সববয়সী পিয়ালী খুব সুন্দরী। অবিবাহিতা, বয়স ২৩-২৪। ব্যাঙ্কে চাকুরীরতা। একাকী থাকে। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মত রকে বসে অড্ড মারা বাউন্ডুলে বেকারদের নজর ওর দিকে তো পড়বেই।
কয়েকদিন হল সে পাড়ার বলরামবাবুর দো’তলা ফাঁকা বাড়ীটা বেশ মোটা অঙ্কে ভাড়া নিয়ে উঠেছে। শুনে, আমার কিছুটা অস্বাভাবিক লেগেছিল। খুব অবাকও হয়েছিলাম। একজনের থাকবার জন্য এতবড় বাড়ী কিসের প্রয়োজন বুঝতে পারছিলাম না?
নিজের মর্জি মত থাকে। সকালে সাংসারিক কাজকর্ম ও হাট-বাজারগুলো করে। তারপর অফিসে যায়। ছুটির দিনগুলিতে উঠোনে ফুলগাছ, শাক-সবজি লাগায়। বাকীদিনগুলিতে বিকালে ওগুলোর যত্ন নেয়। জানালা-দরজাও খুব একটা খোলা রাখে না। পাড়ার কারো সঙ্গে বেশী মেলামেশাও করে না। কেউ কথা বলবার চেষ্টা করলে, মিষ্টি হেসে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
বিশু, তপন, প্রথম খবরটা দিয়েছিল, ও বাড়ীতে একটা ছেলে থাকে। তারা, মেয়েটাকে রাহুলের সাথে কথা বলতে শুনেছে।
ছেলে! লিভ-টুগেদার? পাড়ায় এসব নোংরামি চলতে দেওয়া যাবে না। তাই নিয়মিত লক্ষ্য-নজরদারি চলতে লাগল। আমি অবশ্য ব্যাপারটা নিয়ে বেশী মাথা ঘামাইনি।
সপ্তাহখানেক পর একদিন সন্ধ্যেবেলা বিশুর গ্রীন-সিগন্যালে বাড়ীর চারিদিক ঘিরে ফেলে দরজায় টোকা মারা হল। দরজা খুলে পিয়ালী একটা অস্থিরতায় চিৎকার করে বলল, ‘’রাহুল, বাইরে এসে দেখো, কারা এসেছে দেখো?’’ বলে, সহসা মুর্ছা গেল।
সারা বাড়ী তন্নতন্ন করে খুঁজে দেখা হল। কিন্তু কোথাও কাউকে পাওয়া গেল না। পিয়ালীকে তড়িঘড়ি কাছের হসপিটালে ভর্তি করা হল।
ওর অতীতটা বড়ই দুর্বিষহ। অল্পবয়সেই বাবা-মাকে হারিয়েছে। অনেক কষ্টে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে, ছোটভাই রাহুলকে মানুষ করছিল। কিন্তু ড্রাগের নেশায় আদ্য-পান্ত ডুবে গিয়ে, রাহুল, নিজের বন্ধুদের হাতে খুন হয়েছিল। সেই থেকে পিয়ালী একাকিত্বের অবসাদে মানসিক বিকারগ্রস্ত। একা একা থাকলে ভুল বকে।
ডাক্তারবাবুর কাছে সব শুনে, পিয়ালীর দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। যা আজও ছাড়িনি।