ছেলের জন্য গর্বিত

হায়দরাবাদ: সেনায় যোগ দেওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। নিজের সেই অধরা স্বপ্নই ছেলের মাধ্যমে পূরণ করতে চেয়েছিলেন। সাধপূরণ করেছিল ছেলে। সেনার অফিসারও হয়েছিলেন। বুধবার সেই ছেলেরই কফিন বন্দি দেহের অপেক্ষা করতে করতে এ কথাগুলি মনে পড়ছিল প্রাক্তন ব্যাঙ্ককর্মী বি উপেন্দরের। মঙ্গলবার লাদাখে চীনা ফৌজের সঙ্গে সংঘর্ষে শহিদ হয়েছেন ২০ জন ভারতীয় সেনা জওয়ান ও আধিকারিক। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন উপেন্দরের ছেলে কর্নেল বিকামুল্লা সন্তোষ বাবুও।
ছেলে হারানোর দুঃখ তো রয়েছে, তবে ভেঙে পড়তে রাজি নন শহিদের মা-বাবা। তেলেঙ্গানার সূর্যপেট শহরে থাকেন তাঁরা। তবে দুই সন্তানকে নিয়ে পুত্রবধূ দিল্লিতে থাকেন। সন্তোষের মা মঞ্জুলাদেবীর কথায়, আমি খুব খুশি যে, ও দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে। কিন্তু মা হিসেবে খুব কষ্ট হচ্ছে। একমাত্র ছেলেকে হারালাম। একই সুরে উপেন্দরও বলেন, আমি জানতাম কোনও না কোনওদিন এই খবর আমায় শুনতেই হবে। তাই মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম। প্রত্যেককেই একদিন মরে যেতে হবে। তবে দেশের জন্য শহিদ হওয়া সব সময়ই সম্মানের। সন্তোষের জন্য আমি গর্বিত।
গত রবিবার শেষবারের মতো বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল সন্তোষের। তাঁরাও লাদাখের উত্তেজক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। সে ব্যাপারে প্রশ্ন করতেই কর্নেল সন্তোষ বাবু জানিয়ে দেন, ‘এসব নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস কোরো না। এখানকার ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না। ফিরে এসে এই নিয়ে কথা বলব। তোমরা আমায় নিয়ে চিন্তা কোরো না।’ ছেলের বলা শেষ বাক্যটি বারবার কানে বাজছে শোকার্ত বাবার।
পরিবার সূত্রে খবর, ১০ বছর বয়সে সৈনিক স্কুলে ভর্তি হন সন্তোষ। সেখানে পড়াশুনো শেষ করে এনডিএ, আইএমএ হয়ে ২০০৪ সালে সেনায় যোগ দেন তিনি। জম্মু ও কাশ্মীরের একাধিক সংবেদনশীল জায়গায় অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। সেজন্য একাধিক মেডেলও পেয়েছেন। শেষে ১৬ বিহার রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে লাদাখের গলওয়ানে কর্তব্যরত ছিলেন সন্তোষ। পরিবারের সঙ্গে থাকবেন বলে হায়দরাবাদে পোস্টিং নেওয়ারও চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু, তার আগেই গত মঙ্গলবার চীনা সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে শহিদ হলেন সন্তোষ।