওয়াচ্ছেন। অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখে অনিমেষবাবু মনে মনে স্মরণ করলেন তার গৃহপালিত পরিবারজনকে। বচু, নন্টে, ফন্টু, মুনি, গুড়্গুড়ি, টুনি, গলু…. আহা!! প্রেম এক অদ্ভুত প্রকাশ! কবির কথায় “গোপনে প্রেম রয়না ঘরে। আলোর মতো ছড়িয়ে পড়ে।” আলোর মতই ছড়িয়ে পড়ছিল প্রেম। অনিমেষ চক্রবর্তী লজ্জা পেলেন।
****যদি গ্রহের দোষ দূর করতে হয় তবে এইভাবে খাওয়াবেন। রত্ন পরার দরকার নেই। অত খরচ কেন করবেন? দেখবেন গ্রহের সমস্ত দোষ দূর হয়ে গেছে।
****রাত প্রায় একটা বাজে।
অনিমেষ চক্রবর্তী দোকান থেকে আর একটা বিস্কুটের প্যাকেট চেয়ে নিলেন।