সূর্য্য যখন ক্লাস নাইনে পড়ে, তখন প্রথম দেখা হয় কিরণের সাথে | সূর্য্যদের পাড়ায় নতুন বাড়ি কিনে এসেছিলেন কুশলবাবু | কিরণের বাবা কুশল সাহা কলকাতা পুলিশের কনস্টেবলের চাকরি করেন | একবার সরস্বতী পুজোর চাঁদা তুলতে গিয়ে প্রথম দেখা হয় সূর্যের সাথে কিরণের | ক্লাস টেনে পড়া এক কিশোরের মন সেদিনই সেই ক্ষনেই চুরি করে নেয় চোদ্দ পেরোনো সেই কিশোরী |
তারপর রোজ স্কুল যাবার সময় বাস স্ট্যান্ডে দেখা হতো দুজনের | স্কুল টাইম টা যে দুজনেরই প্রায় এক সময় | কিরণের ওই সুন্দর উজ্জ্বল মুখটুকু দেখতে পেলে সূর্যের সারাদিনে যেন আর কিছু লাগে না | বন্ধু অংশুল বলতো, “এটা তোর ইনফ্যাচুয়েশন সূর্য্য | এরকম বয়সে ওই পূর্বরাগ টুকু সব ছেলেরই হয় | কাল কিরণের জায়গায় আর কোনো মেয়েকেও তোর ভালো লেগে যেতে পারে | “
সূর্য্য হাসে অভিন্ন হৃদয় বন্ধুর কথায় | হাসতে হাসতেই বন্ধুর কথায় জবাব দেয়, “সূর্যের পরিচয়টাই তো তার কিরণ রে | কিরণ না থাকলে সূর্যের কোনো অস্তিত্ব নেই | কিরণকে আমি ভালোবাসি | কিশোর বলে কি প্রেম হতে নেই রে??”
অংশুল বলে, “তাহলে তো জানতে হয়, কৈশোর প্রেমের সুর ওদিকেও বাজছে কি না?? “
সূর্য্য বলে, “হ্যাঁ,সুর বেজেছে ওই হৃদয়েও | আমি কিরণের চোখে আমার প্রতি ভালোলাগা দেখেছি | “
“তাহলে, আর কি বন্ধু, প্রেম নিবেদনটা করেই ফেলো | “
“এখন না | আগে মেডিকেলে ভর্তি হই | নিজের আইডেন্টিটি তৈরী না করে কিভাবে নিজের মনের কথা বলি ওকে |”
অংশুল বললো , “তাহলে আর কি | কিরণ তাহলে আর তোমার হোলো না বন্ধু | অন্য কেউ চুরি করে নিয়ে যাবে তোমার কিরণকে |”
অংশুলের কথা মিথ্যে প্রমাণ হোলো | এই দু বছরে মুখে একটাও কথা না বলা সূর্য্য আর কিরণ মনে মনে একে অপরের হয়ে গেলো |
ডাক্তারী পড়তে বর্ধমান চলে যাওয়ার আগে একদিন সন্ধ্যের সময় কিরণের রাস্তা আটকিয়ে নিজের মনের কথা বলেছিলো সূর্য্য | জানতে চেয়েছিলো, “কিরণ, তোমার মনও কি আমাকে চায়??”
কিরণ ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি এনে সম্মতি জানিয়েছিল কিছু অব্যক্ত ভাষায় | সেদিন একে অপরের হাতে হাত রেখে বলেছিলো, “আজ থেকে আমরা একে অপরের জীবনসঙ্গী | মৃত্যু যতদিন আমাদের আলাদা না করে দিচ্ছে, ততদিন আমরা একে অপরের হয়ে থাকবো | “
এরপর সূর্য্য বর্ধমান চলে যায় ডাক্তারী পড়তে | কিরণ উচ্চমাধ্যমিকের জন্য প্রস্তুত করতে থাকে নিজেকে | ওদের ভালোবাসার মাধ্যম ছিল অংশুল | কিরণের চিঠি গুলো সোজা সূর্য্যর কাছে পৌঁছলেও সূর্য্যর চিঠি গুলো আসতো অংশুলের হাত ধরে | মানে, সূর্য্য অংশুলের খামেই আরও একটি খাম রাখতো,, যেখানে তার প্রিয়তমার জন্য সে তার মনের কথা উৎসর্গ করতো |
দিন এভাবেই কেটে যাচ্ছিলো | সূর্য্য ডাক্তারী পড়া শেষ করে হাউস স্টাফ হয়েছে সবে | আর কিরণ সবে ইকোনমিক্স নিয়ে এম.এ. তে ভর্তি হয়েছে | এমন সময়েই ঘটে গেলো এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা | নিজের স্কুটিতে চেপে ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরছিলো কিরণ | এমন সময় একটি লোহার রড বোঝাই লরি আর বাসের রেষারেষীর শিকার হয় সে | দুটো গাড়ির সংঘর্ষে লরি থেকে বেশ কিছু লোহার রড ছিটকে এসে আঘাত করে লরির পিছন পিছন আসা কিরণকে | মুহূর্তে, চোখের নিমেষে সব অন্ধকার!!
যেদিন প্রথম জ্ঞান ফেরে কিরণের, সেদিনই প্রথম অনুভূত হয় তার, সে অন্ধ | লোহার রডে তার দুটো চোখই নষ্ট হয়ে গিয়েছে | শরীরের বেদনা নিয়েই সে সূর্য্যর খোঁজ করে | সূর্য্য কি জানে তার এই দুর্ঘটনার কথা??
কিরণের মা এগিয়ে আসেন | বলেন, “সূর্য্য সব জানে | তোর জন্যই বড়ো ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে যাচ্ছে | যাতে তোর চোখ দুটো ভালো হয়ে যায় |”
কিন্তু বিপদের এখানেও শেষ ছিল না | কিরণ আবারও জানলো, তার সূর্য্য তার কাছে ফিরে আসার সময়ে এক দুর্ঘটনায় পড়ে যায় | ফলে, তার মুখের আওয়াজ চলে গেছে |
কিরণ বাকরুদ্ধ!! তার জীবনে আর কত পরিহাস লেখা আছে কে জানে!! তবুও জীবন কিন্তু থেমে থাকলো না | তার অন্ধত্ব আর সূর্য্যর বধিরতা সাত পাকে বাঁধা পড়ে গেলো | কিরণের বাবা মা কিরণকে জানালেন, “সূর্য্যর বাবার যেহেতু ব্যবসা, তাই ছেলের জন্য এখানকার ব্যবসার পাট চুকিয়ে দিয়ে অন্য জায়গায় গিয়ে নতুন করে ব্যবসা করবেন | সূর্য্যও সে ব্যবসার দেখাশোনা করবে বাবার সাথে থেকে |”
চেনা শহরটাকে পিছনে ফেলে ওরা নয়ডাতে চলে গেলেন | কিরণ জানে, এক্সিডেন্টে শুধু তার চোখ দুটোই যায়নি, গিয়েছে তার চেহারার সৌন্দর্যও | তার মুখের একদিকটা থেঁতলে গেছে রডের আঘাতে, সে কথা তার জানা | তবুও সেই চেহারাকে কিভাবে ভালোবেসে যাচ্ছে সূর্য্য, সেটাই ভেবে পায়না কিরণ |
নিঃশব্দ ভালোবাসায় সূর্য্য, কিরণের কাছে কখনো প্রেমিক হয়ে, কখনো স্বামী হয়ে ধরা দেয় | সাতপাকের সপ্তসুরে যে প্রতিজ্ঞা সে করেছে কিরণের কাছে, সেই প্রতিজ্ঞা যেন দিন কে দিন আরও বেশি নিখাদ হয়ে উঠছে তপ্ত সূর্যের মতনই | এ ভালোবাসা যেন এক পাক্ষিক | বিবাহ বন্ধনের সব মন্ত্র একাই পালন করে যাচ্ছে সূর্য্য | কিরণের অন্ধত্ব কিরণকে যেন তার প্রতিজ্ঞা পালনের পথে বাধা দিয়ে যাচ্ছে অনবরত |
একদিন সূর্য্যর আদরে বিলীন হতে হতেই কিরণ বলেছিলো, “একবার যদি চোখ দুটো ফেরত পেতাম আমার,, কি যে ভালো লাগতো | নিজের জন্য বলছি না | বলছি, তোমার জন্য ; তোমাকে দুচোখ ভরে দেখতে চাই বলে | আমি তো সেই সূর্য্যকে চিনি, যে আমার রূপে মোহিত ছিল | সেই সূর্য্যকে আমি দেখেছি | কিন্তু আজ যে সূর্য্য আমার অন্ধত্বকে ভালোবাসে, যে সূর্য্য আমার বিকৃত মুখটাকে ভালোবাসে, আমি সেই মানুষটাকে একবার দুচোখ ভরে দেখতে চাই | তার দিকে তাকিয়ে, তার চোখে চোখ রেখে বলতে চাই, আমি তোমাকে ভালোবাসি, ভীষণ ভালোবাসি |”
কিরণের মনের ইচ্ছে কিরণের স্বামী পূরণ করবে না, তা কি হয়?? এ জীবনটা তো পুরোটাই কিরণের জন্য | কিরণের হাত ধরে সাতপাক ঘোরার সময় কিরণের স্বামী হিসেবে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে, “আজ থেকে তোমার ভাত কাপড়ের সাথে তোমার মনের সব চাওয়া পাওয়ারও দায়িত্ব নিলাম আমি | জীবনে যত কষ্ট, যত দুঃখই পাই না কেন, তোমার সুখের জন্য নিজেকে উজাড় করে দেবো |”
কিরণের ইচ্ছে পূরণ হোলো বেশ কিছু সময় পরে | অনেক দিনের অপেক্ষার পরে অবশেষে আই ডোনার পাওয়া গেলো | কিরণ ফিরে পেলো তার চোখ | ডাক্তার বলেছিলেন, “কাকে প্রথম দেখতে চান নিজের নতুন চোখ দিয়ে??”
কিরণ বলেছিলো, “অবশ্যই আমার জীবনের পরম বন্ধু, আমার স্বামীকে দেখতে চাই | তার জন্যই তো আজও নিজেকে ভালো বাসতে ইচ্ছে করে | সে না থাকলে আমার আমিটাও কি থাকতো এতদিন!! “
কিরণের চোখের পট্টি খোলা হোলো | কিরণ বহু কাল বাদে দেখতে পেলো আলোর ছটা | সেই আলোর ছটায় সে খুঁজে নিতে চাইলো তার সূর্য্যকে | আজ আবার চোখের ভাষায় দুজনে দুজনের সাথে কথা বলবে | মুখের ভাষার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গিয়ে চোখের ভাষায় হারিয়ে যাবে দুজনে | আজ কিরণ বলবে তার স্বামীকে, “তুমি তোমার ভাগের ভালোবাসা উজাড় করে দিয়েছো | এবার আমার পালা | তোমায় ভালোবেসে এ জীবনটা কাটিয়ে দেবো হাসতে হাসতে | “
কিন্তু, সূর্য্য কোথায়?? সারা ঘর জুড়ে দাঁড়িয়ে তার বাবা মা, আর অংশুলের বাবা মা | অংশুলের বাবা মা আছেন, কিন্তু সূর্য্যর বাবা মা কোথায়?? আর সূর্য্যই বা কোথায়?? সে অস্ফূট স্বরে একবার ডাকে, “সূর্য্য, সূর্য্য… তুমি কোথায়?? “
সূর্য্যর আলোকে পিছনে ফেলে যে এগিয়ে আসে, সে অংশুল | ডক্টর শর্মা হেসে বলেন, “আপ জিস কো পেহেলে দেখনা চাহতেথে, হি ইজ হেয়ার, ইওর হাসব্যান্ড |”
কিরণ একরাশ বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে অংশুলের দিকে | অংশুল কিরণের কাছে এসে বলে, “পারবে কি আমাকে ক্ষমা করতে?? তোমাকে এভাবে ঠকিয়েছি বলে ছেড়ে চলে যাবে না তো কিরণ??”
কিরণ অংশুলের প্রশ্নের কোনো জবাব দেয় না | তাহলে এতদিন ধরে বোবা সেজে নিঃশব্দে কিরণকে যে ভালোবেসে গেছে, সে অংশুল, সূর্য্য নয়!! অংশুলই তার হাত ধরে সাতপাকে ঘুরেছে?? স্বামী হিসেবে শপথ নিয়েছে কিরণকে ভালো রাখার?? তাহলে সূর্য্য, সূর্য্য কোথায়??
কিরণের মা এগিয়ে আসেন মেয়ের দিকে | মেয়ের কাছে এসে বলেন, “যেদিন তোর এক্সিডেন্ট হয়, সেদিনই অংশুল খবর দিয়েছিলো সূর্য্যকে | কিন্তু সূর্য্য তো তোর রূপের পূজারী ছিল | তাই তোর সেই ভয়াবহতাকে মেনে নিতে পারেনি | পালিয়ে গিয়েছিলো তোর জীবন থেকে | তোর এতো বছরের প্রেম যখন মিথ্যে হয়ে গেলো, তখন অংশুল এলো তোর জীবনে সত্যি ভালোবাসা হয়ে | কিন্তু তু্ই তো চোখ থাকতেই অন্ধ ছিলিস | চোখ থাকতেই অংশুলের ভালোবাসাকে দেখিস নি কোনোদিন, দৃষ্টি হারিয়ে কি দেখতে পেতিস অংশুলের ভালোবাসাকে?? তাই নিঃশব্দে অংশুল তোর সামনে সূর্য্যর নাম নিয়ে দাঁড়ালো | তোকে বিয়ে করলো বোবা সেজে, যাতে একটি শব্দও খরচ না করে ও তোর প্রতি সব দায়িত্ব পালন করে যেতে পারে | বিয়ের সাতপাকের সাত মন্ত্র এতদিন ধরে অংশুল পালন করে এসেছে, এবার তোর পালা কিরণ, সেই সব মন্ত্রের তাৎপর্য অংশুলকে ফিরিয়ে দে তু্ই |”
কিরণের মায়ের কথায় অংশুল বলে ওঠে, “না মামনি, কিরণকে কোনো জোর করবে না কেউ | ও চাইলে আমার সাথে থাকবে, না চাইলে থাকবে না | “
এবার কিরণ সবাইকে বলে, “আমাদেরকে একটু একা থাকতে দাও তোমরা |”
ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে গেলে অংশুলকে কাছে ডাকে কিরণ | অংশুল কাছে এসে বসে কিরণের |
কিরণ প্রশ্ন করে, “কেন অংশুল, আমাকেই এ দয়া দেখানো কেন?? তুমি কি ভেবেছিলে, তোমার করুনা টুকু না পেলে আমি বাঁচতাম না!! কেন করলে এসব?? “
অংশুল ধীরে ধীরে উত্তর দেয়, “যা করেছি, যতটুকু করেছি, সব তোমায় ভালোবেসে |”
“আমি তোমার বন্ধুর ভালোবাসা, সেটা জানার পরেও আমাকে ভালোবাসার স্পর্ধা তুমি দেখাতে পারলে?? নাকি বন্ধুর পরিত্যক্ত প্রেমকে করুনা করতে ইচ্ছে হোলো তোমার??”
অংশুল বলল, “তুমি যখন শুনতে চাইছো, তখন শোনো | তোমাকে আমি, সূর্য্য একই দিনে প্রথম দেখেছিলাম | সূর্য্যর সাথে তোমাকে মন আমিও দিয়েছিলাম | কিন্তু আমার মনের খোঁজ তুমি পাওনি | হয়তো বা সূর্য্য আমার চেয়ে পড়াশোনায় বেশি ভালো ছিল বলে | তারপরে তোমাদের প্রেম সার্থক হলো, তোমরা একে অপরকে কথা দিলে একে অপরের হয়ে থাকার | সেদিন সামনে দাঁড়িয়ে খুব রাগ হয়েছিল আমার নিজের ভাগ্যের উপরে | ঘরে এসে হাউহাউ করে কেঁদেছিলাম | ভগবানের উদ্দেশ্যে বলেছিলাম, “কিরণকে আমার করে দাও ভগবান, যেমন তেমন ভাবে | কথা দিচ্ছি, কোনোদিন কিরণের জীবনে কষ্ট আসতে দেবো না | ওকে আজ যত ভালোবাসি, তার চাইতেও বেশি ভালোবাসবো |”
সেদিন, ঈশ্বর হয়তো আমার কথা শুনেছিলেন | সূর্য্য বর্ধমান গিয়ে বছর খানেকের মধ্যেই ডাক্তার বান্ধবীর মাঝে হারিয়ে গেলো | তোমাকে চিঠি প্রায় লিখতোই না ও | তুমি আমায় তাড়া দিতে, জানতে চাইতে, সূর্য্য কোনো চিঠি পাঠিয়েছে কিনা | আমি সূর্য্যকে বলতাম তোমার কথা,, সূর্য্য পাত্তা দিতো না আমার কথাকে | শেষে একদিন তোমার মুখে হাসি দেখতে কলম ধরলাম আমি | নিজের মনের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে চিঠি লিখলাম তোমাকে | শুধু সূর্য্যর নামটুকু ধার করা ছাড়া বাকি সবটুকু আমার ছিল | সেই চিঠিতে সূর্য্যর ভালোবাসা নয়, তুমি আমার ভালোবাসা পড়ে হাসতে |….
তারপরে যখন তোমার এক্সিডেন্ট হোলো, তখন আমি জানতাম, সূর্য্য ফিরবে না তোমার কাছে | তবুও জোর করেই ফিরিয়ে এনেছিলাম ওকে | কিন্তু তোমার চেহারার বীভৎসতা আর অন্ধত্ব দেখে পালিয়ে যায় তোমার সত্যিকারের ভালোবাসা | আমি জানতাম, জীবনে এতো বড়ো আঘাতের পরে সূর্য্যর চলে যাওয়া তুমি মানতে পারবে না | তাই সূর্য্য হয়ে তোমার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম আমি | আমার গলার স্বর শুনে আমায় চিনে ফেলবে বলে মিথ্যে এক্সিডেন্টের অভিনয় করে বোবা সেজে গেলাম | তোমায় বিয়ে করে বাবা মাকে নিয়ে চলে আসলাম নয়ডায় | এখানেই চাকরি নিলাম রেডিও জকি হিসেবে | সারাদিন নিজের গলার স্বর বেচে ঘরে এসে তোমার সামনে বোবা হয়ে যেতাম |…
আমি এবাবেই খুশি ছিলাম | কিন্তু তুমি যেদিন তোমার স্বামীকে দেখতে চেয়েছিলে,, সেদিন সাহস করে তোমার চোখ ফেরানোর চেষ্টা করলাম আমি | তুমি অংশুলকে ক্ষমা করতে হয়তো পারবে না, কিন্তু যে মানুষটা সূর্য্য সেজে তোমায় ভালোবেসে গেছে,, সেই মানুষটাকে তো ক্ষমা করলেও করে দিতে পারো | পারবে কি কিরণ, অংশুলকে ক্ষমা করে দিতে?? যদি ক্ষমা না করতে পারো আমায়, তাহলে নিঃশব্দে চলে যাবো তোমার জীবন থেকে | “
কিরণ এতক্ষন সব কিছু চুপ করে শুনে যাচ্ছিলো | এবার মুখ খুললো সে, ” তুমি চলে যাবে কি বলছো অংশুল?? তুমি চলে গেলে যে আমি অস্তিত্বহীন হয়ে যাবো | সূর্য্য বলতো, আমি ওর কিরণ | ঠিকই বলত সূর্য্য | যতক্ষণ আঁধার নেই জীবনে,, ততক্ষনই সূর্য্য থাকে জীবনে | আঁধার এলে সূর্য্য অস্তের নামে পালিয়ে যায় | কিন্তু অংশুল, সে তো অন্ধকার কাটাতেই সৃষ্ট হয়েছে | তোমার নাম সার্থক অংশুল | আঁধারেও নিজে জ্বলে তুমি তোমার কিরণকে প্রজ্জ্বলিত করেছো | হ্যাঁ, একথা ঠিক, সূর্যের প্রখর তেজে তোমায় নিষ্প্রভ দেখায় ঠিকই, কিন্তু তুমি কোথাও কখনো বিলীন হয়ে যাও না | আমি তোমার কিরণ হয়েই থেকে যেতে চাই | এতদিন মিথ্যে একটা নামকে স্বামীর আসনে বসিয়ে তাকে ভালোবেসে গেছি | এবার বাকি জীবনটা আমার জীবনের আসল বন্ধু, আমার জীবনের আসল সাথীকে ভালোবেসে যেতে চাই | বিয়ের সাতপাকের সাতটি মন্ত্রকে সার্থক করতে চাই আমার স্বামীর সাথে জীবন কাটিয়ে | “
অংশুল মৃদু কণ্ঠে বললো, “তুমি আমাকে এতো তাড়াতাড়ি আপন করে নেবে, ভাবতেও পারিনি | কি করে পারলে কিরণ?? “
কিরণ অংশুলের বুকে মাথা রেখে তাকে আদর করতে করতে বলে, “তোমায় ভালোবেসে অংশুল , শুধুই তোমায় ভালোবেসে |”