ধন্যবাদ

-“ভাইজান ,রোজা রেখেছেন!”
-“নাহ্ ,আমার তো রোজা নেই তবে একাদশী আজ, সারাদিন ফলমূল খেয়ে কাটাচ্ছি”
-“ওহ্ ,আমি ভাবলাম আপনি মুসলমান।তাহলে ইফতারিটা একসঙ্গে করতাম আর কি!”
-” সমস্যা কী! আপনি বসুন ইফতারি করতে আমি আছি এখানে “
-“এ কেমন কথা, আপনি কিছু খেতে পারবেন না, অন্তত ফল খান একটা!”
-“দিন! তাহলে আপেলটা দিন,দুটো দিন প্রবলেম না থাকলে”
-“আহা ভাইজান , আপনি সবকয়টা খায়েন,আমি আনছি আরও। আজান দিয়ে আসছি,ওয়েট করুন “

ফ্ল্যাটের ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তৌফিক যে কখন এসেছে বুঝতেই পারিনি। ছেলেটা বড্ড ভালো।যখন দেশে এতটা সমস্যা হচ্ছে তখন ওরমতো মানুষদের দেখি, কী পরিমাণ ছুটে চলেছে। মানুষের জন্য। সিগারেট ধরালাম।এই শহরে আসার পর থেকে অজস্র মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে।তারমধ্যে তৌফিক একজন।প্রথম যখন এলাম এক অফিসে ইন্টারভিউ দিয়ে বেরিয়ে রাস্তার পাশে সিগারেট টানতে টানতে গল্প করছিলাম কোথায় ভাড়া পাওয়া যাবে।দোকানাদার কিছু বলেননি।দেখে বেজায় মাথা গরম হচ্ছিল।মনে মনে গাল দিচ্ছি দোকানদারকে। পাশ থেকে তৌফিক এসে পরিচয় করে এখানে থাকবার ঠিকানা দিয়েছিল‌ ।যদিও ওকে ধন্যবাদ জানানো হয়নি।এরপরেও সেবার কোভিড পজিটিভ হলো, একে এই শহরে একা থাকি, বাড়িতে কাউকে জানানো হয়নি যে আমি কোভিড আক্রান্ত।ফ্ল্যাটের কেউই খোঁজ নেয়নি।অফিস থেকে বন্ধুরাও শোনার পর আর ফোন করেনি, পাছে বাজার করে দেওয়া ওষুধ এনে দিতে হয় যদি। তৌফিক এখানে একটা ওষুধের দোকানে কাজ করে। আর অনলাইনে আনএকাডেমির একজন শিক্ষক। জানতে পেরে রোজ সকালে কাজে বেরোনোর আগে খাবার দরজায় দিয়ে যেত।ফিরে এসে চা , রাতের ডিনার। ডক্টর কনসাল্ট করেও ছিল ও। যদিও ওকে ঘরে আসতে বলিনি তখন।এরপরেও ধন্যবাদ দিইনি। ঘরে কখনও খেতেও ডাকিনি আমন্ত্রণ করে। সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারের ছেলে।মাথায় কাজ করে নিজের অহংকার শুধু। আজ একাদশী কত নিয়ম। বাবার মৃত্যুর পরে এই নিয়ে ৬নম্বর একাদশী।গতকাল কাজটা চলে গেছে এবারের দ্বিতীয় করোনার ঢেউয়ে।
কিছু সেভিংস আছে।ভাবছি অন্য কাজ করবো।কিন্তু এখানে বাজারঘাট সব বন্ধ। ফল ছাড়া ঘরে কিছু নেই।আনাই হয়নি।সকাল থেকে না খাওয়া।তৌফিক এসে খাবার কথা বললো। ছেলেটা বুঝলো কীভাবে ক্ষুধার্ত আমি! জানি না।

ভাবতে ভাবতে চলে এলো তৌফিক ফল নিয়ে।সিগারেট ধরিয়েছি আরও একবার।তৌফিক হাতে আপেল দিলো ,
-“নিন ভাইজান শুরু করুন, একসাথে দুজনে
ইফতারি একাদশী পালন করি”
মনের ভেতর খচখচ করতে শুরু করলো, জাত্যভিমান কোথায় গেল! এতবার ছেলেটা সাহায্য করেছে নিঃস্বার্থ ভাবে কখনও মুখ ফুটে কিছু বলেনি।ধন্যবাদ ও পর্যন্ত দিইনি।আর পারছি না নিজেকে সামলাতে।

-“তৌফিক আগামীকাল আমার ঘরে তোমার নিমন্ত্রণ থাকলো, একসাথে ইফতারি করবো, রাজি তো!”
-“আরে ভাইজান কন কি! একশো শতাংশ রাজি, রান্না আমি করবো হবে তো!”…

………………..অনিমেষ