প্রায় তিন বছরের কাছাকাছি সময় ধরে সারা বিশ্বে তান্ডব করেছে করোনা সংক্রমণ। কেড়ে নিয়েছে প্রায় কয়েক কোটি প্রাণ। কিন্তু অন্যদিকে গোটা বিশ্বে ত্রাস সৃষ্টি করার প্রায় তিন বছর পর নাকি এই প্রথম উত্তর কোরিয়ায় হানা দিল মারণ ভাইরাস করোনা। ২০১৯ সালে চীনের উহান প্রদেশে যে ভাইরাসের জন্ম এবং চিন থেকে ধীরে ধীরে ২০২০ এবং ২১ সালে যখন গোটা বিশ্বে এই প্রাণঘাতী মহামারী লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন কেড়েছে, তখনও নাকি উত্তর কোরিয়া ছিল করোনা মুক্ত, এই দেশে হানার কোনও কথাই প্রকাশ্যে আসে নি এই তিন বছরে।
আপাতদৃষ্টিতে এই দেশ যে এখনও করোনামুক্ত সেটাই আন্তর্জাতিক স্তরে বারবার প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে কিমের সরকার। কিন্তু আর হয়তো শেষ রক্ষা হল না। সম্প্রতি জানা গিয়েছে উত্তর কোরিয়ায় হানা দিয়েছে করোনার নতুন প্রজাতি ওমিক্রন। এই প্রসঙ্গে একটি বিবৃতি দিয়েছে সিওল, যেখানে বলা হয়েছে সম্প্রতি এই দেশেও থাবা বসিয়েছে করোনা। তবে করোনা পরিস্থিতিতে এই মুহূর্তে দেশের ঠিক কি অবস্থা কিংবা এখনও পর্যন্ত কতজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন সে প্রসঙ্গে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি উত্তর কোরিয়া সরকারের পক্ষ থেকে।
ওই দেশের সরকারি প্রচারমাধ্যম এই ঘটনা প্রসঙ্গে জানিয়েছে গত রবিবার বেশ কয়েকজনের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। সেই পরীক্ষার রিপোর্ট বলছে যে আক্রান্তদের শরীর থেকে ওমিক্রন BA. 2-এর সংক্রমনের সন্ধান মিলেছে। তবে করোনা পরিস্থিতিকে প্রথম থেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে তৎপর উত্তর কোরিয়া। আর তাই রাতারাতি এই দেশজুড়ে জারি করা হয়েছে লকডাউন। এর সঙ্গেই সীমান্ত সিল করার পাশাপাশি কিম পলিটব্যুরোর বৈঠকও ডেকেছেন বলে খবর। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, কিম পলিটব্যুরোর বৈঠকে বলেন যে কোনও মূল্যে এই সংক্রমণ রোধ করতে হবে।
তবে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মহলের দাবি, করোনা মহামারীর প্রথম দিন থেকেই উত্তর কোরিয়ার কি অবস্থা ছিল তা নিয়ে কোনো খবর প্রকাশ করা হয়নি। ফলে কিমের সরকার এই প্রথম করোনা সংক্রমনের দাবি করলেও সেই দাবি কতটা সত্য এবং যুক্তিগ্রাহ্য তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। একইভাবে তাদের দাবি, মুখে যা খুশি বললেও এই দেশে ইতিমধ্যেই করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আর তার জেরেই কার্যত নড়েচড়ে বসেছে কিম সরকার।
অন্যদিকে জানা যাচ্ছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তৎপরতায় যখন বিশ্বের প্রতিটি দেশই করোনা টিকার ওপর জোর দিয়েছে তখন উত্তর কোরিয়ার একজন মানুষও করোনার টিকা পাননি। বার বার হুয়ের আর্জি খারিজ করা হয়েছে এই দেশের পক্ষ থেকে। এমনকি চিন এবং রাশিয়ার টিকা যোগান দেওয়ার প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছেন কিম। ফলে বর্তমান সংক্রমনে দেশের মৃত্যুহার অত্যন্ত বেশি বলেই অনুমান করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
তবে উত্তর কোরিয়ার এই সংক্রমনের খবর প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমতো উদ্বিগ্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। জানা গিয়েছে ২০২০ এবং ২১ সালে যখন দেশজুড়ে করোনার বাড়বাড়ন্ত তখন থেকেই এই দেশের করোনা পরিস্থিতির ওপর নজরদারির করার দাবি জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সেই সঙ্গে তারা বিনামূল্যে কিমের দেশের মানুষকে টিকা সরবরাহ করারও প্রস্তাব দেয়। কিন্তু উভয় প্রস্তাবই ফিরিয়ে দিয়েছিল কিম সরকার। অন্যদিকে উত্তর কোরিয়ার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কিংবা স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তেমন উন্নত মানের নয় বলেই খবর। ফলে করোনার সংক্রমণ যদি ভয়াবহ আকার ধারণ করে তাহলে যেকোনও মুহূর্তে উত্তর কোরিয়ার মৃত্যুহার যে সবকিছুকে ছাপিয়ে যাবে তা বলাই বাহুল্য।